Setting
Surah The family of Imran [Aal-e-Imran] in Bengali
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ﴿٢﴾
আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক।
আল্লাহ্! তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, -- চিরজীবন্ত, সদা-বিদ্যমান।
نَزَّلَ عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ ٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ ﴿٣﴾
তিনি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন সত্যতার সাথে; যা সত্যায়ন করে পূর্ববর্তী কিতাবসমুহের।
তিনি তোমার কাছে এই কিতাব অবতারণ করেছেন সত্যের সাথে, -- এর আগে যা এসেছিল তার সত্যসমর্থনরূপে আর তিনি তওরাত ও ইনজীল অবতারণ করেছিলেন --
مِن قَبْلُ هُدًۭى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ ٱلْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌۭ شَدِيدٌۭ ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌۭ ذُو ٱنتِقَامٍ ﴿٤﴾
নাযিল করেছেন তাওরত ও ইঞ্জিল, এ কিতাবের পূর্বে, মানুষের হেদায়েতের জন্যে এবং অবতীর্ণ করেছেন মীমাংসা। নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন আযাব। আর আল্লাহ হচ্ছেন পরাক্রমশীল, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
-- এর আগে, মানুষের জন্য এক একটি পথনির্দেশ হিসেবে, আর তিনি অবতারণ করেছেন এই ফুরকান। নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস করে আল্লাহ্র বাণীসমূহে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়ঙ্কর শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহাশক্তিশালী, প্রতিফল দান সুসমর্থ।
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَىْءٌۭ فِى ٱلْأَرْضِ وَلَا فِى ٱلسَّمَآءِ ﴿٥﴾
আল্লাহর নিকট আসমান ও যমীনের কোন বিষয়ই গোপন নেই।
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সম্পর্কে, -- তাঁর কাছে কিছুই লুকানো নেই পৃথিবীতে, আর মহাকাশেও নেই।
هُوَ ٱلَّذِى يُصَوِّرُكُمْ فِى ٱلْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَآءُ ۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ﴿٦﴾
তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেন মায়ের গর্ভে, যেমন তিনি চেয়েছেন। তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তিনি প্রবল পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।
তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের গড়ে তোলেন জঠরের ভেতরে যেমন তিনি চান। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, -- মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
هُوَ ٱلَّذِىٓ أَنزَلَ عَلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ مِنْهُ ءَايَٰتٌۭ مُّحْكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلْكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٌۭ ۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِمْ زَيْغٌۭ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنْهُ ٱبْتِغَآءَ ٱلْفِتْنَةِ وَٱبْتِغَآءَ تَأْوِيلِهِۦ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُ ۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِى ٱلْعِلْمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلٌّۭ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَٰبِ ﴿٧﴾
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না।
তিনি সেইজন যিনি তোমার কাছে নাযিল করেছেন এই কিতাব, তার মধ্যে কতকগুলো আয়াত নির্দেশাত্মক -- সেইসব হচ্ছে গ্রন্থের ভিত্তি, আর অপরগুলো রূপক। তবে তাদের বেলা যাদের অন্তরে আছে কুটিলতা তারা অনুসরণ করে এর মধ্যের যেগুলো রূপক, বিরোধ সৃষ্টির কামনায় এবং এর ব্যাখ্যা দেবার প্রচেষ্টায়। আর এর ব্যাখ্যা আর কেউ জানে না আল্লাহ্ ছাড়া। আর যারা জ্ঞানে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত তারা বলে -- ''আমরা এতে বিশ্বাস করি, এ-সবই আমাদের প্রভুর কাছ থেকে।’’ আর কেউ মনোযোগ দেয় না কেবল জ্ঞানবান ছাড়া।
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْوَهَّابُ ﴿٨﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।
''আমাদের প্রভু! আমাদের অন্তরকে বিপথগামী করো না আমাদের হেদায়ত করার পরে, আর তোমার নিকট থেকে আমাদের করুণা প্রদান করো। নিঃসন্দেহ তুমি নিজেই পরম বদান্য।
رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ ٱلنَّاسِ لِيَوْمٍۢ لَّا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُخْلِفُ ٱلْمِيعَادَ ﴿٩﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না।
''আমাদের প্রভু! অবশ্যই তুমি লোকজনকে সমবেত করতে যাচ্ছো এমন এক দিনের প্রতি যার সন্বন্ধে কোনোও সন্দেহ নেই।’’ নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ধার্য স্থান-কালের কখনো খেলাফ করেন না।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا ۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمْ وَقُودُ ٱلنَّارِ ﴿١٠﴾
যারা কুফুরী করে, তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কখনও কাজে আসবে না। আর তারাই হচ্ছে দোযখের ইন্ধন।
যারা অবিশ্বাস পোষণ করে, নিঃসন্দেহ আর তারা নিজেরাই হচ্ছে আগুনের ইন্ধন --
كَدَأْبِ ءَالِ فِرْعَوْنَ وَٱلَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا۟ بِـَٔايَٰتِنَا فَأَخَذَهُمُ ٱللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ۗ وَٱللَّهُ شَدِيدُ ٱلْعِقَابِ ﴿١١﴾
ফেরআউনের সম্প্রদায় এবং তাদের পূর্ববর্তীদের ধারা অনুযায়ীই তারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন আর আল্লাহর আযাব অতি কঠিন।
ফিরআউনের দলের সংগ্রামের মতো, এবং যারা তাদের পূর্ববর্তীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তারা আমাদের প্রত্যাদেশসমূহে মিথ্যারোপ করেছিল, তাই আল্লাহ্ তাদের পাকড়াও করেছিলেন তাদের অপরাধের জন্য। আর আল্লাহ্ প্রতিফল দানে কঠোর।
قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا۟ سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ ٱلْمِهَادُ ﴿١٢﴾
কাফেরদিগকে বলে দিন, খুব শিগগীরই তোমরা পরাভূত হয়ে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নীত হবে-সেটা কতই না নিকৃষ্টতম অবস্থান।
যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের বলো -- ''তোমরা শীঘ্রই পরাভূত হবে, আর তোমাদের তাড়িয়ে নেয়া হবে জাহান্নামের দিকে, আর মন্দ সেই বিশ্রামস্থান।’’
قَدْ كَانَ لَكُمْ ءَايَةٌۭ فِى فِئَتَيْنِ ٱلْتَقَتَا ۖ فِئَةٌۭ تُقَٰتِلُ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌۭ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْىَ ٱلْعَيْنِ ۚ وَٱللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِۦ مَن يَشَآءُ ۗ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَعِبْرَةًۭ لِّأُو۟لِى ٱلْأَبْصَٰرِ ﴿١٣﴾
নিশ্চয়ই দুটো দলের মোকাবিলার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করে। আর অপর দল ছিল কাফেরদের এরা স্বচক্ষে তাদেরকে দ্বিগুন দেখছিল। আর আল্লাহ যাকে নিজের সাহায্যের মাধ্যমে শক্তি দান করেন। এরই মধ্যে শিক্ষনীয় রয়েছে দৃষ্টি সম্পন্নদের জন্য।
ইতিপূর্বে তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন এসেছিল দুই সৈন্যদলের মুখোমুখি হওয়ায় -- একদল যুদ্ধ করছিল আল্লাহ্র পথে, আর অন্য দল অবিশ্বাসী, এরা চোখের দেখায় তাদের দেখেছিল নিজেদের দ্বিগুণ। আর আল্লাহ্ তাঁর সাহায্য দিয়ে মদদ করেন যাকে তিনি ইচ্ছে করেন। নিঃসন্দেহ এতে শিক্ষণীয় বিষয় আছে দৃষ্টিবানদের জন্য।
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ ٱلشَّهَوَٰتِ مِنَ ٱلنِّسَآءِ وَٱلْبَنِينَ وَٱلْقَنَٰطِيرِ ٱلْمُقَنطَرَةِ مِنَ ٱلذَّهَبِ وَٱلْفِضَّةِ وَٱلْخَيْلِ ٱلْمُسَوَّمَةِ وَٱلْأَنْعَٰمِ وَٱلْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَٰعُ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا ۖ وَٱللَّهُ عِندَهُۥ حُسْنُ ٱلْمَـَٔابِ ﴿١٤﴾
মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়।
মানুষের পক্ষে মনোরম ঠেকে নারীদের সাহচর্যের প্রতি আকর্ষণ, ও সন্তানসন্ততির, ও সোনারূপার জমানো ভান্ডারের, ও সুশিক্ষিত ঘোড়া ও গবাদি-পশুর ও ক্ষেতখামারের। এসব এই দুনিয়ার জীবনের উপকরণ, অথচ আল্লাহ্, -- তাঁর কাছে রয়েছে উত্তম নিভৃতে বিশ্রাম।
۞ قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍۢ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَٰجٌۭ مُّطَهَّرَةٌۭ وَرِضْوَٰنٌۭ مِّنَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ بَصِيرٌۢ بِٱلْعِبَادِ ﴿١٥﴾
বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চাইতেও উত্তম বিষয়ের সন্ধান বলবো?-যারা পরহেযগার, আল্লাহর নিকট তাদের জন্যে রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশে প্রস্রবণ প্রবাহিত-তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আর রয়েছে পরিচ্ছন্ন সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন।
বলো -- ''তোমাদের কি এ-সবের চাইতে ভালো জিনিসের খবর দেব? যারা সুপথে চলে তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে রয়েছ বাগানসমূহ, যাদের নীচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝরনারাজি, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল, আর পবিত্র সঙ্গিসাথী, আর আল্লাহ্র সন্তষ্টি। আর আল্লাহ্ বান্দাদের পর্যবেক্ষক --
ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ﴿١٦﴾
যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গোনাহ ক্ষমা করে দাও আর আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।
''যারা বলে -- 'আমাদের প্রভু! আমরা নিশ্চয়ই ঈমান এনেছি, অতএব আমাদের অপরাধ থেকে তুমি আমাদের ত্রাণ করো, আর আগুনের যাতনা থেকে আমাদের রক্ষা করো’।
ٱلصَّٰبِرِينَ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلْقَٰنِتِينَ وَٱلْمُنفِقِينَ وَٱلْمُسْتَغْفِرِينَ بِٱلْأَسْحَارِ ﴿١٧﴾
তারা ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ সম্পাদনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।
''ধৈর্যশীল, আর সত্যপরায়ণ আর অনুগত, আর দানশীল, আর প্রাতে পরিত্রাণ প্রার্থী।’’
شَهِدَ ٱللَّهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَأُو۟لُوا۟ ٱلْعِلْمِ قَآئِمًۢا بِٱلْقِسْطِ ۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ﴿١٨﴾
আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, আর ফিরিশ্তারাও, আর জ্ঞানের অধিকারীরা ন্যায়ে অধিষ্ঠিত হয়ে। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلْإِسْلَٰمُ ۗ وَمَا ٱخْتَلَفَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ إِلَّا مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْعِلْمُ بَغْيًۢا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ فَإِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ ٱلْحِسَابِ ﴿١٩﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। এবং যাদের প্রতি কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের নিকট প্রকৃত জ্ঞান আসার পরও ওরা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে, শুধুমাত্র পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ, যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি কুফরী করে তাদের জানা উচিত যে, নিশ্চিতরূপে আল্লাহ হিসাব গ্রহণে অত্যন্ত দ্রুত।
