Setting
Surah The Pilgrimage [Al-Hajj] in Bengali
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُوا۟ رَبَّكُمْ ۚ إِنَّ زَلْزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَىْءٌ عَظِيمٌۭ ﴿١﴾
হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।
ওহে মানবগোষ্ঠী! তোমাদের প্রভুকে ভয়শ্রদ্ধা করো। নিঃসন্দেহ ঘড়িঘন্টার ঝাঁকুনি এক ভয়ংকর ব্যাপার।
يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّآ أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٌۭ ﴿٢﴾
যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব সুকঠিন।
সেইদিন যখন তোমরা তা দেখবে, -- প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী ভুলে যাবে যাকে সে স্তন্য দিচ্ছিল, আর প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে, আর তুমি দেখতে পাবে মানুষকে নেশাগ্রস্ত, অথচ তারা মাতাল নয়, বস্তুতঃ আল্লাহ্র শাস্তি হচ্ছে বড় কঠোর।
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِى ٱللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۢ وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَٰنٍۢ مَّرِيدٍۢ ﴿٣﴾
কতক মানুষ অজ্ঞানতাবশতঃ আল্লাহ সম্পꦣ2503;ক বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক অবাধ্য শয়তানের অনুসরণ করে।
আর মানুষদের মধ্যে এমনও আছে যে কোনো জ্ঞান না রেখেই আল্লাহ্ সন্বন্ধে বিতর্ক করে, আর সে অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানকে, --
كُتِبَ عَلَيْهِ أَنَّهُۥ مَن تَوَلَّاهُ فَأَنَّهُۥ يُضِلُّهُۥ وَيَهْدِيهِ إِلَىٰ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ﴿٤﴾
শয়তান সম্পর্কে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তার সাথী হবে, সে তাকে বিভ্রান্ত করবে এবং দোযখের আযাবের দিকে পরিচালিত করবে।
যার বিরুদ্ধে লিখে রাখা হয়েছে যে যে-কেউ তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তবে অবশ্যই তাকে বিপথে চালিত করবে এবং তাকে চালিয়ে নেবে জ্বলন্ত আগুনের শাস্তির দিকে।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن كُنتُمْ فِى رَيْبٍۢ مِّنَ ٱلْبَعْثِ فَإِنَّا خَلَقْنَٰكُم مِّن تُرَابٍۢ ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍۢ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍۢ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍۢ مُّخَلَّقَةٍۢ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍۢ لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ ۚ وَنُقِرُّ فِى ٱلْأَرْحَامِ مَا نَشَآءُ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلًۭا ثُمَّ لِتَبْلُغُوٓا۟ أَشُدَّكُمْ ۖ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰٓ أَرْذَلِ ٱلْعُمُرِ لِكَيْلَا يَعْلَمَ مِنۢ بَعْدِ عِلْمٍۢ شَيْـًۭٔا ۚ وَتَرَى ٱلْأَرْضَ هَامِدَةًۭ فَإِذَآ أَنزَلْنَا عَلَيْهَا ٱلْمَآءَ ٱهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنۢبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍۭ بَهِيجٍۢ ﴿٥﴾
হে লোকসকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।
ওহে মানবগোষ্ঠী! তোমরা যদি পুনরুত্থান সন্বন্ধে সন্দেহের মধ্যে থাক, তাহলে আমরা তো তোমাদের সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে, তারপর রক্তপিন্ড থেকে তারপর মাংসের তাল থেকে -- গঠনে সুসমঞ্জস ও সামঞ্জস্যবিহীন, যেন আমরা তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করতে পারি। আর যাকে আমরা ইচ্ছা করি তাকে মাতৃগর্ভে থাকতে দিই নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, তারপর তোমাদের বের ক’রে আনি শিশুরূপে, তারপর যেন তোমরা তোমাদের পূর্ণজীবনে পৌঁছুতে পার। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় আর তোমাদের মধ্যে কাউকে আনা হয় জীবনের অধমতম দশায় যার ফলে জ্ঞানলাভের পরে সে কিছুই না-জানা হয়। আর তুমি পৃথিবীকে দেখতে পাচ্ছ অনুর্বর, তারপর যখন আমরা তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা স্পন্দিত হয় ও ফোলে ওঠে, আর উৎপন্ন করে হরেক রকমের সুন্দর শাকসবজি।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْحَقُّ وَأَنَّهُۥ يُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ وَأَنَّهُۥ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ﴿٦﴾
এগুলো এ কারণে যে, আল্লাহ সত্য এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
এটি এই জন্য যে আল্লাহ্ -- তিনিই চিরসত্য, আর তিনিই তো মৃতকে জীবিত করেন, আর তিনিই সব কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান,
وَأَنَّ ٱلسَّاعَةَ ءَاتِيَةٌۭ لَّا رَيْبَ فِيهَا وَأَنَّ ٱللَّهَ يَبْعَثُ مَن فِى ٱلْقُبُورِ ﴿٧﴾
এবং এ কারণে যে, কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে সন্দেহ নেই এবং এ কারণে যে, কবরে যারা আছে, আল্লাহ তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।
আর এই জন্য যে ঘড়িঘন্টা আসন্ন, -- এতে কোনো সন্দেহ নেই, আর যেহেতু আল্লাহ্ পুনরুত্থিত করবেন তাদের যারা কবরের ভেতরে রয়েছে।
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يُجَٰدِلُ فِى ٱللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍۢ وَلَا هُدًۭى وَلَا كِتَٰبٍۢ مُّنِيرٍۢ ﴿٨﴾
কতক মানুষ জ্ঞান; প্রমাণ ও উজ্জ্বল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বিতর্ক করে।
আর মানুষদের মধ্যে এমনও আছে যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে বিতর্ক করে কোনো জ্ঞান না রেখে আর কোনো পথনির্দেশ ছাড়া আর কোনো দীপ্তিদায়ক গ্রন্থ ব্যতিরেকে, --
