Main pages

Surah The heights [Al-Araf] in Bengali

Surah The heights [Al-Araf] Ayah 206 Location Maccah Number 7

الٓمٓصٓ ﴿١﴾

আলিফ, লাম, মীম, ছোয়াদ।

জহুরুল হক

আলিফ, লাম, মীম, স্বাদ।

كِتَٰبٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِى صَدْرِكَ حَرَجٌۭ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِۦ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ ﴿٢﴾

এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে করে আপনি এর মাধ্যমে ভীতি-প্রদর্শন করেন। অতএব, এটি পৌছে দিতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয়। আর এটিই বিশ্বাসীদের জন্যে উপদেশ।

জহুরুল হক

তোমার কাছে অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ, -- অতএব তোমার বক্ষে এর জন্য কোন সংকোচ না থাকুক -- যেন তুমি এর দ্বারা সতর্ক করতে পারো, এবং মুমিনদের জন্য একটি স্মারক।

ٱتَّبِعُوا۟ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦٓ أَوْلِيَآءَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَذَكَّرُونَ ﴿٣﴾

তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না।

জহুরুল হক

''তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অনুসরণ করো আর তাঁকে বাদ দিয়ে অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। অল্পই যা তোমরা মনে রাখো।’’

وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَٰهَا فَجَآءَهَا بَأْسُنَا بَيَٰتًا أَوْ هُمْ قَآئِلُونَ ﴿٤﴾

আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। অনেক জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের কাছে আমার আযাব রাত্রি বেলায় পৌছেছে অথবা দ্বিপ্রহরে বিশ্রামরত অবস্থায়।

জহুরুল হক

আর জনবসতির মধ্যের কতটা যে আমরা ধ্বংস করেছি, তাই আমাদের শাস্তি তাতে এসেছিল নিশাকালে, অথবা তারা যখন দুপুরবেলায় ঘুম দিচ্ছিল।

فَمَا كَانَ دَعْوَىٰهُمْ إِذْ جَآءَهُم بَأْسُنَآ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ إِنَّا كُنَّا ظَٰلِمِينَ ﴿٥﴾

অনন্তর যখন তাদের কাছে আমার আযাব উপস্থিত হয়, তখন তাদের কথা এই ছিল যে, তারা বললঃ নিশ্চয় আমরা অত্যাচারী ছিলাম।

জহুরুল হক

কাজেই তাদের কাছে যখন আমাদের শাস্তি এসে পড়েছিল তখন তাদের অজুহাত আর কিছু ছিল না এই বলা ছাড়া -- ''নিঃসন্দেহ আমরা ছিলাম অন্যায়কারী।’’

فَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَٔلَنَّ ٱلْمُرْسَلِينَ ﴿٦﴾

অতএব, আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব যাদের কাছে রসূল প্রেরিত হয়েছিল এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে জিজ্ঞেস করব রসূলগণকে।

জহুরুল হক

আমরা তখন তাদের অবশ্যই প্রশ্ন করবো যাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল, আর আমরা নিশ্চয়ই প্রেরিত-পুরুষগণকেও জিজ্ঞাসা করবো।

فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍۢ ۖ وَمَا كُنَّا غَآئِبِينَ ﴿٧﴾

অতঃপর আমি স্বজ্ঞানে তাদের কাছে অবস্থা বর্ণনা করব। বস্তুতঃ আমি অনুপস্থিত তো ছিলাম না।

জহুরুল হক

তখন আমরা নিশ্চয়ই তাদের কাছে বর্ণনা করবো জ্ঞানের সাথে, আর আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না।

وَٱلْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ ٱلْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ ﴿٨﴾

আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে।

জহুরুল হক

আর সেদিন ওজন হবে সঠিকভাবে। কাজেই যার পাল্লা ভারী হবে তারাই তবে হবে সফলকাম।

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا يَظْلِمُونَ ﴿٩﴾

এবং যাদের পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই এমন হবে, যারা নিজেদের ক্ষতি করেছে। কেননা, তারা আমার আয়াত সমূহ অস্বীকার করতো।

জহুরুল হক

আর যার পাল্লা হাল্কা হবে এরাই তবে তারা যারা তাদের আ‌ত্মার ক্ষতি সাধন করেছে, কেননা তারা আমাদের নির্দেশাবলীর প্রতি অন্যায় করেছিল।

وَلَقَدْ مَكَّنَّٰكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَٰيِشَ ۗ قَلِيلًۭا مَّا تَشْكُرُونَ ﴿١٠﴾

আমি তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠাই দিয়েছি এবং তোমাদের জীবিকা নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।

জহুরুল হক

আর আমরা তো পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, আর তোমাদের জন্য তাতে করেছি জীবিকার ব্যবস্থা। অল্পই সেইটুকু যা কৃতজ্ঞতা তোমার জ্ঞাপন করো।

وَلَقَدْ خَلَقْنَٰكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَٰكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَٰٓئِكَةِ ٱسْجُدُوا۟ لِءَادَمَ فَسَجَدُوٓا۟ إِلَّآ إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ ٱلسَّٰجِدِينَ ﴿١١﴾

আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

জহুরুল হক

আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের রূপদান করেছি, তারপর ফিরিশ্‌তাদের বললাম -- ''আদমের প্রতি সিজদা করো।’’ কাজেই তারা সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস করলো না সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।

قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا۠ خَيْرٌۭ مِّنْهُ خَلَقْتَنِى مِن نَّارٍۢ وَخَلَقْتَهُۥ مِن طِينٍۢ ﴿١٢﴾

আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''কি তোমাকে বাধা দিয়েছিল যেজন্য তুমি সিজদা করলে না যখন আমি তোমাকে আদেশ করেছিলাম?’’ সে বললে -- ''আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, আমাকে তুমি আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ, আর তাকে তুমি সৃষ্টি করেছ কাদা দিয়ে।’’

قَالَ فَٱهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَٱخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّٰغِرِينَ ﴿١٣﴾

বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''তবে এখানে থেকে রসাতলে যাও, তোমার জন্য নয় যে তুমি এখানে অহংকার করবে। কাজেই বেরিয়ে যাও, তুমি আলবৎ অধমদের মধ্যেকার।’’

قَالَ أَنظِرْنِىٓ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ ﴿١٤﴾

সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।

জহুরুল হক

সে বললে -- ''আমাকে সময় দাও সেইদিন পর্যন্ত যখন তারা পুনরুত্থিত হবে।’’

قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلْمُنظَرِينَ ﴿١٥﴾

আল্লাহ বললেনঃ তোকে সময় দেয়া হল।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''বেশ, তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের মধ্যেকার।’’

قَالَ فَبِمَآ أَغْوَيْتَنِى لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَٰطَكَ ٱلْمُسْتَقِيمَ ﴿١٦﴾

সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো।

জহুরুল হক

সে বললে -- ''তবে তুমি যেমন আমাকে বিপথে যেতে দিয়েছ, আমিও তেমনি ওত পেতে থাকবো তাদের জন্য তোমার সহজ- সঠিক পথে।

ثُمَّ لَءَاتِيَنَّهُم مِّنۢ بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَٰنِهِمْ وَعَن شَمَآئِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَٰكِرِينَ ﴿١٧﴾

এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বাম দিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।

জহুরুল হক

''তারপর আমি আলবৎ তাদের উপরে এসে পড়বো তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে, আর তাদের ডাইনে থেকে ও তাদের বামে থেকে, আর তাদের অনেককেই তুমি কৃতজ্ঞ পাবে না।’’

قَالَ ٱخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًۭا مَّدْحُورًۭا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ ﴿١٨﴾

আল্লাহ বললেনঃ বের হয়ে যা এখান থেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে। তাদের যে কেউ তোর পথেচলবে, নিশ্চয় আমি তোদের সবার দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করে দিব।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''বেরোও এখান থেকে, বেহায়া, বিতাড়িত! তাদের মধ্যের যে কেউ তোমার অনুসরণ করবে, -- আমি নিশ্চয় জাহান্নাম ভর্তি করবো তোমাদের মধ্যের সবকে দিয়ে।’’

وَيَٰٓـَٔادَمُ ٱسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ ٱلْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿١٩﴾

হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। অতঃপর সেখান থেকে যা ইচ্ছা খাও তবে এ বৃক্ষের কাছে যেয়োনা তাহলে তোমরা গোনাহগার হয়ে যাবে।

জহুরুল হক

আর -- ''হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী এই বাগানে বসবাস করো, আর যেখান থেকে তোমরা চাও আহার করো, কিন্তু এই বৃক্ষের ধারেকাছেও যেও না, তাহলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’

فَوَسْوَسَ لَهُمَا ٱلشَّيْطَٰنُ لِيُبْدِىَ لَهُمَا مَا وُۥرِىَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَٰتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّآ أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ ٱلْخَٰلِدِينَ ﴿٢٠﴾

অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা না আবার ফেরেশতা হয়ে যাও-কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী।

জহুরুল হক

তারপর শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিলে যেন সে তাদের কাছে প্রকাশ করতে পারে তাদের লজ্জার বিষয়ের যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাই সে বললে -- ''তোমাদের প্রভু এই গাছের থেকে তোমাদের নিষেধ করেন নি এই জন্য ছাড়া যে তোমরা ফিরিশ্‌তা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা হবে চিরজীবীদের অন্তর্ভুক্ত।’’

وَقَاسَمَهُمَآ إِنِّى لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّٰصِحِينَ ﴿٢١﴾

সে তাদের কাছে কসম খেয়ে বললঃ আমি অবশ্যই তোমাদের হিতাকাঙ্খী।

জহুরুল হক

আর সে তাদের কাছে কসম খেলো -- ''নিঃসন্দেহ আমি তো তোমাদের জন্য সদুপদেশদাতাদের মধ্যেকার।’’

فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورٍۢ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْءَٰتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ ٱلْجَنَّةِ ۖ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَآ أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَآ إِنَّ ٱلشَّيْطَٰنَ لَكُمَا عَدُوٌّۭ مُّبِينٌۭ ﴿٢٢﴾

অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। অনন্তর যখন তারা বৃক্ষ আস্বাদন করল, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের সামনে খুলে গেল এবং তারা নিজের উপর বেহেশতের পাতা জড়াতে লাগল। তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করিনি এবং বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।

জহুরুল হক

এভাবে সে তাদের বিপথে চালালো প্রতারণার দ্বারা, অতঃপর তারা যখন বৃক্ষের আস্বাদ গ্রহণ করলো, তখন তাদের লজ্জা তাদের কাছে প্রকাশ পেলো, আর তারা তাদের আবৃত করতে লাগলো সেই বাগানের পাতা দিয়ে। আর তাদের প্রভু তাদের ডেকে বললেন -- ''আমি কি তোমাদের নিষেধ করি নি ঐ বৃক্ষ সন্বন্ধে, আর তোমাদের তো আমি বলেইছি যে শয়তান তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু?’’

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ ﴿٢٣﴾

তারা উভয়ে বললঃ হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আর যদি তুমি আমাদের পরিত্রাণ না করো ও আমাদের তুমি দয়া করো তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।’’

قَالَ ٱهْبِطُوا۟ بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّۭ ۖ وَلَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّۭ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٍۢ ﴿٢٤﴾

আল্লাহ বললেনঃ তোমরা নেমে যাও। তোমরা এক অপরের শত্রু। তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে বাসস্থান আছে এবং একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ফল ভোগ আছে।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- '' তোমরা অধঃপাতে যাও। তোমাদের কেউ কেউ অন্য কারোর শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে জিরানোর স্থান ও কিছু সময়ের জন্য সংস্থান।’’

قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ ﴿٢٥﴾

বললেনঃ তোমরা সেখানেই জীবিত থাকবে, সেখানেই মৃত্যুবরন করবে এবং সেখান থেকেই পুনরুঙ্খিত হবে।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''এইখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, আর এতেই তোমরা মৃত্যু বরণ করবে, আর এরই মধ্য থেকে তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।’’

يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًۭا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًۭا ۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌۭ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ﴿٢٦﴾

হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

জহুরুল হক

হে আদম-সন্তানগণ! আমরা তোমাদের জন্য নিশ্চয়ই পোশাক পাঠিয়েছি তোমাদের লজ্জা ঢাকবার ও বেশভূষার জন্য। আর ধর্মপরায়ণতার পোশাক -- তাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ হচ্ছে আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী থেকে, যেন তারা মনে রাখে।

يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيْطَٰنُ كَمَآ أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ ٱلْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَٰتِهِمَآ ۗ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا ٱلشَّيَٰطِينَ أَوْلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ ﴿٢٧﴾

হে বনী-আদম শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি-যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, , যারা বিশ্বাস স্থাপন করে না।

জহুরুল হক

হে আদম-সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদের কিছুতেই প্রলোভিত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে বের করে দিয়েছিল এই বাগান থেকে, তাদের থেকে তাদের পোশাক ছিন্ন ক’রে, যেন সে তাদের দেখাতে পারে তাদের লজ্জা। নিঃসন্দেহ সে তোমাদের দেখে -- সে ও তার কাফেলা, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। নিঃসন্দেহ আমরা শয়তানকে বানিয়েছি তাদের অভিভাবক যারা বিশ্বাস করে না।

وَإِذَا فَعَلُوا۟ فَٰحِشَةًۭ قَالُوا۟ وَجَدْنَا عَلَيْهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ قُلْ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِٱلْفَحْشَآءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿٢٨﴾

তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না।

জহুরুল হক

আর যখন তারা কোনো অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে -- ''আমরা আমাদের পিতৃপুরুষকে এতে পেয়েছি, আর আল্লাহ্ আমাদের এতে আদেশ করেছেন।’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ অশ্লীলতাতে আদেশ করেন না। তোমরা কি আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে বলো যা তোমরা জানো না?’’

قُلْ أَمَرَ رَبِّى بِٱلْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا۟ وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ وَٱدْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ ۚ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ ﴿٢٩﴾

আপনি বলে দিনঃ আমার প্রতিপালক সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সেজদার সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ এবং তাঁকে খাঁটি আনুগত্যশীল হয়ে ডাক। তোমাদেরকে প্রথমে যেমন সৃষ্টি করেছেন, পুনর্বারও সৃজিত হবে।

জহুরুল হক

তুমি বলো -- ''আমার প্রভু আদেশ দেন ন্যায় বিচারের, আর তোমাদের মুখ সোজা দাঁড় করো প্রত্যেক সিজদাস্থলে, আর তাঁকে ডাকো তাঁর প্রতি ধর্মে একনিষ্ঠভাবে।’’ যেমন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছিলেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে।

فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ ٱلضَّلَٰلَةُ ۗ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلشَّيَٰطِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ ﴿٣٠﴾

একদলকে পথ প্রদর্শন করেছেন এবং একদলের জন্যে পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়ে গেছে। তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং ধারণা করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।

জহুরুল হক

একদলকে তিনি সুপথগামী করেছেন, আর আরেক দলের পথভ্রান্তি তাদের উপরে সংগত হয়েছে। নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে শয়তানদের গ্রহণ করেছিল অভিভাবকরূপে, আর তারা মনে করত যে তারা অবশ্যই সুপথে চালিত।

۞ يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍۢ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ وَلَا تُسْرِفُوٓا۟ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُسْرِفِينَ ﴿٣١﴾

হে বনী-আদম! তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় সাজসজ্জা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর এবং অপব্যয় করো না। তিনি অপব্যয়ীদেরকে পছন্দ করেন না।

জহুরুল হক

হে আদম-সন্তানরা! তোমাদের বেশভূষা গ্রহণ করো প্রত্যেক সিজদাস্থলে, আর খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না, নিঃসন্দেহ তিনি অমিতব্যয়ীদের ভালোবাসেন না।

قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِىٓ أَخْرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَٰتِ مِنَ ٱلرِّزْقِ ۚ قُلْ هِىَ لِلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا خَالِصَةًۭ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْءَايَٰتِ لِقَوْمٍۢ يَعْلَمُونَ ﴿٣٢﴾

আপনি বলুনঃ আল্লাহর সাজ-সজ্জাকে, যা তিনি বান্দাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র খাদ্রবস্তুসমূহকে কে হারাম করেছে? আপনি বলুনঃ এসব নেয়ামত আসলে পার্থিব জীবনে মুমিনদের জন্যে এবং কিয়ামতের দিন খাঁটিভাবে তাদেরই জন্যে। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে।

জহুরুল হক

বলো -- ''কে নিষিদ্ধ করেছে আল্লাহ্‌র শোভা, -- যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, আর জীবিকা থেকে বিশুদ্ধ বস্তুসমূহ?’’ বলো -- ''এ-সব এই দুনিয়ার জীবনে তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে, -- পুনর্জাগরণের দিনে বিশেষভাবে।’’ এইভাবে আমরা আমাদের নির্দেশাবলী বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি তেমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْىَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَٰنًۭا وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿٣٣﴾

আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন, সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।

জহুরুল হক

বলো -- ''নিঃসন্দেহ আমার প্রভু নিষিদ্ধ করেছেন অশ্লীলতা -- তার যা প্রকাশ পায় ও যা গোপন থাকে, আর পাপাচার, আর ন্যায়বিরুদ্ধ বিদ্রোহাচরণ, আর আল্লাহ্‌র সঙ্গে তোমরা যা শরিক করো যার জন্য কোনো দলিল তিনি অবতীর্ণ করেন নি, আর যেন তোমরা আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে বলো যা তোমরা জানো না।’’

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌۭ ۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةًۭ ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ ﴿٣٤﴾

প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একটি মেয়াদ রয়েছে। যখন তাদের মেয়াদ এসে যাবে, তখন তারা না এক মুহুর্ত পিছে যেতে পারবে, আর না এগিয়ে আসতে পারবে।

জহুরুল হক

আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একটি নির্ধারিত কাল, কাজেই যখন তাদের নির্ধারিত কাল এসে পড়ে তখন তারা দেরি করতে পারবে না ঘন্টাখানেকের জন্যে, আর তারা এগিয়েও আনতে পারবে না।

يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌۭ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتِى ۙ فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿٣٥﴾

হে বনী-আদম, যদি তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে পয়গম্বর আগমন করে তোমাদেরকে আমার আয়াত সমূহ শুনায়, তবে যে ব্যক্তি সংযত হয় এবং সৎকাজ অবলম্বন করে, তাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না।