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র কাছে ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। আর যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল তারা মতভেদ করে নি, শুধু তারা ব্যতীত যাদের কাছে জ্ঞানের বিষয় আসার পরেও নিজেদের মধ্যে ঈর্ষাবিদ্বেষ করেছিল, আর যে কেউ আল্লাহ্র নির্দেশের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে -- নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হিসেব-নিকেশে তৎপর।
فَإِنْ حَآجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ وَجْهِىَ لِلَّهِ وَمَنِ ٱتَّبَعَنِ ۗ وَقُل لِّلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْأُمِّيِّۦنَ ءَأَسْلَمْتُمْ ۚ فَإِنْ أَسْلَمُوا۟ فَقَدِ ٱهْتَدَوا۟ ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ ٱلْبَلَٰغُ ۗ وَٱللَّهُ بَصِيرٌۢ بِٱلْعِبَادِ ﴿٢٠﴾
যদি তারা তোমার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয় তবে বলে দাও, \"আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ আল্লাহর প্রতি আত্নসমর্পণ করেছি।\" আর আহলে কিতাবদের এবং নিরক্ষরদের বলে দাও যে, তোমরাও কি আত্নসমর্পণ করেছ? তখন যদি তারা আত্নসমর্পণ করে, তবে সরল পথ প্রাপ্ত হলো, আর যদি মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তাহলে তোমার দায়িত্ব হলো শুধু পৌছে দেয়া। আর আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে সকল বান্দা।
কিন্তু যদি তারা তোমার সাথে হুজ্জত করে, তবে বলো -- ''আমি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্র দিকে আমার মুখ রুজু করেছি, আর যারা আমায় অনুসরণ করে।’’ আর তাদের বলো যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আর নিরক্ষরদের, ''তোমরা কি আত্মসমর্পণ করেছ?’’ অতএব যদি তারা আত্মসমর্পণ করে তবে অবশ্যই তারা হেদায়তপ্রাপ্ত হবে, আর যদি তারা ফিরে যায় তবে নিঃসন্দেহ তোমার উপরে হচ্ছে পৌঁছে দেয়া। আর আল্লাহ্ বান্দাদের দর্শক।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلنَّبِيِّۦنَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ وَيَقْتُلُونَ ٱلَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِٱلْقِسْطِ مِنَ ٱلنَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ﴿٢١﴾
যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরগণকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে, আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন।
নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্র নির্দেশাবলীতে অবিশ্বাস পোষণ করে, আর নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতে যায়, আর মানুষদের মধ্যে যারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেয় তাদের হত্যা করতে যায়, -- তাদের তুমি সংবাদ দাও ব্যথাময় যাতনার।
أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَٰلُهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ﴿٢٢﴾
এরাই হলো সে লোক যাদের সমগ্র আমল দুনিয়া ও আখেরাত উভয়লোকেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই।
এরাই তারা যাদের সব কাজ বৃথা হবে এই দুনিয়াতে ও আখেরাতে, আর তাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ نَصِيبًۭا مِّنَ ٱلْكِتَٰبِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَٰبِ ٱللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌۭ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ ﴿٢٣﴾
আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
তুমি কি তাদের দিকে চেয়ে দেখো নি যাদের কিতাবের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে? তাদের আহ্বান করা হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাবের দিকে, যেন ইহা তাদের মধ্যে মীমাংসা করতে পারে। তারপর তাদের মধ্যের একটি দল ফিরে গেল, ফলে তারা হল অগ্রাহ্যকারী।
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا۟ لَن تَمَسَّنَا ٱلنَّارُ إِلَّآ أَيَّامًۭا مَّعْدُودَٰتٍۢ ۖ وَغَرَّهُمْ فِى دِينِهِم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ ﴿٢٤﴾
তা এজন্য যে, তারা বলে থাকে যে, দোযখের আগুন আমাদের স্পর্শ করবে না; তবে সামান্য হাতে গোনা কয়েকদিনের জন্য স্পর্শ করতে পারে। নিজেদের উদ্ভাবিত ভিত্তিহীন কথায় তারা ধোকা খেয়েছে।
এমন ছিল, কারণ তারা বলে -- ''আগুন আমাদের কদাচ স্পর্শ করবে না গুনতির কয়েকটি দিন ছাড়া।’’ আর তাদের ধর্মমতে তারা নিজেদের প্রতারণা করছে তারা যা জালিয়াতি করে চলেছে তার দ্বারা।
فَكَيْفَ إِذَا جَمَعْنَٰهُمْ لِيَوْمٍۢ لَّا رَيْبَ فِيهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ﴿٢٥﴾
কিন্তু তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে যখন আমি তাদেরকে একদিন সমবেত করবো যে দিনের আগমনে কোন সন্দেহ নেই আর নিজেদের কৃতকর্ম তাদের প্রত্যেকেই পাবে তাদের প্রাপ্য প্রদান মোটেই অন্যায় করা হবে না।
কাজেই কেমন হবে, যখন আমরা তাদের জমা করবো এমন এক দিনে যার সন্বন্ধে নেই কোনো সন্দেহ, এবং প্রত্যেক সত্ত্বাকে পুরোপুরি প্রতিদান করা হবে যা সে অর্জন করেছে, আর তাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না?
قُلِ ٱللَّهُمَّ مَٰلِكَ ٱلْمُلْكِ تُؤْتِى ٱلْمُلْكَ مَن تَشَآءُ وَتَنزِعُ ٱلْمُلْكَ مِمَّن تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَآءُ ۖ بِيَدِكَ ٱلْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ﴿٢٦﴾
বলুন ইয়া আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মান দান কর আর যাকে ইচ্ছা অপমানে পতিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয়ই তুমি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।
বলো -- ''হে আল্লাহ্! সাম্রাজ্যের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা কর তাকে সাম্রাজ্য প্রদান করো, আবার যার কাছ থেকে ইচ্ছা কর রাজত্ব ছিনিয়ে নাও, আর যাকে খুশী সম্মানিত করো, আবার যাকে খুশী অপমানিত করো, -- তোমার হাতেই রয়েছে কল্যাণ। নিঃসন্দেহ তুমি সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।
تُولِجُ ٱلَّيْلَ فِى ٱلنَّهَارِ وَتُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِى ٱلَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ ٱلْحَىَّ مِنَ ٱلْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ ٱلْمَيِّتَ مِنَ ٱلْحَىِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَن تَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍۢ ﴿٢٧﴾
তুমি রাতকে দিনের ভেতরে প্রবেশ করাও এবং দিনকে রাতের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দাও। আর তুমিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আন এবং মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের কর। আর তুমিই যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান কর।
''তুমি রাতকে প্রবেশ করাও দিনে, আবার দিনকে প্রবেশ করাও রাতে, আর প্রাণবানদের উদগত করো মৃত থেকে, আবার মৃতকে উদগত করো জীবন্ত থেকে, আর যাকে ইচ্ছা কর বেহিসাব রিযেক দান করো।’’
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ إِلَّآ أَن تَتَّقُوا۟ مِنْهُمْ تُقَىٰةًۭ ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلْمَصِيرُ ﴿٢٨﴾
মুমিনগন যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কেন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কেন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন। এবং সবাই কে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।
বিশ্বাসীরা যেন বিশ্বাসীদের বাদ দিয়ে অবিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যে এমন করবে আল্লাহ্র কাছ থেকে কোনো কিছুই থাকবে না, তবে যদি তোমরা তাদের থেকে সতর্কতা স্বরূপ হুশিয়াঁর হতে চাও। আর আল্লাহ্ তোমাদের তাঁর সন্বন্ধে সাবধান করেছেন, আর আল্লাহ্র দিকেই শেষ গতি।
قُلْ إِن تُخْفُوا۟ مَا فِى صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ ٱللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ﴿٢٩﴾
বলে দিন, তোমরা যদি মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সেসব ও তিনি জানেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
বলো -- ''তোমাদের অন্তরে যা আছে তা লুকিয়ে রাখো, অথবা তা প্রকাশ করো, আল্লাহ্ তা জানেন। আর তিনি জানেন যা-কিছু আছে মহাকাশে ও যা-কিছু পৃথিবীতে। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।’’
يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍۢ مُّحْضَرًۭا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوٓءٍۢ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُۥٓ أَمَدًۢا بَعِيدًۭا ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفْسَهُۥ ۗ وَٱللَّهُ رَءُوفٌۢ بِٱلْعِبَادِ ﴿٣٠﴾
সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভাল কাজ করেছে; চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও, ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দুরের হতো! আল্লাহ তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
সেদিন প্রত্যেক সত্ত্বা দেখতে পাবে ভালো যা সে করেছে তা হাজির করা হয়েছে, আর মন্দ যা সে করেছে তাও, সে চাইবে -- তার মধ্যে আর ওর মধ্যে যদি সুদীর্ঘ ব্যবধান থাকতো! কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের সাবধান করছেন তাঁর সন্বন্ধে। আর আল্লাহ্ স্নেহময়।
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِى يُحْبِبْكُمُ ٱللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿٣١﴾
বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।
বলো -- ''তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাস তবে তোমরা আমায় অনুসরণ করো, তা হলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালবাসবেন, আর তোমাদের পরিত্রাণ করবেন তোমাদের অপরাধ থেকে। কেননা আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।’’
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلْكَٰفِرِينَ ﴿٣٢﴾
বলুন, আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য প্রকাশ কর। বস্তুতঃ যদি তারা বিমুখতা অবলম্বন করে, তাহলে আল্লাহ কাফেরদিগকে ভালবাসেন না।
বলো -- ''আল্লাহ্র আজ্ঞানুবর্তী হও আর রসূলেরও।’’ কিন্তু যদি তারা ফিরে যায়, তবে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ অবিশ্বাসকারীদের ভালোবাসেন না।
۞ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰٓ ءَادَمَ وَنُوحًۭا وَءَالَ إِبْرَٰهِيمَ وَءَالَ عِمْرَٰنَ عَلَى ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٣٣﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহ আদম (আঃ) নূহ (আঃ)͠ও ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধর এবং এমরানের খান্দানকে নির্বাচিত করেছেন।
আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আদম ও নূহ্ ও ইব্রাহীমের বংশধর, আর ইমরানের পরিবারকে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছিলেন,
ذُرِّيَّةًۢ بَعْضُهَا مِنۢ بَعْضٍۢ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٣٤﴾
যারা বংশধর ছিলেন পরস্পরের। আল্লাহ শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী।
এক বংশ পরম্পরা -- একের থেকে তাদের অন্যরা। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
إِذْ قَالَتِ ٱمْرَأَتُ عِمْرَٰنَ رَبِّ إِنِّى نَذَرْتُ لَكَ مَا فِى بَطْنِى مُحَرَّرًۭا فَتَقَبَّلْ مِنِّىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ ﴿٣٥﴾
