Setting
Surah The man [Al-Insan] in Bengali
هَلْ أَتَىٰ عَلَى ٱلْإِنسَٰنِ حِينٌۭ مِّنَ ٱلدَّهْرِ لَمْ يَكُن شَيْـًۭٔا مَّذْكُورًا ﴿١﴾
মানুষের উপর এমন কিছু সময় অতিবাহিত হয়েছে যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না।
মানুষের উপরে কি দীর্ঘ সময়ের অবকাশ অতিবাহিত হয় নি যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না?
إِنَّا خَلَقْنَا ٱلْإِنسَٰنَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍۢ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَٰهُ سَمِيعًۢا بَصِيرًا ﴿٢﴾
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।
নিঃসন্দেহ আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি সংযুক্ত এক শুক্রকীট থেকে, আমরা তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছি, সেজন্য আমরা তা কে বানিয়েছি শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন।
إِنَّا هَدَيْنَٰهُ ٱلسَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًۭا وَإِمَّا كَفُورًا ﴿٣﴾
আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি। এখন সে হয় কৃতজ্ঞ হয়, না হয় অকৃতজ্ঞ হয়।
নিঃসন্দেহ আমরা তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, -- হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।
إِنَّآ أَعْتَدْنَا لِلْكَٰفِرِينَ سَلَٰسِلَا۟ وَأَغْلَٰلًۭا وَسَعِيرًا ﴿٤﴾
আমি অবিশ্বাসীদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছি শিকল, বেড়ি ও প্রজ্বলিত অগ্নি।
আমরা অবশ্য অকৃতজ্ঞদের জন্য তৈরি করেছি শিকল ও বেড়ি, আর জ্বলন্ত আগুন।
إِنَّ ٱلْأَبْرَارَ يَشْرَبُونَ مِن كَأْسٍۢ كَانَ مِزَاجُهَا كَافُورًا ﴿٥﴾
নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলরা পান করবে কাফুর মিশ্রিত পানপাত্র।
নিঃসন্দেহ পুণ্যাত্মারা পান করবে এমন একটি পাত্র থেকে যার মেজাজ হবে কর্পূরের --
عَيْنًۭا يَشْرَبُ بِهَا عِبَادُ ٱللَّهِ يُفَجِّرُونَهَا تَفْجِيرًۭا ﴿٦﴾
এটা একটা ঝরণা, যা থেকে আল্লাহর বান্দাগণ পান করবে-তারা একে প্রবাহিত করবে।
একটি ফোয়ারা -- যা থেকে আল্লাহ্র বান্দারা পান করবে, তারা এটিকে প্রবাহিত করবে অবিরাম ধারায়।
يُوفُونَ بِٱلنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًۭا كَانَ شَرُّهُۥ مُسْتَطِيرًۭا ﴿٧﴾
তারা মান্নত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী।
তারা মানত পালন করে, এবং ভয় করে সেই দিনটির যার ধ্বংসলীলা হবে সুদূরপ্রসারী।
وَيُطْعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسْكِينًۭا وَيَتِيمًۭا وَأَسِيرًا ﴿٨﴾
তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে।
আর তারা তাঁর প্রতি প্রেমবশতঃ খাবার খেতে দেয় অভাবগ্রস্তকে ও এতিমকে ও বন্দীকে --
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ ٱللَّهِ لَا نُرِيدُ مِنكُمْ جَزَآءًۭ وَلَا شُكُورًا ﴿٩﴾
তারা বলেঃ কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না।