জহুরুল হক

হে আদমের বংশধরগণ! যখন তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্যে থেকে রসূলগণ আসেন তোমাদের কাছে আমার নির্দেশাবলী বর্ণনা করেন, তখন যে কেউ ভয়-ভক্তি করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য তবে থাকবে না ভয়ভীতি, আর তারা করবেও না অনুতাপ।

وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَآ أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ﴿٣٦﴾

যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলবে এবং তা থেকে অহংকার করবে, তারাই দোযখী এবং তথায় চিরকাল থাকবে।

জহুরুল হক

আর যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে মিথ্যারোপ করে আর সে-সব থেকে গর্ববোধ করে, তারাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা, তারা তাতে থাকবে দীর্ঘকাল।

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَٰتِهِۦٓ ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلْكِتَٰبِ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوٓا۟ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَٰفِرِينَ ﴿٣٧﴾

অতঃপর ঐ ব্যক্তির চাইতে অধিক জালেম কে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নির্দেশাবলীকে মিথ্যা বলে? তারা তাদের গ্রন্থে লিখিত অংশ পেয়ে যাবে। এমন কি, যখন তাদের কাছে আমার প্রেরিত ফেরশতারা প্রাণ নেওয়ার জন্যে পৌছে, তখন তারা বলে; তারা কোথায় গেল, যাদের কে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আহবান করতে? তারা উত্তর দেবেঃ আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে, তারা নিজেদের সম্পর্কে স্বীকার করবে যে, তারা অবশ্যই কাফের ছিল।

জহুরুল হক

অতএব তার চাইতে কে বেশী অন্যায়কারী যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করে? এরাই, -- এদের কাছে পৌঁছুবে কিতাব থেকে তাদের ভাগ। শেষ পর্যন্ত যখন আমাদের দূতরা তাদের কাছে আসবে তখন তারা তাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারা বলবে -- ''কোথায় আছে তারা যাদের তোমরা আহ্বান করতে আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে?’’ তারা বলবে -- ''তারা আমাদের থেকে চলে গেছে । আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে তারা নিঃসন্দেহ অবিশ্বাসী ছিল।

قَالَ ٱدْخُلُوا۟ فِىٓ أُمَمٍۢ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ فِى ٱلنَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌۭ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا ٱدَّارَكُوا۟ فِيهَا جَمِيعًۭا قَالَتْ أُخْرَىٰهُمْ لِأُولَىٰهُمْ رَبَّنَا هَٰٓؤُلَآءِ أَضَلُّونَا فَـَٔاتِهِمْ عَذَابًۭا ضِعْفًۭا مِّنَ ٱلنَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّۢ ضِعْفٌۭ وَلَٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ ﴿٣٨﴾

আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে জিন ও মানবের যেসব সম্প্রদায় চলে গেছে, তাদের সাথে তোমরাও দোযখে যাও। যখন এক সম্প্রদায় প্রবেশ করবে; তখন অন্য সম্প্রদায়কে অভিসম্পাত করবে। এমনকি, যখন তাতে সবাই পতিত হবে, তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক এরাই আমাদেরকে বিপথগামী করেছিল। অতএব, আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দিন। আল্লাহ বলবেন প্রত্যেকেরই দ্বিগুণ; তোমরা জান না।

জহুরুল হক

তিনি বলবেন -- ''তোমরা প্রবেশ করো আগুনের মধ্যে দলগতভাবে যারা তোমাদের আগে গত হয়ে গেছে জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। যখনি একটি দল প্রবেশ করবে সে অভিশাপ দেবে তার ভগিনীকে। তারপর যখন তারা সবে মিলে তাতে এসে পড়বে, তাদের পশ্চাদগামীরা তাদের অগ্রগামীদের সন্বন্ধে বলবে -- ''আমাদের প্রভু! এরা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল, সেজন্য তাদের দাও আগুন দ্বারা দ্বিগুণ শাস্তি।’’ তিনি বলবেন -- ''প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জানো না।’’

وَقَالَتْ أُولَىٰهُمْ لِأُخْرَىٰهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍۢ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ ﴿٣٩﴾

পূর্ববর্তীরা পরবর্তীদেরকে বলবেঃ তাহলে আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই অতএব, শাস্তি আস্বাদন কর স্বীয় কর্মের কারণে।

জহুরুল হক

আর তাদের অগ্রগামীরা তাদের পশ্চাদগামীদের বলবে -- ''তাহলে তোমাদের কারণে আমাদের উপরে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, অতএব তোমরা যা অর্জন করে যাচ্ছিলে তার জন্য শাস্তি আস্বাদন করো।’’

إِنَّ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَٱسْتَكْبَرُوا۟ عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدْخُلُونَ ٱلْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلْجَمَلُ فِى سَمِّ ٱلْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُجْرِمِينَ ﴿٤٠﴾

নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করি।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যারা আমাদের নির্দেশসমূহে মিথ্যারোপ করে আর সে-সব থেকে হামবড়াই করে, তাদের জন্য মহাকাশের দ্বার উন্নুক্ত করা হবে না আর তারা বেহেশতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না উট প্রবেশ করে সূচের ছিদ্র দিয়ে। আর এইভাবে আমরা অপরাধীদের প্রতিফল দিই।

لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌۭ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍۢ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿٤١﴾

তাদের জন্যে নরকাগ্নির শয্যা রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর। আমি এমনিভাবে জালেমদেরকে শাস্তি প্রদান করি।

জহুরুল হক

তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শয্যা আর তাদের উপরে রয়েছে আবরণ। আর এইভাবে আমরা প্রতিফল দিই অন্যায়-কারীদের।

وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَآ أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ﴿٤٢﴾

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে আমি কাউকে তার সামর্থ্যের চাইতে বেশী বোঝা দেই না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা তাতেই চিরকাল থাকবে।

জহুরুল হক

আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করছে -- আমরা কোনো সত্ত্বাকে ভারাক্রান্ত করি না তার ক্ষমতার অতিরিক্ত, -- এরাই হচ্ছে জান্নাতের বাসিন্দা, তারা সেখানে থাকবে চিরকাল।

وَنَزَعْنَا مَا فِى صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمُ ٱلْأَنْهَٰرُ ۖ وَقَالُوا۟ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ٱلَّذِى هَدَىٰنَا لِهَٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِىَ لَوْلَآ أَنْ هَدَىٰنَا ٱللَّهُ ۖ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ ۖ وَنُودُوٓا۟ أَن تِلْكُمُ ٱلْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ ﴿٤٣﴾

তাদের অন্তরে যা কিছু দুঃখ ছিল, আমি তা বের করে দেব। তাদের তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণী প্রবাহিত হবে। তারা বলবেঃ আল্লাহ শোকর, যিনি আমাদেরকে এ পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। আমরা কখনও পথ পেতাম না, যদি আল্লাহ আমাদেরকে পথ প্রদর্শন না করতেন। আমাদের প্রতিপালকের রসূল আমাদের কাছে সত্যকথা নিয়ে এসেছিলেন। আওয়াজ আসবেঃ এটি জান্নাত। তোমরা এর উত্তরাধিকারী হলে তোমাদের কর্মের প্রতিদানে।

জহুরুল হক

আর আমরা দূর করে দেবো মনোমালিন্যের যা-কিছু আছে তাদের বুকে, -- তাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলবে ঝরনারাজি, আর তারা বলবে -- ''সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্‌রই যিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন এই দিকে, আর আমরা নিজেরা সুপথ পেতাম না যদি আল্লাহ্ আমাদের পথ না দেখাতেন, নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’’ আর তাদের কাছে ঘোষণা করা হবে -- ''দেখো! এই বেহেশত তোমাদের সামনে, তোমরা এ উত্তরাধিকার করলে তোমরা যা করতে তার জন্য।’’

وَنَادَىٰٓ أَصْحَٰبُ ٱلْجَنَّةِ أَصْحَٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّۭا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّۭا ۖ قَالُوا۟ نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌۢ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿٤٤﴾

জান্নাতীরা দোযখীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি? অতএব, তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবেঃ হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবেঃ আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর।

জহুরুল হক

আর জান্নাতবাসীরা আগুনের বাসিন্দাদের ডেকে বলবে -- ''আমরা নিশ্চয়ই পেয়েছি আমাদের প্রভু আমাদের কাছে যা ওয়াদা করেছিলেন তা সত্য, তোমরাও কি তবে তোমাদের প্রভু যা ওয়াদা করেছিলেন তা সত্য পেয়েছ?’’ তারা বলবে -- ''হাঁ।’’ তখন জনৈক মুওজ্জিন তাদের মধ্যে ঘোষণা করবে -- ''আল্লাহ্‌র ধিক্কার হোক দুরাচারীদের উপরে --

ٱلَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَهُم بِٱلْءَاخِرَةِ كَٰفِرُونَ ﴿٤٥﴾

যারা আল্লাহর পথে বাধা দিত এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করত। তারা পরকালের বিষয়েও অবিশ্বাসী ছিল।

জহুরুল হক

''যারা আল্লাহ্‌র পথ থেকে সরিয়ে দেয় আর তাকে কুটিল করতে চেষ্টা করে, আর তারা আখেরাতের সন্বন্ধে অবিশ্বাসী।’’

وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌۭ ۚ وَعَلَى ٱلْأَعْرَافِ رِجَالٌۭ يَعْرِفُونَ كُلًّۢا بِسِيمَىٰهُمْ ۚ وَنَادَوْا۟ أَصْحَٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَن سَلَٰمٌ عَلَيْكُمْ ۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ ﴿٤٦﴾

উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে এবং আরাফের উপরে অনেক লোক থাকবে। তারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনে নেবে। তারা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা তখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, কিন্তু প্রবেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

জহুরুল হক

আর এই দুয়ের মধ্যে থাকবে একটি পর্দা। আর উঁচু স্থানসমূহে থাকবে কিছু লোক যাঁরা সবাইকে চেনেন তাদের চিহ্নের দ্বারা। আর তাঁরা বেহেশতের আগন্তক বাসিন্দাদের ডেকে বলবেন -- ''সালামুন আলাইকুম।’’ তারা এখনও তাতে প্রবেশ করে নি, তবে তারা আশা রাখে।

۞ وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَٰرُهُمْ تِلْقَآءَ أَصْحَٰبِ ٱلنَّارِ قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿٤٧﴾

যখন তাদের দৃষ্টি দোযখীদের উপর পড়বে, তখন বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এ জালেমদের সাথী করো না।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের দৃষ্টি ফেরানো হবে তখন তা নকরবাসীদের সাক্ষাৎ পাবে, তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভু! অন্যায়কারী দলের সঙ্গে আমাদের ফেলে দিও না।’’

وَنَادَىٰٓ أَصْحَٰبُ ٱلْأَعْرَافِ رِجَالًۭا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَىٰهُمْ قَالُوا۟ مَآ أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ ﴿٤٨﴾

আরাফবাসীরা যাদেরকে তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনবে, তাদেরকে ডেকে বলবে তোমাদের দলবল ও ঔদ্ধত্য তোমাদের কোন কাজে আসেনি।

জহুরুল হক

আর উঁচুস্থানসমূহের বাসিন্দারা ডাকবেন সেইসব লোকদের যাদের তাঁরা চিনতে পারবেন ওদের চিহ্নের দ্বারা, তাঁরা বলবেন -- ''তোমাদের কোনো কাজে এলো না তোমাদের সঞ্চয় আর যা নিয়ে তোমরা হামবড়াই করতে!

أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ٱدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَآ أَنتُمْ تَحْزَنُونَ ﴿٤٩﴾

এরা কি তারাই; যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম খেয়ে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন না। প্রবেশ কর জান্নাতে। তোমাদের কোন আশঙ্কা নেই এবং তোমরা দুঃখিত হবে না।

জহুরুল হক

''এরাই কি! তারা যাদের সন্বন্ধে তোমরা কসম খেয়েছিলে যে আল্লাহ্ তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করবেন না?’’ ''বেহেশতে প্রবেশ করো, তোমাদের উপরে কোনো ভয় নেই, আর তোমরা অনুতাপও করবে না।’’

وَنَادَىٰٓ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ أَصْحَٰبَ ٱلْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا۟ عَلَيْنَا مِنَ ٱلْمَآءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلْكَٰفِرِينَ ﴿٥٠﴾

দোযখীরা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের উপর সামান্য পানি নিক্ষেপ কর অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছেন, তা থেকেই কিছু দাও। তারা বলবেঃ আল্লাহ এই উভয় বস্তু কাফেরদের জন্যে নিষিদ্ধ করেছেন,

জহুরুল হক

আর নরকবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে -- ''আমাদের উপরে পানি কিছুটা ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ্ তোমাদের যা খাওয়াচ্ছেন তা থেকে।’’ তারা বলবে -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ এ দুটোই নিষেধ করেছেন অবিশ্বাসীদের জন্য --

ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ دِينَهُمْ لَهْوًۭا وَلَعِبًۭا وَغَرَّتْهُمُ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَا ۚ فَٱلْيَوْمَ نَنسَىٰهُمْ كَمَا نَسُوا۟ لِقَآءَ يَوْمِهِمْ هَٰذَا وَمَا كَانُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا يَجْحَدُونَ ﴿٥١﴾

তারা স্বীয় ধর্মকে তামাশা ও খেলা বানিয়ে নিয়েছিল এবং পার্থিব জীবন তাদের কে ধোকায় ফেলে রেখেছিল। অতএব, আমি আজকে তাদেরকে ভুলে যাব; যেমন তারা এ দিনের সাক্ষাৎকে ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করত।

জহুরুল হক

''যারা তাদের ধর্মকে গ্রহণ করেছিল খেলা ও কৌতুকরূপে, আর এই দুনিয়ার জীবন যাদের ভুলিয়েছিল।’’ সুতরাং আজ আমরা তাদের পরিত্যাগ করেছি যেমন তারা অবহেলা করেছিল তাদের এই দিনটির সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে, আর যেহেতু তারা আমাদের নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করেছিল।

وَلَقَدْ جِئْنَٰهُم بِكِتَٰبٍۢ فَصَّلْنَٰهُ عَلَىٰ عِلْمٍ هُدًۭى وَرَحْمَةًۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ ﴿٥٢﴾

আমি তাদের কাছে গ্রন্থ পৌছিয়েছি, যা আমি স্বীয় জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত।

জহুরুল হক

আর নিশ্চয়ই আমরা তাদের জন্য নিয়ে এসেছি একখানা কিতাব যাতে বিশদ ব্যাখ্যা করেছি জ্ঞান দ্বারা, -- এক পথনির্দেশ ও করুণা যারা বিশ্বাস করে তেমন লোকের জন্য।

هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُۥ ۚ يَوْمَ يَأْتِى تَأْوِيلُهُۥ يَقُولُ ٱلَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَآءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَآءَ فَيَشْفَعُوا۟ لَنَآ أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ ٱلَّذِى كُنَّا نَعْمَلُ ۚ قَدْ خَسِرُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ ﴿٥٣﴾

তারা কি এখন এ অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হোক? যেদিন এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হবে, সেদিন পূর্বে যারা একে ভূলে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের প্রতিপালকের পয়গম্বরগণ সত্যসহ আগমন করেছিলেন। অতএব, আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী আছে কি যে, সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনঃ প্রেরণ করা হলে আমরা পূর্বে যা করতাম তার বিপরীত কাজ করে আসতাম। নিশ্চয় তারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা মনগড়া যা বলত, তা উধাও হয়ে যাবে।

জহুরুল হক

তারা কি আর কিছুর অপেক্ষা করে ওর পরিণাম ছাড়া? যেদিন এর পরিণাম আসবে, যারা এর আগে এটি অবহেলা করেছিল তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভুর রসূলগণ নিশ্চয়ই সত্য নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের জন্য কোনো সুপারিশকারী আছে কি? তারা তবে আমাদের জন্য সুপারিশ করুক, অথবা আমরা কি প্রত্যাবৃত্ত হতে পারি যেন আমরা যা করতাম তার বিপরীত কিছু করতে পারি?’’ তারা আলবৎ তাদের অন্তরা‌ত্মা হারিয়েছে, আর তাদের থেকে বিদায় নিয়েছে সেইসব যাদের তারা উদ্ভাবন করেছিল।

إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ فِى سِتَّةِ أَيَّامٍۢ ثُمَّ ٱسْتَوَىٰ عَلَى ٱلْعَرْشِ يُغْشِى ٱلَّيْلَ ٱلنَّهَارَ يَطْلُبُهُۥ حَثِيثًۭا وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتٍۭ بِأَمْرِهِۦٓ ۗ أَلَا لَهُ ٱلْخَلْقُ وَٱلْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٥٤﴾

নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্টিত হয়েছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের উপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিনি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র দৌড় স্বীয় আদেশের অনুগামী। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ, বরকতময় যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী ছয় দিনে, তখন তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হন। তিনি দিনকে আবৃত করেন রাত্রি দিয়ে, -- যা দ্রতগতিতে তার অনুসরণ করে। আর সূর্য ও চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের আজ্ঞাধীন। সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দান কি তাঁর অধিকারভুক্ত নয়? মহিমাময় আল্লাহ্ -- বিশ্বজগতের প্রভু!