এমরানের স্ত্রী যখন বললো-হে আমার পালনকর্তা! আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তাকে কবুল করে নাও, নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞাত।
স্মরণ করো! ইমরান বংশের একজন স্ত্রীলোক বললে -- ''আমার প্রভু! আমার গর্ভে যে আছে তাকে আমি তোমার জন্য মানত করলাম একান্তভাবে, অতএব আমার থেকে কবুল করো, নিঃসন্দেহ তুমি নিজেই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’’
فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّى وَضَعْتُهَآ أُنثَىٰ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ ٱلذَّكَرُ كَٱلْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّى سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّىٓ أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ ٱلشَّيْطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ﴿٣٦﴾
অতঃপর যখন তাকে প্রসব করলো বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমি একে কন্যা প্রসব করেছি। বস্তুতঃ কি সে প্রসব করেছে আল্লাহ তা ভালই জানেন। সেই কন্যার মত কোন পুত্রই যে নেই। আর আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম। আর আমি তাকে ও তার সন্তানদেরকে তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অভিশপ্ত শয়তানের কবল থেকে।
তারপর যখন সে তাকে প্রসব করলো, সে বললে -- ''প্রভু! আমি কিন্তু তাকে প্রসব করলাম একটি কন্যা!’’ আর আল্লাহ্ ভালো জানেন কি সে প্রসব করলো। আর, বেটাছেলে মেয়েছেলের মতো নয়। ''আর আমি তার নাম রাখলাম মরিয়ম, আর আমি অবশ্যই তোমার আশ্রয়ে তাকে রাখছি, আর তার সন্তানসন্ততিকেও, ভ্রষ্ট শয়তানের থেকে।’’
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍۢ وَأَنۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًۭا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا ٱلْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًۭا ۖ قَالَ يَٰمَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ ﴿٣٧﴾
অতঃপর তাঁর পালনকর্তা তাঁকে উত্তম ভাবে গ্রহণ করে নিলেন এবং তাঁকে প্রবৃদ্ধি দান করলেন-অত্যন্ত সুন্দর প্রবৃদ্ধি। আর তাঁকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে সমর্পন করলেন। যখনই যাকারিয়া মেহরাবের মধ্যে তার কছে আসতেন তখনই কিছু খাবার দেখতে পেতেন। জিজ্ঞেস করতেন \"মারইয়াম! কোথা থেকে এসব তোমার কাছে এলো?\" তিনি বলতেন, \"এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন।\"
অতএব তার প্রভু তাকে কবুল করলেন সুন্দর স্বীকৃতির সাথে, ফলে তাকে বর্ধিত করলেন সুন্দর বর্ধনে, আর তাকে সমর্পণ করলেন যাকারিয়ার অভিভাকত্বে। যখন যাকারিয়া তাকে দেখতে উপাসনাস্থলে প্রবেশ করতেন তিনি তার কাছে দেখতে পেতেন রিযেক। তিনি বললেন -- ''হে মরিয়ম! এ তোমার কাছে কোথা থেকে?’’ সে বললে -- ''এ আল্লাহ্র দরবার থেকে।’’ নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে করেন তাকে বেহিসাব রিযেক দান করেন।
هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥ ۖ قَالَ رَبِّ هَبْ لِى مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةًۭ طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ﴿٣٨﴾
সেখানেই যাকারিয়া তাঁর পালনকর্তার নিকট প্রার্থনা করলেন। বললেন, হে, আমার পালনকর্তা! তোমার নিকট থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান কর-নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।
সঙ্গে-সঙ্গে সেইখানেই যাকারিয়া তাঁর প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন, তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! তোমার নিকট থেকে আমাকে একটি উত্তম সন্তান দাও। নিঃসন্দেহ তুমি প্রার্থনার শ্রোতা।’’
فَنَادَتْهُ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٌۭ يُصَلِّى فِى ٱلْمِحْرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَسَيِّدًۭا وَحَصُورًۭا وَنَبِيًّۭا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ﴿٣٩﴾
যখন তিনি কামরার ভেতরে নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন ফেরেশতারা তাঁকে ডেকে বললেন যে, আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়া সম্পর্কে, যিনি সাক্ষ্য দেবেন আল্লাহর নির্দেশের সত্যতা সম্পর্কে, যিনি নেতা হবেন এবং নারীদের সংস্পর্শে যাবেন না, তিনি অত্যন্ত সৎকর্মশীল নবী হবেন।
ফিরিশ্তারা তাঁকে ডেকে বললে আর তিনি তখন উপাসনাস্থলে নামাযে দাঁড়িয়েছিলেন -- ''আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আপনাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহ্য়ার, আল্লাহ্র বাণীর সত্যতা প্রতিপন্ন করতে, আর সম্মানিত ও চরিত্রবান, আর সাধুপুরুষদের মধ্য থেকে একজন নবী।’’
قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى غُلَٰمٌۭ وَقَدْ بَلَغَنِىَ ٱلْكِبَرُ وَٱمْرَأَتِى عَاقِرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكَ ٱللَّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَآءُ ﴿٤٠﴾
তিনি বললেন হে পালনকর্তা! কেমন করে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার যে বার্ধক্য এসে গেছে, আমার স্ত্রীও যে বন্ধ্যা। বললেন, আল্লাহ এমনি ভাবেই যা ইচ্ছা করে থাকেন।
তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! কোথা থেকে আমার ছেলে হতে পারে, যখন ইতিপূর্বেই আমার কাছে বার্ধক্য এসে হাজির হয়েছে, আর আমার স্ত্রী বন্ধ্যা?’’ তিনি বললেন -- ''এইভাবেই, -- আল্লাহ্ তাই করেন যা তিনি চান।’’
قَالَ رَبِّ ٱجْعَل لِّىٓ ءَايَةًۭ ۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمْزًۭا ۗ وَٱذْكُر رَّبَّكَ كَثِيرًۭا وَسَبِّحْ بِٱلْعَشِىِّ وَٱلْإِبْكَٰرِ ﴿٤١﴾
তিনি বললেন, হে পালনকর্তা আমার জন্য কিছু নিদর্শন দাও। তিনি বললেন, তোমার জন্য নিদর্শন হলো এই যে, তুমি তিন দিন পর্যন্ত কারও সাথে কথা বলবে না। তবে ইশারা ইঙ্গতে করতে পারবে এবং তোমার পালনকর্তাকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে আর সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করবে।
তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমার জন্য একটি নিদর্শন নির্ধারিত করো।’’ তিনি বললেন -- ''তোমার নিদর্শন হচ্ছে এই যে তুমি লোকজনের সাথে তিনদিন কথা বলবে না শুধু ইশারাতে ছাড়া, আর তোমার প্রভুকে খুব করে স্মরণ করো নিশাসমাগমে ও ভোরবেলা।’’
وَإِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصْطَفَىٰكِ وَطَهَّرَكِ وَٱصْطَفَىٰكِ عَلَىٰ نِسَآءِ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٤٢﴾
আর যখন ফেরেশতা বলল হে মারইয়াম!, আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্ধ্বে মনোনীত করেছেন।
আর স্মরণ করো! ফিরিশ্তারা বললেন -- ''হে মরিয়ম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাকে নির্বাচন করেছেন, আর তোমায় পবিত্র করেছেন, আর বিশ্বজগতের সব নারীর উপরে তোমায় নির্বাচন করেছেন।
يَٰمَرْيَمُ ٱقْنُتِى لِرَبِّكِ وَٱسْجُدِى وَٱرْكَعِى مَعَ ٱلرَّٰكِعِينَ ﴿٤٣﴾
হে মারইয়াম! তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদের সাথে সেজদা ও রুকু কর।
''হে মরিয়ম! তোমার প্রভুর অনুগত হয়ে থেকো, আর সিজদা করো ও রুকু করো রুকুকারীদের সাথে।’’
ذَٰلِكَ مِنْ أَنۢبَآءِ ٱلْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۚ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَٰمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ ﴿٤٤﴾
এ হলো গায়েবী সংবাদ, যা আমি আপনাকে পাঠিয়ে থাকি। আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে প্রতিপালন করবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলো।
এ হচ্ছে অদৃশ্য বার্তাসমূহের থেকে যে-সব তোমার কাছে আমরা প্রত্যাদিষ্ট করছি। আর তুমি তাদের কাছে ছিলে না যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল তাদের মধ্যে কে মরিয়মের ভার নেবে সে সম্পর্কে, আর তুমি তাদের নিকটে ছিলে না যখন তারা পরস্পর বচসা করছিল।
إِذْ قَالَتِ ٱلْمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرْيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍۢ مِّنْهُ ٱسْمُهُ ٱلْمَسِيحُ عِيسَى ٱبْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ وَمِنَ ٱلْمُقَرَّبِينَ ﴿٤٥﴾
যখন ফেরেশতাগণ বললো, হে মারইয়াম আল্লাহ তোমাকে তাঁর এক বানীর সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হলো মসীহ-মারইয়াম-তনয় ঈসা, দুনিয়া ও আখেরাতে তিনি মহাসম্মানের অধিকারী এবং আল্লাহর ঘনিষ্ঠদের অন্তর্ভূক্ত।
স্মরণ করো! ফিরিশ্তারা বললে -- ''হে মরিয়ম, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর তরফ থেকে একটি বাণী দ্বারা -- তাঁর নাম হচ্ছে মসীহ্, মরিয়ম-পুত্র ঈসা, ইহকালে ও পরকালে সম্মানের যোগ্য, আর নৈকট্যে আনীতদের অন্তর্গত।
وَيُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِى ٱلْمَهْدِ وَكَهْلًۭا وَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ﴿٤٦﴾
যখন তিনি মায়ের কোলে থাকবেন এবং পূর্ণ বয়স্ক হবেন তখন তিনি মানুষের সাথে কথা বলবেন। আর তিনি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
''আর তিনি লোকদের সাথে কথা বলবেন দোলনায় এবং বার্ধক্যকালে, আর তিনি সুকর্মীদের অন্যতম।’’
قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِى وَلَدٌۭ وَلَمْ يَمْسَسْنِى بَشَرٌۭ ۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَآءُ ۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمْرًۭا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ﴿٤٧﴾
তিনি বললেন, পরওয়ারদেগার! কেমন করে আমার সন্তান হবে; আমাকে তো কোন মানুষ স্পর্শ করেনি। বললেন এ ভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যখন কোন কাজ করার জন্য ইচ্ছা করেন তখন বলেন যে, ‘হয়ে যাও’ অমনি তা হয়ে যায়।
তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! কোথা থেকে আমার ছেলে হবে যখন পুরুষমানুষ আমায় স্পর্শ করে নি?’’ তিনি বললেন -- ''এইভাবেই, -- আল্লাহ্ তাই সৃষ্টি করেন যা তিনি চান। তিনি যখন কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত করেন, তিনি তখন সে সন্বন্ধে শুধু বলেন -- ''হও’’ আর তা হয়ে যায়।
وَيُعَلِّمُهُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَٱلتَّوْرَىٰةَ وَٱلْإِنجِيلَ ﴿٤٨﴾
আর তাকে তিনি শিখিয়ে দেবেন কিতাব, হিকমত, তওরাত, ইঞ্জিল।
''আর তিনি তাঁকে শেখাবেন কিতাব ও জ্ঞানভান্ডার, আর তওরাত ও ইনজীল।
وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ أَنِّى قَدْ جِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّىٓ أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيْـَٔةِ ٱلطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًۢا بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ ٱلْأَكْمَهَ وَٱلْأَبْرَصَ وَأُحْىِ ٱلْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ ٱللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِى بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِى ذَٰلِكَ لَءَايَةًۭ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿٤٩﴾
