Main pages

Surah Crouching [Al-Jathiya] in Bengali

Surah Crouching [Al-Jathiya] Ayah 37 Location Maccah Number 45

حمٓ ﴿١﴾

হা-মীম।

জহুরুল হক

হা মীম!

تَنزِيلُ ٱلْكِتَٰبِ مِنَ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ ﴿٢﴾

পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এ কিতাব।

জহুরুল হক

এ গ্রন্থের অবতারণ আল্লাহ্‌র কাছ থেকে, যিনি মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।

إِنَّ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ لَءَايَٰتٍۢ لِّلْمُؤْمِنِينَ ﴿٣﴾

নিশ্চয় নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে মুমিনদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে মুমিনদের জন্য।

وَفِى خَلْقِكُمْ وَمَا يَبُثُّ مِن دَآبَّةٍ ءَايَٰتٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُوقِنُونَ ﴿٤﴾

আর তোমাদের সৃষ্টিতে এবং চারদিকে ছড়িয়ে রাখা জীব জন্তুর সৃজনের মধ্যেও নিদর্শনাবলী রয়েছে বিশ্বাসীদের জন্য।

জহুরুল হক

আর তোমাদের সৃষ্টির মধ্যে এবং জীবজন্তুর মধ্যে যা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তাতে নিদর্শনাবলী রয়েছে সুনিশ্চিত লোকেদের জন্য,

وَٱخْتِلَٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ وَمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن رِّزْقٍۢ فَأَحْيَا بِهِ ٱلْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَتَصْرِيفِ ٱلرِّيَٰحِ ءَايَٰتٌۭ لِّقَوْمٍۢ يَعْقِلُونَ ﴿٥﴾

দিবারাত্রির পরিবর্তনে, আল্লাহ আকাশ থেকে যে রিযিক (বৃষ্টি) বর্ষণ করেন অতঃপর পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, তাতে এবং বায়ুর পরিবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

জহুরুল হক

আর রাত ও দিনের বিবর্তনে, আর আল্লাহ্ আকাশ থেকে জীবনোপকরণের মধ্যের যা-কিছু পাঠান ও যার দ্বারা পৃথিবীকে সঞ্জীবিত করেন তার মৃত্যুর পরে, আর বায়ু প্রবাহের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা জ্ঞান-বুদ্ধি রাখে।

تِلْكَ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤْمِنُونَ ﴿٦﴾

এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি আপনার কাছে আবৃত্তি করি যথাযথরূপে। অতএব, আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর তারা কোন কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে।

জহুরুল হক

এইসব হচ্ছে আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী যা আমরা তোমার কাছে আবৃত্তি করছি যথাযথভাবে, সুতরাং আল্লাহ্ ও তাঁর নির্দেশাবলীর পরে কোন ধর্মোপদেশে তারা বিশ্বাস করবে?

وَيْلٌۭ لِّكُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍۢ ﴿٧﴾

প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারীর দুর্ভোগ।

জহুরুল হক

ধিক্ প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের প্রতি।

يَسْمَعُ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ تُتْلَىٰ عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًۭا كَأَن لَّمْ يَسْمَعْهَا ۖ فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍۢ ﴿٨﴾

সে আল্লাহর আয়াতসমূহ শুনে, অতঃপর অহংকারী হয়ে জেদ ধরে, যেন সে আয়াত শুনেনি। অতএব, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।

জহুরুল হক

যে আল্লাহ্‌র বাণীসমূহ তার কাছে পঠিত হতে শোনে, তারপর সে অহংকারের মধ্যে অটল থাকে যেন সে সে-সব শোনেই নি। সেজন্য তাকে সুসংবাদ দাও মর্মন্তুদ শাস্তির।

وَإِذَا عَلِمَ مِنْ ءَايَٰتِنَا شَيْـًٔا ٱتَّخَذَهَا هُزُوًا ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ ﴿٩﴾

যখন সে আমার কোন আয়াত অবগত হয়, তখন তাকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করে। এদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।

জহুরুল হক

আর যখন সে আমাদের বাণীগুলো থেকে কোনো কিছু জানতে পারে সে সে-সবকে তামাশা ব’লে গ্রহণ করে। এরাই -- এদেরই জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।

مِّن وَرَآئِهِمْ جَهَنَّمُ ۖ وَلَا يُغْنِى عَنْهُم مَّا كَسَبُوا۟ شَيْـًۭٔا وَلَا مَا ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوْلِيَآءَ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿١٠﴾

তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম। তারা যা উপার্জন করেছে, তা তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে তারাও নয়। তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।

জহুরুল হক

তাদের সামনের দিকে রয়েছে জাহান্নাম, আর তারা যা অর্জন করেছে তা তাদেরকে কোনোভাবেই লাভবান করবে না, আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে যাদের তারা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছিল তারাও না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।

هَٰذَا هُدًۭى ۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِ رَبِّهِمْ لَهُمْ عَذَابٌۭ مِّن رِّجْزٍ أَلِيمٌ ﴿١١﴾

এটা সৎপথ প্রদর্শন, আর যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

জহুরুল হক

এই হচ্ছে পথনির্দেশ, আর যারা তাদের প্রভুর বাণীসমূহ প্রত্যাখ্যান করে তাদের জন্য রয়েছে কলুষতার দরুন মর্মন্তুদ শাস্তি।

۞ ٱللَّهُ ٱلَّذِى سَخَّرَ لَكُمُ ٱلْبَحْرَ لِتَجْرِىَ ٱلْفُلْكُ فِيهِ بِأَمْرِهِۦ وَلِتَبْتَغُوا۟ مِن فَضْلِهِۦ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿١٢﴾

তিনি আল্লাহ যিনি সমুদ্রকে তোমাদের উপকারার্থে আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন, যাতে তাঁর আদেশক্রমে তাতে জাহাজ চলাচল করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।

জহুরুল হক

আল্লাহ্‌ই তিনি যিনি সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তাঁর বিধান অনুযায়ী জাহাজগুলো তাতে চলতে পারে, আর যেন তোমরা তাঁর করুণাভান্ডার থেকে অনুসন্ধান করতে পার, আর তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।

وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ جَمِيعًۭا مِّنْهُ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَٰتٍۢ لِّقَوْمٍۢ يَتَفَكَّرُونَ ﴿١٣﴾

এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

জহুরুল হক

আর তিনি তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন মহাকাশমন্ডলীতে যা-কিছু আছে আর যা-কিছু রয়েছে পৃথিবীতে, -- এ সমস্ত তাঁর কাছ থেকে। নিঃসন্দেহ এতে তো নিদর্শনাবলী রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা চিন্তা করে।

قُل لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يَغْفِرُوا۟ لِلَّذِينَ لَا يَرْجُونَ أَيَّامَ ٱللَّهِ لِيَجْزِىَ قَوْمًۢا بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ ﴿١٤﴾

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে, যারা আল্লাহর সে দিনগুলো সম্পর্কে বিশ্বাস রাখে না যাতে তিনি কোন সম্প্রদায়কে কৃতকর্মের প্রতিফল দেন।

জহুরুল হক

যারা বিশ্বাস করে তাদের তুমি বলো যে তারা ক্ষমা করুক তাদের যারা আল্লাহ্‌র দিনগুলোর প্রত্যাশা করে না, এই জন্য যে তিনি লোকদের যেন প্রতিদান দিতে পারেন যা তারা অর্জন করছিল সেজন্য।

مَنْ عَمِلَ صَٰلِحًۭا فَلِنَفْسِهِۦ ۖ وَمَنْ أَسَآءَ فَعَلَيْهَا ۖ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ ﴿١٥﴾

যে সৎকাজ করছে, সে নিজের কল্যাণার্থেই তা করছে, আর যে অসৎকাজ করছে, তা তার উপরই বর্তাবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

যে কেউ সৎকর্ম করে তা তবে তার নিজের জন্যে, আর যে মন্দ করে তা তবে তারই বিরুদ্ধে, তারপর তোমাদের প্রভুর তরফেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

وَلَقَدْ ءَاتَيْنَا بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحُكْمَ وَٱلنُّبُوَّةَ وَرَزَقْنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلْنَٰهُمْ عَلَى ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿١٦﴾

আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়ত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে পরিচ্ছন্ন রিযিক দিয়েছিলাম এবং বিশ্ববাসীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।

জহুরুল হক

আর আমরা অবশ্য ইসরাইলের বংশধরদের দিয়েইছিলাম গ্রন্থ ও জ্ঞান-বিজ্ঞান ও পয়গন্বরত্ব, আর আমরা তাদের জীবিকা দিয়েছিলাম উত্তম জিনিস থেকে, আর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম জনগণের উপরে।