ٱدْعُوا۟ رَبَّكُمْ تَضَرُّعًۭا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلْمُعْتَدِينَ ﴿٥٥﴾

তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাক, কাকুতি-মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদেরকে পছন্দ করেন না।

জহুরুল হক

তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনীতভাবে ও গোপনতার সাথে। নিঃসন্দেহ তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।

وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَٰحِهَا وَٱدْعُوهُ خَوْفًۭا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ ٱللَّهِ قَرِيبٌۭ مِّنَ ٱلْمُحْسِنِينَ ﴿٥٦﴾

পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। তাঁকে আহবান কর ভয় ও আশা সহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।

জহুরুল হক

আর দুনিয়াতে গন্ডগোল সৃষ্টি করো না তার মধ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার পরে, আর তাঁকে ডাকো ভয়ে ও আশায়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।

وَهُوَ ٱلَّذِى يُرْسِلُ ٱلرِّيَٰحَ بُشْرًۢا بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِۦ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًۭا ثِقَالًۭا سُقْنَٰهُ لِبَلَدٍۢ مَّيِّتٍۢ فَأَنزَلْنَا بِهِ ٱلْمَآءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ ٱلْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ﴿٥٧﴾

তিনিই বৃষ্টির পূর্বে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠিয়ে দেন। এমনকি যখন বায়ুরাশি পানিপূর্ন মেঘমালা বয়ে আনে, তখন আমি এ মেঘমালাকে একটি মৃত শহরের দিকে হঁ্যাকিয়ে দেই। অতঃপর এ মেঘ থেকে বৃষ্টি ধারা বর্ষণ করি। অতঃপর পানি দ্বারা সব রকমের ফল উৎপন্ন করি। এমনি ভাবে মৃতদেরকে বের করব-যাতে তোমরা চিন্তা কর।

জহুরুল হক

আর তিনিই সেইজন যিনি মলয়বায়ুপ্রবাহ পাঠান তাঁর অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহীরূপে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা সঘন মেঘমালা বহন ক’রে আনে, আমরা তখন তা মৃত ভূখন্ডের দিকে পাঠাই, তারপর আমরা তাতে পানি বর্ষণ করি, তারপরে এর সাহায্যে উৎপাদন করি সব রকমের ফলফসল। এইভাবে আমরা মৃতকে বের করে আনি, যেন তোমরা স্মরণ করতে পারো।

وَٱلْبَلَدُ ٱلطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذْنِ رَبِّهِۦ ۖ وَٱلَّذِى خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًۭا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلْءَايَٰتِ لِقَوْمٍۢ يَشْكُرُونَ ﴿٥٨﴾

যে শহর উৎকৃষ্ট, তার ফসল তার প্রতিপালকের নির্দেশে উৎপন্ন হয় এবং যা নিকৃষ্ট তাতে অল্পই ফসল উৎপন্ন হয়। এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বর্ণনা করি কৃতজ্ঞ সম্প্রদায়ের জন্যে।

জহুরুল হক

আর ভালো জমি -- এর গাছপালা গজায় তার প্রভুর অনুমতিক্রমে, আর যা মন্দ -- কিছুই গজায় না অল্পস্বল্প ছাড়া। এই ভাবে আমরা নির্দেশসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তেমন লোকের জন্য।

لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُۥٓ إِنِّىٓ أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍۢ ﴿٥٩﴾

নিশ্চয় আমি নূহকে তার সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠিয়েছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্যে একটি মহাদিবসের শাস্তির আশঙ্কা করি।

জহুরুল হক

আমরা অবশ্যই নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে। তিনি তখন বলেছিলেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্‌র উপাসনা করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য উপাস্য নেই। নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের জন্য আশংকা করছি এক ভয়ংকর দিনের শাস্তি।’’

قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى ضَلَٰلٍۢ مُّبِينٍۢ ﴿٦٠﴾

তার সম্প্রদায়ের সর্দাররা বললঃ আমরা তোমাকে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতার মাঝে দেখতে পাচ্ছি।

জহুরুল হক

তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমরা তো তোমাকে দেখছি স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে।’’

قَالَ يَٰقَوْمِ لَيْسَ بِى ضَلَٰلَةٌۭ وَلَٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٦١﴾

সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি কখনও ভ্রান্ত নই; কিন্তু আমি বিশ্বপ্রতিপালকের রসূল।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''হে আমার জনগণ! আমার মধ্যে কোনো পথভ্রান্তি নেই, বরং আমি হচ্ছি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল।

أُبَلِّغُكُمْ رِسَٰلَٰتِ رَبِّى وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ ﴿٦٢﴾

তোমাদেরকে প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং তোমাদেরকে সদুপদেশ দেই। আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনসব বিষয় জানি, যেগুলো তোমরা জান না।

জহুরুল হক

''আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ এবং আমি তোমাদের সদুপদেশ দিই, কারণ আমি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে জানি যা তোমরা জানো না।

أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا۟ وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ﴿٦٣﴾

তোমরা কি আশ্চর্যবোধ করছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে, যেন তোমরা সংযত হও এবং যেন তোমরা অনুগৃহীত হও।

জহুরুল হক

''আচ্ছা, তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছো যে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ এসেছে তোমাদেরই মধ্যেকার একজন মানুষের মাধ্যমে যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন, আর যেন তোমরা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করো, আর যেন তোমাদের করুণা প্রদর্শন করা হয়?

فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِى ٱلْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَآ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا۟ قَوْمًا عَمِينَ ﴿٦٤﴾

অতঃপর তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। আমি তাকে এবং নৌকাস্থিত লোকদেরকে উদ্ধার করলাম এবং যারা মিথ্যারোপ করত, তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ।

জহুরুল হক

কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যারোপ করলো, তাই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম জাহাজে, আর ডুবিয়ে দিয়েছিলাম তাদের যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল। নিঃসন্দেহ তারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়।

۞ وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًۭا ۗ قَالَ يَٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُۥٓ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ ﴿٦٥﴾

আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হুদকে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোন উপাস্য নেই।

জহুরুল হক

আর 'আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্‌র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তোমরা কি তবে ধর্মভীরুতা অবলন্বন করবে না?’’

قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِى سَفَاهَةٍۢ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلْكَٰذِبِينَ ﴿٦٦﴾

তারা স্প্রদায়ের সর্দররা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।

জহুরুল হক

তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমরা তো তোমাকে দেখছি অকাট- বোকামিতে, আর আমরা আলবৎ তোমাকে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে গণ্য করি।’’

قَالَ يَٰقَوْمِ لَيْسَ بِى سَفَاهَةٌۭ وَلَٰكِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٦٧﴾

সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি মোটেই নির্বোধ নই, বরং আমি বিশ্ব প্রতিপালকের প্রেরিত পয়গম্বর।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''হে আমার লোকেরা! আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই, বরং আমি হচ্ছি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল।

أُبَلِّغُكُمْ رِسَٰلَٰتِ رَبِّى وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ ﴿٦٨﴾

তোমাদের কে প্রতিপালকের পয়গাম পৌঁছাই এবং আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী বিশ্বস্ত।

জহুরুল হক

''আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ, আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা।

أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَآءَكُمْ ذِكْرٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍۢ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍۢ وَزَادَكُمْ فِى ٱلْخَلْقِ بَصْۜطَةًۭ ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿٦٩﴾

তোমরা কি আশ্চর্য্যবোধ করছ যে, তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে কওমে নূহের পর সর্দার করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশী করেছেন। তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর-যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়।

জহুরুল হক

''আচ্ছা, তোমরা কি তাজ্জব হচ্ছো যে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে উপদেশ এসেছে তোমাদেরই মধ্যেকার একজন মানুষের মাধ্যমে যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন? আর স্মরণ করো, কেমন ক’রে তিনি তোমাদের নূহ্‌-এর সম্প্রদায়ের পরবর্তীকালে প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন, আর তোমাদের বর্ধিত করেছেন আকৃতির বৈশিষ্ট্যে। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহ স্মরণ করো যেন তোমরা সফল হতে পারো।’’

قَالُوٓا۟ أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ ٱللَّهَ وَحْدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ ءَابَآؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ﴿٧٠﴾

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে এজন্যে এসেছ যে আমরা এক আল্লাহর এবাদত করি এবং আমাদের বাপ-দাদা যাদের পূজা করত, তাদেরকে ছেড়ে দেই? অতএব নিয়ে আস আমাদের কাছে যাদ্দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাচ্ছ, যদি তুমি সত্যবাদী হও।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''তুমি কি আমাদের কাছে এসেছ যেন আমরা একমাত্র আল্লাহ্‌র উপাসনা করি, আর বর্জন করি আমাদের পিতৃপুরুষরা যার উপাসনা করতো? অতএব নিয়ে এসো আমাদের উপরে যার দ্বারা তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছ, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’’

قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌۭ وَغَضَبٌ ۖ أَتُجَٰدِلُونَنِى فِىٓ أَسْمَآءٍۢ سَمَّيْتُمُوهَآ أَنتُمْ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَٰنٍۢ ۚ فَٱنتَظِرُوٓا۟ إِنِّى مَعَكُم مِّنَ ٱلْمُنتَظِرِينَ ﴿٧١﴾

সে বললঃ অবধারিত হয়ে গেছে তোমাদের উপর তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে শাস্তি ও ক্রোধ। আমার সাথে ঐসব নাম সম্পর্কে কেন তর্ক করছ, যেগুলো তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা রেখেছে। আল্লাহ এদের কোন মন্দ অবর্তীণ করেননি। অতএব অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''তোমাদের উপরে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে শাস্তি ও ক্রোধ তো হাজির হয়েই আছে। তোমরা কি আমার সঙ্গে বচসা করো কতকগুলি নাম সন্বন্ধে যে-সব নাম দিয়েছ -- তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার জন্যে আল্লাহ্ কোনো সনদ পাঠান নি? অতএব অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের মধ্যে রয়েছি।’’

فَأَنجَيْنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحْمَةٍۢ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا۟ مُؤْمِنِينَ ﴿٧٢﴾

অনন্তর আমি তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে রক্ষা করলাম এবং যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করত তাদের মূল কেটে দিলাম। তারা মান্যকারী ছিল না।

জহুরুল হক

কাজে কাজেই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম আমাদের থেকে অনুগ্রহ বশতঃ, আর কেটে দিয়েছিলাম তাদের শিকড় যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল ও যারা মুমিন ছিল না।

وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَٰلِحًۭا ۗ قَالَ يَٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمْ ءَايَةًۭ ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِىٓ أَرْضِ ٱللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٍۢ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ﴿٧٣﴾

সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে একটি প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উষ্টী তোমাদের জন্যে প্রমাণ। অতএব একে ছেড়ে দাও, আল্লাহর ভুমিতে চড়ে বেড়াবে। একে অসৎভাবে স্পর্শ করবে না। অন্যথায় তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পাকড়াও করবে।

জহুরুল হক

আর ছামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহ্‌কে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্‌র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। আলবৎ তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে এসেছে স্পষ্ট প্রমাণ। এটি হচ্ছে আল্লাহ্‌র উষ্টী, -- তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন, অতএব এটিকে ছেড়ে দাও আল্লাহ্‌র মাটিতে চরে খেতে, আর তাকে কোনো ক্ষতিতে ক্ষতি করো না, পাছে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করে।

وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعْدِ عَادٍۢ وَبَوَّأَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًۭا وَتَنْحِتُونَ ٱلْجِبَالَ بُيُوتًۭا ۖ فَٱذْكُرُوٓا۟ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا۟ فِى ٱلْأَرْضِ مُفْسِدِينَ ﴿٧٤﴾

তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে সর্দার করেছেন; তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। তোমরা নরম মাটিতে অট্টালিকা নির্মান কর এবং পর্বত গাত্র খনন করে প্রকোষ্ঠ নির্মাণ কর। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।

জহুরুল হক

''আর স্মরণ করো! কেমন ক’রে তিনি তোমাদের 'আদ-এর পরবর্তীকালে প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন, আর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পৃথিবীতে -- যার সমতলক্ষেত্রে তোমরা প্রাসাদ গড়েছিলে আর পাহাড় কেটে বানালে বাড়িঘর। সেজন্য তোমরা স্মরণ করো আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমূহ, আর দেশে গর্হিত আচরণ করো না গন্ডগোল সৃষ্টিকারী হয়ে।’’

قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لِلَّذِينَ ٱسْتُضْعِفُوا۟ لِمَنْ ءَامَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَٰلِحًۭا مُّرْسَلٌۭ مِّن رَّبِّهِۦ ۚ قَالُوٓا۟ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلَ بِهِۦ مُؤْمِنُونَ ﴿٧٥﴾

তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা ঈমানদার দারিদ্রদেরকে জিজ্ঞেস করলঃ তোমরা কি বিশ্বাস কর যে সালেহ কে তার পালনকর্তা প্রেরণ করেছেন; তারা বলল আমরা তো তার আনীত বিষয়ের প্রতি বিশ্বাসী।

জহুরুল হক

তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গর্ব করেছিল তাদের প্রধানরা বললে ওদের যারা দুর্বলতা বোধ করতো -- ওদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদের -- ''তোমরা কি জানো যে সালিহ্ তার প্রভুর কাছ থেকে একজন প্রেরিত-পুরুষ?’’ তারা বললে -- ''নিঃসন্দেহ তাঁকে দিয়ে যা পাঠানো হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাসী।’’

قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوٓا۟ إِنَّا بِٱلَّذِىٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ﴿٧٦﴾

দাম্ভিকরা বললঃ তোমরা যে বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আমরা তাতে অস্বীকৃত।

জহুরুল হক

যারা গর্ববোধ করতো তারা বললে -- ''তোমরা যে-সব বিষয়ে বিশ্বাস করো তাতে আমরা নিশ্চয়ই অবিশ্বাসী।’’

فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوْا۟ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا۟ يَٰصَٰلِحُ ٱئْتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلْمُرْسَلِينَ ﴿٧٧﴾

অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং স্বীয় প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল। তারা বললঃ হে ছালেহ, নিয়ে এস যদ্দ্বারা আমাদেরকে ভয় দেখাতে, যদি তুমি রসূল হয়ে থাক।

জহুরুল হক

অতঃপর তারা উষ্টী হত্যা করলে, আর অমান্য করলে তাদের প্রভুর নির্দেশ ও বললে -- ''হে সালিহ্‌! এনো তো আমাদের জন্য যা দিয়ে তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছ, যদি তুমি রসূলদের একজন হও।’’

فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَٰثِمِينَ ﴿٧٨﴾

অতঃপর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে সকাল বেলায় নিজ নিজ গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।

জহুরুল হক

সুতরাং তাদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প, কাজেই তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরেই নিথরদেহী।

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّٰصِحِينَ ﴿٧٩﴾

ছালেহ তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করলো এবং বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের কাছে স্বীয় প্রতিপালকের পয়গাম পৌছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি কিন্তু তোমরা মঙ্গলকাঙ্খীদেরকে ভালবাস না।

জহুরুল হক

তারপর তিনি তাদের থেকে ফিরে গেলেন আর বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বাণীসমূহ নিশ্চয়ই পৌঁছে দিয়েছিলাম, আর তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা উপদেষ্টাদের পছন্দ করলে না। ’’

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ ٱلْفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍۢ مِّنَ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٨٠﴾

এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ?

জহুরুল হক

আর লূত। স্মরণ করো! তিনি তাঁর লোকদের বললেন -- ''তোমরা কি এমন অশ্লীলতা করছো যা তোমাদের পূর্বে জগদ্বাসীদের আর কেউ চালু করে নি?

إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهْوَةًۭ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌۭ مُّسْرِفُونَ ﴿٨١﴾

তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।

জহুরুল হক

''নিঃসন্দেহ তোমরা তো কামাতুর হয়ে কামিনীদের ছেড়ে দিয়ে পুরুষদের কাছে আস। না, তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী লোক।’’

وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓا۟ أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌۭ يَتَطَهَّرُونَ ﴿٨٢﴾

তাঁর সম্প্রদায় এ ছাড়া কোন উত্তর দিল না যে, বের করে দাও এদেরকে শহর থেকে। এরা খুব সাধু থাকতে চায়।

জহুরুল হক

আর তাঁর লোকদের উত্তর এ ভিন্ন অন্য কিছু ছিল না যে তারা বললে -- ''তোমাদের জনপদ থেকে এদের বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র হতে চায়!’’

فَأَنجَيْنَٰهُ وَأَهْلَهُۥٓ إِلَّا ٱمْرَأَتَهُۥ كَانَتْ مِنَ ٱلْغَٰبِرِينَ ﴿٨٣﴾

অতঃপর আমি তাকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম।

জহুরুল হক

কাজেই আমরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করেছিলাম -- তাঁর স্ত্রী ব্যতীত, সে ছিল পেছনে-পড়ে-থাকাদের অন্তর্ভুক্ত।

وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًۭا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُجْرِمِينَ ﴿٨٤﴾

অতএব, দেখ গোনাহগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।

জহুরুল হক

আর তাদের উপরে আমরা বর্ষণ করেছিলাম এক বর্ষণ। অতএব দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?

وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًۭا ۗ قَالَ يَٰقَوْمِ ٱعْبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُۥ ۖ قَدْ جَآءَتْكُم بَيِّنَةٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا۟ ٱلْكَيْلَ وَٱلْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشْيَآءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَٰحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿٨٥﴾

আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সে বললঃ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রমাণ এসে গেছে। অতএব তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ন কর এবং মানুষকে তাদের দ্রব্যদি কম দিয়ো না এবং ভুপৃষ্টের সংস্কার সাধন করার পর তাতে অনর্থ সৃষ্টি করো না। এই হল তোমাদের জন্যে কল্যাণকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

জহুরুল হক

আর মাদয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শোআইবকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্‌র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে নিশ্চয়ই এসেছে স্পষ্ট প্রমাণ। কাজেই পুরো মাপ ও ওজন দেবে, আর কোন লোককে বঞ্চিত করো না তাদের বিষয়বস্তুতে, আর পৃথিবীতে গন্ডগোল সৃষ্টি করো না তাতে সুব্যবস্থা আনয়নের পরে এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

وَلَا تَقْعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَٰطٍۢ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبْغُونَهَا عِوَجًۭا ۚ وَٱذْكُرُوٓا۟ إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًۭا فَكَثَّرَكُمْ ۖ وَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ ﴿٨٦﴾

তোমরা পথে ঘাটে এ কারণে বসে থেকো না যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে হুমকি দিবে, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের।

জহুরুল হক

''আর প্রত্যেক রাস্তায় ওত পেতে থেকো না ভয় দেখিয়ে, আর আল্লাহ্‌র পথ থেকে তাকে ফিরিয়ে নিতে যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, আর তাকে কুটিল করতে যেও না। আর স্মরণ করো -- যখন তোমরা অল্প ছিলে, তখন তিনি তোমাদের বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অতএব দেখো, কি হয়েছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম!