আর বণী ইসরাঈলদের জন্যে রসূল হিসেবে তাকে মনোনীত করবেন। তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে এসেছি নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আমি তোমাদের জন্য মাটির দ্বারা পাখীর আকৃতি তৈরী করে দেই। তারপর তাতে যখন ফুৎকার প্রদান করি, তখন তা উড়ন্ত পাখীতে পরিণত হয়ে যায় আল্লাহর হুকুমে। আর আমি সুস্থ করে তুলি জন্মান্ধকে এবং শ্বেত কুষ্ঠ রোগীকে। আর আমি জীবিত করে দেই মৃতকে আল্লাহর হুকুমে। আর আমি তোমাদেরকে বলে দেই যা তোমরা খেয়ে আস এবং যা তোমরা ঘরে রেখে আস। এতে প্রকৃষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
''আর ইসরাইল বংশীয়দের জন্য রসূল। 'নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের কাছে আসছি তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে একটি নিদর্শন নিয়ে, আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য মাটি থেকে তৈরি করি পাখির মতো মূর্তি, তারপর তাতে আমি ফুৎকার দিই, তখন সেটি পাখি হয়ে যায় আল্লাহ্র ইচ্ছায়। আর আমি আরোগ্য করি অন্ধকে ও কুষ্ঠ রুগীকে, আর আমি জীবন দিই মৃতকে আল্লাহ্র ইচ্ছায়। আর আমি তোমাদের খবর দিই যেসব তোমরা খাবে আর যা তোমরা নিজেদের বাড়িতে মজুত রাখো। নিঃসন্দেহ এতে বিশেষ নিদর্শন আছে তোমাদের জন্য যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
وَمُصَدِّقًۭا لِّمَا بَيْنَ يَدَىَّ مِنَ ٱلتَّوْرَىٰةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ ٱلَّذِى حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ وَجِئْتُكُم بِـَٔايَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُونِ ﴿٥٠﴾
আর এটি পূর্ববর্তী কিতাব সমুহকে সত্যায়ন করে, যেমন তওরাত। আর তা এজন্য যাতে তোমাদের জন্য হালাল করে দেই কোন কোন বস্তু যা তোমাদের জন্য হারাম ছিল। আর আমি তোমাদের নিকট এসেছি তোমাদের পালনকর্তার নিদর্শনসহ। কাজেই আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।
''আর তওরাতের যা-কিছু আমার কাছে ছিল আমি তার প্রতিপাদক, আর আমি যাতে তোমাদের জন্য বৈধ করতে পারি কোনো কোনো বিষয় যা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিল, আর আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে একটি বাণী নিয়ে, অতএব আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করো ও আমার অনুগত হও।
إِنَّ ٱللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَٱعْبُدُوهُ ۗ هَٰذَا صِرَٰطٌۭ مُّسْتَقِيمٌۭ ﴿٥١﴾
নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা-তাঁর এবাদত কর, এটাই হলো সরল পথ।
''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ আমার প্রভু ও তোমাদেরও প্রভু, অতএব তাঁরই উপাসনা করো, -- এই হচ্ছে সহজ-সঠিক পথ।’’
۞ فَلَمَّآ أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ ٱلْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِىٓ إِلَى ٱللَّهِ ۖ قَالَ ٱلْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ ٱللَّهِ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ﴿٥٢﴾
অতঃপর ঈসা (আঃ) যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেন, তখন বললেন, কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বললো, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা হুকুম কবুল করে নিয়েছি।
কিন্তু যখন ঈসা তাদের মধ্যে অবিশ্বাস বোধ করলেন, তিনি বললেন -- ''কারা আল্লাহ্র পথে আমার সাহায্যকারী হবে?’’ হাওয়ারীরা বললে -- ''আমরা আল্লাহ্র সাহায্যকারী হব, আমরা আল্লাহ্তে বিশ্বাস করি, আর তুমি সাক্ষ্য দাও যে আমরা হচ্ছি আত্মসমর্পণকারী।
رَبَّنَآ ءَامَنَّا بِمَآ أَنزَلْتَ وَٱتَّبَعْنَا ٱلرَّسُولَ فَٱكْتُبْنَا مَعَ ٱلشَّٰهِدِينَ ﴿٥٣﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যা তুমি নাযিল করেছ, আমরা রসূলের অনুগত হয়েছি। অতএব, আমাদিগকে মান্যকারীদের তালিকাভুক্ত করে নাও।
''আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান এনেছি তাতে যা তুমি অবতারণ করেছ, আর আমরা রসূলকে অনুসরণ করি, অতএব আমাদের লিখে রাখ সাক্ষ্যদাতাদের সাথে।’’
وَمَكَرُوا۟ وَمَكَرَ ٱللَّهُ ۖ وَٱللَّهُ خَيْرُ ٱلْمَٰكِرِينَ ﴿٥٤﴾
এবং কাফেরেরা চক্রান্ত করেছে আর আল্লাহও কৌশল অবলম্বন করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন সর্বোত্তম কুশলী।
আর তারা চক্রান্ত করেছিল, আর আল্লাহ্ও পরিকল্পনা করেছিলেন। আর আল্লাহ্ পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম।
إِذْ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَىٰٓ إِنِّى مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَىَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَجَاعِلُ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوكَ فَوْقَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ إِلَىٰ يَوْمِ ٱلْقِيَٰمَةِ ۖ ثُمَّ إِلَىَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ ﴿٥٥﴾
আর স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বলবেন, হে ঈসা! আমি তোমাকে নিয়ে নেবো এবং তোমাকে নিজের দিকে তুলে নিবো-কাফেরদের থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেবো। আর যারা তোমার অনুগত রয়েছে তাদেরকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যারা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে তাদের উপর জয়ী করে রাখবো। বস্তুতঃ তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে। তখন যে বিষয়ে তোমরা বিবাদ করতে, আমি তোমাদের মধ্যে তার ফয়সালা করে দেবো।
স্মরণ করো! আল্লাহ্ বললেন -- ''হে ঈসা, আমি নিশ্চয়ই তোমার মৃত্যু ঘটাব, এবং আমি তোমাকে আমার দিকে উন্নীত করবো, আর তোমাকে পরিশোধিত করবো যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের থেকে, আর যারা তোমায় অনুসরণ করবে তাদের আমি স্থান দেবো যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের উপরে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত, এরপর আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন স্থান, আর আমি তোমাদের মধ্যে বিচার করবো যে-বিষয়ে তোমরা মতভেদ করছিলে সেই বিষয়ে।
فَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًۭا شَدِيدًۭا فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْءَاخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ﴿٥٦﴾
অতএব যারা কাফের হয়েছে, তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তি দেবো দুনিয়াতে এবং আখেরাতে-তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
অতএব যারা অবিশ্বাস পোষণ করে আমি তাদের শাস্তি দেবো কঠোর শাস্তিতে এই দুনিয়াতে ও পরলোকে, আর তাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّٰلِحَٰتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿٥٧﴾
পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। তাদের প্রাপ্য পরিপুর্ণভাবে দেয়া হবে। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
আর যারা ঈমান এনেছে ও সুকর্ম করেছে, তিনি তাদের প্রাপ্য পুরোপরি তাদের দেবেন। আর অন্যায়কারীদের আল্লাহ্ ভালোবাসেন না।
ذَٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ ٱلْءَايَٰتِ وَٱلذِّكْرِ ٱلْحَكِيمِ ﴿٥٨﴾
আমি তোমাদেরকে পড়ে শুনাই এ সমস্ত আয়াত এবং নিশ্চিত বর্ণনা।
এটিই যা আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি নির্দেশবাণী ও জ্ঞানময় স্মারক থেকে।
إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَ ۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍۢ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ﴿٥٩﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন।
নিঃসন্দেহ ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আল্লাহ্র কাছে আদমের দৃষ্টান্তের মতো। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি থেকে; তারপর তাঁকে বলেছিলেন -- ''হও’’ আর তিনি হয়ে গেলেন।
ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُن مِّنَ ٱلْمُمْتَرِينَ ﴿٦٠﴾
যা তোমার পালকর্তা বলেন তাই হচ্ছে যথার্থ সত্য। কাজেই তোমরা সংশয়বাদী হয়ো না।
তোমার প্রভুর কাছ থেকে আসা ধ্রুবসত্য, কাজেই সংশয়ীদের দলভুক্ত হয়ো না।
فَمَنْ حَآجَّكَ فِيهِ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَكَ مِنَ ٱلْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ ٱللَّهِ عَلَى ٱلْكَٰذِبِينَ ﴿٦١﴾
অতঃপর তোমার নিকট সত্য সংবাদ এসে যাওয়ার পর যদি এই কাহিনী সম্পর্কে তোমার সাথে কেউ বিবাদ করে, তাহলে বল-এসো, আমরা ডেকে নেই আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের এবং আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের আর তারপর চল আমরা সবাই মিলে প্রার্থনা করি এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত করি যারা মিথ্যাবাদী।
অতএব যারা তোমার সাথে এ-বিষয়ে তর্ক করে তোমার কাছে জ্ঞানের যা এসেছে তার পরেও, তাহলে বলো -- ''এসো, আমরা ডেকে আনি আমাদের সন্তানদের ও তোমাদের সন্তানদের, আর আমাদের স্ত্রীলোকদের ও তোমাদের স্ত্রীলোকদের, আর আমাদের লোকজনকে ও তোমাদের লোকজনকে, তারপর কাতর প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ্র অভিশাপ পড়ে মিথ্যাবাদীদের উপরে।’’
إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلْقَصَصُ ٱلْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا ٱللَّهُ ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَهُوَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ﴿٦٢﴾
নিঃসন্দেহে এটাই হলো সত্য ভাষণ। আর এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আর আল্লাহ; তিনিই হলেন পরাক্রমশালী মহাপ্রাজ্ঞ।
নিঃসন্দেহ এই হচ্ছে যথার্থ সত্য বিবৃতি, আর আল্লাহ্ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্, অবশ্যই তিনি মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُفْسِدِينَ ﴿٦٣﴾
তারপর যদি তারা গ্রহণ না করে, তাহলে প্রমাদ সৃষ্টিকারীদেরকে আল্লাহ জানেন।
কিন্তু তারা যদি ফিরে যায়, তাহলে আল্লাহ্ ফসাদকারীদের সম্যক জ্ঞাতা।
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ تَعَالَوْا۟ إِلَىٰ كَلِمَةٍۢ سَوَآءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا ٱللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِۦ شَيْـًۭٔا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًۭا مِّن دُونِ ٱللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقُولُوا۟ ٱشْهَدُوا۟ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ ﴿٦٤﴾
বলুনঃ ‘হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, ‘সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত।
বলো -- ''হে গ্রন্থপ্রাপ্ত লোকেরা, আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে পরস্পর সমঝোথার মাঝে এসো, যেন আমরা আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো এবাদত করবো না, আর তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবো না, আর আমরা কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে মনিব বলে গ্রহণ করবো না।’’ কিন্তু তারা যদি ফিরে যায় তবে বলো -- ''সাক্ষী থাকো, আমরা কিন্তু মুসলিম।’’
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لِمَ تُحَآجُّونَ فِىٓ إِبْرَٰهِيمَ وَمَآ أُنزِلَتِ ٱلتَّوْرَىٰةُ وَٱلْإِنجِيلُ إِلَّا مِنۢ بَعْدِهِۦٓ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿٦٥﴾
হে আহলে কিতাবগণ! কেন তোমরা ইব্রাহীমের বিষয়ে বাদানুবাদ কর? অথচ তওরাত ও ইঞ্জিল তাঁর পরেই নাযিল হয়েছে। তোমরা কি বুঝ না?
হে গ্রন্থধারিগণ! তোমরা কেন ইব্রাহীম সন্বন্ধে হুজ্জত করো, অথচ তওরাত ও ইনজীল তাঁর পরে ছাড়া অবতীর্ণ হয় নি? তোমরা কি তাহলে বুঝো না?
