Setting
Surah Banning [At-Tahrim] in Bengali
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَآ أَحَلَّ ٱللَّهُ لَكَ ۖ تَبْتَغِى مَرْضَاتَ أَزْوَٰجِكَ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿١﴾
হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্যে যা হালাল করছেন, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করেছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়।
হে প্রিয় নবী! কেন তুমি তা নিষিদ্ধ করছ যা আল্লাহ্ তোমার জন্য বৈধ করছেন? তুমি চাইছ তোমার স্ত্রীদের খুশি করতে? আর আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
قَدْ فَرَضَ ٱللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَٰنِكُمْ ۚ وَٱللَّهُ مَوْلَىٰكُمْ ۖ وَهُوَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْحَكِيمُ ﴿٢﴾
আল্লাহ তোমাদের জন্যে কসম থেকে অব্যহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তোমাদের মালিক। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বিধান দিয়ে রেখেছেন তোমাদের শপথগুলো থেকে মুক্তির উপায়; আর আল্লাহ্ তোমাদের রক্ষাকারী বন্ধু, আর তিনিই সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।
وَإِذْ أَسَرَّ ٱلنَّبِىُّ إِلَىٰ بَعْضِ أَزْوَٰجِهِۦ حَدِيثًۭا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِۦ وَأَظْهَرَهُ ٱللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُۥ وَأَعْرَضَ عَنۢ بَعْضٍۢ ۖ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِۦ قَالَتْ مَنْ أَنۢبَأَكَ هَٰذَا ۖ قَالَ نَبَّأَنِىَ ٱلْعَلِيمُ ٱلْخَبِيرُ ﴿٣﴾
যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন, তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন,ঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।
আর স্মরণ করো! নবী তাঁর স্ত্রীদের কোনো একজনের কাছে গোপনে একটি সংবাদ দিয়েছিলেন; -- কিন্ত তিনি যখন তা বলে দিলেন, এবং আল্লাহ্ তাঁর কাছে এটি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁকে তার কতকটা জানিয়েছিলেন এবং চেপে গিয়েছিলেন অন্য কতকটা। তিনি যখন তাঁকে তা জানিয়েছিলেন তখন তিনি বললেন -- ''কে আপনাকে এ কথা বললে?’’ তিনি বলেছিলেন -- ''আমাকে সংবাদ দিয়েছেন সেই সর্বজ্ঞাতা, চির-ওয়াকিফহাল।’’
إِن تَتُوبَآ إِلَى ٱللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا ۖ وَإِن تَظَٰهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ هُوَ مَوْلَىٰهُ وَجِبْرِيلُ وَصَٰلِحُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةُ بَعْدَ ذَٰلِكَ ظَهِيرٌ ﴿٤﴾
তোমাদের অন্তর অন্যায়ের দিকে ঝুঁকে পড়েছে বলে যদি তোমরা উভয়ে তওবা কর, তবে ভাল কথা। আর যদি নবীর বিরুদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, তবে জেনে রেখ আল্লাহ জিবরাঈল এবং সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ তাঁর সহায়। উপরন্তুত ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।
যদি তোমরা উভয়ে আল্লাহ্র দিকে ফেরো, কেননা তোমাদের হৃদয় ইতিপূর্বেই ঝোঁকে গেছে। কিন্ত যদি তোমরা দুজনে তাঁর বিরুদ্ধে পৃষ্ঠপোষকতা কর তাহলে আল্লাহ্ -- তিনিই তাঁর রক্ষাকারী বন্ধু, আর জিব্রীল ও পুণ্যবান মুমিনগণ, আর উপরন্ত ফিরিশ্তারাও পৃষ্ঠপোষক।
عَسَىٰ رَبُّهُۥٓ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُۥٓ أَزْوَٰجًا خَيْرًۭا مِّنكُنَّ مُسْلِمَٰتٍۢ مُّؤْمِنَٰتٍۢ قَٰنِتَٰتٍۢ تَٰٓئِبَٰتٍ عَٰبِدَٰتٍۢ سَٰٓئِحَٰتٍۢ ثَيِّبَٰتٍۢ وَأَبْكَارًۭا ﴿٥﴾
যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন, তবে সম্ভবতঃ তাঁর পালনকর্তা তাঁকে পরিবর্তে দিবেন তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী, যারা হবে আজ্ঞাবহ, ঈমানদার, নামাযী তওবাকারিণী, এবাদতকারিণী, রোযাদার, অকুমারী ও কুমারী।
হতে পারে তাঁর প্রভু, যদি তিনি তোমাদের তালাক দিয়ে দেন, তবে তিনি তাঁকে বদলে দেবেন তোমাদের চাইতেও উৎকৃষ্ট স্ত্রীদের -- আত্মসমর্পিতা, বিশ্বাসিনী, বিনয়াবনতা, অনুতাপকারিণী, উপাসনাকারিণী, রোযাপালনকারিণী, স্বামিঘরকারিণী ও কুমারী।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ قُوٓا۟ أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًۭا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٌۭ شِدَادٌۭ لَّا يَعْصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ ﴿٦﴾
মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করো সেই আগুন থেকে যার জ্বালানি হচ্ছে মানুষ ও পাথরগুলো, তার উপরে রয়েছে ফিরিশ্তারা -- অনমনীয়, কঠোর, তারা আল্লাহ্কে অমান্য করে না যা তিনি তাদের আদেশ করে থাকেন, আর তারা তাই করে যা তাদের আদেশ করা হয়।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَا تَعْتَذِرُوا۟ ٱلْيَوْمَ ۖ إِنَّمَا تُجْزَوْنَ مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿٧﴾
হে কাফের সম্প্রদায়, তোমরা আজ ওযর পেশ করো না। তোমাদেরকে তারই প্রতিফল দেয়া হবে, যা তোমরা করতে।