وَإِن كَانَ طَآئِفَةٌۭ مِّنكُمْ ءَامَنُوا۟ بِٱلَّذِىٓ أُرْسِلْتُ بِهِۦ وَطَآئِفَةٌۭ لَّمْ يُؤْمِنُوا۟ فَٱصْبِرُوا۟ حَتَّىٰ يَحْكُمَ ٱللَّهُ بَيْنَنَا ۚ وَهُوَ خَيْرُ ٱلْحَٰكِمِينَ ﴿٨٧﴾

আর যদি তোমাদের একদল ঐ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং একদল বিশ্বাস স্থাপন করে যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং একদল বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে ছবর কর যে পর্যন্ত আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা না করে দেন। তিনিই শ্রেষ্ট মীমাংসাকারী।

জহুরুল হক

''আর যদি তোমাদের একদলও বিশ্বাস করে আমাকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে তাতে, আর একদল বিশ্বাস করে না, তখন ধৈর্য ধরো যে পর্যন্ত না আল্লাহ্ আমাদের উভয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, আর তিনিই বিচারকর্তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।’’

۞ قَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسْتَكْبَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَنُخْرِجَنَّكَ يَٰشُعَيْبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَآ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِى مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَٰرِهِينَ ﴿٨٨﴾

তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা বললঃ হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে শহর থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করবে। শোয়ায়েব বললঃ আমরা অপছন্দ করলেও কি ?

জহুরুল হক

তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গর্ব করেছিল তাদের প্রধানরা বললে, ''আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে তাড়িয়ে দেবো, হে শোআইব! আর যারা তোমার সঙ্গে ঈমান এনেছে তাদেরও, আমাদের জনপদ থেকে, অথবা আমাদের ধর্মমতে তোমাদের ফিরে আসতেই হবে।’’ তিনি বললেন, ''কি! যদিও আমরা ঘৃণা করি?

قَدِ ٱفْتَرَيْنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِى مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَىْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا ٱفْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِٱلْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْفَٰتِحِينَ ﴿٨٩﴾

আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যাব যদি আমরা তোমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করি, অথচ তিনি আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমাদের কাজ নয় এ ধর্মে প্রত্যাবর্তন করা, কিন্তু আমাদের প্রতি পালক আল্লাহ যদি চান। আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ফয়সালা করে ছিল যথার্থ ফয়সালা। আপনিই শ্রেষ্টতম ফসলা ফয়সালাকারী।

জহুরুল হক

''আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে মিথ্যা সৃষ্টি করবো যদি আমরা ফিরে যাই তোমাদের ধর্মমতে তা থেকে আল্লাহ্ আমাদের উদ্ধার করার পরেও, আর এটি আমাদের সমীচীন হবে না যে আমরা ওতে ফিরে যাই, যদি না আমাদের প্রভু আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন। আমাদের প্রভু জ্ঞানে সব-কিছুতে ব্যাপকতা রাখেন। আল্লাহ্‌র উপরেই আমরা নির্ভর করি -- 'আমাদের প্রভু! আমাদের মধ্যে ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে নিস্পত্তি করে দাও, আর তুমিই নিস্পত্তিকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।’’

وَقَالَ ٱلْمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ مِن قَوْمِهِۦ لَئِنِ ٱتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًۭا لَّخَٰسِرُونَ ﴿٩٠﴾

তার সম্প্রদায়ের কাফের সর্দাররা বললঃ যদি তোমরা শোয়ায়েবের অনুসরণ কর, তবে নিশ্চিতই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

জহুরুল হক

আর তাঁর লোকদের মধ্যের যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদের প্রধানরা বললে -- ''যদি তোমরা শোআইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা আলবৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’

فَأَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا۟ فِى دَارِهِمْ جَٰثِمِينَ ﴿٩١﴾

অনন্তর পাকড়াও করল তাদেরকে ভূমিকম্প। ফলে তারা সকাল বেলায় গৃহ মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।

জহুরুল হক

তারপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়ালো, ফলে তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরেই নিথরদেহী।

ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا۟ فِيهَا ۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ شُعَيْبًۭا كَانُوا۟ هُمُ ٱلْخَٰسِرِينَ ﴿٩٢﴾

শোয়ায়েবের প্রতি মিথ্যারোপকারীরা যেন কোন দিন সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শোয়ায়েবের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, তারাই ক্ষতিগ্রস্থ হল।

জহুরুল হক

যারা শোআইবকে মিথ্যারোপ করেছিল তাদের দশা হলো -- তারা যেন কখনো সেখানে বসবাস করে নি, যারা শোআইবকে মিথ্যারোপ করেছিল তারা নিজেরাই হলো ক্ষতিগ্রস্ত!

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَٰلَٰتِ رَبِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ ۖ فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍۢ كَٰفِرِينَ ﴿٩٣﴾

অনন্তর সে তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করল এবং বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদেরকে প্রতিপালকের পয়গাম পৌছে দিয়েছি এবং তোমাদের হিত কামনা করেছি। এখন আমি কাফেরদের জন্যে কেন দুঃখ করব।

জহুরুল হক

এর পর তিনি তাদের থেকে ফিরে দাঁড়ালেন ও বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো অবশ্যই তোমাদের কাছে আমার প্রভুর নির্দেশসমূহ পৌঁছে দিয়েছিলাম আর তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছিলাম, সুতরাং কেনই বা আমি দুঃখ করবো এক অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য!’’

وَمَآ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍۢ مِّن نَّبِىٍّ إِلَّآ أَخَذْنَآ أَهْلَهَا بِٱلْبَأْسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ ﴿٩٤﴾

আর আমি কোন জনপদে কোন নবী পাঠাইনি, তবে (এমতাবস্থায়) যে পাকড়াও করেছি সে জনপদের অধিবাসীদিগকে কষ্ট ও কঠোরতার মধ্যে, যাতে তারা শিথিল হয়ে পড়ে।

জহুরুল হক

আর আমরা কোনো জনপদে কোনো নবী পাঠাইনি তাদের বাসিন্দাদের দুঃখ ও দুর্দশা দিয়ে পাকড়াও না-ক’বে, যেন তারা নিজেরা বিনয়াবনত হয়।

ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ ٱلسَّيِّئَةِ ٱلْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا۟ وَّقَالُوا۟ قَدْ مَسَّ ءَابَآءَنَا ٱلضَّرَّآءُ وَٱلسَّرَّآءُ فَأَخَذْنَٰهُم بَغْتَةًۭ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ ﴿٩٥﴾

অতঃপর অকল্যাণের স্থলে তা কল্যাণে বদলে দিয়েছে। এমনকি তারা অনেক বেড়ে গিয়েছি এবং বলতে শুরু করেছে, আমাদের বাপ-দাদাদের উপরও এমন আনন্দ-বেদনা এসেছে। অতঃপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি এমন আকস্মিকভাবে যে তারা টেরও পায়নি।

জহুরুল হক

তারপর আমরা দুঃখকষ্টের অবস্থা বদলে দিলাম ভালো দিয়ে, যে পর্যন্ত না তারা ফেঁপে উঠলো ও বললে -- ''আমাদের পিতৃপুরুষদেরও দুঃখদুর্দশা ও আমোদ-আহ্লাদ স্পর্শ করেছিল।’’ কাজেই আমরা তাদের পাকড়াও করলাম অতর্কিতে, আর তারা টেরও পেলো না।

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ ٱلْقُرَىٰٓ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوْا۟ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَٰتٍۢ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ وَلَٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذْنَٰهُم بِمَا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ ﴿٩٦﴾

আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামত সমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে।

জহুরুল হক

আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনতো ও ধর্ম-ভীরুতা অবলন্বন করতো তবে আমরা নিশ্চয়ই তাদের জন্য উন্নুক্ত করতাম মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী থেকে আশীর্বাদসমূহ, কিন্তু তারা তো অবিশ্বাস করেছিল, তাই আমরা তাদের পাকড়াও করলাম যা তারা অর্জন করেছিল তার জন্যে।

أَفَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَٰتًۭا وَهُمْ نَآئِمُونَ ﴿٩٧﴾

এখনও কি এই জনপদের অধিবাসীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত যে, আমার আযাব তাদের উপর রাতের বেলায় এসে পড়বে অথচ তখন তারা থাকবে ঘুমে অচেতন।

জহুরুল হক

তবে কি জনপদের বাসিন্দারা নিরাপদ বোধ করছে তাদের উপরে আমাদের বিপর্যয় এসে পড়া সম্পর্কে রাত্রির আক্রমণরূপে, যখন তারা থাকে নিদ্রামগ্ন?

أَوَأَمِنَ أَهْلُ ٱلْقُرَىٰٓ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًۭى وَهُمْ يَلْعَبُونَ ﴿٩٨﴾

আর এই জনপদের অধিবাসীরা কি নিশ্চিন্ত হয়ে পড়েছে যে, তাদের উপর আমার আযাব দিনের বেলাতে এসে পড়বে অথচ তারা তখন থাকবে খেলা-ধুলায় মত্ত।

জহুরুল হক

অথবা জনপদের বাসিন্দারা কি নিরাপদ ভাবে তাদের উপরে আমাদের বিপর্যয় এসে পড়া সম্পর্কে সকাল বেলায় যখন তারা থাকে খেলায় রত?

أَفَأَمِنُوا۟ مَكْرَ ٱللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْقَوْمُ ٱلْخَٰسِرُونَ ﴿٩٩﴾

তারা কি আল্লাহর পাকড়াওয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? বস্তুতঃ আল্লাহর পাকড়াও থেকে তারাই নিশ্চিন্ত হতে পারে, যাদের ধ্বংস ঘনিয়ে আসে।

জহুরুল হক

তারা কি তবে নিরাপদ বোধ করে আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা থেকে? আর আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা থেকে কেউ নিরাপদ থাকতে পারে না ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত।

أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ أَهْلِهَآ أَن لَّوْ نَشَآءُ أَصَبْنَٰهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ ﴿١٠٠﴾

তাদের নিকট কি একথা প্রকাশিত হয়নি, যারা উত্তারাধিকার লাভ করেছে। সেখানকার লোকদের ধ্বংসপ্রাপ্ত হবার পর যদি আমি ইচ্ছা করতাম, , তবে তাদেরকে তাদের পাপের দরুন পাকড়াও করে ফেলতাম। বস্তুতঃ আমি মোহর এঁটে দিয়েছি তাদের অন্তরসমূহের উপর। কাজেই এরা শুনতে পায় না।

জহুরুল হক

এটি কি নির্দেশা‌ত্মক নয় তাদের জন্য যারা দেশের উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত হয় তার বাসিন্দাদের পরে, যে যদি আমরা ইচ্ছা করি তবে তাদেরও আমরা আঘাত হানতে পারি তাদের অপরাধের জন্য, আর তাদের হৃদয়ের উপরে সিল এঁটে দিতে পারি, ফলে তারা শুনবে না?

تِلْكَ ٱلْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنۢبَآئِهَا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِٱلْبَيِّنَٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِيُؤْمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلْكَٰفِرِينَ ﴿١٠١﴾

এগুলো হল সে সব জনপদ যার কিছু বিবরণ আমি আপনাকে অবহিত করছি। আর নিশ্চিতই ওদের কাছে পৌছেছিলেন রসূল নিদর্শন সহকারে। অতঃপর কস্মিনকালও এরা ঈমান আনবার ছিল না, তারপরে যা তার ইতিপূর্বে মিথ্যা বলে প্রতিপন্ন করেছে। এভাবেই আল্লাহ কাফেরদের অন্তরে মোহর এঁটে দেন।

জহুরুল হক

এই জনবসতিগুলো -- তাদের কাহিনী থেকে কিছুটা আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি। আর নিশ্চয়ই তাদের কাছে তাদের রসূলগণ এসেছিলেন স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, কিন্তু তাদের বিশ্বাস করবার অবস্থা ছিল না তাতে যা তারা ইতিপূর্বে অবিশ্বাস করেছিল। এইভাবে আল্লাহ্ মোহর মেরে দেন অবিশ্বাসীদের হৃদয়ের উপরে।

وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍۢ ۖ وَإِن وَجَدْنَآ أَكْثَرَهُمْ لَفَٰسِقِينَ ﴿١٠٢﴾

আর তাদের অধিকাংশ লোককেই আমি প্রতিজ্ঞা বাস্তবায়নকারীরূপে পাইনি; বরং তাদের অধিকাংশকে পেয়েছি হুকুম অমান্যকারী।

জহুরুল হক

আর তাদের বেশিরভাগের মধ্যে আমরা প্রতি‌শ্রুতি পালনের কিছুই পাই নি, বরং তাদের অধিকাংশকে অবশ্যই পেয়েছি ডাহা অসৎকর্মা।

ثُمَّ بَعَثْنَا مِنۢ بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔايَٰتِنَآ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَإِي۟هِۦ فَظَلَمُوا۟ بِهَا ۖ فَٱنظُرْ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُفْسِدِينَ ﴿١٠٣﴾

অতঃপর আমি তাদের পরে মূসাকে পাঠিয়েছি নিদর্শনাবলী দিয়ে ফেরাউন ও তার সভাসদদের নিকট। বস্তুতঃ ওরা তাঁর মোকাবেলায় কুফরী করেছে। সুতরাং চেয়ে দেখ, কি পরিণতি হয়েছে অনাচারীদের।

জহুরুল হক

অবশেষে তাদের পরে আমরা মূসাকে নিযুক্ত করেছিলাম ফিরআউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে আমাদের নির্দেশাবলী সঙ্গে দিয়ে, কিন্তু তারা এগুলোর প্রতি অবিচার করেছিল, অতএব দেখো কেমন হয়েছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম!

وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰفِرْعَوْنُ إِنِّى رَسُولٌۭ مِّن رَّبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿١٠٤﴾

আর মূসা বললেন, হে ফেরাউন, আমি বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত রসূল।

জহুরুল হক

আর মূসা বললেন -- ''হে ফিরআউন, নিঃসন্দেহ আমি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল, --

حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ مَعِىَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ﴿١٠٥﴾

আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সত্য এসেছে, তার ব্যতিক্রম কিছু না বলার ব্যাপারে আমি সুদৃঢ়। আমি তোমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শন নিয়ে এসেছি। সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলদেরকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।

জহুরুল হক

''স্থিরনিশ্চিত যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে আমি সত্য ছাড়া বলবো না। আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, সুতরাং আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও ইসরাইলবংশীয় লোকদের।’’

قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِـَٔايَةٍۢ فَأْتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ﴿١٠٦﴾

সে বলল, যদি তুমি কোন নিদর্শন নিয়ে এসে থাক, তাহলে তা উপস্থিত কর যদি তুমি সত্যবাদী হয়ে থাক।

জহুরুল হক

সে বললে -- ''যদি তুমি কোনো নিদর্শন নিয়ে এসে থাকো তবে তা উপস্থাপিত করো, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’

فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِىَ ثُعْبَانٌۭ مُّبِينٌۭ ﴿١٠٧﴾

তখন তিনি নিক্ষেপ করলেন নিজের লাঠিখানা এবং তাৎক্ষণাৎ তা জলজ্যান্ত এক অজগরে রূপান্তরিত হয়ে গেল।

জহুরুল হক

কাজেই তিনি তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন আশ্চর্য! তা হলো এক স্পষ্ট সাপ।

وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِىَ بَيْضَآءُ لِلنَّٰظِرِينَ ﴿١٠٨﴾

আর বের করলেন নিজের হাত এবং তা সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের চোখে ধবধবে উজ্জ্বল দেখাতে লাগল।

জহুরুল হক

আর তিনি তাঁর হাত বের করলেন, তখন আশ্চর্য! তা হলো দর্শকদের কাছে সাদা।

قَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَٰذَا لَسَٰحِرٌ عَلِيمٌۭ ﴿١٠٩﴾

ফেরাউনের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলতে লাগল, নিশ্চয় লোকটি বিজ্ঞ-যাদুকর।

জহুরুল হক

ফিরআউনের লোকদের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ এ একজন বিজ্ঞ জাদুকর।’’

يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُمْ ۖ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ ﴿١١٠﴾

সে তোমাদিগকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে চায়। এ ব্যাপারে তোমাদের কি মত?

জহুরুল হক

''সে চায় তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে, কাজেই তোমরা কি পরামর্শ দাও?’’

قَالُوٓا۟ أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِى ٱلْمَدَآئِنِ حَٰشِرِينَ ﴿١١١﴾

তারা বলল, আপনি তাকে ও তার ভাইকে অবকাশ দান করুন এবং শহরে বন্দরে লোক পাঠিয়ে দিন লোকদের সমবেত করার জন্য।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''তাকে ও তার ভাইকে কিঞ্চিৎ অবকাশ দাও, আর শহরে-নগরে পাঠাও তলবকারীদের --

يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَٰحِرٍ عَلِيمٍۢ ﴿١١٢﴾

যাতে তারা পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন বিজ্ঞ যাদুকরদের এনে সমবেত করে।

জহুরুল হক

''তোমার কাছে তারা নিয়ে আসুক প্রত্যেক ঝানু জাদুকর।’’

وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوٓا۟ إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ ٱلْغَٰلِبِينَ ﴿١١٣﴾

বস্তুতঃ যাদুকররা এসে ফেরাউনের কাছে উপস্থিত হল। তারা বলল, আমাদের জন্যে কি কোন পারিশ্রমিক নির্ধারিত আছে, যদি আমরা জয়লাভ করি?

জহুরুল হক

আর জাদুকররা ফিরআউনের কাছে এলো। তারা বললে -- ''আমাদের পুরস্কার থাকা চাই যদি আমরা নিজেরা বিজেতা হই।’’

قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ ﴿١١٤﴾

সে বলল, হ্যাঁ এবং অবশ্যই তোমরা আমার নিকটবর্তী লোক হয়ে যাবে।

জহুরুল হক

সে বললে -- ''হাঁ আর আলবৎ তোমরা হবে নিকটবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত।’’

قَالُوا۟ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلْقِىَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحْنُ ٱلْمُلْقِينَ ﴿١١٥﴾

তারা বলল, হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা আমরা নিক্ষেপ করছি।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''হে মূসা! তুমি কি নিক্ষেপ করবে, না আমরাই হবো নিক্ষেপকারী?

قَالَ أَلْقُوا۟ ۖ فَلَمَّآ أَلْقَوْا۟ سَحَرُوٓا۟ أَعْيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَآءُو بِسِحْرٍ عَظِيمٍۢ ﴿١١٦﴾

তিনি বললেন, তোমরাই নিক্ষেপ কর। যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন লোকদের চোখগুলোকে বাধিয়ে দিল, ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলল এবং মহাযাদু প্রদর্শন করল।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''তোমরাই ফেলো।’’ অতঃপর যখন তারা ফেললো তখন লোকদের চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিল আর তাদের ভয়াতুর করলো, আর তারা নিয়ে এলো এক বড় রকমের জাদু!