ثَانِىَ عِطْفِهِۦ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ ۖ لَهُۥ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌۭ ۖ وَنُذِيقُهُۥ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ عَذَابَ ٱلْحَرِيقِ ﴿٩﴾
সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে বিতর্ক করে, যাতে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দেয়। তার জন্যে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা আছে এবং কেয়ামতের দিন আমি তাকে দহন-যন্ত্রণা আস্বাদন করাব।
তার ঘাড় ফিরিয়ে, যাতে সে বিপথে চালাতে পারে আল্লাহ্র পথ থেকে। তার জন্য এই দুনিয়াতে রয়েছে লাঞ্ছনা, আর কিয়ামতের দিনে আমরা তাকে আস্বাদন করাব জ্বলা-পোড়ার শাস্তি।
ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ يَدَاكَ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّٰمٍۢ لِّلْعَبِيدِ ﴿١٠﴾
এটা তোমার দুই হাতের কর্মের কারণে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি জুলুম করেন না।
''এ তার জন্য যা তোমার হাত দুখানা আগবাড়িয়েছে, আর আল্লাহ্ তো তাঁর বান্দাদের প্রতি একটুও অন্যায়কারী নন।’’
وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَعْبُدُ ٱللَّهَ عَلَىٰ حَرْفٍۢ ۖ فَإِنْ أَصَابَهُۥ خَيْرٌ ٱطْمَأَنَّ بِهِۦ ۖ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ ٱنقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِۦ خَسِرَ ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةَ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلْخُسْرَانُ ٱلْمُبِينُ ﴿١١﴾
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি
আর লোকদের মধ্যে এমনও আছে যে আল্লাহ্র উপাসনা করে কিনারায় রয়ে, ফলে যদি তার প্রতি ভাল কিছু ঘটে সে তাতে সন্তষ্ট হয়, কিন্তু তার প্রতি যদি বিপর্যয় ঘটে সে তার মুখ ফিরিয়ে ঘুরে যায় -- সে ইহকাল হারায় আর পরকালও। এটিই তো এক সুস্পষ্ট ক্ষতি।
يَدْعُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُۥ وَمَا لَا يَنفَعُهُۥ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلضَّلَٰلُ ٱلْبَعِيدُ ﴿١٢﴾
সে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে, যে তার অপকার করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম পথভ্রষ্টতা।
সে আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে তাকে ডাকে যে তার ক্ষতিসাধন করতে পারে না আর যে তার উপকারও করে না। এই হচ্ছে সুদূর বিপথগমন।
يَدْعُوا۟ لَمَن ضَرُّهُۥٓ أَقْرَبُ مِن نَّفْعِهِۦ ۚ لَبِئْسَ ٱلْمَوْلَىٰ وَلَبِئْسَ ٱلْعَشِيرُ ﴿١٣﴾
সে এমন কিছুকে ডাকে, যার অপকার উপকারের আগে পৌছে। কত মন্দ এই বন্ধু এবং কত মন্দ এই সঙ্গী।
সে তাকে ডাকে যার ক্ষতিসাধন তার উপকারের চাইতে বেশী নিকটবর্তী। কত নিকৃষ্ট অভিভাবক ও কত মন্দ এ সহচর?
إِنَّ ٱللَّهَ يُدْخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ ﴿١٤﴾
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করছে আল্লাহ্ তাদের অবশ্যই প্রবেশ করাবেন স্বর্গোদ্যানে যার নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন।
مَن كَانَ يَظُنُّ أَن لَّن يَنصُرَهُ ٱللَّهُ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى ٱلسَّمَآءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُۥ مَا يَغِيظُ ﴿١٥﴾
সে ধারণা করে যে, আল্লাহ কখনই ইহকালে ও পরকালে রাসূলকে সাহায্য করবেন না, সে একটি রশি আকাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে নিক; এরপর কেটে দিক; অতঃপর দেখুক তার এই কৌশল তার আক্রোশ দূর করে কিনা।
যেজন ভাবে যে আল্লাহ্ তাঁকে ইহলোকে ও পরলোকে কখনই সাহায্য করবেন না, সে তবে আকাশের দিকে তোলার উপায় খুঁজুক, তারপর সে কেটে ফেলুক, তখন সে দেখুক তার পরিকল্পনা তা বিদূরিত করে কি না যাতে সে আক্রোশ বোধ করে।
وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَٰهُ ءَايَٰتٍۭ بَيِّنَٰتٍۢ وَأَنَّ ٱللَّهَ يَهْدِى مَن يُرِيدُ ﴿١٦﴾
এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।
আর এইভাবে আমরা এটি অবতারণ করেছি -- সুস্পষ্ট নিদর্শন, আর অবশ্য আল্লাহ্পরিচালনা করেন তাকে যে কামনা করে।
إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَٱلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلصَّٰبِـِٔينَ وَٱلنَّصَٰرَىٰ وَٱلْمَجُوسَ وَٱلَّذِينَ أَشْرَكُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ شَهِيدٌ ﴿١٧﴾
যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, সাবেয়ী, খ্রীষ্টান, অগ্নিপুজক এবং যারা মুশরেক, কেয়ামতের দিন আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। সবকিছুই আল্লাহর দৃষ্টির সামনে।
নিঃসন্দেহ যারা ঈমান এনেছে আর যারা ইহুদী মত পোষণ করে, আর সাবেঈন ও খ্রীষ্টান ও মাজুস, এবং যারা অংশী দাঁড় করায়, -- আল্লাহ্ নিঃসন্দেহ তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন কিয়ামতের দিনে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সমস্ত কিছুরই সাক্ষ্যদাতা।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ يَسْجُدُ لَهُۥ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَن فِى ٱلْأَرْضِ وَٱلشَّمْسُ وَٱلْقَمَرُ وَٱلنُّجُومُ وَٱلْجِبَالُ وَٱلشَّجَرُ وَٱلدَّوَآبُّ وَكَثِيرٌۭ مِّنَ ٱلنَّاسِ ۖ وَكَثِيرٌ حَقَّ عَلَيْهِ ٱلْعَذَابُ ۗ وَمَن يُهِنِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُۥ مِن مُّكْرِمٍ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ ۩ ﴿١٨﴾
তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহকে সেজদা করে যা কিছু আছে নভোমন্ডলে, যা কিছু আছে ভুমন্ডলে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি পর্বতরাজি বৃক্ষলতা, জীবজন্তু এবং অনেক মানুষ। আবার অনেকের উপর অবধারিত হয়েছে শাস্তি। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন, তাকে কেউ সম্মান দিতে পারে না। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন
তুমি কি দেখ না যে নিশ্চয় আল্লাহ্ -- তাঁরই প্রতি সিজদা করে যারাই আছে মহাকাশমন্ডলীতে ও যারা আছে পৃথিবীতে, আর সূর্য ও চন্দ্র ও তারকারাজি এবং পাহাড়-পর্বত ও গাছপালা, আর জীবজন্ত ও বহুসংখ্যক লোকজন? আর অনেক আছে যাদের উপরে শাস্তি ন্যায়সংগত হয়েছে। আর যাকে আল্লাহ্ লাঞ্ছিত করেন তার জন্য তবে সম্মানদানের কেউ নেই। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন।
۞ هَٰذَانِ خَصْمَانِ ٱخْتَصَمُوا۟ فِى رَبِّهِمْ ۖ فَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌۭ مِّن نَّارٍۢ يُصَبُّ مِن فَوْقِ رُءُوسِهِمُ ٱلْحَمِيمُ ﴿١٩﴾
এই দুই বাদী বিবাদী, তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব যারা কাফের, তাদের জন্যে আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে।
এরা হচ্ছে দুই প্রতিপক্ষ যারা তাদের প্রভু সন্বন্ধে বিতর্ক করে। তারপর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের জন্যে আগুনের থেকে পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর থেকে ফুটন্ত পানি ঢালা হবে,
يُصْهَرُ بِهِۦ مَا فِى بُطُونِهِمْ وَٱلْجُلُودُ ﴿٢٠﴾
ফলে তাদের পেটে যা আছে, তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে।
এর দ্বারা গলে যাবে যা কিছু আছে তাদের পেটের ভেতরে আর চামড়াটাও।
وَلَهُم مَّقَٰمِعُ مِنْ حَدِيدٍۢ ﴿٢١﴾
তাদের জন্যে আছে লোহার হাতুড়ি।
আর তাদের জন্য রয়েছে লোহার চাবুক।
كُلَّمَآ أَرَادُوٓا۟ أَن يَخْرُجُوا۟ مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا۟ فِيهَا وَذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْحَرِيقِ ﴿٢٢﴾
তারা যখনই যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তাতে ফিরিয়ে দেয়া হবে। বলা হবেঃ দহন শাস্তি আস্বাদন কর।
যতবার তারা চাইবে এ থেকে বেরিয়ে আসতে -- জ্বালাযন্ত্রণা থেকে -- তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে তারই মধ্যে, আর ''জ্বলে পোড়ার যন্ত্রণা আস্বাদ করো।’’
إِنَّ ٱللَّهَ يُدْخِلُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ جَنَّٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ يُحَلَّوْنَ فِيهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبٍۢ وَلُؤْلُؤًۭا ۖ وَلِبَاسُهُمْ فِيهَا حَرِيرٌۭ ﴿٢٣﴾
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন উদ্যান সমূহে, যার তলদেশ দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হবে। তাদেরকে তথায় স্বর্ণ-কংকন ও মুক্তা দ্বারা অলংকৃত করা হবে এবং তথায় তাদের পোশাক হবে রেশমী।
যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করছে আল্লাহ্ অবশ্যই তাদের প্রবেশ করাবেন স্বর্গোদ্যান সমূহে যাদের নিচ দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি, সেখানে তাদের ভূষিত করা হবে সোনার কংকণ ও মণি-মুক্তো দিয়ে। আর সেখানে তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
وَهُدُوٓا۟ إِلَى ٱلطَّيِّبِ مِنَ ٱلْقَوْلِ وَهُدُوٓا۟ إِلَىٰ صِرَٰطِ ٱلْحَمِيدِ ﴿٢٤﴾
তারা পথপ্রদর্শিত হয়েছিল সৎবাক্যের দিকে এবং পরিচালিত হয়েছিল প্রশংসিত আল্লাহর পথপানে।
আর তাদের পরিচালিত করা হয়েছে পবিত্র বাক্যালাপের প্রতি, আর তাদের চালিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রশংসিত পথে।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱلْمَسْجِدِ ٱلْحَرَامِ ٱلَّذِى جَعَلْنَٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءً ٱلْعَٰكِفُ فِيهِ وَٱلْبَادِ ۚ وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍۭ بِظُلْمٍۢ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍۢ ﴿٢٥﴾
যারা কুফর করে ও আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেই মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়, যাকে আমি প্রস্তুত করেছি স্থানীয় ও বহিরাগত সকল মানুষের জন্যে সমভাবে এবং যে মসজিদে হারামে অন্যায়ভাবে কোন ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচছা করে, আমি তাদেরকে যন্ত্রানাদায়ক শাস্তি আস্বাদন করাব।
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে আর ঠেকিয়ে রাখে আল্লাহ্র পথ থেকে ও পবিত্র মসজিদ থেকে যাকে আমরা বানিয়েছি সকল মানুষের জন্য সমানভাবে, -- সেখানকার বাসিন্দার ও বহিরাগতের জন্য। আর যে কেউ সেখানে অন্যায়ভাবে ধূর্তামি করতে চায় তাকে আমরা আস্বাদ করার মর্মন্তদ শাস্তি থেকে।
وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلْبَيْتِ أَن لَّا تُشْرِكْ بِى شَيْـًۭٔا وَطَهِّرْ بَيْتِىَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلْقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ﴿٢٦﴾
যখন আমি ইব্রাহীমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।
আর স্মরণ করো! আমরা ইব্রাহীমের জন্য গৃহের স্থান স্থির করে দিয়েছিলাম এই বলে -- ''আমার সঙ্গে কোনো-কিছুকে অংশী করো না, আর আমার গৃহকে পবিত্র করো তওয়াফকারীদের জন্য এবং দন্ডায়মানদের ও রুকু-সিজদা-কারীদের জন্য।’’
وَأَذِّن فِى ٱلنَّاسِ بِٱلْحَجِّ يَأْتُوكَ رِجَالًۭا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٍۢ يَأْتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍۢ ﴿٢٧﴾
এবং মানুষের মধ্যে হজ্বের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।
আর লোকদের মধ্যে হজের কথা ঘোষণা ক’রে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে আর প্রত্যেক শীর্ণ উটের উপরে, প্রত্যেক দূর-দুরান্ত দেশ থেকে, --