وَءَاتَيْنَٰهُم بَيِّنَٰتٍۢ مِّنَ ٱلْأَمْرِ ۖ فَمَا ٱخْتَلَفُوٓا۟ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْعِلْمُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِى بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فِيمَا كَانُوا۟ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ﴿١٧﴾

আরও দিয়েছিলাম তাদেরকে ধর্মের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। অতঃপর তারা জ্ঞান লাভ করার পর শুধু পারস্পরিক জেদের বশবর্তী হয়ে মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, আপনার পালনকর্তা কেয়ামতের দিন তার ফয়সালা করে দেবেন।

জহুরুল হক

আর আমরা তাদের দিয়েছিলাম বিষয়টি সন্বন্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণাবলী, কিন্ত তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরেও তারা মতভেদ করে নি নিজেদের মধ্যে ঈর্ষা বিদ্বেষ ব্যতীত। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে বিচার-মীমাংসা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত সে-সন্বন্ধে।

ثُمَّ جَعَلْنَٰكَ عَلَىٰ شَرِيعَةٍۢ مِّنَ ٱلْأَمْرِ فَٱتَّبِعْهَا وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَ ٱلَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ ﴿١٨﴾

এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না।

জহুরুল হক

এরপর আমরা তোমাকে ব্যাপারটিতে এক সংবিধানের উপরে প্রতিষ্ঠিত করেছি, কাজেই তুমি তা অনুসরণ করো, আর তুমি তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর না যারা জানে না।

إِنَّهُمْ لَن يُغْنُوا۟ عَنكَ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا ۚ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍۢ ۖ وَٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلْمُتَّقِينَ ﴿١٩﴾

আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোনো কিছুতেই তোমাকে আদৌ লাভবান করবে না। আর আলবৎ অন্যায়াচারীরা -- তাদের কেউ-কেউ অপর কারোর বন্ধু, আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ধর্মভীরু-দের বান্ধব।

هَٰذَا بَصَٰٓئِرُ لِلنَّاسِ وَهُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُوقِنُونَ ﴿٢٠﴾

এটা মানুষের জন্যে জ্ঞানের কথা এবং বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত।

জহুরুল হক

এই হচ্ছে মানবজাতির জন্য দৃষ্টিদায়ক, আর পথপ্রদর্শক ও করুণা সেই লোকদের জন্য যারা সুনিশ্চিত।

أَمْ حَسِبَ ٱلَّذِينَ ٱجْتَرَحُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ أَن نَّجْعَلَهُمْ كَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ سَوَآءًۭ مَّحْيَاهُمْ وَمَمَاتُهُمْ ۚ سَآءَ مَا يَحْكُمُونَ ﴿٢١﴾

যারা দুস্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে? তাদের দাবী কত মন্দ।

জহুরুল হক

যারা দুস্কর্ম করেছে তারা কি ভাবে যে আমরা তাদের বানিয়ে দেব তাদের মতো যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে -- তাদের জীবন ও তাদের মরণ কি এক সমান? কত নিকৃষ্ট যা তারা সিদ্ধান্ত করে!

وَخَلَقَ ٱللَّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ بِٱلْحَقِّ وَلِتُجْزَىٰ كُلُّ نَفْسٍۭ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ﴿٢٢﴾

আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।

জহুরুল হক

আর আল্লাহ্ মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে, আর যাতে প্রত্যেক সত্ত্বাকে প্রতিফল দেওয়া হয় সে যা অর্জন করেছে তাই দিয়ে, আর তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।

أَفَرَءَيْتَ مَنِ ٱتَّخَذَ إِلَٰهَهُۥ هَوَىٰهُ وَأَضَلَّهُ ٱللَّهُ عَلَىٰ عِلْمٍۢ وَخَتَمَ عَلَىٰ سَمْعِهِۦ وَقَلْبِهِۦ وَجَعَلَ عَلَىٰ بَصَرِهِۦ غِشَٰوَةًۭ فَمَن يَهْدِيهِ مِنۢ بَعْدِ ٱللَّهِ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿٢٣﴾

আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না?

জহুরুল হক

তুমি কি তবে তাকে লক্ষ্য করেছ যে তার খেয়াল-খুশিকে তার উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? আর আল্লাহ্ জেনে-শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট হতে দিয়েছেন, আর তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন তার শ্রবণেন্দ্রিয়ে ও তার হৃদয়ে, আর তার দর্শনেন্দ্রিয়ের উপরে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন একটি পর্দা। কাজেই আল্লাহ্‌র পরে আর কে তাকে পথ দেখাবে? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না?