۞ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِىَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ ﴿١١٧﴾

তারপর আমি ওহীযোগে মূসাকে বললাম, এবার নিক্ষেপ কর তোমার লাঠিখানা। অতএব সঙ্গে সঙ্গে তা সে সমুদয়কে গিলতে লাগল, যা তারা বানিয়েছিল যাদু বলে।

জহুরুল হক

তখন আমরা মূসাকে প্রত্যাদেশ দিলাম যে -- ''তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’’ তখন কি আশ্চর্য! তা গ্রাস করতে লাগলো যা তারা রচনা করেছিল।

فَوَقَعَ ٱلْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ﴿١١٨﴾

সুতরাং এভাবে প্রকাশ হয়ে গেল সত্য বিষয় এবং ভুল প্রতিপন্ন হয়ে গেল যা কিছু তারা করেছিল।

জহুরুল হক

কাজেই সত্য প্রতিষ্ঠা লাভ করলো এবং তারা যা করছিল তা বাতিল হয়ে গেল।

فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُوا۟ صَٰغِرِينَ ﴿١١٩﴾

সুতরাং তারা সেখানেই পরাজিত হয়ে গেল এবং অতীব লাঞ্ছিত হল।

জহুরুল হক

সুতরাং তারা সেইখানেই পরাভূত হলো, আর তারা মোড় ফেরালো ছোট হয়ে।

وَأُلْقِىَ ٱلسَّحَرَةُ سَٰجِدِينَ ﴿١٢٠﴾

এবং যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল।

জহুরুল হক

আর জাদুকররা লুটিয়ে পড়লো সিজদারত অবস্থায়।

قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿١٢١﴾

বলল, আমরা ঈমান আনছি মহা বিশ্বের পরওয়ারদেগারের প্রতি।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজগতের প্রভুর প্রতি --

رَبِّ مُوسَىٰ وَهَٰرُونَ ﴿١٢٢﴾

যিনি মূসা ও হারুনের পরওয়ারদেগার।

জহুরুল হক

''মূসা ও হারূনের প্রভু।’’

قَالَ فِرْعَوْنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبْلَ أَنْ ءَاذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَٰذَا لَمَكْرٌۭ مَّكَرْتُمُوهُ فِى ٱلْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا۟ مِنْهَآ أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ﴿١٢٣﴾

ফেরাউন বলল, তোমরা কি (তাহলে) আমার অনুমতি দেয়ার আগেই ঈমান আনলে! এটা প্রতারণা, যা তোমরা এ নগরীতে প্রদর্শন করলে। যাতে করে এ শহরের অধিবাসীদিগকে শহর থেকে বের করে দিতে পার। সুতরাং তোমরা শীঘ্রই বুঝতে পারবে।

জহুরুল হক

ফিরআউন বললে -- ''তোমরা তাতে বিশ্বাস করছ আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই! নিশ্চয় এটি এক চক্রান্ত যা তোমরা এ শহরে ফেদেছঁ যেন তোমরা এ থেকে এর লোকদের বার করে দিতে পারো। বেশ, শীঘ্রই তোমরা টের পাবে!

لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَٰفٍۢ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ ﴿١٢٤﴾

অবশ্যই আমি কেটে দেব তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে। তারপর তোমাদের সবাইকে শূলীতে চড়িয়ে মারব।

জহুরুল হক

''আমি আলবৎ তোমাদের হাত ও তোমাদের পা উল্টো-পাল্টা কেটে দেবো, তারপর তোমাদের নিশ্চয়ই শূলে চড়াবো একসঙ্গে।’’

قَالُوٓا۟ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ ﴿١٢٥﴾

তারা বলল, আমাদেরকে তো মৃত্যুর পর নিজেদের পরওয়ারদেগারের নিকট ফিরে যেতেই হবে।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমাদের প্রভুর কাছেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী।

وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنْ ءَامَنَّا بِـَٔايَٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتْنَا ۚ رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًۭا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ ﴿١٢٦﴾

বস্তুতঃ আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে, আমরা ঈমান এনেছি আমাদের পরওয়ারদেগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর।

জহুরুল হক

''আর তুমি আমাদের উপরে প্রতিহিংসা নিচ্ছ না শুধু এজন্য ছাড়া যে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি আমাদের প্রভুর নির্দেশাবলীতে যখন সে-সব আমাদের কাছে এসেছিল। 'আমাদের প্রভু! আমাদের উপরে ধৈর্য বর্ষণ করো, আর আমাদের মৃত্যু ঘটাও মুসলিমরূপে।’’

وَقَالَ ٱلْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُۥ لِيُفْسِدُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَ ۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَآءَهُمْ وَنَسْتَحْىِۦ نِسَآءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَٰهِرُونَ ﴿١٢٧﴾

ফেরাউনের সম্প্রদায়ের র্সদাররা বলল, তুমি কি এমনি ছেড়ে দেবে মূসা ও তার সম্প্রদায়কে। দেশময় হৈ-চৈ করার জন্য এবং তোমাকে ও তোমার দেব-দেবীকে বাতিল করে দেবার জন্য। সে বলল, আমি এখনি হত্যা করব তাদের পুত্র সন্তানদিগকে; আর জীবিত রাখব মেয়েদেরকে। বস্তুতঃ আমরা তাদের উপর প্রবল।

জহুরুল হক

আর ফিরআউনের লোকদের প্রধানরা বললে -- ''আপনি কি মূসাকে ও তার লোকদের ছেড়ে দেবেন দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে এবং আপনার দেবতাদের পরিত্যাগ করতে?’’ সে বললে -- ''আমরা তাদের পুত্রদের অবশ্যই হত্যা করবো আর তাদের কন্যাদের বাঁচতে দেবো, আর আমরা আলবৎ তাদের উপরে প্রতাপশালী।’’

قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ ٱسْتَعِينُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱصْبِرُوٓا۟ ۖ إِنَّ ٱلْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ ۖ وَٱلْعَٰقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ ﴿١٢٨﴾

মূসা বললেন তার কওমকে, সাহায্য প্রার্থনা কর আল্লাহর নিকট এবং ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয়ই এ পৃথিবী আল্লাহর। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ কল্যাণ মুত্তাকীদের জন্যই নির্ধারিত রয়েছে।

জহুরুল হক

মূসা তাঁর লোকদের বললেন -- ''আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাও ও ধৈর্য ধারণ করো, নিঃসন্দেহ পৃথিবী তো আল্লাহ্‌র, তিনি তার উত্তরাধিকার দেবেন তাঁর বান্দাদের মধ্যের যাদের তিনি পছন্দ করেন। আর পরিণাম হচ্ছে ধর্মপরায়ণদেরই জন্যে।’’

قَالُوٓا۟ أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِنۢ بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِى ٱلْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ ﴿١٢٩﴾

তারা বলল, আমাদের কষ্ট ছিল তোমার আসার পূর্বে এবং তোমার আসার পরে। তিনি বললেন, তোমাদের পরওয়ারদেগার শীঘ্রই তোমাদের শক্রদের ধ্বংস করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দেশে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন। তারপর দেখবেন, তোমরা কেমন কাজ কর।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমরা অত্যাচারিত হয়েছি আমাদের কাছে তোমার আগমনের আগে এবং আমাদের কাছে তোমার আসার পরেও।’’ তিনি বললেন -- ''হতে পারে তোমাদের প্রভু তোমাদের শত্রুদের ধ্বংস করবেন, আর অচিরেই তোমাদের তিনি প্রতিনিধি ঠাওরাবেন দেশের মধ্যে, যেন তিনি দেখতে পারেন কেমনভাবে তোমরা কাজ করো।’’

وَلَقَدْ أَخَذْنَآ ءَالَ فِرْعَوْنَ بِٱلسِّنِينَ وَنَقْصٍۢ مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ ﴿١٣٠﴾

তারপর আমি পাকড়াও করেছি-ফেরাউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে এবং ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

জহুরুল হক

আর আমরা নিশ্চয়ই ফিরআউনের লোকদের পাকড়াও করেছিলাম বহুবৎসরের খরা আর ফল-ফসলের ক্ষতি দিয়ে, যেন তারা অনুধাবন করে।

فَإِذَا جَآءَتْهُمُ ٱلْحَسَنَةُ قَالُوا۟ لَنَا هَٰذِهِۦ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۭ يَطَّيَّرُوا۟ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓ ۗ أَلَآ إِنَّمَا طَٰٓئِرُهُمْ عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ﴿١٣١﴾

অতঃপর যখন শুভদিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে, এটাই আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মূসার এবং তাঁর সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে। শুনে রাখ তাদের অলক্ষণ যে, আল্লাহরই এলেমে রয়েছে, অথচ এরা জানে না।

জহুরুল হক

কিন্তু যখন তাদের কাছে ভালো অবস্থা আসতো, তারা বলতো -- ''এ-সব আমাদের জন্য।’’ আর যখন মন্দ অবস্থা তাদের উপরে ঘটতো তারা আরোপ করতো মূসার ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের উপরে। একি নয় যে নিঃসন্দেহ তাদের ক্রিয়াকলাপ আল্লাহ্‌র কাছে রয়েছে? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।

وَقَالُوا۟ مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِۦ مِنْ ءَايَةٍۢ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ ﴿١٣٢﴾

তারা আরও বলতে লাগল, আমাদের উপর জাদু করার জন্য তুমি যে নিদর্শনই নিয়ে আস না কেন আমরা কিন্তু তোমার উপর ঈমান আনছি না।

জহুরুল হক

আর তারা বললে -- ''তুমি নিদর্শন থেকে যে কোনোটাই আমাদের কাছে আনো না কেন তা দিয়ে আমাদের জাদু করতে, আমরা কিন্তু তোমাতে বিশ্বাস স্থাপনকারী হবো না।’’

فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلْجَرَادَ وَٱلْقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَٰتٍۢ مُّفَصَّلَٰتٍۢ فَٱسْتَكْبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوْمًۭا مُّجْرِمِينَ ﴿١٣٣﴾

সুতরাং আমি তাদের উপর পাঠিয়ে দিলাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি বহুবিধ নিদর্শন একের পর এক। তারপরেও তারা গর্ব করতে থাকল। বস্তুতঃ তারা ছিল অপরাধপ্রবণ।

জহুরুল হক

তারপর আমরা তাদের উপরে পাঠালাম সুদূর প্রসারিত মৃত্যু, আর পঙ্গপাল ও উকুন, আর বেঙ ও রক্ত -- বিশদভাবে বর্ণিত নিদর্শনাবলী, কিন্তু তারা অহংকার করেছিল এবং তারা ছিল একটি অপরাধী সম্প্রদায়।

وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ ٱلرِّجْزُ قَالُوا۟ يَٰمُوسَى ٱدْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا ٱلرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ﴿١٣٤﴾

আর তাদের উপর যখন কোন আযাব পড়ে তখন বলে, হে মূসা আমাদের জন্য তোমার পরওয়ারদেগারের নিকট সে বিষয়ে দোয়া কর যা তিনি তোমার সাথে ওয়াদা করে রেখেছেন। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে এ আযাব সরিয়ে দাও, তবে অবশ্যই আমরা ঈমান আনব তোমার উপর এবং তোমার সাথে বনী-ইসরাঈলদেরকে যেতে দেব।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের উপরে মড়কের আবির্ভাব হলো তারা বললে -- ''হে মূসা! তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করো যেমন তিনি তোমার কাছে ওয়াদা করেছেন, তুমি যদি আমাদের কাছ থেকে মহামারী অপসারিত করে দাও তবে আমরা নিশ্চয়ই তোমাতে ঈমান আনবো আর তোমার সঙ্গে অবশ্যই ইসরাইলবংশীয়দের পাঠিয়ে দেবো।

فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ ٱلرِّجْزَ إِلَىٰٓ أَجَلٍ هُم بَٰلِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ ﴿١٣٥﴾

অতঃপর যখন আমি তাদের উপর থেকে আযাব তুলে নিতাম নির্ধারিত একটি সময় পর্যন্ত-যেখান পর্যন্ত তাদেরকে পৌছানোর উদ্দেশ্য ছিল, তখন তড়িঘড়ি তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করত।

জহুরুল হক

কিন্তু যখন আমরা তাদের থেকে মহামারী দূর করলাম নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাতে তারা পৌঁছুল, দেখো! তারা ভঙ্গ করলো!

فَٱنتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَٰهُمْ فِى ٱلْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَٰفِلِينَ ﴿١٣٦﴾

সুতরাং আমি তাদের কাছে থেকে বদলা নিয়ে নিলাম-বস্তুতঃ তাদেরকে সাগরে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ, তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল আমার নিদর্শনসমূহকে এবং তৎপ্রতি অনীহা প্রদর্শন করেছিল।

জহুরুল হক

সেজন্য আমরা তাদের থেকে শেষপরিণতি নিলাম, আর তাদের আমরা ডুবিয়ে দিয়েছিলাম সাগরের জলে যেহেতু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের নির্দেশসমূহ, আর এতে তারা ছিল অমনোযোগী।

وَأَوْرَثْنَا ٱلْقَوْمَ ٱلَّذِينَ كَانُوا۟ يُسْتَضْعَفُونَ مَشَٰرِقَ ٱلْأَرْضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِى بَٰرَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُوا۟ ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُۥ وَمَا كَانُوا۟ يَعْرِشُونَ ﴿١٣٧﴾

আর যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকেও আমি উত্তরাধিকার দান করেছি এ ভুখন্ডের পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের যাতে আমি বরকত সন্নিহিত রেখেছি এবং পরিপূর্ণ হয়ে গেছে তোমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত কল্যাণ বনী-ইসরাঈলদের জন্য তাদের ধৈর্য্যধারণের দরুন। আর ধ্বংস করে দিয়েছে সে সবকিছু যা তৈরী করেছিল ফেরাউন ও তার সম্প্রদায় এবং ধ্বংস করেছি যা কিছু তারা সুউচ্চ নির্মাণ করেছিল।

জহুরুল হক

আর আমরা উত্তরাধিকার দিয়েছিলাম সেই লোকদের যাদের দুর্বল গণ্য করা হয়েছিল, -- দেশের পূর্ব্বাঞ্চলসমূহ ও তার পশ্চিমাঞ্চল সমূহ -- যাতে আমরা সমৃদ্ধি অর্পণ করেছিলাম। আর তোমার প্রভুর মনোরম বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল ইসরাইলের বংশধরদের ক্ষেত্রে যেহেতু তারা ধৈর্য ধরেছিল। আর আমরা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম ফিরআউন ও তার লোকেরা যা গড়ে ছিল, আর যে- সব তারা বানিয়েছিল।

وَجَٰوَزْنَا بِبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ ٱلْبَحْرَ فَأَتَوْا۟ عَلَىٰ قَوْمٍۢ يَعْكُفُونَ عَلَىٰٓ أَصْنَامٍۢ لَّهُمْ ۚ قَالُوا۟ يَٰمُوسَى ٱجْعَل لَّنَآ إِلَٰهًۭا كَمَا لَهُمْ ءَالِهَةٌۭ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌۭ تَجْهَلُونَ ﴿١٣٨﴾

বস্তুতঃ আমি সাগর পার করে দিয়েছি বনী-ইসরাঈলদিগকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌছাল, যারা স্বহস্তনির্মিত মূর্তিপুজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে।

জহুরুল হক

আর আমরা ইসরাইল বংশীয় লোকদের সমূদ্র পার করিয়ে দিই, তারপর তারা এল এক জাতির সংস্পর্শে যারা তাদের অবশিষ্ট প্রতিমাগুলোর প্রতি আসক্ত ছিল। তারা বললে -- ''হে মূসা! আমাদের জন্য একটি দেবতা গড়ে দাও যেমন তাদের দেবতারা রয়েছে ।’’ তিনি বললেন -- ''তোমরা নিঃসন্দেহ এমন এক সম্প্রদায় যারা বোকামো করছো।

إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ مُتَبَّرٌۭ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَٰطِلٌۭ مَّا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ﴿١٣٩﴾

এরা যে, কাজে নিয়োজিত রয়েছে তা ধ্বংস হবে এবং যা কিছু তারা করেছে তা যে ভুল!

জহুরুল হক

''নিঃসন্দেহ এদের ব্যাপারে -- যাতে তারা লিপ্ত রয়েছে তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে যাচ্ছে, আর বৃথা যা তারা করে চলেছে।’’

قَالَ أَغَيْرَ ٱللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَٰهًۭا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿١٤٠﴾

তিনি বললেন, তাহলে কি আল্লাহকে ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য কোন উপাস্য অনুসন্ধান করব, অথচ তিনিই তোমাদিগকে সারা বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''আমি কি আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য উপাস্য খুঁজবো, অথচ তিনি তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সমস্ত বিশ্বজগতের উপরে?’’