''আমরা তোমাদের খেতে দিচ্ছি শুধু আল্লাহ্র সন্তষ্টিলাভের জন্য, তোমাদের থেকে আমরা কোনো প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়।
إِنَّا نَخَافُ مِن رَّبِّنَا يَوْمًا عَبُوسًۭا قَمْطَرِيرًۭا ﴿١٠﴾
আমরা আমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি।
''আমরা আলবৎ আমাদের প্রভুর নিকট থেকে এক ভীতিপ্রদ বিপদসংকুল দিনের ভয় করি।’’
فَوَقَىٰهُمُ ٱللَّهُ شَرَّ ذَٰلِكَ ٱلْيَوْمِ وَلَقَّىٰهُمْ نَضْرَةًۭ وَسُرُورًۭا ﴿١١﴾
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে সেদিনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন এবং তাদেরকে দিবেন সজীবতা ও আনন্দ।
কাজেই আল্লাহ্ তাদের রক্ষা করবেন সেইদিনের অকল্যাণ থেকে এবং তাদের সাক্ষাৎ করাবেন প্রফুল্লতার ও প্রশান্তির সাথে,
وَجَزَىٰهُم بِمَا صَبَرُوا۟ جَنَّةًۭ وَحَرِيرًۭا ﴿١٢﴾
এবং তাদের সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক।
আর যেহেতু তারা অধ্যবসায় চালিয়েছিল সেজন্য প্রতিদানে তাদের দেবেন বাগান ও রেশমী পোশাক,
مُّتَّكِـِٔينَ فِيهَا عَلَى ٱلْأَرَآئِكِ ۖ لَا يَرَوْنَ فِيهَا شَمْسًۭا وَلَا زَمْهَرِيرًۭا ﴿١٣﴾
তারা সেখানে সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। সেখানে রৌদ্র ও শৈত্য অনুভব করবে না।
তারা সেখানে সমাসীন থাকবে রাজকীয় আসনে, তারা সেখানে দেখতে পাবে না সূর্যোত্তাপ, না কোনো কনকনে ঠান্ডা,
وَدَانِيَةً عَلَيْهِمْ ظِلَٰلُهَا وَذُلِّلَتْ قُطُوفُهَا تَذْلِيلًۭا ﴿١٤﴾
তার বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে এবং তার ফলসমূহ তাদের আয়ত্তাধীন রাখা হবে।
আর তাদের সন্নিকটে থাকবে তাদের গাছের ছায়া, আর তাদের থোকা-থোকা ফল থাকবে নত হয়ে নাগালের মধ্যে।
وَيُطَافُ عَلَيْهِم بِـَٔانِيَةٍۢ مِّن فِضَّةٍۢ وَأَكْوَابٍۢ كَانَتْ قَوَارِيرَا۠ ﴿١٥﴾
তাদেরকে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্রে এবং স্ফটিকের মত পানপাত্রে।
আর তাদের সামনে পরিবেশন করা হবে রূপোর পেয়ালা ও ঝলমলে কাচের পানপাত্র, --
قَوَارِيرَا۟ مِن فِضَّةٍۢ قَدَّرُوهَا تَقْدِيرًۭا ﴿١٦﴾
রূপালী স্ফটিক পাত্রে, পরিবেশনকারীরা তা পরিমাপ করে পূর্ণ করবে।
চাঁদির তৈরি চক্মকে কাচের মতো, -- তারা তা মেপে নেবে একটি পরিমাপে।
وَيُسْقَوْنَ فِيهَا كَأْسًۭا كَانَ مِزَاجُهَا زَنجَبِيلًا ﴿١٧﴾
তাদেরকে সেখানে পান করানো হবে ‘যানজাবীল’ মিশ্রিত পানপাত্র।
আর তাদের তাতে পান করানো হবে এমন একটি পাত্র যার মেজাজ হবে আদ্রকের, --
عَيْنًۭا فِيهَا تُسَمَّىٰ سَلْسَبِيلًۭا ﴿١٨﴾
এটা জান্নাতস্থিত ‘সালসাবীল’ নামক একটি ঝরণা।
তার মধ্যের একটি ফোয়ারাতে যার নাম দেয়া হয়েছে সাল্সাবীল।
۞ وَيَطُوفُ عَلَيْهِمْ وِلْدَٰنٌۭ مُّخَلَّدُونَ إِذَا رَأَيْتَهُمْ حَسِبْتَهُمْ لُؤْلُؤًۭا مَّنثُورًۭا ﴿١٩﴾
তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরগণ। আপনি তাদেরকে দেখে মনে করবেন যেন বিক্ষিপ্ত মনি-মুক্তা।
আর তাদের প্রদক্ষিণ করবে চিরস্ফুটিত কিশোরগণ, -- তোমরা যখন তাদের দেখবে তাদের তোমরা ভাববে ছড়ানো মুক্তো!