وَقَالُوا۟ مَا هِىَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا يُهْلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهْرُ ۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ ﴿٢٤﴾

তারা বলে, আমাদের পার্থিব জীবনই তো শেষ; আমরা মরি ও বাঁচি মহাকালই আমাদেরকে ধ্বংস করে। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই। তারা কেবল অনুমান করে কথা বলে।

জহুরুল হক

আর তারা বলে -- ''আমাদের দুনিয়ার জীবন ছাড়া এইটি আর কিছুই নয়, আমরা মরি আর আমরা বেঁচে থাকি, আর কিছুই আমাদের ধ্বংস করে না সময় ব্যতীত।’’ আর এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা অনুমান করছে বৈ তো নয়।

وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتُنَا بَيِّنَٰتٍۢ مَّا كَانَ حُجَّتَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ ٱئْتُوا۟ بِـَٔابَآئِنَآ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ﴿٢٥﴾

তাদের কাছে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন একথা বলা ছাড়া তাদের কোন মুক্তিই থাকে না যে, তোমরা সত্যবাদী হলে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে নিয়ে আস।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট বাণীসমূহ পাঠ করা হয় তখন তাদের বিতর্ক আর কিছু নয় এ ভিন্ন যে তারা বলে, ''আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে এস যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’

قُلِ ٱللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿٢٦﴾

আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর মৃত্যু দেন, অতঃপর তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না।

জহুরুল হক

তুমি বলো -- ''আল্লাহ্‌ই তোমাদের জীবন দান করেন, তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান, তারপর তিনি তোমাদের একত্রিত করবেন কিয়ামতের দিনে -- তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্ত অধিকাংশ লোকেই জানে না।’’

وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ وَيَوْمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يَوْمَئِذٍۢ يَخْسَرُ ٱلْمُبْطِلُونَ ﴿٢٧﴾

নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জহুরুল হক

আর আল্লাহ্‌রই হচ্ছে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব। আর যেদিন ঘড়িঘন্টা দাঁড়িয়ে যাবে, সেইদিন বাতিল- আখ্যাদানকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

وَتَرَىٰ كُلَّ أُمَّةٍۢ جَاثِيَةًۭ ۚ كُلُّ أُمَّةٍۢ تُدْعَىٰٓ إِلَىٰ كِتَٰبِهَا ٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿٢٨﴾

আপনি প্রত্যেক উম্মতকে দেখবেন নতজানু অবস্থায়। প্রত্যেক উম্মতকে তাদের আমলনামা দেখতে বলা হবে। তোমরা যা করতে, অদ্য তোমারদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।

জহুরুল হক

আর তুমি দেখতে পাবে প্রত্যেক সম্প্রদায় নতজানু হতে, প্রত্যেক সম্প্রদায়কে ডাকা হবে তার কিতাবের প্রতি। ''আজকের দিনে তোমাদের প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে তোমরা যা করতে তাই দিয়ে।

هَٰذَا كِتَٰبُنَا يَنطِقُ عَلَيْكُم بِٱلْحَقِّ ۚ إِنَّا كُنَّا نَسْتَنسِخُ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿٢٩﴾

আমার কাছে রক্ষিত এই আমলনামা তোমাদের সম্পর্কে সত্য কথা বলবে। তোমরা যা করতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতাম।

জহুরুল হক

''এইটি আমাদের কিতাব যা তোমাদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে বর্ণনা করে। নিঃসন্দেহ আমরা লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছি যা তোমরা করে চলেছ।’’

فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَيُدْخِلُهُمْ رَبُّهُمْ فِى رَحْمَتِهِۦ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْفَوْزُ ٱلْمُبِينُ ﴿٣٠﴾

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদেরকে তাদের পালনকর্তা স্বীয় রহমতে দাখিল করবেন। এটাই প্রকাশ্য সাফল্য।

জহুরুল হক

সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে তাদের প্রভু তাদের প্রবেশ করাবেন তাঁর করুণায়। এইটিই হচ্ছে প্রকাশ্য সাফল্য।

وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَفَلَمْ تَكُنْ ءَايَٰتِى تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَٱسْتَكْبَرْتُمْ وَكُنتُمْ قَوْمًۭا مُّجْرِمِينَ ﴿٣١﴾

আর যারা কুফর করেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের কাছে কি আয়াতসমূহ পঠিত হত না? কিন্তু তোমরা অহংকার করছিলে এবং তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।