لِّيَشْهَدُوا۟ مَنَٰفِعَ لَهُمْ وَيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ فِىٓ أَيَّامٍۢ مَّعْلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِ ۖ فَكُلُوا۟ مِنْهَا وَأَطْعِمُوا۟ ٱلْبَآئِسَ ٱلْفَقِيرَ ﴿٢٨﴾
যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।
যাতে তারা প্রত্যক্ষ করে তাদের জন্য উপকারসমূহ, আর যেন তারা আল্লাহ্র নাম স্মরণ করতে পারে নির্ধারিত দিনগুলোতে চতুস্পদ গবাদি-পশুদের উপরে যেগুলো দিয়ে তিনি তাদের জীবিকা দিয়েছেন, তারপর যেন তোমরা তা থেকে খেতে পরো এবং দুঃস্থ ও নিঃস্বকে খাওয়াতে পারো।
ثُمَّ لْيَقْضُوا۟ تَفَثَهُمْ وَلْيُوفُوا۟ نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا۟ بِٱلْبَيْتِ ٱلْعَتِيقِ ﴿٢٩﴾
এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।
তারপর তারা সমাধা করুক তাদের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, আর তাদের মানতগুলো তারা পূর্ণ করুক, আর তারা তওয়াফ করুক এই প্রাচীন গৃহের।
ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيْرٌۭ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦ ۗ وَأُحِلَّتْ لَكُمُ ٱلْأَنْعَٰمُ إِلَّا مَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ۖ فَٱجْتَنِبُوا۟ ٱلرِّجْسَ مِنَ ٱلْأَوْثَٰنِ وَٱجْتَنِبُوا۟ قَوْلَ ٱلزُّورِ ﴿٣٠﴾
এটা শ্রবণযোগ্য। আর কেউ আল্লাহর সম্মানযোগ্য বিধানাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে পালনকর্তার নিকট তা তার জন্যে উত্তম। উল্লেখিত ব্যতিক্রমগুলো ছাড়া তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাক এবং মিথ্যা কথন থেকে দূরে সরে থাক;
এইটিই। আর যে কেউ আল্লাহ্র অনুষ্ঠানগুলোর সম্মান করে তাহলে সেটি তার প্রভুর কাছে তার জন্যে উত্তম। আর গবাদি- পশু তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সে-সব ব্যতীত যা তোমাদের কাছে বিবৃত করা হয়েছে, সুতরাং তোমরা দেবদেবীর কদর্যতা পরিহার করো এবং বর্জন করো মিথ্যা কথাবার্তা, --
حُنَفَآءَ لِلَّهِ غَيْرَ مُشْرِكِينَ بِهِۦ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخْطَفُهُ ٱلطَّيْرُ أَوْ تَهْوِى بِهِ ٱلرِّيحُ فِى مَكَانٍۢ سَحِيقٍۢ ﴿٣١﴾
আল্লাহর দিকে একনিষ্ট হয়ে, তাঁর সাথে শরীক না করে; এবং যে কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।
আল্লাহ্র প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে, তাঁর সঙ্গে কোনো অংশী আরোপ না ক’রে। আর যে কেউ আল্লাহ্র সঙ্গে অংশী দাঁড় করায় সে যেন তাহলে আকাশ থেকে পড়ল, তখন পাখিরা তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায়, অথবা বায়ুপ্রবাহ তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় এক দূরবর্তী স্থানে।
ذَٰلِكَ وَمَن يُعَظِّمْ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى ٱلْقُلُوبِ ﴿٣٢﴾
এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।
এইটিই। আর যে কেউ আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে সেটি তাহলে নিশ্চয়ই হৃদয়ের ধর্মনিষ্ঠা থেকে উদ্ভূত।
لَكُمْ فِيهَا مَنَٰفِعُ إِلَىٰٓ أَجَلٍۢ مُّسَمًّۭى ثُمَّ مَحِلُّهَآ إِلَى ٱلْبَيْتِ ٱلْعَتِيقِ ﴿٣٣﴾
চতুস্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে তোমাদের জন্যে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। অতঃপর এগুলোকে পৌছাতে হবে মুক্ত গৃহ পর্যন্ত।
এদের মধ্যে তোমাদের জন্য উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, তারপর তাদের কুরবানির স্থান হচ্ছে প্রাচীন গৃহের সন্নিকটে।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍۢ جَعَلْنَا مَنسَكًۭا لِّيَذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلْأَنْعَٰمِ ۗ فَإِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌۭ وَٰحِدٌۭ فَلَهُۥٓ أَسْلِمُوا۟ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُخْبِتِينَ ﴿٣٤﴾
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও;
আর প্রত্যেক জাতির জন্য আমরা কুরবানির বিধান দিয়েছি, যেন তারা আল্লাহ্র নাম স্মরণ করে চতুস্পদ গবাদি-পশুদের যেগুলো দিয়ে তিনি তাদের রিযেক দিয়েছেন সে-সবের উপরে। বস্তুতঃ তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য, সুতরাং তাঁরই নিকট তোমরা আত্মসমর্পণ করো। আর সুসংবাদ দাও বিনয়নম্রদের,
ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَٱلصَّٰبِرِينَ عَلَىٰ مَآ أَصَابَهُمْ وَٱلْمُقِيمِى ٱلصَّلَوٰةِ وَمِمَّا رَزَقْنَٰهُمْ يُنفِقُونَ ﴿٣٥﴾
যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।
তাদের যাদের হৃদয় কাঁপতে থাকে যখন আল্লাহ্কে স্মরণ করা হয়, আর তাদের উপরে বিপদ ঘটা সত্ত্বেও যারা অধ্যবসায়ী, আর নামায কায়েমকারীদের, আর ওদের আমরা যে রিযেক দিয়েছি তা থেকে যারা খরচ করে থাকে তাদের।
وَٱلْبُدْنَ جَعَلْنَٰهَا لَكُم مِّن شَعَٰٓئِرِ ٱللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْرٌۭ ۖ فَٱذْكُرُوا۟ ٱسْمَ ٱللَّهِ عَلَيْهَا صَوَآفَّ ۖ فَإِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا فَكُلُوا۟ مِنْهَا وَأَطْعِمُوا۟ ٱلْقَانِعَ وَٱلْمُعْتَرَّ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرْنَٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿٣٦﴾
এবং কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আর উট, -- আমরা তাদের তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিদর্শনাবলীর অন্যতম বানিয়েছি, তোমাদের জন্য তাদের মধ্যে কল্যাণ নিহিত আছে। সেজন্য সারিবদ্ধ থাকাকালে তাদের উপরে আল্লাহ্র নাম উল্লেখ করো, তারপর তারা যখন তাদের পার্শ্বে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা খাও, এবং খাওয়াও তুষ্ট-দুঃস্থকে ও ভিক্ষুককে। এইভাবেই আমরা এদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছি যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا۟ ٱللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَىٰكُمْ ۗ وَبَشِّرِ ٱلْمُحْسِنِينَ ﴿٣٧﴾
এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।
তাদের মাংস কখনো আল্লাহ্র কাছে পৌঁছায় না আর তাদের রক্তও নয়, বরং তোমাদের থেকে ধর্মনিষ্ঠাই তাঁর কাছে পৌঁছায়। এইভাবেই তিনি তাদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যেন তোমরা আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারো এজন্য যে তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। আর সুসংবাদ দাও সৎকর্মপরায়ণদের।
۞ إِنَّ ٱللَّهَ يُدَٰفِعُ عَنِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍۢ كَفُورٍ ﴿٣٨﴾
আল্লাহ মুমিনদের থেকে শত্রুদেরকে হটিয়ে দেবেন। আল্লাহ কোন বিশ্বাসঘাতক অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ দফা রফা করে দেবেন তাদের থেকে যারা ঈমান এনেছে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ ভালবাসেন না প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতককে, অকৃতজ্ঞকে।
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَٰتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا۟ ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ ﴿٣٩﴾
যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।
অনুমতি দেওয়া গেল তাদের জন্য যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে, কেননা তারা অত্যাচারিত হয়েছে, আর অবশ্যই আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করতে সক্ষম, --
ٱلَّذِينَ أُخْرِجُوا۟ مِن دِيَٰرِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّآ أَن يَقُولُوا۟ رَبُّنَا ٱللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ ٱللَّهِ ٱلنَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍۢ لَّهُدِّمَتْ صَوَٰمِعُ وَبِيَعٌۭ وَصَلَوَٰتٌۭ وَمَسَٰجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا ٱسْمُ ٱللَّهِ كَثِيرًۭا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ ﴿٤٠﴾
যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে (খ্রীষ্টানদের) নির্ঝন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদীদের) উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর।
যাদের বহিস্কার করা হয়েছে তাদের বাড়িঘর থেকে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়াই, শুধু এইজন্য যে তারা বলে -- ''আমাদের প্রভু আল্লাহ্’’। আর যদি মানবজাতিকে তাদের এক দলের দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত করার ব্যবস্থা আল্লাহ্র না থাকতো তা হলে নিশ্চয়ই বিধবস্ত হয়ে যেত গির্জাগুলো ও মঠগুলি ও উপাসনালয় ও মসজিদ সমূহ যেখানে আল্লাহ্র নাম প্রচুরভাবে স্মরণ করা হয়! আর আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সাহায্য করেন তাঁকে যে তাঁকে সাহায্য করে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো মহাবলীয়ান, মহাশক্তিশালী।
ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمْ فِى ٱلْأَرْضِ أَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُوا۟ بِٱلْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا۟ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلْأُمُورِ ﴿٤١﴾
তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ?2470;ান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।
এরাই, -- আমরা যদি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে ও সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহ্রই এখতিয়ারে।
وَإِن يُكَذِّبُوكَ فَقَدْ كَذَّبَتْ قَبْلَهُمْ قَوْمُ نُوحٍۢ وَعَادٌۭ وَثَمُودُ ﴿٤٢﴾
তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের পূর্বে মিথ্যাবাদী বলেছে কওমে নূহ, আদ, সামুদ,
আর যদি তারা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে তবে তাদের আগেও প্রত্যাখ্যান করেছিল নূহের সম্প্রদায় ও 'আদের ও ছামূদের,
وَقَوْمُ إِبْرَٰهِيمَ وَقَوْمُ لُوطٍۢ ﴿٤٣﴾
ইব্রাহীম ও লূতের সম্প্রদায়ও।
আর ইব্রাহীমের সম্প্রদায় এবং লূতের সম্প্রদায়,
وَأَصْحَٰبُ مَدْيَنَ ۖ وَكُذِّبَ مُوسَىٰ فَأَمْلَيْتُ لِلْكَٰفِرِينَ ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ نَكِيرِ ﴿٤٤﴾
এবং মাদইয়ানের অধিবাসীরা এবং মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল মূসাকেও। অতঃপর আমি কাফেরদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম অতএব কি ভীষণ ছিল আমাকে অস্বীকৃতির পরিণাম।
আর মাদিয়ানের বাসিন্দারা, আর মূসাকেও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল, তথাপি আমি অবিশ্বাসীদের অবকাশ দিয়েছিলাম, তখন আমি তাদের পাকড়াও করলাম, সুতরাং কেমন হয়েছিল আমার শাস্তিদান!
فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَٰهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌۭ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا وَبِئْرٍۢ مُّعَطَّلَةٍۢ وَقَصْرٍۢ مَّشِيدٍ ﴿٤٥﴾
আমি কত জনপদ ধ্বংস করেছি এমতাবস্থায় যে, তারা ছিল গোনাহগার। এই সব জনপদ এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে এবং কত কূপ পরিত্যক্ত হয়েছে ও কত সুদৃঢ় প্রাসাদ ধ্বংস হয়েছে।
কাজেকাজেই কত যে জনপদ ছিল, -- আমরা সেটা ধ্বংস করেছি যেহেতু তা অত্যাচারী ছিল, ফলে তা তার ছাদসহ ভেঙ্গে-চুরে রয়েছে, আর কূয়ো পরিত্যক্ত হয়েছে আর সুদৃঢ় প্রাসাদ!