هَٰٓأَنتُمْ هَٰٓؤُلَآءِ حَٰجَجْتُمْ فِيمَا لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ فَلِمَ تُحَآجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُم بِهِۦ عِلْمٌۭ ۚ وَٱللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ﴿٦٦﴾
শোন! ইতিপূর্বে তোমরা যে বিষয়ে কিছু জানতে, তাই নিয়ে বিবাদ করতে। এখন আবার যে বিষয়ে তোমরা কিছুই জান না, সে বিষয়ে কেন বিবাদ করছ?
দেখো! তোমরাই তারা যারা তর্ক করেছ যে-বিষয়ে তোমাদের জ্ঞান ছিল, তবে কেন তোমরা হুজ্জত করছো যে বিষয়ে তোমাদের সম্যক জ্ঞান নেই? আর আল্লাহ্ জানেন, অথচ তোমরা জানো না।
مَا كَانَ إِبْرَٰهِيمُ يَهُودِيًّۭا وَلَا نَصْرَانِيًّۭا وَلَٰكِن كَانَ حَنِيفًۭا مُّسْلِمًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ﴿٦٧﴾
ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না এবং নাসারাও ছিলেন না, কিক্তু তিনি ছিলেন ‘হানীফ’ অর্থাৎ, সব মিথ্যা ধর্মের প্রতি বিমুখ এবং আত্নসমর্পণকারী, এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।
ইব্রাহীম ইহুদী ছিলেন না, খ্রীষ্টানও নহেন, বরং তিনি ছিলেন ঋজু স্বভাব, মুসলিম, আর তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
إِنَّ أَوْلَى ٱلنَّاسِ بِإِبْرَٰهِيمَ لَلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ وَهَٰذَا ٱلنَّبِىُّ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ وَلِىُّ ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿٦٨﴾
মানুষদের মধ্যে যারা ইব্রাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইব্রাহীমের ঘনিষ্ঠতম-আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু।
নিঃসন্দেহ ইব্রাহীমের নিকটতম লোক ছিলেন যাঁরা তাঁকে অনুসরণ করে চলতেন, আর এই নবী, আর যারা ঈমান এনেছে। আর আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের রক্ষাকারী বন্ধু।
وَدَّت طَّآئِفَةٌۭ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ ﴿٦٩﴾
কোন কোন আহলে-কিতাবের আকাঙ্খা, যাতে তোমাদের গোমরাহ করতে পারে, কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকেই গোমরাহ করে না। অথচ তারা বুঝতে পারে না।
গ্রন্থপ্রাপ্তদের একদল চায় তোমাদের বিপথগামী করতে, আর তারা বিপথে নেয় না নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে, আর তারা উপলব্ধি করতে পারছে না।
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ ﴿٧٠﴾
হে আহলে-কিতাবগণ, কেন তোমরা আল্লাহর কালামকে অস্বীকার কর, অথচ তোমরাই তাঁর প্রবক্তা?
হে গ্রন্থধারিগণ! কেন তোমরা আল্লাহ্র নির্দেশে অবিশ্বাস পোষণ করো, যখন তোমরা প্রত্যক্ষদর্শী?
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لِمَ تَلْبِسُونَ ٱلْحَقَّ بِٱلْبَٰطِلِ وَتَكْتُمُونَ ٱلْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٧١﴾
হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশ্রণ করছ এবং সত্যকে গোপন করছ, অথচ তোমরা তা জান।
হে গ্রন্থধারিগণ! কেন তোমরা সত্যকে মিথ্যার পোশাক পরিয়ে দিচ্ছ, আর তোমরা জেনেশুনে সত্যকে লুকোচ্ছ?
وَقَالَت طَّآئِفَةٌۭ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ ءَامِنُوا۟ بِٱلَّذِىٓ أُنزِلَ عَلَى ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَجْهَ ٱلنَّهَارِ وَٱكْفُرُوٓا۟ ءَاخِرَهُۥ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ ﴿٧٢﴾
আর আহলে-কিতাবগণের একদল বললো, মুসলমানগণের উপর যা কিছু অবর্তীণ হয়েছে তাকে দিনের প্রথম ভাগে মেনে নাও, আর দিনের শেষ ভাগে অস্বীকার ক র, হয়তো তারা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
আর গ্রন্থপ্রাপ্তদের একদল বলে -- ''যারা ঈমান এনেছে তাদের কাছে যা নাযিল হয়েছে তাতে তোমরাও বিশ্বাস করো দিনের আগবেলায়, আর তার অপরাহে প্রত্যাখ্যান করো, যাতে তারাও ফিরে যায়।
وَلَا تُؤْمِنُوٓا۟ إِلَّا لِمَن تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ ٱلْهُدَىٰ هُدَى ٱللَّهِ أَن يُؤْتَىٰٓ أَحَدٌۭ مِّثْلَ مَآ أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَآجُّوكُمْ عِندَ رَبِّكُمْ ۗ قُلْ إِنَّ ٱلْفَضْلَ بِيَدِ ٱللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌۭ ﴿٧٣﴾
যারা তোমাদের ধর্মমতে চলবে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করবে না। বলে দিন নিঃসন্দেহে হেদায়েত সেটাই, যে হেদায়েত আল্লাহ করেন। আর এসব কিছু এ জন্যে যে, তোমরা যা লাভ করেছিলে তা অন্য কেউ কেন প্রাপ্ত হবে, কিংবা তোমাদের পালনকর্তার সামনে তোমাদের উপর তারা কেন প্রবল হয়ে যাবে! বলে দিন, মর্যাদা আল্লাহরই হাতে; তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন এবং আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।
''তা ছাড়া যে তোমাদের ধর্ম অনুসরণ করে তাকে ছাড়া ঈমান এনো না।’’ তুমি বলো -- ''নিঃসন্দেহ হেদায়ত হচ্ছে আল্লাহ্র হেদায়ত, কাজেই তোমাদের যা দেয়া হয়েছিল তার মতো অন্যকে দেয়া হয়েছে, অথবা তারা তোমাদের প্রভুর সামনে তোমাদের উপরে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ মহত্ত্ব আল্লাহ্র হাতে ন্যস্ত, তিনি তা দান করেন যাকে পছন্দ ক রেন। আর আল্লাহ্ মহাবদান্য, সর্বজ্ঞাতা।’’
يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِۦ مَن يَشَآءُ ۗ وَٱللَّهُ ذُو ٱلْفَضْلِ ٱلْعَظِيمِ ﴿٧٤﴾
তিনি যাকে ইচ্ছা নিজের বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।
তিনি তাঁর করুণাবশতঃ নির্বাচিত করেন যাকে পছন্দ করেন, আর আল্লাহ্ বিপুল মহিমার অধিকারী।
۞ وَمِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍۢ يُؤَدِّهِۦٓ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍۢ لَّا يُؤَدِّهِۦٓ إِلَيْكَ إِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَآئِمًۭا ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا۟ لَيْسَ عَلَيْنَا فِى ٱلْأُمِّيِّۦنَ سَبِيلٌۭ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿٧٥﴾
কোন কোন আহলে কিতাব এমনও রয়েছে, তোমরা যদি তাদের কাছে বহু ধন-সম্পদ আমানত রাখ, তাহলেও তা তোমাদের যথারীতি পরিশোধ করবে। আর তোদের মধ্যে অনেক এমনও রয়েছে যারা একটি দীনার গচ্ছিত রাখলেও ফেরত দেবে না-যে পর্যন্ত না তুমি তার মাথার উপর দাঁড়াতে পারবে। এটা এজন্য যে, তারা বলে রেখেছে যে, উম্মীদের অধিকার বিনষ্ট করাতে আমাদের কোন পাপ নেই। আর তারা আল্লাহ সম্পর্কে জেনে শুনেই মিথ্যা বলে।
আর গ্রন্থপ্রাপ্তদের মধ্যে এমন লোক আছে যার কাছে তুমি যদি একগাদা আমানত রাখো সে তোমাকে তা ফিরিয়ে দেবে, আর তাদের মধ্যে এমনও আছে যার কাছে যদি তুমি একটি দিনার গচ্ছিত রাখো সে তোমাকে তা ফিরিয়ে দেবে না, যদি না তুমি তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকো। এইরূপ কারণ তারা বলে -- ''অক্ষরজ্ঞানহীনদের ব্যাপারে আমাদের কোনো পথ ধরে চলার দায়িত্ব নেই।’’ আর তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যারোপ করে, যদিও তারা জানে।
بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِۦ وَٱتَّقَىٰ فَإِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَّقِينَ ﴿٧٦﴾
যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করবে এং পরহেজগার হবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে ভালবাসেন।
হাঁ, যে কেউ তার অঙ্গীকার পালন করে ও ভয়-ভক্তি বজায় রেখে চলে, নিঃসন্দেহ তখন আল্লাহ্ মুত্তাকীদের ভালোবাসেন।
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ ٱللَّهِ وَأَيْمَٰنِهِمْ ثَمَنًۭا قَلِيلًا أُو۟لَٰٓئِكَ لَا خَلَٰقَ لَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ ٱللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ﴿٧٧﴾
যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্র অঙ্গীকার ও তাদের প্রতিশ্রুতি স্বল্পমূল্যে বিক্রী করে দেয়, তারা -- পরকালে তাদের জন্য কোনো ভাগ থাকবে না, আর আল্লাহ্ তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না বা তাদের দিকে তাকাবেন না কিয়ামতের দিনে, আর তিনি তাদের শুদ্ধও করবেন না, আর তাদের জন্য থাকছে কঠোর যাতনা।
وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًۭا يَلْوُۥنَ أَلْسِنَتَهُم بِٱلْكِتَٰبِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمَا هُوَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ ٱللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿٧٨﴾
আর তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা মনে কর যে, তার কিতাব থেকেই পাঠ করছে। অথচ তারা যা আবৃত্তি করছে তা আদৌ কিতাব নয়। এবং তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহর কথা অথচ এসব আল্লাহর কথা নয়। আর তারা জেনে শুনে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যারোপ করে।
আর নিশ্চয়ই তাদের মধ্যের একদল গ্রন্থপাঠে তাদের জিহ্বাকে পাকিয়ে-বাঁকিয়ে তোলে যেন তোমরা ভাবতে পারো তা গ্রন্থ থেকেই, অথচ তা গ্রন্থ থেকে নয়। আর তারা বলে -- ''ইহা আল্লাহ্র কাছ থেকে’’ যদিও উহা আল্লাহ্ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যাকথা বলে, যদিও তারা জানে।
مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ ٱللَّهُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحُكْمَ وَٱلنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا۟ عِبَادًۭا لِّى مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن كُونُوا۟ رَبَّٰنِيِّۦنَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ ٱلْكِتَٰبَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ ﴿٧٩﴾
কোন মানুষকে আল্লাহ কিতাব, হেকমত ও নবুওয়ত দান করার পর সে বলবে যে, ‘তোমরা আল্লাহকে পরিহার করে আমার বান্দা হয়ে যাও’-এটা সম্ভব নয়। বরং তারা বলবে, ‘তোমরা আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও, যেমন, তোমরা কিতাব শিখাতে এবং যেমন তোমরা নিজেরা ও পড়তে।
কোনো মানবের জন্য এটি উচিত নয় যে আল্লাহ্ তাকে কিতাব, নির্দেশনামা ও নবুওৎ দেবেন, তারপর সে লোকদের বলবে -- “তোমরা আল্লাহ্কে ছেড়ে আমার উপাসনাকারী হও”, বরং -- ''তোমরা রব্বানী হও, কেননা তোমরা কিতাব শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছিলে ও অনুশীলন করে চলছিলে।’’
وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا۟ ٱلْمَلَٰٓئِكَةَ وَٱلنَّبِيِّۦنَ أَرْبَابًا ۗ أَيَأْمُرُكُم بِٱلْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ ﴿٨٠﴾
তাছাড়া তোমাদেরকে একথা বলাও সম্ভব নয় যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীগনকে নিজেদের পালনকর্তা সাব্যস্ত করে নাও। তোমাদের মুসলমান হবার পর তারা কি তোমাদেরকে কুফরী শেখাবে?