وَإِذْ أَنجَيْنَٰكُم مِّنْ ءَالِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۖ يُقَتِّلُونَ أَبْنَآءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَآءَكُمْ ۚ وَفِى ذَٰلِكُم بَلَآءٌۭ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌۭ ﴿١٤١﴾

আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন আমি তোমাদেরকে ফেরাউনের লোকদের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছি; তারা তোমাদেরকে দিত নিকৃষ্ট শাস্তি, তোমাদের পুত্র-সন্তানদের মেরে ফেলত এবং মেয়েদের বাঁচিয়ে রাখত। এতে তোমাদের প্রতি তোমাদের পরওয়ারদেগারের বিরাট পরীক্ষা রয়েছে।

জহুরুল হক

আর স্মরণ করো, আমরা তোমাদের উদ্ধার করেছিলাম ফিরআউনের লোকদের থেকে, তারা তোমাদের অত্যাচার করেছিল মর্মান্তিক শাস্তি দিয়ে, -- তারা তোমাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করতো ও বাচঁতে দিত তোমাদের কন্যাদের। আর এতে ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর তরফ থেকে এক বিরাট সঙ্কট।

۞ وَوَٰعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَٰثِينَ لَيْلَةًۭ وَأَتْمَمْنَٰهَا بِعَشْرٍۢ فَتَمَّ مِيقَٰتُ رَبِّهِۦٓ أَرْبَعِينَ لَيْلَةًۭ ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَٰرُونَ ٱخْلُفْنِى فِى قَوْمِى وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ ٱلْمُفْسِدِينَ ﴿١٤٢﴾

আর আমি মূসাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি ত্রিশ রাত্রির এবং সেগুলোকে পূর্ন করেছি আরো দশ দ্বারা। বস্তুতঃ এভাবে চল্লিশ রাতের মেয়াদ পূর্ণ হয়ে গেছে। আর মূসা তাঁর ভাই হারুনকে বললেন, আমার সম্প্রদায়ে তুমি আমার প্রতিনিধি হিসাবে থাক। তাদের সংশোধন করতে থাক এবং হাঙ্গামা সৃষ্টিকারীদের পথে চলো না।

জহুরুল হক

আর আমরা মূসার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম ত্রিশ রাত্রি, আর তা পূর্ণ করি দশ দিয়ে -- তাতে পূর্ণ হলো তাঁর প্রভুর নির্ধারিত চল্লিশ রাত্রি। আর মূসা তাঁর ভাই হারূনকে বললেন -- ''আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে ও ভালোভাবে চলবে, আর গন্ডগোল সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করো না।’’

وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِىٓ أَنظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِى وَلَٰكِنِ ٱنظُرْ إِلَى ٱلْجَبَلِ فَإِنِ ٱسْتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوْفَ تَرَىٰنِى ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّۭا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًۭا ۚ فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبْحَٰنَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿١٤٣﴾

তারপর মূসা যখন আমার প্রতিশ্রুত সময় অনুযায়ী এসে হাযির হলেন এবং তাঁর সাথে তার পরওয়ারদেগার কথা বললেন, তখন তিনি বললেন, হে আমার প্রভু, তোমার দীদার আমাকে দাও, যেন আমি তোমাকে দেখতে পাই। তিনি বললেন, তুমি আমাকে কস্মিনকালেও দেখতে পাবে না, তবে তুমি পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক, সেটি যদি স্বস্থানে দঁড়িয়ে থাকে তবে তুমিও আমাকে দেখতে পাবে। তারপর যখন তার পরওয়ারদগার পাহাড়ের উপর আপন জ্যোতির বিকিরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন এবং মূসা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। অতঃপর যখন তাঁর জ্ঞান ফিরে এল; বললেন, হে প্রভু! তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপন করছি।

জহুরুল হক

আর যখন মূসা আমাদের নির্ধারিত-স্থলে এসে পৌঁছুলেন এবং তাঁর প্রভু তাঁর সাথে কথা বললেন, তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখবো।’’ তিনি বললেন -- ''তুমি কখনই আমাকে দেখতে পাবে না, বরং পাহাড়টির দিকে তাকাও, যদি তা তার জায়গায় স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখবে।’’ তারপর যখন তাঁর প্রভু পাহাড়টিতে জ্যোতিষ্মান হলেন তখন তিনি তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করলেন, আর মূসা পড়ে গেলেন সংজ্ঞাহীন হয়ে। তারপর যখন তিনি চেতনা পেলেন, তিনি বললেন -- ''তোমারই সব মহিমা! আমি তোমারই দিকে ফিরছি, আর আমি হব মুমিনদের মধ্যে অগ্রণী।’’

قَالَ يَٰمُوسَىٰٓ إِنِّى ٱصْطَفَيْتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَٰلَٰتِى وَبِكَلَٰمِى فَخُذْ مَآ ءَاتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ﴿١٤٤﴾

(পরওয়ারদেগার) বললেন, হে মূসা, আমি তোমাকে আমার বার্তা পাঠানোর এবং কথা বলার মাধ্যমে লোকদের উপর বিশিষ্টতা দান করেছি। সুতরাং যা কিছু আমি তোমাকে দান করলাম, গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞ থাক।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''হে মূসা! নিঃসন্দেহ আমি তোমাকে নির্বাচন করেছি জনগণের উপরে আমার বাণী প্রেরণের দ্বারা ও আমার বাক্যালাপের দ্বারা, কাজেই তুমি ধারণ করো যা বিধান আমি তোমাকে দিয়েছি, আর কৃতজ্ঞদের মধ্যেকার হও।’’

وَكَتَبْنَا لَهُۥ فِى ٱلْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَىْءٍۢ مَّوْعِظَةًۭ وَتَفْصِيلًۭا لِّكُلِّ شَىْءٍۢ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍۢ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا۟ بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُو۟رِيكُمْ دَارَ ٱلْفَٰسِقِينَ ﴿١٤٥﴾

আর আমি তোমাকে পটে লিখে দিয়েছি সর্বপ্রকার উপদেশ ও বিস্তারিত সব বিষয়। অতএব, এগুলোকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং স্বজাতিকে এর কল্যাণকর বিষয়সমূহ দৃঢ়তার সাথে পালনের নির্দেশ দাও।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁর জন্য লিপিবদ্ধ করেছিলাম ফলকগুলোতে হরেক রকমের উপদেশ আর সব-কিছুর ব্যাখ্যা, -- ''এ-সব তাহলে শক্তভাবে ধারণ করো, আর তোমার লোকদের নির্দেশ দাও শ্রেষ্ঠগুলো গ্রহণ করতে। আমি অচিরেই তোমাদের দেখাবো সত্যত্যাগীদের বাসস্থান।’’

سَأَصْرِفُ عَنْ ءَايَٰتِىَ ٱلَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِى ٱلْأَرْضِ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَإِن يَرَوْا۟ كُلَّ ءَايَةٍۢ لَّا يُؤْمِنُوا۟ بِهَا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًۭا وَإِن يَرَوْا۟ سَبِيلَ ٱلْغَىِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًۭا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنْهَا غَٰفِلِينَ ﴿١٤٦﴾

আমি আমার নিদর্শনসমূহ হতে তাদেরকে ফিরিয়ে রাখি, যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে গর্ব করে। যদি তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে ফেলে, তবুও তা বিশ্বাস করবে না। আর যদি হেদায়েতের পথ দেখে, তবে সে পথ গ্রহণ করে না। অথচ গোমরাহীর পথ দেখলে তাই গ্রহণ করে নেয়। এর কারণ, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা বলে মনে করেছে এবং তা থেকে বেখবর রয়ে গেছে।

জহুরুল হক

অচিরেই আমার নির্দেশাবলী থেকে আমি ফিরিয়ে দেবো তাদের যারা দেশের মধ্যে অন্যায়ভাবে অহংকার করে। আর যদিও তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখতে পায় তবু তারা ওতে বিশ্বাস করবে না, আর যদি তারা ভ্রান্ত পথের দেখা পায় তবে তাকে তারা পথ বলে গ্রহণ করে। এটি এজন্য যে তারা আমাদের নির্দেশ-সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর তাতে তারা উদাসীন হয়েছিল।

وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَلِقَآءِ ٱلْءَاخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَٰلُهُمْ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ﴿١٤٧﴾

বস্তুতঃ যারা মিথ্যা জেনেছে আমার আয়াতসমূকে এবং আখেরাতের সাক্ষাতকে, তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমন বদলাই সে পাবে যেমন আমল করত।

জহুরুল হক

আর যারা মিথ্যারোপ করেছিল আমাদের নির্দেশাবলীতে ও পরকালের মুলাকাতের সন্বন্ধে, তাদের ক্রিয়াকলাপ বৃথা হয়েছে। তাদের কি প্রতিফল দেয়া হবে যা তারা করে যাচ্ছিল তার বিপরীতে?

وَٱتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِنۢ بَعْدِهِۦ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًۭا جَسَدًۭا لَّهُۥ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا۟ أَنَّهُۥ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا ۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُوا۟ ظَٰلِمِينَ ﴿١٤٨﴾

আর বানিয়ে নিল মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকারাদির দ্বারা একটি বাছুর তা থেকে বেরুচ্ছিল ‘হাম্বা হাম্বা’ শব্দ। তারা কি একথাও লক্ষ্য করল না যে, সেটি তাদের সাথে কথাও বলছে না এবং তাদেরকে কোন পথও বাতলে দিচ্ছে না! তারা সেটিকে উপাস্য বানিয়ে নিল। বস্তুতঃ তারা ছিল জালেম।

জহুরুল হক

আর মূসার লোকেরা তাঁর পরে গ্রহণ করলো তাদের অলংকার দিয়ে একটি গোবৎসকে -- একটি দেহ, যাতে ফোকলা আওয়াজ হতো। তারা কি দেখলো না যে এটি তো তাদের সঙ্গে কথা বলে না আর তাদের পথে পরিচালিতও করে না? তারা এটিকে গ্রহণ করলো, আর তারা ছিল অন্যায়কারী।

وَلَمَّا سُقِطَ فِىٓ أَيْدِيهِمْ وَرَأَوْا۟ أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا۟ قَالُوا۟ لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ ﴿١٤٩﴾

অতঃপর যখন তারা অনুতপ্ত হল এবং বুঝতে পারল যে, আমরা নিশ্চিতই গোমরাহ হয়ে পড়েছি, তখন বলতে লাগল, আমাদের প্রতি যদি আমাদের পরওয়ারদেগার করুণা না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ধবংস হয়ে যাব।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের হাতে কামড় পড়লো আর দেখলো যে তারা বিপথে চলে গেছে, তারা বললে -- ''যদি না আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি করুণা করেন ও আমাদের পরিত্রাণ করেন তবে আমরা আলবৎ ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’’

وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰٓ إِلَىٰ قَوْمِهِۦ غَضْبَٰنَ أَسِفًۭا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِى مِنۢ بَعْدِىٓ ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى ٱلْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُۥٓ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ٱبْنَ أُمَّ إِنَّ ٱلْقَوْمَ ٱسْتَضْعَفُونِى وَكَادُوا۟ يَقْتُلُونَنِى فَلَا تُشْمِتْ بِىَ ٱلْأَعْدَآءَ وَلَا تَجْعَلْنِى مَعَ ٱلْقَوْمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿١٥٠﴾

তারপর যখন মূসা নিজ সম্প্রদায়ে ফিরে এলেন রাগাম্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়, তখন বললেন, আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার কি নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্বটাই না করেছ। তোমরা নিজ পরওয়ারদেগারের হুকুম থেকে কি তাড়াহুড়া করে ফেললে এবং সে তখতীগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং নিজের ভাইয়ের মাথার চুল চেপে ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন। ভাই বললেন, হে আমার মায়ের পুত্র, লোকগুলো যে আমাকে দুর্বল মনে করল এবং আমাকে যে মেরে ফেলার উপক্রম করেছিল। সুতরাং আমার উপর আর শত্রুদের হাসিও না। আর আমাকে জালিমদের সারিতে গন্য করো না।

জহুরুল হক

আর যখন মূসা ফিরে এলেন তাঁর লোকদের কাছে ক্ষুদ্ধ ও ত্রুদ্ধ হয়ে, তিনি বললেন -- ''আমার পরে তোমরা আমার স্থলে যা কারেছ তা জঘন্য! তোমরা কি তোমাদের প্রভুর বিচার এগিয়ে আনতে চাও?’’ আর তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন, আর তাঁর ভাইয়ের মাথা ধরলেন তাঁর দিকে তাঁকে টেনে আনতে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সহোদর! নিঃসন্দেহ লোকেরা আমাকে দুর্বল ঠাওরেছিল ও আমাকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল। সুতরাং আমার দশায় শত্রুদের পুলকিত করো না, আর, আমাকে পাপিষ্ঠ লোকদের দলভুক্ত করো না।’’

قَالَ رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَلِأَخِى وَأَدْخِلْنَا فِى رَحْمَتِكَ ۖ وَأَنتَ أَرْحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ﴿١٥١﴾

মূসা বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, ক্ষমা কর আমাকে আর আমার ভাইকে এবং আমাদেরকে তোমার রহমতের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যে সর্বাধিক করুণাময়।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে ও আমার ভাইকে পরিত্রাণ করো, আর আমাদের দাখিল করো তোমার অনুগ্রহের মধ্যে, কেননা তুমিই দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করুণাময়।’’

إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌۭ فِى ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِى ٱلْمُفْتَرِينَ ﴿١٥٢﴾

অবশ্য যারা গোবৎসকে উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, তাদের উপর তাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে পার্থিব এ জীবনেই গযব ও লাঞ্জনা এসে পড়বে। এমনি আমি অপবাদ আরোপকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যারা গো-বৎসকে গ্রহণ করেছিল তাদের পাকড়াও করবে তাদের প্রভুর ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এই দুনিয়ার জীবনে। আর এইভাবেই আমরা প্রতিফল দিই মিথ্যারচনাকারীদের।

وَٱلَّذِينَ عَمِلُوا۟ ٱلسَّيِّـَٔاتِ ثُمَّ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِهَا وَءَامَنُوٓا۟ إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعْدِهَا لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿١٥٣﴾

আর যারা মন্দ কাজ করে, তারপরে তওবা করে নেয় এবং ঈমান নিয়ে আসে, তবে নিশ্চয়ই তোমার পরওয়ারদেগার তওবার পর অবশ্য ক্ষমাকারী, করুণাময়।

জহুরুল হক

আর যারা অসদাচরণ করে আর তারপরে ফেরে ও বিশ্বাস করে, -- নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু তো এর পরে পরম ক্ষমাশীল, অফুরন্ত ফলদাতা।

وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلْغَضَبُ أَخَذَ ٱلْأَلْوَاحَ ۖ وَفِى نُسْخَتِهَا هُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ ﴿١٥٤﴾

তারপর যখন মূসার রাগ পড়ে গেল, তখন তিনি তখতীগুলো তুলে নিলেন। আর যা কিছু তাতে লেখা ছিল, তা ছিল সে সমস্ত লোকের জন্য হেদায়েত ও রহমত যারা নিজেদের পরওয়ারদেগারকে ভয় করে।

জহুরুল হক

আর মূসা থেকে ক্রোধ যখন প্রশমিত হলো তিনি তখন ফলকগুলো তুলে নিলেন, সে-সবের লেখনে ছিল পথনির্দেশ ও করুণা, তাদের জন্য যারা তাদের প্রভুর প্রতি ভয় করে।

وَٱخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُۥ سَبْعِينَ رَجُلًۭا لِّمِيقَٰتِنَا ۖ فَلَمَّآ أَخَذَتْهُمُ ٱلرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّٰىَ ۖ أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلسُّفَهَآءُ مِنَّآ ۖ إِنْ هِىَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَآءُ وَتَهْدِى مَن تَشَآءُ ۖ أَنتَ وَلِيُّنَا فَٱغْفِرْ لَنَا وَٱرْحَمْنَا ۖ وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْغَٰفِرِينَ ﴿١٥٥﴾

আর মূসা বেছে নিলেন নিজের সম্প্রদায় থেকে সত্তর জন লোক আমার প্রতিশ্রুত সময়ের জন্য। তারপর যখন তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তখন বললেন, হে আমার পরওয়ারদেগার, তুমি যদি ইচ্ছা করতে, তবে তাদেরকে আগেই ধ্বংস করে দিতে এবং আমাকেও। আমাদেরকে কি সে কর্মের কারণে ধ্বংস করছ, যা আমার সম্প্রদায়ের নির্বোধ লোকেরা করেছে? এসবই তোমার পরীক্ষা; তুমি যাকে ইচ্ছা এতে পথ ভ্রষ্ট করবে এবং যাকে ইচ্ছা সরলপথে রাখবে। তুমি যে আমাদের রক্ষক-সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও এবং আমাদের উপর করুনা কর। তাছাড়া তুমিই তো সর্বাধিক ক্ষমাকারী।

জহুরুল হক

আর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্তর জন লোককে বাছাই করলেন আমাদের নির্ধারিত স্থলের জন্য, কাজেই যখন ভূমিকম্প তাদের পাকড়ালো, তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! তুমি যদি ইচ্ছা করতে তবে এর আগেই তো তুমি তাদের ধ্বংস করতে পারতে, আর আমাকেও। তুমি কি আমাদের ধ্বংস করবে আমাদের মধ্যের নির্বোধরা যা করেছে তার জন্যে? এ তোমার পরীক্ষা বৈ তো নয়। এর দ্বারা তুমি বিপথগামী করো যাদের তুমি ইচ্ছা করো, আর সৎপথে চালাও যাদের তুমি ইচ্ছা করো। তুমিই আমাদের অভিভাবক, অতএব আমাদের পরিত্রাণ করো ও আমাদের প্রতি করুণা করো, কারণ তুমিই পরিত্রাণকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম।

۞ وَٱكْتُبْ لَنَا فِى هَٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةًۭ وَفِى ٱلْءَاخِرَةِ إِنَّا هُدْنَآ إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِىٓ أُصِيبُ بِهِۦ مَنْ أَشَآءُ ۖ وَرَحْمَتِى وَسِعَتْ كُلَّ شَىْءٍۢ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِينَ هُم بِـَٔايَٰتِنَا يُؤْمِنُونَ ﴿١٥٦﴾

আর পৃথিবীতে এবং আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ লিখে দাও। আমরা তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আল্লাহ তা’আলা বললেন, আমার আযাব তারই উপর পরিব্যাপ্ত। সুতরাং তা তাদের জন্য লিখে দেব যারা ভয় রাখে, যাকাত দান করে এবং যারা আমার আয়তসমুহের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।

জহুরুল হক

''আর আমাদের জন্য বিধান করো এই দুনিয়াতেই কল্যাণ এবং পরকালেও, আমরা নিঃসন্দেহ তোমার দিকেই ফিরছি।’’ তিনি বললেন -- ''আমার শাস্তি -- তা দিয়ে আমি আঘাত হানবো যাকে ইচ্ছা করবো, কিন্তু আমার করুণা -- তা সব-কিছুই পরিবেষ্ঠন করে। সুতরাং আমি তা বিধান করবো তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে, আর যাকাত আদায় করে, আর যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে বিশ্বাস করে, --

ٱلَّذِينَ يَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِىَّ ٱلْأُمِّىَّ ٱلَّذِى يَجِدُونَهُۥ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِى ٱلتَّوْرَىٰةِ وَٱلْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَىٰهُمْ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ ٱلْخَبَٰٓئِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَٱلْأَغْلَٰلَ ٱلَّتِى كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ مَعَهُۥٓ ۙ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ ﴿١٥٧﴾

সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে।

জহুরুল হক

''যারা অনুসরণ করে সেই রসূলকে -- নবী, উম্মী, যাঁকে তারা পায় উল্লিখিত রয়েছে তাদের কাছের তওরাতে ও ইঞ্জীলে, আর যিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকাজের ও তাদের নিষেধ করেন অসৎকাজ থেকে, আর তাদের জন্য বৈধ করেন ভালো বিষয়বস্তু ও তাদের জন্য নিষেধ করেন মন্দ জিনিসগুলো, আর যিনি তাদের থেকে দূর করে দেন তাদের বোঝা ও বন্ধন যা তাদের উপরে ছিল। অতএব যারা তাঁতে বিশ্বাস করে ও তাঁকে মান্য করে ও তাঁকে সাহায্য করে আর অনুসরণ করে সেই আলো যা তাঁর সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, -- এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম।’’

قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّى رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ٱلَّذِى لَهُۥ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِىِّ ٱلْأُمِّىِّ ٱلَّذِى يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴿١٥٨﴾

বলে দাও, হে মানব মন্ডলী। তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব। একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর। তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।

জহুরুল হক

বলো -- ''ওহে জনগণ! আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র রসূল তোমাদের সবার কাছে, -- মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব যাঁর সেইজনেরই, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সেজন্য আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস করো ও তাঁর রসূলের প্রতি -- উম্মী নবী, যিনি ঈমান এনেছেন আল্লাহতে ও তাঁর বাণীসমূহে, আর তোমরাও তাঁর অনুসরণ করো যেন তোমরা সৎপথপ্রাপ্ত হতে পারো।’’

وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰٓ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ ﴿١٥٩﴾

বস্তুতঃ মূসার সম্প্রদায়ে একটি দল রয়েছে যারা সত্যপথ নির্দেশ করে এবং সে মতেই বিচার করে থাকে।

জহুরুল হক

আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটি দল রয়েছে যারা পথ দেখায় সত্যের দ্বারা ও তার দ্বারা ন্যায়বিচার করে।

وَقَطَّعْنَٰهُمُ ٱثْنَتَىْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًۭا ۚ وَأَوْحَيْنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ إِذِ ٱسْتَسْقَىٰهُ قَوْمُهُۥٓ أَنِ ٱضْرِب بِّعَصَاكَ ٱلْحَجَرَ ۖ فَٱنۢبَجَسَتْ مِنْهُ ٱثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًۭا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍۢ مَّشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْغَمَٰمَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْهِمُ ٱلْمَنَّ وَٱلسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا۟ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقْنَٰكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِن كَانُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ﴿١٦٠﴾

আর আমি পৃথক পৃথক করে দিয়েছি তাদের বার জন পিতামহের সন্তানদেরকে বিরাট বিরাট দলে, এবং নির্দেশ দিয়েছি মুসাকে, যখন তার কাছে তার সম্প্রদায় পানি চাইল যে, স্বীয় যষ্টির দ্বারা আঘাত কর এ পাথরের উপর। অতঃপর এর ভেতর থেকে ফুটে বের হল বারটি প্রস্রবণ। প্রতিটি গোত্র চিনে নিল নিজ নিজ ঘাঁটি। আর আমি ছায়া দান করলাম তাদের উপর মেঘের এবং তাদের জন্য অবতীর্ন করলাম মান্না ও সালওয়া। যে পরিচ্ছন্ন বস্তুত জীবিকারূপে আমি তোমাদের দিয়েছি, তা থেকে তোমরা ভক্ষণ কর। বস্তুতঃ তারা আমার কোন ক্ষতি করেনি, বরং ক্ষতি করেছে নিজেদেরই।

জহুরুল হক

আর আমরা তাদের বিভক্ত করেছিলাম বারোটি গোত্রে দলে। আর মূসার কাছে আমরা প্রেরণা দিলাম যখন তাঁর লোকেরা তাঁর কাছে পানি চাইল, এই বলে -- ''তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো।’’ তখন তা থেকে বারোটি ঝরনা প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্র আপন জলপান-স্থান চিনে নিলো। আর তাদের উপরে আমরা মেঘ দিয়ে আচ্ছাদান করেছিলাম, আর তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম 'মান্না’ ও 'সালওয়া’, -- ''তোমাদের যা জীবিকা দিয়েছি তার ভালো ভালো জিনিস থেকে আহার করো।’’ কিন্তু তারা আমাদের কোনো অনিষ্ট করে নি, বরং তারা তাদের নিজেদের প্রতি অনিষ্ট করছিল।

وَإِذْ قِيلَ لَهُمُ ٱسْكُنُوا۟ هَٰذِهِ ٱلْقَرْيَةَ وَكُلُوا۟ مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ وَقُولُوا۟ حِطَّةٌۭ وَٱدْخُلُوا۟ ٱلْبَابَ سُجَّدًۭا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيٓـَٰٔتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ ٱلْمُحْسِنِينَ ﴿١٦١﴾

আর যখন তাদের প্রতি নির্দেশ হল যে, তোমরা এ নগরীতে বসবাস কর এবং খাও তা থেকে যেখান থেকে ইচ্ছা এবং বল, আমাদের ক্ষমা করুন। আর দরজা দিয়ে প্রবেশ কর প্রণত অবস্থায়। তবে আমি ক্ষমা করে দেব তোমাদের পাপসমুহ। অবশ্য আমি সৎকর্মীদিগকে অতিরিক্ত দান করব।

জহুরুল হক

আর স্মরণ করো! তাদের বলা হয়েছিল -- ''এ জনবসতিতে বসবাস করো, আর এ থেকে আহার করো যখন-যেখানে ইচ্ছা করো, আর বলো 'হিৎতাতুন’, আর সদর-দরজা দিয়ে প্রবেশ করো নতমস্তকে, তোমাদের সমস্ত ভুলভ্রান্তি আমরা তোমাদের থেকে ক্ষমা করে দেবো। উপরন্তু আমরা বাড়িয়ে দেবো শুভকর্মীদের জন্য।’’

فَبَدَّلَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ مِنْهُمْ قَوْلًا غَيْرَ ٱلَّذِى قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًۭا مِّنَ ٱلسَّمَآءِ بِمَا كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ ﴿١٦٢﴾

অনন্তর জালেমরা এতে অন্য শব্দ বদলে দিল তার পরিবর্তে, যা তাদেরকে বলা হয়েছিল। সুতরাং আমি তাদের উপর আযাব পাঠিয়েছি আসমান থেকে তাদের অপকর্মের কারণে।

জহুরুল হক

কিন্তু তাদের মধ্যে যারা অন্যায় করেছিল তারা তাদের যা বলা হয়েছিল তার বিপরীত কথায় তা বদলে দিল, সেজন্য তাদের উপরে আমরা আকাশ থেকে পাঠালাম মহামারী, যেহেতু তারা অন্যায় ক’রে চলছিল।

وَسْـَٔلْهُمْ عَنِ ٱلْقَرْيَةِ ٱلَّتِى كَانَتْ حَاضِرَةَ ٱلْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِى ٱلسَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًۭا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ ﴿١٦٣﴾

আর তাদের কাছে সে জনপদের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যা ছিল নদীর তীরে অবস্থিত। যখন শনিবার দিনের নির্দেশের ব্যাপারে সীমাতিক্রম করতে লাগল, যখন আসতে লাগল মাছগুলো তাদের কাছে শনিবার দিন পানির উপর, আর যেদিন শনিবার হত না, আসত না। এভাবে আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ, তারা ছিল নাফরমান।

জহুরুল হক

আর তাদের জিজ্ঞাসা করো সেই জনবসতি সন্বন্ধে যারা ছিল সমুদ্রের কিনারে। স্মরণ করো! তারা সব্বাতের উল্লঙ্ঘন করেছিল, কারণ তাদের মাছগুলো তাদের কাছে আসতো তাদের সাব্বাতের দিনে ঝাঁকে-ঝাঁকে, আর যেদিন তারা সব্বাত পালন করতো না তারা তাদের কাছে আসতো না। এইভাবে আমরা তাদের নিয়ন্ত্রিত করেছিলাম, কেননা তারা পাপাচার করে চলতো।

وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌۭ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙ ٱللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًۭا شَدِيدًۭا ۖ قَالُوا۟ مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ ﴿١٦٤﴾

আর যখন তাদের মধ্যে থেকে এক সম্প্রদায় বলল, কেন সে লোকদের সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা আযাব দিতে চান কঠিন আযাব? সে বললঃ তোমাদের পালনকর্তার সামনে দোষ ফুরাবার জন্য এবং এজন্য যেন তারা ভীত হয়।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের মধ্যের একটি দল বললে -- ''কেন তোমরা সেই লোকদের উপদেশ দিচ্ছ আল্লাহ্ যাদের ধ্বংস করতে যাচ্ছেন অথবা কঠোর শাস্তিতে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন’’? তাঁরা বললেন -- ''তোমাদের প্রভুর কাছে দোষমুক্ত হবার জন্য, আর যাতে তারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে।’’

فَلَمَّا نَسُوا۟ مَا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦٓ أَنجَيْنَا ٱلَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذْنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُوا۟ بِعَذَابٍۭ بَـِٔيسٍۭ بِمَا كَانُوا۟ يَفْسُقُونَ ﴿١٦٥﴾

অতঃপর যখন তারা সেসব বিষয় ভুলে গেল, যা তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোককে মুক্তি দান করলাম যারা মন্দ কাজ থেকে বারণ করত। আর পাকড়াও করলাম, গোনাহগারদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের না-ফরমানীর দরুন।

জহুরুল হক

কিন্তু যখন তারা বিস্মৃত হলো যা তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল, আমরা উদ্ধার করেছিলাম তাদের যারা নিষেধ করতো অসৎকাজ থেকে, আর যারা অন্যায় করে তাদের আমরা পাকড়াও করলাম কঠিন শাস্তিতে, যেহেতু তারা পাপাচার করতো।

فَلَمَّا عَتَوْا۟ عَن مَّا نُهُوا۟ عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَٰسِـِٔينَ ﴿١٦٦﴾

তারপর যখন তারা এগিয়ে যেতে লাগল সে কর্মে যা থেকে তাদের বারণ করা হয়েছিল, তখন আমি নির্দেশ দিলাম যে, তোমরা লাঞ্ছিত বানর হয়ে যাও।

জহুরুল হক

তারপর যখন তারা তাচ্ছিল্য করলো তাতে যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল তখন আমরা তাদের বললাম -- ''তোমরা ঘৃণ্য বানর হয়ে যাও।’’

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوٓءَ ٱلْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿١٦٧﴾

আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর, যখন তোমার পালনকর্তা সংবাদ দিয়েছেন যে, অবশ্যই কেয়ামত দিবস পর্যন্ত ইহুদীদের উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দান করতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার পালনকর্তা শীঘ্র শাস্তি দানকারী এবং তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।

জহুরুল হক

আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু ঘোষণা করলেন যে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিযুক্ত করবেন যারা তাদের পীড়ন করবে কঠিন নিপীড়নে। নিশ্চয় তোমার প্রভু তো প্রতিফল-দানে তৎপর এবং তিনি তো নিশ্চয়ই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।

وَقَطَّعْنَٰهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ أُمَمًۭا ۖ مِّنْهُمُ ٱلصَّٰلِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَٰهُم بِٱلْحَسَنَٰتِ وَٱلسَّيِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴿١٦٨﴾

আর আমি তাদেরকে বিভক্ত করে দিয়েছি দেশময় বিভিন্ন শ্রেনীতে, তাদের মধ্যে কিছু রয়েছে ভাল আর কিছু রয়েছে অন্য রকম! তাছাড়া আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দের মাধ্যমে যাতে তারা ফিরে আসে।

জহুরুল হক

আর আমরা পৃথিবীতে তাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন দলে, তাদের মধ্যে কেউ-কেউ সৎপথাবলন্বী, আর তাদের কতক এর বিপরীত। আর আমরা তাদের নিয়ন্ত্রিত করেছি ভালো দিয়ে ও মন্দ দিয়ে, যেন তারা ফিরে আসে।

فَخَلَفَ مِنۢ بَعْدِهِمْ خَلْفٌۭ وَرِثُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَٰذَا ٱلْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌۭ مِّثْلُهُۥ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَٰقُ ٱلْكِتَٰبِ أَن لَّا يَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلْحَقَّ وَدَرَسُوا۟ مَا فِيهِ ۗ وَٱلدَّارُ ٱلْءَاخِرَةُ خَيْرٌۭ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿١٦٩﴾

তারপর তাদের পেছনে এসেছে কিছু অপদার্থ, যারা উত্তরাধিকারী হয়েছে কিতাবের; তারা নিকৃষ্ট পার্থিব উপকরণ আহরণ করছে এবং বলছে, আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। বস্তুতঃ এমনি ধরনের উপকরণ যদি আবারো তাদের সামনে উপস্থিত হয়, তবে তাও তুলে নেবে। তাদের কাছথেকে কিতাবে কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কিছু বলবে না? অথচ তারা সে সবই পাঠ করেছে, যা তাতে লেখা রয়েছে। বস্তুতঃ আখেরাতের আলয় ভীতদের জন্য উত্তম-তোমরা কি তা বোঝ না ?

জহুরুল হক

অতঃপর তাদের পরে স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল এক উত্তরপুরুষ যারা গ্রন্থ উত্তরাধিকার করেছিল, তারা আঁকড়ে ধরেছিল এই সাধারণ জীবনের তুচ্ছ-বস্তুসব আর বলতো -- ''আমাদের তো মাফ করে দেয়া হবে।’’ আর যদি তাদের কাছে তার মতো বস্তুগুলো আসে তবে তারা তা গ্রহণ করে। তাদের কাছ থেকে কি গ্রন্থের অঙ্গীকার নেওয়া হয় নি যে তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে সত্য ছাড়া আর কিছু বলবে না, আর তারা পাঠও করেছে যা তাতে রয়েছে? আর পরকালের বাসস্থানই শ্রেয় তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে। তোমরা কি তবে বুঝো না?

وَٱلَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِٱلْكِتَٰبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُصْلِحِينَ ﴿١٧٠﴾

আর যেসব লোক সুদৃঢ়ভাবে কিতাবকে আঁকড়ে থাকে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে নিশ্চয়ই আমি বিনষ্ট করব না সৎকর্মীদের সওয়াব।

জহুরুল হক

আর যারা কিতাব শক্তভাবে ধারণ করে ও নামায কায়েম করে -- আমরা নিশ্চয় সৎকর্মশীলদের কর্মফল বিনষ্ট করি না।

۞ وَإِذْ نَتَقْنَا ٱلْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُۥ ظُلَّةٌۭ وَظَنُّوٓا۟ أَنَّهُۥ وَاقِعٌۢ بِهِمْ خُذُوا۟ مَآ ءَاتَيْنَٰكُم بِقُوَّةٍۢ وَٱذْكُرُوا۟ مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ﴿١٧١﴾

আর যখন আমি তুলে ধরলাম পাহাড়কে তাদের উপরে সামিয়ানার মত এবং তারা ভয় করতে লাগল যে, সেটি তাদের উপর পড়বে, তখন আমি বললাম, ধর, যা আমি তোমাদের দিয়েছি, দৃঢ়ভাবে এবং স্মরণ রেখো যা তাতে রয়েছে, যেন তোমরা বাঁচতে পার।

জহুরুল হক

আরোও স্মরণ করো! আমরা তাদের উপরে পর্বতকে কম্পিত করলাম তা যেন হয়েছিল একটি আচ্ছাদন, আর তারা ভেবেছিল যে এ নিশ্চয়ই তাদের উপরে ভেঙ্গে পড়েছে, ''আমরা তোমাদের যা দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে আকঁড়ে ধরো, আর তাতে যা রয়েছে তা স্মরণ রেখো, যাতে তোমরা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করো’’।

وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِىٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَآ ۛ أَن تَقُولُوا۟ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَٰذَا غَٰفِلِينَ ﴿١٧٢﴾

আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।

জহুরুল হক

আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু আদমের বংশধরদের থেকে -- তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে -- তাদের সন্তান-সন্ততি এনেছিলেন, আর তাদের নিজেদের সন্বন্ধে তাদের সাক্ষ্য দিইয়েছিলেন -- ''আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’’ তারা বলেছিল -- ''হাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’’ এজন্য যে পাছে তোমরা কিয়ামতের দিনে বলো -- ''আমরা তো এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিলাম,’’ --

أَوْ تَقُولُوٓا۟ إِنَّمَآ أَشْرَكَ ءَابَآؤُنَا مِن قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةًۭ مِّنۢ بَعْدِهِمْ ۖ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلْمُبْطِلُونَ ﴿١٧٣﴾

অথবা বলতে শুরু কর যে, অংশীদারিত্বের প্রথা তো আমাদের বাপ-দাদারা উদ্ভাবন করেছিল আমাদের পূর্বেই। আর আমরা হলাম তাদের পশ্চাৎবর্তী সন্তান-সন্ততি। তাহলে কি সে কর্মের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করবেন, যা পথভ্রষ্টরা করেছে?

জহুরুল হক

অথবা তোমরা বলো -- ''আসল ব্যাপার হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষরা এর আগেই অংশীদার ঠাওরেছিল, আর আমরা তাদের পরবর্তীকালে বংশধরই ছিলাম। তুমি কি তবে আমাদের ধ্বংস করবে ভ্রষ্টাচারীরা যা করেছিল সেজন্য?

وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلْءَايَٰتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴿١٧٤﴾

বস্তুতঃ এভাবে আমি বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা করি, যাতে তারা ফিরে আসে।

জহুরুল হক

আর এইভাবে আমাদের নির্দেশাবলী আমরা ব্যাখ্যা করি যেন তারা ফিরে আসে।

وَٱتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ٱلَّذِىٓ ءَاتَيْنَٰهُ ءَايَٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ ٱلشَّيْطَٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلْغَاوِينَ ﴿١٧٥﴾

আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে।

জহুরুল হক

আর তাদের কাছে পাঠ করো ওর বৃত্তান্ত যাকে আমরা আমাদের নির্দেশাবলী প্রদান করেছিলাম, কিন্তু সে সে-সব থেকে গুটিয়ে নেয়, সেজন্য শয়তান তার পিছু নেয়, কাজেই সে বিপথ-গামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَٰهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُۥٓ أَخْلَدَ إِلَى ٱلْأَرْضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ ۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ ٱلْقَوْمِ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا ۚ فَٱقْصُصِ ٱلْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ﴿١٧٦﴾

অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে।

জহুরুল হক

আর যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তবে নিশ্চয়ই এর দ্বারা তাকে আমরা উন্নীত করতাম, কিন্তু সে মাটি আকঁড়ে ধরলো, আর সে তার হীন-কামনার অনুসরণ করে চললো। সুতরাং তার উপমা হচ্ছে কুকুরের দৃষ্টান্তের মতো -- ওকে যদি তুমি তাড়া করো, সে জিব বের ক’রে হাঁপাবে, আর যদি তুমি তাকে এড়িয়ে চলো সে জিব বার করে হাঁপাবে। এই হচ্ছে সে-সব লোকের দৃষ্টান্ত যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করে। তুমি ইতিবৃত্ত বিবৃত করো যেন তারা চিন্তা করতে পারে।

سَآءَ مَثَلًا ٱلْقَوْمُ ٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا۟ يَظْلِمُونَ ﴿١٧٧﴾

তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে।

জহুরুল হক

মন্দের দৃষ্টান্ত সেই লোকেরা যারা আমাদের বাণীসমূহে মিথ্যারোপ করে, আর তাদের অন্তরা‌ত্মার প্রতিই তারা অত্যাচার করে চলে!