أَفَلَمْ يَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌۭ يَعْقِلُونَ بِهَآ أَوْ ءَاذَانٌۭ يَسْمَعُونَ بِهَا ۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى ٱلْأَبْصَٰرُ وَلَٰكِن تَعْمَى ٱلْقُلُوبُ ٱلَّتِى فِى ٱلصُّدُورِ ﴿٤٦﴾
তারা কি এই উদ্দেশ্যে দেশ ভ্রমণ করেনি, যাতে তারা সমঝদার হৃদয় ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন কর্ণের অধিকারী হতে পারে? বস্তুতঃ চক্ষু তো অন্ধ হয় না, কিন্তু বক্ষ স্থিত অন্তরই অন্ধ হয়।
তারা কি তবে দুনিয়াতে ভ্রমণ করে নি যার ফলে তাদের লাভ হয়েছে অন্তঃকরণ যা দিয়ে তারা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে অথবা কান যা দিয়ে তারা শুনতে পারে? বস্তুতঃ চোখ তো আদৌ অন্ধ নয়, কিন্তু অন্ধ হচেছ হৃদয় যা রয়েছে বুকের ভেতরে।
وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِٱلْعَذَابِ وَلَن يُخْلِفَ ٱللَّهُ وَعْدَهُۥ ۚ وَإِنَّ يَوْمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلْفِ سَنَةٍۢ مِّمَّا تَعُدُّونَ ﴿٤٧﴾
তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর ওয়াদা ভঙ্গ করেন না। আপনার পালনকর্তার কাছে একদিন তোমাদের গণনার এক হাজার বছরের সমান।
আর তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, অথচ আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদার কখনো খেলাফ করবেন না। আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভুর কাছে এক দিন তোমরা যা গণনা কর তার এক হাজার বছরের সমান।
وَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَمْلَيْتُ لَهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌۭ ثُمَّ أَخَذْتُهَا وَإِلَىَّ ٱلْمَصِيرُ ﴿٤٨﴾
এবং আমি কত জনপদকে অবকাশ দিয়েছি এমতাবস্থায় যে, তারা গোনাহগার ছিল। এরপর তাদেরকে পাকড়াও করেছি এবং আমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আর কত যে জনবসতি ছিল -- তার জুলুমবাজি সত্ত্বেও আমি তাকে অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর আমি তাকে পাকড়াও করলাম, আর আমারই কাছে প্রত্যাবর্তন।
قُلْ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّمَآ أَنَا۠ لَكُمْ نَذِيرٌۭ مُّبِينٌۭ ﴿٤٩﴾
বলুনঃ হে লোক সকল! আমি তো তোমাদের জন্যে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ককারী।
বলো -- ''ওহে মানবজাতি! আমি তো তোমাদের জন্য একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’’
فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُم مَّغْفِرَةٌۭ وَرِزْقٌۭ كَرِيمٌۭ ﴿٥٠﴾
সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুযী।
সেজন্য যারা ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে তাদের জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও সম্মানজনক জীবিকা।
وَٱلَّذِينَ سَعَوْا۟ فِىٓ ءَايَٰتِنَا مُعَٰجِزِينَ أُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلْجَحِيمِ ﴿٥١﴾
এবং যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার জন্যে চেষ্টা করে, তারাই দোযখের অধিবাসী।
আর যারা আমাদের নির্দেশাবলী বিফল করার চেষ্টা করে তারাই হচ্ছে জ্বলন্ত আগুনের বাসিন্দা।
وَمَآ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍۢ وَلَا نَبِىٍّ إِلَّآ إِذَا تَمَنَّىٰٓ أَلْقَى ٱلشَّيْطَٰنُ فِىٓ أُمْنِيَّتِهِۦ فَيَنسَخُ ٱللَّهُ مَا يُلْقِى ٱلشَّيْطَٰنُ ثُمَّ يُحْكِمُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌۭ ﴿٥٢﴾
আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।
আর তোমার আগে আমরা কোনো রসূল পাঠাই নি আর কোনো নবীও নয় এ ভিন্ন যে যখনি তিনি আকাঙ্খা করেছেন তখন শয়তান তাঁর আকাঙ্খা সম্পর্কে কুমন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ বাতিল করে দেন শয়তান যেসব কুমন্ত্রণা দেয়, তখন আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশাবলী প্রতিষ্ঠিত করেন। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী,
لِّيَجْعَلَ مَا يُلْقِى ٱلشَّيْطَٰنُ فِتْنَةًۭ لِّلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌۭ وَٱلْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ ۗ وَإِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَفِى شِقَاقٍۭ بَعِيدٍۢ ﴿٥٣﴾
এ কারণে যে, শয়তান যা মিশ্রণ করে, তিনি তা পরীক্ষাস্বরূপ করে দেন, তাদের জন্যে, যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যারা পাষাণহৃদয়। গোনাহগাররা দূরবর্তী বিরোধিতায় লিপ্ত আছে।
যেন শয়তান যে কুমন্ত্রণা দেয় সেটিকে তিনি করতে পারেন একটি পরীক্ষার বিষয় তাদের জন্য যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, আর যাদের হৃদয় হয়েছে কঠিন। আর অত্যাচারীরা তো নিশ্চয়ই সুদূর প্রসারী বিচ্ছিন্নতায় রয়েছে, --
وَلِيَعْلَمَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْعِلْمَ أَنَّهُ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَيُؤْمِنُوا۟ بِهِۦ فَتُخْبِتَ لَهُۥ قُلُوبُهُمْ ۗ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهَادِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ﴿٥٤﴾
এবং এ কারণেও যে, যাদেরকে জ্ঞানদান করা হয়েছে; তারা যেন জানে যে এটা আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্য; অতঃপর তারা যেন এতে বিশ্বাস স্তাপন করে এবং তাদের অন্তর যেন এর প্রতি বিজয়ী হয়। আল্লাহই বিশ্বাস স্থাপনকারীকে সরল পথ প্রদর্শন করেন।
আর যেন যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তারা জানতে পারে যে এটি তোমার প্রভুর কাছ থেকে সত্য, কাজেই তারা যেন এতে বিশ্বাস স্থাপন করে আর তাদের হৃদয় যেন তাঁর প্রতি বির্নত হতে পারে। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো সহজ-সঠিক পথের দিকে পরিচালক তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে।
وَلَا يَزَالُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فِى مِرْيَةٍۢ مِّنْهُ حَتَّىٰ تَأْتِيَهُمُ ٱلسَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيمٍ ﴿٥٥﴾
কাফেররা সর্বদাই সন্দেহ পোষন করবে যে পর্যন্ত না তাদের কাছে আকস্মিকভাবে কেয়ামত এসে পড়ে অথবা এসে পড়ে তাদের কাছে এমন দিবসের শাস্তি যা থেকে রক্ষার উপায় নেই।
আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা এ সন্বন্ধে সন্দেহ করা থেকে বিরত হবে না যতক্ষণ না ঘড়িঘন্টা অতর্কিতে তাদের উপরে এসে পড়ে, অথবা তাদের উপরে এসে পড়ে এক ধ্বংসাত্মক দিনে শাস্তি।
ٱلْمُلْكُ يَوْمَئِذٍۢ لِّلَّهِ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ ۚ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فِى جَنَّٰتِ ٱلنَّعِيمِ ﴿٥٦﴾
রাজত্ব সেদিন আল্লাহরই; তিনিই তাদের বিচার করবেন। অতএব যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তারা নেয়ামত পূর্ণ কাননে থাকবে।