আর সে তোমাদের আদেশ করবে না যে তোমরা ফিরিশ্তাদের ও নবীদের প্রভুরূপে গ্রহণ করবে। সে কি তোমাদের আদেশ করবে অবিশ্বাসের দিকে, তোমরা মুসলিম হবার পরে?
وَإِذْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلنَّبِيِّۦنَ لَمَآ ءَاتَيْتُكُم مِّن كِتَٰبٍۢ وَحِكْمَةٍۢ ثُمَّ جَآءَكُمْ رَسُولٌۭ مُّصَدِّقٌۭ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِۦ وَلَتَنصُرُنَّهُۥ ۚ قَالَ ءَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِى ۖ قَالُوٓا۟ أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَٱشْهَدُوا۟ وَأَنَا۠ مَعَكُم مِّنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ﴿٨١﴾
আর আল্লাহ যখন নবীগনের কাছ থেকে অস্বীকার গ্রহন করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের নিকট কোন রসূল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেয়ার জন্য, তখন সে রসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। তিনি বললেন, ‘তোমার কি অঙ্গীকার করছো এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বললো, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি’। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।
আর স্মরণ করো! আল্লাহ্ নবীদের মাধ্যমে অঙ্গীকার করেছিলেন -- ''নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের কিতাব ও জ্ঞান ভান্ডার থেকে প্রদান করেছি, তারপর তোমাদের কাছে একজন রসূল আসবেন তোমাদের কাছে যা আছে তা প্রতিপাদন করেচ তোমরা নিশ্চয়ই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে আর নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে।’’ তিনি বলেছিলেন -- ''তোমরা কি স্বীকার করলে ও এই ব্যাপারে আমার শর্ত গ্রহণ করলে?’’ তারা বলেছিল -- ''আমরা স্বীকার করলাম।’’ তিনি বললেন -- ''তবে তোমরা সাক্ষী থেকো, আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষ্যদাতাদের অন্যতম।’’
فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ ﴿٨٢﴾
অতঃপর যে লোক এই ওয়াদা থেকে ফিরে দাঁড়াবে, সেই হবে নাফরমান।
অতএব যে কেউ এরপর ফিরে যায়, তা হলে তারা নিজেরাই হচ্ছে পাপাচারী।
أَفَغَيْرَ دِينِ ٱللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُۥٓ أَسْلَمَ مَن فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ طَوْعًۭا وَكَرْهًۭا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ ﴿٨٣﴾
তারা কি আল্লাহর দ্বীনের পরিবর্তে অন্য দ্বীন তালাশ করছে? আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।
তারা কি তবে আল্লাহ্র ধর্ম ছাড়া আর কিছু খুজঁছে? আর তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করছে যে কেউ আছে মহাকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে -- স্বেচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়; আর তাঁর কাছেই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
قُلْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَآ أُنزِلَ عَلَىٰٓ إِبْرَٰهِيمَ وَإِسْمَٰعِيلَ وَإِسْحَٰقَ وَيَعْقُوبَ وَٱلْأَسْبَاطِ وَمَآ أُوتِىَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَٱلنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍۢ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُۥ مُسْلِمُونَ ﴿٨٤﴾
বলুন, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের উপর, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তাঁদের সন্তানবর্গের উপর আর যা কিছু পেয়েছেন মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবী রসূলগণ তাঁদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আমরা তাঁদের কারো মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই অনুগত।
তুমি বলো -- ''আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ্তে আর যা আমাদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে, আর যা নাযিল হয়েছিল ইব্রাহীম ও ইসমাইল ও ইসহাক ও ইয়াকুব ও গোত্রদের কাছে, আর যা দেওয়া হয়েছিল মূসাকে ও ঈসাকে ও নবীদের তাঁদের প্রভুর তরফ থেকে। আমরা তাঁদের কোনো একজনের মধ্যেও পার্থক্য করি না, আর তাঁরই কাছে আমরা আত্মসমর্পণকারী।’’
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ ٱلْإِسْلَٰمِ دِينًۭا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِى ٱلْءَاخِرَةِ مِنَ ٱلْخَٰسِرِينَ ﴿٨٥﴾
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।
আর যে কেউ ইসলাম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম অনুসরণ করে তা হলে তার কাছ থেকে কখনো তা কবুল করা হবে না। আর আখেরে সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
كَيْفَ يَهْدِى ٱللَّهُ قَوْمًۭا كَفَرُوا۟ بَعْدَ إِيمَٰنِهِمْ وَشَهِدُوٓا۟ أَنَّ ٱلرَّسُولَ حَقٌّۭ وَجَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُ ۚ وَٱللَّهُ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿٨٦﴾
কেমন করে আল্লাহ এমন জাতিকে হেদায়েত দান করবেন, যারা ঈমান আনার পর এবং রসূলকে সত্য বলে সাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না।
আল্লাহ কেমন করে হেদায়ত করবেন সেই লোকদের যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরেও, আর এই সাক্ষ্য দেবার পরেও যে এই রসূল সত্য, আর স্পষ্ট প্রমাণাবলী তাদের কাছে আসবার পরেও? আর অন্যায়কারী দলকে আল্লাহ্ হেদায়ত করেন না।
أُو۟لَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ ٱللَّهِ وَٱلْمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلنَّاسِ أَجْمَعِينَ ﴿٨٧﴾
এমন লোকের শাস্তি হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই অভিসম্পাত।
এরাই -- এদের প্রাপ্য এই যে এদের উপরে লানৎ হোক আল্লাহ্র ও ফিরিশ্তাদের ও মানুষের সম্মিলিতভাবে।
خَٰلِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ ٱلْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ ﴿٨٨﴾
সর্বক্ষণই তারা তাতে থাকবে। তাদের আযাব হালকাও হবে না এবং তার এত অবকাশও পাবে না।
এতে তারা অবস্থান করবে। তাদের উপর থেকে যাতনা লাঘব করা হবে না, আর তারা বিরামও পাবে না।
إِلَّا ٱلَّذِينَ تَابُوا۟ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَأَصْلَحُوا۟ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌ ﴿٨٩﴾
কিন্তু যারা অতঃপর তওবা করে নেবে এবং সৎকাজ করবে তারা ব্যতীত, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালূ।
তারা ছাড়া যারা এরপর তওবা করে ও সংশোধন করে, কাজেই আল্লাহ্ নিঃসন্দেহ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ بَعْدَ إِيمَٰنِهِمْ ثُمَّ ٱزْدَادُوا۟ كُفْرًۭا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ﴿٩٠﴾
যারা ঈমান আনার পর অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকৃতিতে বৃদ্ধি ঘটেছে, কস্মিণকালেও তাদের তওবা কবুল করা হবে না। আর তারা হলো গোমরাহ।
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের বিশ্বাস স্থাপনের পরে, তারপর অবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়ে যায়, তাদের তওবা কখনো কবুল করা হবে না; আর এরা নিজেরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَمَاتُوا۟ وَهُمْ كُفَّارٌۭ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ ٱلْأَرْضِ ذَهَبًۭا وَلَوِ ٱفْتَدَىٰ بِهِۦٓ ۗ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ وَمَا لَهُم مِّن نَّٰصِرِينَ ﴿٩١﴾
যদি সারা পৃথিবী পরিমাণ স্বর্ণও তার পরিবর্তে দেয়া হয়, তবুও যারা কাফের হয়েছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাদের তওবা কবুল করা হবে না। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব! পক্ষান্তরে তাদের কোনই সাহায্যকারী নেই।
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে আর মারা যায় তারা অবিশ্বাসী থাকা অবস্থায়, তা হলে তাদের কোনো একজনের কাছ থেকে পৃথিবী ভরা সোনাও গ্রহণ করা হবে না, যদি সে তাই দিয়ে মুক্তি পেতে চায়। এরাই -- এদের জন্য ব্যথাদায়ক শাস্তি, আর এদের থাকবে না কোনো সাহায্যকারী।
لَن تَنَالُوا۟ ٱلْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا۟ مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا۟ مِن شَىْءٍۢ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌۭ ﴿٩٢﴾
কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।
তোমরা কখনো ধর্মনিষ্ঠ হতে পারবে না যে পর্যন্ত না তোমরা ব্যয় করো যা তোমরা ভালোবাস তা থেকে। আর তোমরা যে বস্তুই খরচ করবে, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সে-সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।
۞ كُلُّ ٱلطَّعَامِ كَانَ حِلًّۭا لِّبَنِىٓ إِسْرَٰٓءِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَٰٓءِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِۦ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ ٱلتَّوْرَىٰةُ ۗ قُلْ فَأْتُوا۟ بِٱلتَّوْرَىٰةِ فَٱتْلُوهَآ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ﴿٩٣﴾
তওরাত নাযিল হওয়ার পূর্বে ইয়াকুব যেগুলো নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছিলেন, সেগুলো ব্যতীত সমস্ত আহার্য বস্তুই বনী-ইসরায়ীলদের জন্য হালাল ছিল। তুমি বলে দাও, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক। তাহলে তওরাত নিয়ে এসো এবং তা পাঠ কর।
সব রকম খাদ্য বৈধ ছিল ইসরাইলের বংশধরদের জন্যেও, -- সে-সব ছাড়া যা তওরাত অবতীর্ণ হবার আগে ইসরাইল নিজের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। বলো -- ''তা হলে তওরাত নিয়ে এস আর তা পড়ো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’
فَمَنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ ٱلْكَذِبَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ﴿٩٤﴾
অতঃপর আল্লাহর প্রতি যারা মিথ্যা আরোপ করেছে, তারাই যালেম সীমালংঘনকারী।
অতএব যে কেউ এরপর আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মিথ্যারোপ করে, তাহলে তারা নিজেরাই হচ্ছে অন্যায়কারী।
قُلْ صَدَقَ ٱللَّهُ ۗ فَٱتَّبِعُوا۟ مِلَّةَ إِبْرَٰهِيمَ حَنِيفًۭا وَمَا كَانَ مِنَ ٱلْمُشْرِكِينَ ﴿٩٥﴾
বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। এখন সবাই ইব্রাহীমের ধর্মের অনুগত হয়ে যাও, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ভাবে সত্যধর্মের অনুসারী। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
বলো -- ''আল্লাহ্ সত্যকথা বলেন, কাজেই ঋজুস্বভাব ইব্রাহীমের ধর্ম অনুসরণ করো, আর তিনি বহুখোদাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।’’
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍۢ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِى بِبَكَّةَ مُبَارَكًۭا وَهُدًۭى لِّلْعَٰلَمِينَ ﴿٩٦﴾
নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়।
নিঃসন্দেহ মানবজাতির জন্য প্রথম যে ভোজনালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল তা হচ্ছে বাক্কাতে, -- অশেষ কল্যাণময়, আর সব মানবগোষ্ঠীর জন্য পথপ্রদর্শক।
فِيهِ ءَايَٰتٌۢ بَيِّنَٰتٌۭ مَّقَامُ إِبْرَٰهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُۥ كَانَ ءَامِنًۭا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلْبَيْتِ مَنِ ٱسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًۭا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِىٌّ عَنِ ٱلْعَٰلَمِينَ ﴿٩٧﴾
এতে রয়েছে মকামে ইব্রাহীমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ?2480;য়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।
এতে আছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী -- মক্কামে ইব্রাহীম; আর যে কেউ এখানে প্রবেশ করবে সে হচ্ছে নিরাপদ, আর আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে এই গৃহে হজ করা মানবগোষ্ঠীর জন্য আবশ্যিক -- যারই সেখানকার পাথেয় অর্জনের ক্ষমতা আছে। আর যে অবিশ্বাস পোষণ করে -- তাহলে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সমস্ত সৃষ্ট জগতের থেকে স্বয়ং-সম্পূর্ণ।
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعْمَلُونَ ﴿٩٨﴾
বলুন, হে আহলে কিতাবগণ, কেন তোমরা আল্লাহর কিতাব অমান্য করছো, অথচ তোমরা যা কিছু কর, তা আল্লাহর সামনেই রয়েছে।
বলো -- ''হে গ্রন্থপ্রাপ্ত লোকেরা! কেন তোমরা আল্লাহ্র নির্দেশাবলীতে অবিশ্বাস পোষণ করো, অথচ আল্লাহ্ সাক্ষী রয়েছেন তোমরা যা করো তার?’’