وَإِذَا رَأَيْتَ ثَمَّ رَأَيْتَ نَعِيمًۭا وَمُلْكًۭا كَبِيرًا ﴿٢٠﴾
আপনি যখন সেখানে দেখবেন, তখন নেয়ামতরাজি ও বিশাল রাজ্য দেখতে পাবেন।
আর যখন তুমি সেখানে চেয়ে দেখবে, তুমি দেখতে পাবে অনুগ্রহ-সামগ্রী ও এক বিশাল রাজ্য।
عَٰلِيَهُمْ ثِيَابُ سُندُسٍ خُضْرٌۭ وَإِسْتَبْرَقٌۭ ۖ وَحُلُّوٓا۟ أَسَاوِرَ مِن فِضَّةٍۢ وَسَقَىٰهُمْ رَبُّهُمْ شَرَابًۭا طَهُورًا ﴿٢١﴾
তাদের আবরণ হবে চিকন সবুজ রেশম ও মোটা সবুজ রেশম এবং তাদেরকে পরিধান করোনো হবে রৌপ্য নির্মিত কংকণ এবং তাদের পালনকর্তা তাদেরকে পান করাবেন ‘শরাবান-তহুরা’।
তাদের পরিধেয় হবে মিহি সবুজ রেশমের ও পুরু জরির পোশাক, আর তাদের অলংকৃত করানো হবে রূপোর কাঁকন দিয়ে, আর তাদের প্রভু তাদের পান করাবেন এক পবিত্র পানীয়।
إِنَّ هَٰذَا كَانَ لَكُمْ جَزَآءًۭ وَكَانَ سَعْيُكُم مَّشْكُورًا ﴿٢٢﴾
এটা তোমাদের প্রতিদান। তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃতি লাভ করেছে।
''নিঃসন্দেহ এটি হচ্ছে তোমাদের জন্য পুরস্কার, আর তোমাদের প্রচেষ্টা স্বীকৃত হয়েছে।’’
إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ ٱلْقُرْءَانَ تَنزِيلًۭا ﴿٢٣﴾
আমি আপনার প্রতি পর্যায়ক্রমে কোরআন নাযিল করেছি।
নিঃসন্দেহ আমরা -- আমরা স্বয়ং তোমার কাছে এই কুরআান এক অবতারণে অবতীর্ণ করেছি।
فَٱصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ وَلَا تُطِعْ مِنْهُمْ ءَاثِمًا أَوْ كَفُورًۭا ﴿٢٤﴾
অতএব, আপনি আপনার পালনকর্তার আদেশের জন্যে ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিষ্ঠ কাফেরের আনুগত্য করবেন না।
সুতরাং তোমার প্রভুর নির্দেশের জন্য অধ্যবসায় চালিয়ে যাও, আর তাদের মধ্যেকার কোনো পাপিষ্ঠের অথবা সত্যপ্রত্যাখ্যান- কারীর আজ্ঞা পালন করো না।
وَٱذْكُرِ ٱسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةًۭ وَأَصِيلًۭا ﴿٢٥﴾
এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপন পালনকর্তার নাম স্মরণ করুন।
আর তোমার প্রভুর নাম কীর্তন করো সকালে ও বিকেলে,
وَمِنَ ٱلَّيْلِ فَٱسْجُدْ لَهُۥ وَسَبِّحْهُ لَيْلًۭا طَوِيلًا ﴿٢٦﴾
রাত্রির কিছু অংশে তাঁর উদ্দেশে সিজদা করুন এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
আর রাতের থেকে তাঁর প্রতি সিজদা করো, আর লন্বা রাত পর্যন্ত তাঁর গুণগান করো।
إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ يُحِبُّونَ ٱلْعَاجِلَةَ وَيَذَرُونَ وَرَآءَهُمْ يَوْمًۭا ثَقِيلًۭا ﴿٢٧﴾
নিশ্চয় এরা পার্থিব জীবনকে ভালবাসে এবং এক কঠিন দিবসকে পশ্চাতে ফেলে রাখে।
নিঃসন্দেহ এরা ভালবাসে অস্থায়ী জীবন, আর অবহেলা করে এদের সামনের এক কঠিন দিনকে।
نَّحْنُ خَلَقْنَٰهُمْ وَشَدَدْنَآ أَسْرَهُمْ ۖ وَإِذَا شِئْنَا بَدَّلْنَآ أَمْثَٰلَهُمْ تَبْدِيلًا ﴿٢٨﴾
আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন। আমি যখন ইচ্ছা করব, তখন তাদের পরিবর্তে তাদের অনুরূপ লোক আনব।
আমরাই তাদের সৃষ্টি করেছি এবং মজবুত করেছি তাদের গঠন, কাজেই যখন আমরা চাইব তখন তাদের অনুরূপদের আমরা বদলে দেবো আমূল পরিবর্তনে।
إِنَّ هَٰذِهِۦ تَذْكِرَةٌۭ ۖ فَمَن شَآءَ ٱتَّخَذَ إِلَىٰ رَبِّهِۦ سَبِيلًۭا ﴿٢٩﴾
এটা উপদেশ, অতএব যার ইচ্ছা হয় সে তার পালনকর্তার পথ অবলম্বন করুক।
নিঃসন্দেহ এটি এক স্মরণীয় বার্তা, সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে তার প্রভুর দিকে পথ ধরুক।
وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًۭا ﴿٣٠﴾
আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যতিরেকে তোমরা অন্য কোন অভিপ্রায় পোষণ করবে না। আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।
আর তোমরা চাও না আল্লাহ্র চাওয়া ব্যতিরেকে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।
يُدْخِلُ مَن يَشَآءُ فِى رَحْمَتِهِۦ ۚ وَٱلظَّٰلِمِينَ أَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًۢا ﴿٣١﴾
তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁর রহমতে দাখিল করেন। আর যালেমদের জন্যে তো প্রস্তুত রেখেছেন মর্মন্তুদ শাস্তি।
তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তাঁর অনুগ্রহের মধ্যে প্রবেশ করান। কিন্ত অন্যায়কারীরা -- তাদের জন্য তিনি তৈরি করেছেন মর্মন্তুদ শাস্তি।