''আজকের দিনে সর্বাধিনায়কত্ব হচ্ছে আল্লাহ্র।’’ তিনি তাদের মধ্যে বিচার করবেন। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করছে তারাই থাকবে আনন্দময় উদ্যানে।
وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَكَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا فَأُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ ﴿٥٧﴾
এবং যারা কুফরি করে এবং আমার আয়াত সমূহকে মিথ্যা বলে তাদের জন্যে লাঞ্ছনাকর শাস্তি রয়েছে।
আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে ও আমাদের নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করে, তারাই তবে -- তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
وَٱلَّذِينَ هَاجَرُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوٓا۟ أَوْ مَاتُوا۟ لَيَرْزُقَنَّهُمُ ٱللَّهُ رِزْقًا حَسَنًۭا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ﴿٥٨﴾
যারা আল্লাহর পথে গৃহ ত্যাগ করেছে, এরপর নিহত হয়েছে অথবা মরে গেছে; আল্লাহ তাদেরকে অবশ্যই উৎকৃষ্ট জীবিকা দান করবেন এবং আল্লাহ সর্বোৎকৃষ্ট রিযিক দাতা।
আর যারা আল্লাহ্র পথে হিজরত করে, তারপর নিহত হয় অথবা মৃত্যু বরণ করে, আল্লাহ্ অবশ্যই তাদের উত্তম জীবনোপকরণ উপভোগ করতে দেবেন। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তিনিই তো জীবিকাদাতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।
لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلًۭا يَرْضَوْنَهُۥ ۗ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌۭ ﴿٥٩﴾
তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থানে পৌছাবেন, যাকে তারা পছন্দ করবে এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, সহনশীল।
তিনি নিশ্চয়ই তাদের প্রবেশ করাবেন এমন একটি প্রবেশস্থলে যাতে তারা খুশি হবে। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো সর্বজ্ঞাতা, অতি অমায়িক।
۞ ذَٰلِكَ وَمَنْ عَاقَبَ بِمِثْلِ مَا عُوقِبَ بِهِۦ ثُمَّ بُغِىَ عَلَيْهِ لَيَنصُرَنَّهُ ٱللَّهُ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌۭ ﴿٦٠﴾
এ তো শুনলে, যে ব্যক্তি নিপীড়িত হয়ে নিপীড়ন পরিমাণে প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং পুনরায় সে নিপীড়িত হয়, আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী ক্ষমাশীল।
এই রকমেই। আর যে প্রতিশোধ লয় যতটা উৎপীড়ন তাকে করা হয়েছিল তার সমপরিমাণে, তারপর তার প্রতি অত্যাচার করা হয়, তাহলে আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো পরম ক্ষমাশীল, পরিত্রাণকারী।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ يُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَيُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ وَأَنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌۢ بَصِيرٌۭ ﴿٦١﴾
এটা এ জন্যে যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিনের মধ্যে এবং দিনকে রাত্রির মধ্য দাখিল করে দেন এবং আল্লাহ সবকিছু শোনেন, দেখেন।
এমন করেই, কেননা আল্লাহ্ রাত্রিকে প্রবেশ করান দিনের মধ্যে আর দিনকে ঢুকান রাতের মধ্যে, আর আল্লাহ্ই তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلْبَٰطِلُ وَأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْكَبِيرُ ﴿٦٢﴾
এটা এ কারণেও যে, আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান।
এ ধরনেই, কেননা নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তিনিই সত্য, আর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে তারা যাকে ডাকে তা তো মিথ্যা আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ -- তিনিই সমুচ্চ, মহামহিম।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَتُصْبِحُ ٱلْأَرْضُ مُخْضَرَّةً ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌۭ ﴿٦٣﴾
তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর ভূপৃষ্ট সবুজ-শ্যামল হয়ে উঠে। নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষদর্শী, সর্ববিষয়ে খবরদার।
তুমি কি দেখ না যে আল্লাহ্ আকাশ থেকে পাঠান পানি, তখন পৃথিবী সবুজ রঙ ধারণ করে? নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সদাশয় পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهُوَ ٱلْغَنِىُّ ٱلْحَمِيدُ ﴿٦٤﴾
নভোমন্ডল ও ভুপৃষ্ঠে যা কিছু আছে, সব তাঁরই এবং আল্লাহই অভাবমুক্ত প্রশংসার অধিকারী।
যা কিছু আছে মহাকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে সে-সমস্ত তাঁরই। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্, -- তিনিই তো স্বয়ংসমৃদ্ধ, পরম প্রশংসিত।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِى ٱلْأَرْضِ وَٱلْفُلْكَ تَجْرِى فِى ٱلْبَحْرِ بِأَمْرِهِۦ وَيُمْسِكُ ٱلسَّمَآءَ أَن تَقَعَ عَلَى ٱلْأَرْضِ إِلَّا بِإِذْنِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿٦٥﴾
তুমি কি দেখ না যে, ভূপৃষ্টে যা আছে এবং সমুদ্রে চলমান নৌকা তৎসমুদয়কে আল্লাহ নিজ আদেশে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন এবং তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।
তুমি কি লক্ষ্য কর না যে পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ্ তা তোমাদের অধীন করেছেন, আর জাহাজগুলোও যা তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণ করছে। আর তিনি আকাশকে ঠেকিয়ে রাখেন তাঁর অনুমতি ব্যতিরেকে পৃথিবীর উপরে পড়া থেকে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ মানুষদের প্রতি তো পরম স্নেহময়, অফুরন্ত ফলদাতা।
وَهُوَ ٱلَّذِىٓ أَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ۗ إِنَّ ٱلْإِنسَٰنَ لَكَفُورٌۭ ﴿٦٦﴾
তিনিই তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে মৃত্যুদান করবেন ও পুনরায় জীবিত করবেন। নিশ্চয় মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ।
আর তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন, তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর তিনি তোমাদের জীবিত করবেন। নিঃসন্দেহ মানুষগুলো বড় অকৃতজ্ঞ।
لِّكُلِّ أُمَّةٍۢ جَعَلْنَا مَنسَكًا هُمْ نَاسِكُوهُ ۖ فَلَا يُنَٰزِعُنَّكَ فِى ٱلْأَمْرِ ۚ وَٱدْعُ إِلَىٰ رَبِّكَ ۖ إِنَّكَ لَعَلَىٰ هُدًۭى مُّسْتَقِيمٍۢ ﴿٦٧﴾
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন।
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমরা নির্ধারিত করে দিয়েছি নিয়ম-কানুন যা তারা পালন করে, সুতরাং তারা যেন তোমার সঙ্গে এই ব্যাপারে বিতর্ক না করে, আর তোমার প্রভুর দিকে আহ্বান করো। নিঃসন্দেহ তুমিই তো রয়েছ সহজ-সঠিক পথের উপরে।
وَإِن جَٰدَلُوكَ فَقُلِ ٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿٦٨﴾
তারা যদি আপনার সাথে বিতর্ক করে, তবে বলে দিন, তোমরা যা কর, সে সর্ম্পকে আল্লাহ অধিক জ্ঞাত।