قُلْ يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ لِمَ تَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنْ ءَامَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًۭا وَأَنتُمْ شُهَدَآءُ ۗ وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ ﴿٩٩﴾
বলুন, হে আহলে কিতাবগণ! কেন তোমরা আল্লাহর পথে ঈমানদারদিগকে বাধা দান কর-তোমরা তাদের দ্বীনের মধ্যে বক্রতা অনুপ্রবেশ করানোর পন্থা অনুসন্ধান কর, অথচ তোমরা এ পথের সত্যতা প্রত্যক্ষ করছ। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনবগত নন।
বলো -- ''হে গ্রন্থধারিগণ! কেন তোমরা যারা ঈমান এনেছে তাদের আল্লাহ্র পথ থেকে প্রতিরোধ করো, তোমরা তার বক্রতা খোঁজো, অথচ তোমরা সাক্ষী রয়েছ?’’ আর আল্লাহ্ গাফিল নন তোমরা যা করো সে-সন্বন্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণ করার কারসাজি আল্লাহ্র অগোচর থাকছে না।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ فَرِيقًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَٰنِكُمْ كَٰفِرِينَ ﴿١٠٠﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আহলে কিতাবদের কোন ফেরকার কথা মান, তাহলে ঈমান আনার পর তারা তোমাদিগকে কাফেরে পরিণত করে দেবে।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের কোনো এক দলের অনুবর্তী যদি তোমরা হও, তারা তোমাদের ফিরিয়ে নেবে অবিশ্বাসীদের দলে তোমাদের ঈমান আনার পরেও।
وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُۥ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ﴿١٠١﴾
আর তোমরা কেমন করে কাফের হতে পার, অথচ তোমাদের সামনে পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। আর যারা আল্লাহর কথা দৃঢ়ভাবে ধরবে, তারা হেদায়েত প্রাপ্ত হবে সরল পথের।
কিন্তু কেমন করে তোমরা অবিশ্বাস পোষণ করো যখন তোমাদেরই কাছে আল্লাহ্র বাণীসমূহ পাঠ করা হচ্ছে, আর তোমাদের কাছে আছেন তাঁর রসূল? আর যে আল্লাহ্কে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকে, নিশ্চয় সে তাহলে চালিত হয়েছে সহজ-সঠিক পথে।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ ﴿١٠٢﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করো যেমন তাঁকে ভয়ভক্তি করা উচিত, আর তোমরা প্রাণত্যাগ করো না আত্মসমর্পিত না হয়ে।
وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟ ۚ وَٱذْكُرُوا۟ نِعْمَتَ ٱللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَآءًۭ فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِۦٓ إِخْوَٰنًۭا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍۢ مِّنَ ٱلنَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمْ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ ﴿١٠٣﴾
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার।
আর তোমরা সবে মিলে আল্লাহ্র রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো, আর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, আর স্মরণ করো তোমাদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ, -- যথা তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু, তারপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে সম্প্রীতি ঘটালেন, কাজেই তাঁর অনুগ্রহে তোমরা হলে ভাই-ভাই। আর তোমরা ছিলে এক আগুনের গর্তের কিনারে, তারপর তিনি তোমাদের তা থেকে বাঁচালেন। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশাবলী সুস্পষ্ট করেন যেন তোমরা পথের দিশা পাও।
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌۭ يَدْعُونَ إِلَى ٱلْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ ۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ ﴿١٠٤﴾
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি লোকদল হওয়া চাই যারা আহ্বান করবে কল্যাণের প্রতি, আর নির্দেশ দেবে ন্যায়পথের, আর নিষেধ করবে অন্যায় থেকে। আর এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম।
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَٰتُ ۚ وَأُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ ﴿١٠٥﴾
আর তাদের মত হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধিতা করতে শুরু করেছে-তাদের জন্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর আযাব।
আর তাদের মতো হয়ো না যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিল আর মতভেদ করেছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী আসার পরেও। আর এরা -- এদের জন্য আছে কঠোর যন্ত্রণা, --
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌۭ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌۭ ۚ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَٰنِكُمْ فَذُوقُوا۟ ٱلْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ ﴿١٠٦﴾
সেদিন কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো। বস্তুতঃ যাদের মুখ কালো হবে, তাদের বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কাফের হয়ে গিয়েছিলে? এবার সে কুফরীর বিনিময়ে আযাবের আস্বাদ গ্রহণ কর।
যেদিন কতকগুলো চেহারা হবে ঝক্ঝকে আর কতকগুলো চেহারা হবে মিসমিসে, তারপর যাদের চেহারা কালো হবে তাদের ক্ষেত্রে -- ''তোমরা কি অবিশ্বাস পোষণ করেছিলে তোমাদের ঈমান আনার পরে? অতএব যন্ত্রণার আস্বাদ গ্রহণ করো যেহেতু তোমরা অবিশ্বাস পোষণ করছিলে।’’
وَأَمَّا ٱلَّذِينَ ٱبْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِى رَحْمَةِ ٱللَّهِ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ﴿١٠٧﴾
আর যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে, তারা থাকবে রহমতের মাঝে। তাতে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।
আর যাদের চেহারা ঝক্মকে হবে তাদের ক্ষেত্রে -- তারা থাকবে আল্লাহ্র করুণাসিন্ধুতে, এতে তারা থাকবে চিরকাল।
تِلْكَ ءَايَٰتُ ٱللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِٱلْحَقِّ ۗ وَمَا ٱللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًۭا لِّلْعَٰلَمِينَ ﴿١٠٨﴾
এগুলো হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশ, যা তোমাদিগকে যথাযথ পাঠ করে শুনানো হচ্ছে। আর আল্লাহ বিশ্ব জাহানের প্রতি উৎপীড়ন করতে চান না।
এইসব হছে আল্লাহ্র নির্দেশাবলী যা আমরা তোমার কাছে পাঠ করছি সত্যের সাথে। আর আল্লাহ্ কোনো প্রাণীর প্রতি অবিচার চান না।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرْجَعُ ٱلْأُمُورُ ﴿١٠٩﴾
আর যা কিছু আসমান ও যমীনে রয়েছে সে সবই আল্লাহর এবং আল্লাহর প্রতিই সব কিছু প্রত্যাবর্তনশীল।
আর যা-কিছু আছে মহাকাশমন্ডলে ও যা-কিছু পৃথিবীতে সে-সবই আল্লাহ্র। আর আল্লাহ্র কাছেই সব ব্যাপার ফিরে যায়।
كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ ۗ وَلَوْ ءَامَنَ أَهْلُ ٱلْكِتَٰبِ لَكَانَ خَيْرًۭا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ ٱلْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ ٱلْفَٰسِقُونَ ﴿١١٠﴾
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী।
তোমরা মানবগোষ্ঠীর জন্য এক শ্রেষ্ঠ সমাজরূপে উত্থিত হয়েছ, -- তোমরা ন্যায়ের পথে নির্দেশ দাও ও অন্যায় থেকে নিষেধ করো, আর আল্লাহ্তে বিশ্বাস রাখো। আর গ্রন্থপ্রাপ্তরাও যদি ঈমান আনতো তবে তাদের জন্য ভালো হতো! তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বাসী, কিন্তু তাদের বেশির ভাগ দুষ্টলোক।
لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّآ أَذًۭى ۖ وَإِن يُقَٰتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ ٱلْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ ﴿١١١﴾
যৎসামান্য কষ্ট দেয়া ছাড়া তারা তোমাদের কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, তাহলে তারা পশ্চাদপসরণ করবে। অতঃপর তাদের সাহায্য করা হবে না।
তারা কখনো তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না কিঞ্চিৎ জ্বালাতন ছাড়া, আর যদি তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধ বাধায় তবে তারা তোমাদের দিকে পিঠ ফেরাবে, তারপর তাদের আর সাহায্য করা হবে না।
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوٓا۟ إِلَّا بِحَبْلٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَحَبْلٍۢ مِّنَ ٱلنَّاسِ وَبَآءُو بِغَضَبٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ ٱلْمَسْكَنَةُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا۟ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلْأَنۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا۟ وَّكَانُوا۟ يَعْتَدُونَ ﴿١١٢﴾
আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ব্যতিত ওরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওরা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। ওদের উপর চাপানো হয়েছে গলগ্রহতা। তা এজন্যে যে, ওরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। তার কারণ, ওরা নাফরমানী করেছে এবং সীমা লংঘন করেছে।
তাদের উপরে লাঞ্ছনা হানা দেবে যেখানেই তারা থাকুক না কেন, যদি না আল্লাহ্-থেকে-আসা রশি দ্বারা বা মানুষ-থেকে- পাওয়া রশি, আর তারা আল্লাহ্র রোষ অর্জন করেছে, আর তাদের উপরে দুর্দশা হানা দেবে। তাই হয়েছে -- কেননা তারা আল্লাহ্র নির্দেশাবলী অমান্য করে চলেছিল, আর নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করতে যাচ্ছিল। তাই হয়, কারণ তারা অবাধ্য হয়েছিল আর তারা সীমা-লঙ্ঘন করেছিল।
۞ لَيْسُوا۟ سَوَآءًۭ ۗ مِّنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ أُمَّةٌۭ قَآئِمَةٌۭ يَتْلُونَ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ ءَانَآءَ ٱلَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ ﴿١١٣﴾
তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদা করে।
তারা সবাই এক রকমের নয়। গ্রন্থপ্রাপ্তদের মধ্যে একদল আছে নিষ্ঠাবান, তারা আল্লাহ্র নির্দেশাবলী রাত্রিকালে পাঠ করে, আর তারা সিজদা করে।
يُؤْمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلْيَوْمِ ٱلْءَاخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِٱلْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ ٱلْمُنكَرِ وَيُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْخَيْرَٰتِ وَأُو۟لَٰٓئِكَ مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ﴿١١٤﴾
তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল।