জহুরুল হক

পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস পোষণ করে -- ''এমনটা কি নয় যে আমার বাণীসমূহ তোমাদের কাছে পঠিত হয়েছে? কিন্ত তোমরা গর্ববোধ করছিলে, আর তোমরা ছিলে এক অপরাধী সম্প্রদায়।

وَإِذَا قِيلَ إِنَّ وَعْدَ ٱللَّهِ حَقٌّۭ وَٱلسَّاعَةُ لَا رَيْبَ فِيهَا قُلْتُم مَّا نَدْرِى مَا ٱلسَّاعَةُ إِن نَّظُنُّ إِلَّا ظَنًّۭا وَمَا نَحْنُ بِمُسْتَيْقِنِينَ ﴿٣٢﴾

যখন বলা হত, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই, তখন তোমরা বলতে আমরা জানি না কেয়ামত কি ? আমরা কেবল ধারণাই করি এবং এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই।

জহুরুল হক

''আর যখন বলা হয় -- 'নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য, আর ঘড়িঘন্টা -- এতে কোনো সন্দেহ নেই’, তোমরা তখন বলে থাক -- 'আমরা জানি না কী সেই ঘড়ি, আমরা বিবেচনা করি কাল্পনিক বৈ তো নয়, আর আমরা আদে সুনিশ্চিত নই’ ।’’

وَبَدَا لَهُمْ سَيِّـَٔاتُ مَا عَمِلُوا۟ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا۟ بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ ﴿٣٣﴾

তাদের মন্দ কর্ম গুলো তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং যে আযাব নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা তাদেরকে গ্রাস করবে।

জহুরুল হক

আর তারা যা করেছিল তার দুস্কর্মগুলো তাদের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়বে, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত তা তাদের পরিবেষ্টন করবে।

وَقِيلَ ٱلْيَوْمَ نَنسَىٰكُمْ كَمَا نَسِيتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هَٰذَا وَمَأْوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن نَّٰصِرِينَ ﴿٣٤﴾

বলা হবে, আজ আমি তোমাদেরকে ভুলে যাব, যেমন তোমরা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিলে। তোমাদের আবাসস্থল জাহান্নাম এবং তোমাদের সাহায্যকারী নেই।

জহুরুল হক

আর বলা হবে -- ''আজ আমরা তোমাদের ভুলে থাকব যেমন তোমরা তোমাদের এই দিনটির সাক্ষাৎ পাওয়াকে ভুলে থাকতে, ফলত তোমাদের আশ্রয়স্থল হচ্ছে আগুন, আর তোমাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।

ذَٰلِكُم بِأَنَّكُمُ ٱتَّخَذْتُمْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ هُزُوًۭا وَغَرَّتْكُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۚ فَٱلْيَوْمَ لَا يُخْرَجُونَ مِنْهَا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ ﴿٣٥﴾

এটা এজন্যে যে, তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্টারূপে গ্রহণ করেছিলে এবং পার্থিব জীবন তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল। সুতরাং আজ তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে না এবং তাদের কাছে তওবা চাওয়া হবে না।

জহুরুল হক

''এইটিই! কেননা তোমরা আল্লাহ্‌র বাণীসমূহকে তামাশা বলে গণ্য করেছিলে, ফলস্বরূপে এই দুনিয়ার জীবন তোমাদের প্রতারিত করেছিল।’’ সেজন্য আজকের দিনটায় সেখান থেকে তাদের বের করা হবে না, আর তাদের প্রতি সদয়তাও দেখানো হবে না।

فَلِلَّهِ ٱلْحَمْدُ رَبِّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَرَبِّ ٱلْأَرْضِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٣٦﴾

অতএব, বিশ্বজগতের পালনকর্তা, ভূ-মন্ডলের পালনকর্তা ও নভোমন্ডলের পালনকর্তা আল্লাহর-ই প্রশংসা।

জহুরুল হক

অতএব আল্লাহ্‌রই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি মহাকাশমন্ডলীর প্রভু ও পৃথিবীরও প্রভু, -- সমস্ত বিশ্বজগতের প্রভু।

وَلَهُ ٱلْكِبْرِيَآءُ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ وَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ﴿٣٧﴾

নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁরই গৌরব। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

জহুরুল হক

আর তাঁরই হচ্ছে সমস্ত গৌরব-গরিমা মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে, আর তিনি হচ্ছেন মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।