আর যদি তোমার সঙ্গে তারা তর্ক-বিতর্ক করে তবে বল -- ''আল্লাহ ভাল জানেন যা তোমরা করছো।’’
ٱللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ﴿٦٩﴾
তোমরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছ, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সেই বিষয়ে তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন।
আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে বিচার-মীমাংসা করে দেবেন যে-সব বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে।
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ ٱللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَآءِ وَٱلْأَرْضِ ۗ إِنَّ ذَٰلِكَ فِى كِتَٰبٍ ۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٌۭ ﴿٧٠﴾
তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমন্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।
তুমি কি জান না যে মহাকাশে ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সে-সবই আল্লাহ্ জানেন? নিঃসন্দেহ এটি আল্লাহর জন্যে সহজ ব্যাপার।
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَٰنًۭا وَمَا لَيْسَ لَهُم بِهِۦ عِلْمٌۭ ۗ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٍۢ ﴿٧١﴾
তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর পূজা করে, যার কোন সনদ নাযিল করা হয়নি এবং সে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই। বস্তুতঃ জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে যার উপাসনা করে তার জন্য তিনি কোনো দলিল পাঠান নি এবং তাদের কাছে সে-বিষয়ে কোনো জ্ঞানও নেই। আর অন্যায়াচারীদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتُنَا بَيِّنَٰتٍۢ تَعْرِفُ فِى وُجُوهِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ٱلْمُنكَرَ ۖ يَكَادُونَ يَسْطُونَ بِٱلَّذِينَ يَتْلُونَ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِنَا ۗ قُلْ أَفَأُنَبِّئُكُم بِشَرٍّۢ مِّن ذَٰلِكُمُ ۗ ٱلنَّارُ وَعَدَهَا ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ۖ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ ﴿٧٢﴾
যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করতে পারবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মার মুখো হয়ে উঠে। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেব? তা আগুন; আল্লাহ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।
আর যখন তদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী পাঠ করা হয় তখন যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের চেহারাতে তুমি অস্বীকৃতির পরিচয় পাবে। তারা চায় যারা আমাদের বাণীসমূহ তাদের কাছে পড়ে শুনায় তাদের উপরে লাফিয়ে পড়তে। তুমি বল -- ''আমি কি তবে তোমাদের সংবাদ দেব এ-সবের চেয়েও মন্দ কিছুর?’’ আগুন। আল্লাহ্ এটি ওয়াদা করেছেন তাদেব জন্য যারা অবিশ্বাস পোষণ করে। আর কত মন্দ এ গন্তব্যস্থল!
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌۭ فَٱسْتَمِعُوا۟ لَهُۥٓ ۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَن يَخْلُقُوا۟ ذُبَابًۭا وَلَوِ ٱجْتَمَعُوا۟ لَهُۥ ۖ وَإِن يَسْلُبْهُمُ ٱلذُّبَابُ شَيْـًۭٔا لَّا يَسْتَنقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ ٱلطَّالِبُ وَٱلْمَطْلُوبُ ﴿٧٣﴾
হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।
ওহে মানবজাতি! একটি উপমা ছোঁড়া হচ্ছে, কাজেই তা শোনো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের ডাকো তারা কখনও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না যদিও সেজন্য তারা সবাই একত্রিত হয়। আর যদি মাছিটি তাদের কাছ থেকে কিছু নিয়ে যায়, তারা ওর কাছ থেকে সেটি ফিরিয়ে আনতে পারবে না। দুর্বল সেই অণ্বেষণকারী আর অন্বেষিত।
مَا قَدَرُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ ﴿٧٤﴾
তারা আল্লাহর যথাযোগ্য মর্যাদা বোঝেনি। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, মহাপরাক্রমশীল।
তারা আল্লাহ্কে মান-সম্মান করে না তাঁর যোগ্য মর্যাদায়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তো মহাবলীয়ান, মহাশক্তিশালী।
ٱللَّهُ يَصْطَفِى مِنَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةِ رُسُلًۭا وَمِنَ ٱلنَّاسِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌۢ بَصِيرٌۭ ﴿٧٥﴾
আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা!
আল্লাহ্ ফিরিশতাদের মধ্যে থেকে বাণীবাহকদের মনোনীত করেন, এবং মানুষের মধ্যে থেকেও। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ﴿٧٦﴾
তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে এবং যা পশ্চাতে আছে এবং সবকিছু আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
তিনি অবগত আছেন যা-কিছু আছে তাদের সামনে আর যা-কিছু আছে তাদের পেছনে, আর আল্লাহ্র কাছেই সব ব্যাপার ফিরিয়ে আনা হয়।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱرْكَعُوا۟ وَٱسْجُدُوا۟ وَٱعْبُدُوا۟ رَبَّكُمْ وَٱفْعَلُوا۟ ٱلْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ۩ ﴿٧٧﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা রুকু করো ও সিজদা করো, আর তোমাদের প্রভুর এবাদত করো এবং ভালকাজ করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
وَجَٰهِدُوا۟ فِى ٱللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِۦ ۚ هُوَ ٱجْتَبَىٰكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِى ٱلدِّينِ مِنْ حَرَجٍۢ ۚ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَٰهِيمَ ۚ هُوَ سَمَّىٰكُمُ ٱلْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِى هَٰذَا لِيَكُونَ ٱلرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا۟ شُهَدَآءَ عَلَى ٱلنَّاسِ ۚ فَأَقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُوا۟ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱعْتَصِمُوا۟ بِٱللَّهِ هُوَ مَوْلَىٰكُمْ ۖ فَنِعْمَ ٱلْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ ٱلنَّصِيرُ ﴿٧٨﴾
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।
আর আল্লাহ্র পথে জিহাদ করো যেভাবে তাঁর পথে জিহাদ করা কর্তব্য। তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন, তবে তিনি তোমাদের উপরে ধর্মের ব্যাপারে কোনো কাঠিন্য আরোপ করেন নি। তোমাদের পিতৃপুরুষ ইব্রাহীমের ধর্মমত। তিনি তোমাদের নামকরণ করেছেন 'মুসলিম’, -- এর আগেই আর এতেও, যেন এই রসূল তোমাদের জন্য একজন সাক্ষী হতে পারেন এবং তোমরাও জনগণের জন্য সাক্ষী হতে পার। অতএব তোমরা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে এবং আল্লাহ্কে শক্ত ক’রে ধরে থাকবে। তিনিই তোমাদের অভিভাবক, সুতরাং কত উত্তম এই অভিভাবক এবং কত উত্তম এই সাহায্যকারী!