مَن يَهْدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلْمُهْتَدِى ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْخَٰسِرُونَ ﴿١٧٨﴾

যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

জহুরুল হক

যাকে আল্লাহ্ পথ দেখান সে-ই তবে সৎপথে চালিত, আর যাকে তিনি বিপথে চলতে দেন, তাহলে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًۭا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌۭ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌۭ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌۭ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآ ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَٰفِلُونَ ﴿١٧٩﴾

আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।

জহুরুল হক

আর আমরা জাহান্নামের জন্য নিশ্চয়ই ছড়িয়ে দিয়েছি জিন ও মানুষের মধ্যের অনেককে, -- তাদের হৃদয় আছে তা দিয়ে তারা বুঝে না, আর তাদের চোখ আছে তা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান আছে তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা গবাদি-পশুর ন্যায়, বরং তারা আরো পথভ্রষ্ট। তারা নিজেরাই হচ্ছে উদাসীন।

وَلِلَّهِ ٱلْأَسْمَآءُ ٱلْحُسْنَىٰ فَٱدْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا۟ ٱلَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِىٓ أَسْمَٰٓئِهِۦ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ ﴿١٨٠﴾

আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।

জহুরুল হক

আর আল্লাহ্‌রই হচ্ছে সবচাইতে ভালো নামাবলী, কাজেই তাঁকে ডাকো সেই সবের দ্বারা, আর তাদের ছেড়ে দাও যারা তাঁর নামাবলী নিয়ে বিকৃতি করে। অচিরেই তাদের প্রতিফল দেয়া হবে তারা যা করে যাচ্ছে তার জন্য।

وَمِمَّنْ خَلَقْنَآ أُمَّةٌۭ يَهْدُونَ بِٱلْحَقِّ وَبِهِۦ يَعْدِلُونَ ﴿١٨١﴾

আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন এক দল রয়েছে যারা সত্য পথ দেখায় এবং সে অনুযায়ী ন্যায়চিার করে।

জহুরুল হক

আর যাদের আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে আছে একটি দল যারা পথ দেখায় সত্যের দ্বারা, আর তার দ্বারা তারা ন্যায়পরায়ণতা করে।

وَٱلَّذِينَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ ﴿١٨٢﴾

বস্তুতঃ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াতসমূহকে, আমি তাদেরকে ক্রমান্বয়ে পাকড়াও করব এমন জায়গা থেকে, যার সম্পর্কে তাদের ধারণাও হবে না।

জহুরুল হক

আর যারা আমাদের বাণীসমূহে মিথ্যারোপ করে তাদের আমরা ক্রমাগত টেনে নিয়ে যাই, -- কোথা থেকে তা তারা জানে না।

وَأُمْلِى لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِى مَتِينٌ ﴿١٨٣﴾

বস্তুতঃ আমি তাদেরকে ঢিল দিয়ে থাকি। নিঃসন্দেহে আমার কৌশল সুনিপুণ।

জহুরুল হক

আর আমি তাদের অবসর দিই, নিঃসন্দেহ আমার ব্যবস্থা অত্যন্ত বলিষ্ঠ।

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا۟ ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌۭ مُّبِينٌ ﴿١٨٤﴾

তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, তাদের সঙ্গী লোকটির মস্তিষ্কে কোন বিকৃতি নেই? তিনি তো ভীতি প্রদর্শনকারী প্রকৃষ্টভাবে।

জহুরুল হক

তারা কি চিন্তা করে না? তাদের সহচরের মধ্যে কোনো পাগলামি নেই। বাস্তবে তিনি তো এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী।

أَوَلَمْ يَنظُرُوا۟ فِى مَلَكُوتِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَىْءٍۢ وَأَنْ عَسَىٰٓ أَن يَكُونَ قَدِ ٱقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ ۖ فَبِأَىِّ حَدِيثٍۭ بَعْدَهُۥ يُؤْمِنُونَ ﴿١٨٥﴾

তারা কি প্রত্যক্ষ করেনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজ্য সম্পর্কে এবং যা কিছু সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তা’আলা বস্তু সামগ্রী থেকে এবং এ ব্যাপারে যে, তাদের সাথে কৃত ওয়াদার সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে? বস্তুতঃ এরপর কিসের উপর ঈমান আনবে?

জহুরুল হক

তারা কি তাকায় না মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সাম্রাজ্যের প্রতি আর যা-কিছু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, আর হতে পারে তাদের নির্ধারিত কাল ঘনিয়ে এসেছে? এর পরে আর কোন পর্যালোচনার দ্বারা তারা তবে বিশ্বাস করবে?

مَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِىَ لَهُۥ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِى طُغْيَٰنِهِمْ يَعْمَهُونَ ﴿١٨٦﴾

আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন।

জহুরুল হক

যাকে আল্লাহ্ বিপথে যেতে দেন তার জন্যে তবে কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আর তাদের তিনি ছেড়ে দেন তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তভাবে ঘুরপাক খেতে।

يَسْـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَىٰهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّى ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَآ إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةًۭ ۗ يَسْـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِىٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿١٨٧﴾

আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে, যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ লোকই উপলব্ধি করে না।

জহুরুল হক

তারা তোমাকে ঘড়িঘন্টা সন্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে -- কখন তা ঘটবে। বলো -- ''এর জ্ঞান অবশ্যই রয়েছে আমার প্রভুর কাছে, এর সময় সন্বন্ধে তা প্রকাশ করতে পারে না তিনি ছাড়া কেউ। এ অতি গুরুতর ব্যাপার মহাকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে, এ এসে পড়বে না তোমাদের উপরে অতর্কিতে ছাড়া।’’ তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে যেন তুমিই এ বিষয়ে আগ্রহী। বলো -- ''এর জ্ঞান আলবৎ আল্লাহ্‌র কাছে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।’’

قُل لَّآ أَمْلِكُ لِنَفْسِى نَفْعًۭا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ ٱلْغَيْبَ لَٱسْتَكْثَرْتُ مِنَ ٱلْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِىَ ٱلسُّوٓءُ ۚ إِنْ أَنَا۠ إِلَّا نَذِيرٌۭ وَبَشِيرٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ ﴿١٨٨﴾

আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।

জহুরুল হক

বলো -- ''আমার কোনো অধিকার নেই আমার নিজেরই কোনো লাভ বা ক্ষতি করবার -- আল্লাহ্ যা চান তা-ব্যতীত। আর যদি আমি অদৃশ্যের সম্যক্ জ্ঞান রাখতাম তবে কল্যাণের প্রাচুর্য বানিয়ে নিতাম, আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না। আমি তো একজন সতর্ককারী বই নই, আর একজন সুসংবাদদাতা সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান এনেছে।

۞ هُوَ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍۢ وَٰحِدَةٍۢ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًۭا فَمَرَّتْ بِهِۦ ۖ فَلَمَّآ أَثْقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ ءَاتَيْتَنَا صَٰلِحًۭا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّٰكِرِينَ ﴿١٨٩﴾

তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে। অতঃপর পুরুষ যখন নারীকে আবৃত করল, তখন, সে গর্ভবতী হল। অতি হালকা গর্ভ। সে তাই নিয়ে চলাফেরা করতে থাকল। তারপর যখন বোঝা হয়ে গেল, তখন উভয়েই আল্লাহকে ডাকল যিনি তাদের পালনকর্তা যে, তুমি যদি আমাদিগকে সুস্থ ও ভাল দান কর তবে আমরা তোমার শুকরিয়া আদায় করব।

জহুরুল হক

তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই নফস থেকে, আর তা থেকে তিনি তৈরি করেছেন তার সঙ্গিনী যেন সে তার মধ্যে শান্তি পেতে পারে। অতএব যখন সে তাতে উপগত হয় সে তখন একটি হাল্কা বোঝা ধারণ করে আর তা নিয়ে চলাফেরা করে, তারপর যখন তা ভারী হয়ে উঠে তখন উভয়ে আহ্বান করে তাদের প্রভু আল্লাহ্‌কে -- ''যদি তুমি আমাদের সুষ্ঠু একটি দাও আমরা তবে নিশ্চয়ই হবো কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত।’’

فَلَمَّآ ءَاتَىٰهُمَا صَٰلِحًۭا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَآءَ فِيمَآ ءَاتَىٰهُمَا ۚ فَتَعَٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿١٩٠﴾

অতঃপর তাদেরকে যখন সুস্থ ও ভাল দান করা হল, তখন দানকৃত বিষয়ে তার অংশীদার তৈরী করতে লাগল। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের শরীক সাব্যস্ত করা থেকে বহু উর্ধে।

জহুরুল হক

কিন্তু তিনি যখন তাদের সুষ্ঠু একটি দান করলেন তারা তাঁর সঙ্গে দাঁড় করালো অংশীদার তিনি তাদের যা দিয়েছেন তার সন্বন্ধে। কিন্তু বহু উচ্চে অবস্থিত আল্লাহ্ তারা যা অংশী বানায় সে-সব থেকে।

أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْـًۭٔا وَهُمْ يُخْلَقُونَ ﴿١٩١﴾

তারা কি এমন কাউকে শরীক সাব্যস্ত করে, যে একটি বস্তুও সৃষ্টি করেনি, বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

জহুরুল হক

তারা কি অংশীদার বসায় তাকে যে কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে?

وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًۭا وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ ﴿١٩٢﴾

আর তারা, না তাদের সাহায্য করতে পারে, না নিজের সাহায্য করতে পারে।

জহুরুল হক

আর ওরা কোনো ক্ষমতা রাখে না তাদের সাহায্য করার, আর তারা তাদের নিজেদেরও সাহায্য করতে পারে না।

وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمْ ۚ سَوَآءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ أَنتُمْ صَٰمِتُونَ ﴿١٩٣﴾

আর তোমরা যদি তাদেরকে আহবান কর সুপথের দিকে, তবে তারা তোমাদের আহবান অনুযায়ী চলবে না। তাদেরকে আহবান জানানো কিংবা নীরব থাকা উভয়টিই তোমাদের জন্য সমান।

জহুরুল হক

আর যদি তোমরা তাদের আহ্বান করো সৎপথের প্রতি, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা তাদের আহ্বান করো অথবা তোমরা চুপচাপ থাকো, তোমাদের জন্যে সমান।

إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ فَٱدْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا۟ لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ﴿١٩٤﴾

আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা সবাই তোমাদের মতই বান্দা। অতএব, তোমরা যাদেরকে ডাক, তখন তাদের পক্ষেও তো তোমাদের সে ডাক কবুল করা উচিত যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক?

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তোমরা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে যাদের আহ্বান কর তারা তোমাদেরই ন্যায় দাস, সুতরাং তাদের ডাকো, তোমাদের প্রতি তারা তবে সাড়া দিক, -- যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

أَلَهُمْ أَرْجُلٌۭ يَمْشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَيْدٍۢ يَبْطِشُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌۭ يُبْصِرُونَ بِهَآ ۖ أَمْ لَهُمْ ءَاذَانٌۭ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ قُلِ ٱدْعُوا۟ شُرَكَآءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ﴿١٩٥﴾

তাদের কি পা আছে, যদ্বারা তারা চলাফেরা করে, কিংবা তাদের কি হাত আছে, যদ্বারা তারা ধরে। অথবা তাদের কি চোখ আছে যদ্বারা তারা দেখতে পায় কিংবা তাদের কি কান আছে যদ্বারা শুনতে পায়? বলে দাও, তোমরা ডাক তোমাদের অংশীদারদিগকে, অতঃপর আমার অমঙ্গল কর এবং আমাকে অবকাশ দিও না।

জহুরুল হক

তাদের কি পা আছে যা দিয়ে তারা চলতে পারে, অথবা তাদের কি হাত আছে যা দিয়ে ধরতে পারে, অথবা তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে দেখতে পারে, অথবা তাদের কি কান আছে যা দিয়ে তারা শুনতে পারে? বলো -- ''ডাকো তোমাদের অংশীদারদের, তারপর আমার বিরুদ্ধে ফন্দি আটোঁ, আর আমাকে অবকাশ দিও না!

إِنَّ وَلِۦِّىَ ٱللَّهُ ٱلَّذِى نَزَّلَ ٱلْكِتَٰبَ ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّٰلِحِينَ ﴿١٩٦﴾

আমার সহায় তো হলেন আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। বস্তুত; তিনিই সাহায্য করেন সৎকর্মশীল বান্দাদের।

জহুরুল হক

''নিঃসন্দেহ আমার অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি কিতাব অবতারণ করেছেন, আর তিনিই অভিভাবকত্ব করেন সৎপথা- বলন্বীদের।

وَٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَآ أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ ﴿١٩٧﴾

আর তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাক তারা না তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারবে, না নিজেদের আত্নরক্ষা করতে পারবে।

জহুরুল হক

''আর যাদের তোমরা আহ্বান কর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে, তারা কোনো ক্ষমতা রাখে না তোমাদের সাহায্য করার, আর তাদের নিজেদেরও তারা সাহায্য করতে পারে না।’’

وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى ٱلْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا۟ ۖ وَتَرَىٰهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ ﴿١٩٨﴾

আর তুমি যদি তাদেরকে সুপথে আহবান কর, তবে তারা তা কিছুই শুনবে না। আর তুমি তো তাদের দেখছই, তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, অথচ তারা কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।

জহুরুল হক

আর যদি তোমরা তাদের আহ্বান কর সৎপথের প্রতি, তারা শোনে না। আর তুমি তাদের দেখতে পাও তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তারা দেখতে পাবে না।

خُذِ ٱلْعَفْوَ وَأْمُرْ بِٱلْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ ٱلْجَٰهِلِينَ ﴿١٩٩﴾

আর ক্ষমা করার অভ্যাস গড়ে তোল, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খ জাহেলদের থেকে দূরে সরে থাক।

জহুরুল হক

ক্ষমা অবলন্বন করো আর সদয়তার নির্দেশ দাও, আর অজ্ঞদের পরিহার করে চলো।

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ نَزْغٌۭ فَٱسْتَعِذْ بِٱللَّهِ ۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٢٠٠﴾

আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।

জহুরুল হক

আর যদি শয়তানের থেকে খোঁচাখুচি তোমাকে আহত করে তবে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাও। নিঃসন্দেহ তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ إِذَا مَسَّهُمْ طَٰٓئِفٌۭ مِّنَ ٱلشَّيْطَٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ ﴿٢٠١﴾

যাদের মনে ভয় রয়েছে, তাদের উপর শয়তানের আগমন ঘটার সাথে সাথেই তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে, যখন শয়তানের আক্রমণ তাদের স্পর্শ করে তারা স্মরণ করে, -- তাহলে দেখো! তারাই হয় দৃষ্টিশক্তিমান!

وَإِخْوَٰنُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِى ٱلْغَىِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ ﴿٢٠٢﴾

পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই, তাদেরকে সে ক্রমাগত পথভ্রষ্ট তার দিকে নিয়ে যায় অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না।

জহুরুল হক

আর তাদের ভাইয়েরা, -- তারা এদের টেনে নেয় ভ্রান্তির মধ্যে, আর তারা থামে না।

وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِـَٔايَةٍۢ قَالُوا۟ لَوْلَا ٱجْتَبَيْتَهَا ۚ قُلْ إِنَّمَآ أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰٓ إِلَىَّ مِن رَّبِّى ۚ هَٰذَا بَصَآئِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًۭى وَرَحْمَةٌۭ لِّقَوْمٍۢ يُؤْمِنُونَ ﴿٢٠٣﴾

আর যখন আপনি তাদের নিকট কোন নিদর্শন নিয়ে না যান, তখন তারা বলে, আপনি নিজের পক্ষ থেকে কেন অমুকটি নিয়ে আসলেন না, তখন আপনি বলে দিন, আমি তো সে মতেই চলি যে হুকুম আমার নিকট আসে আমার পরওয়ারদেগারের কাছ থেকে। এটা ভাববার বিষয় তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।

জহুরুল হক

আর যখন তুমি তাদের কাছে কোনো আয়াত আনো না, তারা বলে -- ''কেন তুমি তা বেছে নাও না?’’ তুমি বলো -- ''আমি শুধু তারই অনুসরণ করি যা আমার কাছে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে আমার প্রভুর কাছ থেকে, এটি হচ্ছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে দৃষ্টিদায়ক, আর পথনির্দেশক, আর হচ্ছে করুণা সেই লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।’’

وَإِذَا قُرِئَ ٱلْقُرْءَانُ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ﴿٢٠٤﴾

আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।

জহুরুল হক

আর যখন কুরআন পঠিত হয় তখন তা শোনো, আর চুপ করে থেকো, যেন তোমাদের প্রতি করুণা বর্ষিত হয়।

وَٱذْكُر رَّبَّكَ فِى نَفْسِكَ تَضَرُّعًۭا وَخِيفَةًۭ وَدُونَ ٱلْجَهْرِ مِنَ ٱلْقَوْلِ بِٱلْغُدُوِّ وَٱلْءَاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْغَٰفِلِينَ ﴿٢٠٥﴾

আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এবং এমন স্বরে যা চিৎকার করে বলা অপেক্ষা কম; সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকো না।

জহুরুল হক

আর স্মরণ করো তোমার প্রভুকে নিজের অন্তরে সবিনয়ে ও সভয়ে ও অনুচ্চস্বরে, প্রাতে ও অপরাহ্নে, আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।

إِنَّ ٱلَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِۦ وَيُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ يَسْجُدُونَ ۩ ﴿٢٠٦﴾

নিশ্চয়ই যারা তোমার পরওয়ারদেগারের সান্নিধ্যে রয়েছেন, তারা তাঁর বন্দেগীর ব্যাপারে অহঙ্কার করেন না এবং স্মরণ করেন তাঁর পবিত্র সত্তাকে; আর তাঁকেই সেজদা করেন।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যারা তোমার প্রভুর সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর উপাসনায় অহংকার দেখায় না, আর তারা তাঁরই মহিমা কীর্তন করে, আর তাঁরই প্রতি সিজদা প্রদান করে।