ওহে যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছ! আজকের দিনে কোনো অজুহাত এনো না। নিঃসন্দেহ তোমাদের তো প্রতিফল দেওয়া হচ্ছে যা তোমরা করে থাকতে তারই।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ تُوبُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ تَوْبَةًۭ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّـَٔاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ يَوْمَ لَا يُخْزِى ٱللَّهُ ٱلنَّبِىَّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ ۖ نُورُهُمْ يَسْعَىٰ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَٰنِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَآ أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَٱغْفِرْ لَنَآ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ﴿٨﴾
মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তওবা কর-আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্র দিকে ফেরো বিশুদ্ধ ফেরায়, হতে পারে তোমাদের প্রভু তোমাদের থেকে তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি; সেই দিন আল্লাহ্ অপদস্থ করবেন না নবীকে এবং যারা তাঁর সঙ্গে ঈমান এনেছে তাদের, তাদের রোশনি তাদের সামনে চলবে আর তাদের ডানপাশে, তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভু! আমাদের জন্য আমাদের রোশনি পরিপূর্ণ করো, আর আমাদের পরিত্রাণ করো। নিঃসন্দেহ তুমি সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।’’
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِىُّ جَٰهِدِ ٱلْكُفَّارَ وَٱلْمُنَٰفِقِينَ وَٱغْلُظْ عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَىٰهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ ﴿٩﴾
হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান।
হে প্রিয় নবী! জিহাদ করো অবিশ্বাসীদের ও মুনাফিকদের সঙ্গে, আর তাদের প্রতি কঠোর হও। আর তাদের আবাসস্থল হচ্ছে জাহান্নাম, আর মন্দ সেই গন্তব্যস্থান!
ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ٱمْرَأَتَ نُوحٍۢ وَٱمْرَأَتَ لُوطٍۢ ۖ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَٰلِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمَا مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا وَقِيلَ ٱدْخُلَا ٱلنَّارَ مَعَ ٱلدَّٰخِلِينَ ﴿١٠﴾
আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের জন্যে নূহ-পত্নী ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা ছিল আমার দুই ধর্মপরায়ণ বান্দার গৃহে। অতঃপর তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করল। ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে রক্ষা করতে পারল না এবং তাদেরকে বলা হলঃ জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও।
আল্লাহ্ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত করছেন তাদের জন্য যারা অবিশ্বাস পোষণ করে, -- নূহের স্ত্রীর ও লূতের স্ত্রীর। তারা উভয়ে ছিল আমাদের বান্দাদের মধ্যের দুইজন সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীনে, কিন্ত তারা তাঁদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, ফলে তাঁরা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে তাদের কোনো কাজে আসেন নি; আর বলা হবে -- ''তোমরা দুজনেও প্রবেশকারীদের সঙ্গে আগুনে প্রবেশ করো।’’
وَضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلًۭا لِّلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱمْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قَالَتْ رَبِّ ٱبْنِ لِى عِندَكَ بَيْتًۭا فِى ٱلْجَنَّةِ وَنَجِّنِى مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِۦ وَنَجِّنِى مِنَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿١١﴾
আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।
আর আল্লাহ্ একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত করছেন তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে, -- ফিরআউনের স্ত্রীর। স্মরণ করো! সে বলেছিল -- ''আমার প্রভু! আমার জন্য বেহেশতে তোমার সন্নিকটে একটি আবাস তৈরি করো, আর আমাকে উদ্ধার করো ফিরআউন ও তার ক্রিয়াকলাপ থেকে, আর আমাকে উদ্ধার করো অন্যায়াচারী লোকদের থেকে।’’
وَمَرْيَمَ ٱبْنَتَ عِمْرَٰنَ ٱلَّتِىٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَٰتِ رَبِّهَا وَكُتُبِهِۦ وَكَانَتْ مِنَ ٱلْقَٰنِتِينَ ﴿١٢﴾
আর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এমরান-তনয়া মরিয়মের, যে তার সতীত্ব বজায় রেখেছিল। অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার পক্ষ থেকে জীবন ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং সে তার পালনকর্তার বানী ও কিতাবকে সত্যে পরিণত করেছিল। সে ছিল বিনয় প্রকাশকারীনীদের একজন।
আর ইমরানের কন্যা মরিয়ম, যে তার আঙ্গিক কর্তব্যাবলী রক্ষা করেছিল, ফলে আমরা তার মধ্যে আমাদের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম, আর সে তার প্রভুর বাণীকে ও তাঁর গ্রন্থগুলোকে সত্য জেনেছিল, আর সে ছিল বিনয়াবনতদের মধ্যেকার।