তারা আল্লাহ্র প্রতি ও আখেরাতের দিনের প্রতি বিশ্বাস করে, আর তারা ন্যায়ের পথে নির্দেশ দেয় ও অন্যায় থেকে নিষেধ করে, আর তারা শুভকাজে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে, আর এরা সাধুপুরুষদের অন্তর্ভুক্ত।
وَمَا يَفْعَلُوا۟ مِنْ خَيْرٍۢ فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِٱلْمُتَّقِينَ ﴿١١٥﴾
তারা যেসব সৎকাজ করবে, কোন অবস্থাতেই সেগুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা হবে না। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বিষয়ে অবগত।
আর তারা ভালোকাজের যা-কিছু করে তার সন্বন্ধে তাদের কখনো অস্বীকার করা হবে না। আর আল্লাহ্ ধর্মপরায়ণদের সন্বন্ধে ওয়াকিফহাল।
إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ لَن تُغْنِىَ عَنْهُمْ أَمْوَٰلُهُمْ وَلَآ أَوْلَٰدُهُم مِّنَ ٱللَّهِ شَيْـًۭٔا ۖ وَأُو۟لَٰٓئِكَ أَصْحَٰبُ ٱلنَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَٰلِدُونَ ﴿١١٦﴾
নিশ্চয় যারা কাফের হয়, তাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহর সামনে কখনও কোন কাজে আসবে না। আর তারাই হলো দোযখের আগুনের অধিবাসী। তারা সে আগুনে চিরকাল থাকবে।
নিঃসন্দেহ যারা অবিশ্বাস পোষণ করে, তাদের ধনসম্পত্তি ও তাদের সন্তানসন্ততি আল্লাহ্র বিরুদ্ধে কোনোভাবেই তাদের কখনো লাভবান করবে না। আর এরাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা, তারা সেখানে থাকবে দীর্ঘকাল।
مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِى هَٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةِ ٱلدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍۢ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍۢ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ ٱللَّهُ وَلَٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ ﴿١١٧﴾
এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করা হয়, তার তুলনা হলো ঝড়ো হাওয়ার মতো, যাতে রয়েছে তুষারের শৈত্য, যা সে জাতির শস্যক্ষেত্রে গিয়ে লেগেছে যারা নিজের জন্য মন্দ করেছে। অতঃপর সেগুলোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল।
দুনিয়ার এই জীবনে তারা যা খরচ করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে বাতাসের দৃষ্টান্তের মতো যাতে রয়েছে কনকনে ঠান্ডা, এ ঝাপটা দিল সেই লোকদের ফসলে যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে, কাজেই এ ধ্বংস করে দিল তা। আর আল্লাহ্ তাদের প্রতি অন্যায় করেন নি, বরং তারা তাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছে।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةًۭ مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًۭا وَدُّوا۟ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ ٱلْبَغْضَآءُ مِنْ أَفْوَٰهِهِمْ وَمَا تُخْفِى صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ ﴿١١٨﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না, তারা তোমাদের অমঙ্গল সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য। তোমাদের জন্যে নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করে দেয়া হলো, যদি তোমরা তা অনুধাবন করতে সমর্থ হও।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের নিজেদের লোক ছাড়া অন্যদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না; তারা অনিষ্ট সাধন করতে তোমাদের থেকে পশ্চাৎপদ হয় না। তোমাদের যা ক্লেশ দেয় তারা তা ভালোবাসে, তাদের মুখ থেকে ঘোর বিদ্বেষ ইতিমধ্যে নির্গত হচ্ছে। আর তাদের অন্তরে যা লুকোনো আছে তা আরও গুরুতর। তোমাদের জন্য নির্দেশাবলী সুস্পষ্ট করলাম, যদি তোমরা বুঝতে পারো।
هَٰٓأَنتُمْ أُو۟لَآءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِٱلْكِتَٰبِ كُلِّهِۦ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا وَإِذَا خَلَوْا۟ عَضُّوا۟ عَلَيْكُمُ ٱلْأَنَامِلَ مِنَ ٱلْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا۟ بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ﴿١١٩﴾
দেখ! তোমরাই তাদের ভালবাস, কিন্তু তারা তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না। আর তোমরা সমস্ত কিতাবেই বিশ্বাস কর। অথচ তারা যখন তোমাদের সাথে এসে মিশে, বলে, আমরা ঈমান এনেছি। পক্ষান্তরে তারা যখন পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের উপর রোষবশতঃ আঙ্গুল কামড়াতে থাকে। বলুন, তোমরা আক্রোশে মরতে থাক। আর আল্লাহ মনের কথা ভালই জানেন।
তোমরাই বটে! তোমরা ঐ ওদের ভালোবাস, অথচ তারা তোমাদের ভালোবাসে না, তোমরা কিন্তু ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস করো, তার সবটাতে। আর যখন তারা তোমাদের সাথে দেখা করে তারা বলে -- ''আমরা ঈমান এনেছি’’; আর যখন তারা নিরিবিলি হয়, তোমাদের প্রতি আক্রোশে তারা আঙ্গুল কামড়ায়। তুমি বলো -- ''তোমাদের আক্রোশে মরে যাও। নিঃসন্দেহ বুকের মধ্যে কি আছে সে-সন্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা।
إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌۭ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌۭ يَفْرَحُوا۟ بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْـًٔا ۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌۭ ﴿١٢٠﴾
তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।
যদি শুভ কিছু তোমাদের জন্য ঘটে তবে সেটা তাদের দুঃখ দেয়, আর যদি মন্দ কিছু তোমাদের পাকড়াও তবে তাতে তারা হয় পরমানন্দিত। আর যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও ধর্মপরায়ণ হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের এতটুকু ক্ষতি করবে না। নিঃসন্দেহ তারা যা করছে তা আল্লাহ্ ঘিরে রয়েছেন।
وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ ٱلْمُؤْمِنِينَ مَقَٰعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿١٢١﴾
আর আপনি যখন পরিজনদের কাছ থেকে সকাল বেলা বেরিয়ে গিয়ে মুমিনগণকে যুদ্ধের অবস্থানে বিন্যস্ত করলেন, আর আল্লাহ সব বিষয়েই শোনেন এবং জানেন।
আর স্মরণ করো তুমি ভোরে তোমার পরিজনদের কাছ থেকে যাত্রা করলে যুদ্ধের জন্য বিশ্বাসীদের অবস্থান নির্দ্ধারণ করতে। আর আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
إِذْ هَمَّت طَّآئِفَتَانِ مِنكُمْ أَن تَفْشَلَا وَٱللَّهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ﴿١٢٢﴾
যখন তোমাদের দুটি দল সাহস হারাবার উপক্রম হলো, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ছিলেন, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করা মুমিনদের উচিত।
স্মরণ করো! তোমাদের মধ্যে থেকে দুইটি দল ভীরুতা দেখাবার মনস্থ করেছিল, আর আল্লাহ্ ছিলেন তাদের উভয়ের অভিভাবক, আর আল্লাহ্র উপরেই তাহলে বিশ্বাসীদের নির্ভর করা উচিত।
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ ٱللَّهُ بِبَدْرٍۢ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌۭ ۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿١٢٣﴾
বস্তুতঃ আল্লাহ বদরের যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন, অথচ তোমরা ছিলে দুর্বল। কাজেই আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পারো।
আর আল্লাহ্ ইতিপূর্বে তোমাদের সাহায্য করেছিলেন বদরে যখন তোমরা ছিলে দুর্দশাগ্রস্ত; অতএব আল্লাহ্র প্রতি ভয়-শ্রদ্ধা করো যেন তোমরা ধন্যবাদ দিতে পারো।
إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَٰثَةِ ءَالَٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةِ مُنزَلِينَ ﴿١٢٤﴾
আপনি যখন বলতে লাগলেন মুমিনগণকে-তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের সাহায্যার্থে তোমাদের পালনকর্তা আসমান থেকে অবতীর্ণ তিন হাজার ফেরেশতা পাঠাবেন।
স্মরণ করো! তুমি বিশ্বাসীদের বলেছিলে -- ''এইটি কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে তোমাদের প্রভু তোমাদের সাহায্য করুন নেমে আসা ফিরিশ্তাদের তিন হাজার দিয়ে?
بَلَىٰٓ ۚ إِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ ءَالَٰفٍۢ مِّنَ ٱلْمَلَٰٓئِكَةِ مُسَوِّمِينَ ﴿١٢٥﴾
অবশ্য তোমরা যদি সবর কর এবং বিরত থাক আর তারা যদি তখনই তোমাদের উপর চড়াও হয়, তাহলে তোমাদের পালনকর্তা চিহিߦ#2468; ঘোড়ার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা তোমাদের সাহায্যে পাঠাতে পারেন।
''যথার্থ! যদি তোমরা ধৈর্যশীল ও ধর্মপরায়ণ হও, আর তারা তোমাদের উপরে এসে পড়ে প্রবল বেগে, -- তোমাদের প্রভু তোমাদের সাহায্য করেছিলেন প্রচন্ড আঘাতকারী পাঁচ হাজার ফিরিশ্তাদের দিয়ে।’’
وَمَا جَعَلَهُ ٱللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِۦ ۗ وَمَا ٱلنَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ ٱللَّهِ ٱلْعَزِيزِ ٱلْحَكِيمِ ﴿١٢٦﴾
বস্তুতঃ এটা তো আল্লাহ তোমাদের সুসংবাদ দান করলেন, যাতে তোমাদের মনে এতে সান্ত্বনা আসতে পারে। আর সাহায্য শুধুমাত্র পরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানী আল্লাহরই পক্ষ থেকে,
আর আল্লাহ্ এটি করেন নি তোমাদের জন্য সুসংবাদ ব্যতীত, আর যাতে তোমাদের হৃদয় ইহাদ্বারা সান্তনা পায়। আর সাহায্য আসেনা শুধু আল্লাহ্র দরবার থেকে ছাড়া, মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী --
لِيَقْطَعَ طَرَفًۭا مِّنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنقَلِبُوا۟ خَآئِبِينَ ﴿١٢٧﴾
যাতে ধবংস করে দেন কোন কোন কাফেরকে অথবা লাঞ্ছিত করে দেন-যেন ওরা বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়।
যেন তিনি যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের এক দলকে সংহার করতে পারেন, অথবা তাদের পরাভূত করতে পারেন, যেন তারা বিফলমনোরথ হয়ে ফিরে যায়।
لَيْسَ لَكَ مِنَ ٱلْأَمْرِ شَىْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَٰلِمُونَ ﴿١٢٨﴾
হয় আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন কিংবা তাদেরকে আযাব দেবেন। এ ব্যাপারে আপনার কোন করণীয় নাই। কারণ তারা রয়েছে অন্যায়ের উপর।
এই ব্যাপারে তোমার আদৌ কোনো সংস্রব নেই যে তিনি তাদের প্রতি ফিরবেন, অথবা তাদের শাস্তি দেবেন, যদিও তারা নিঃসন্দেহ অন্যায়কারী।
وَلِلَّهِ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ ۚ وَٱللَّهُ غَفُورٌۭ رَّحِيمٌۭ ﴿١٢٩﴾
আর যা কিছু আসমান ও যমীনে রয়েছে, সেসবই আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়।
আর মহাকাশমন্ডলে যা-কিছু আছে ও যা-কিছু আছে পৃথিবীতে সে-সবই আল্লাহ্র। তিনি যাকে ইচ্ছা করবেন পরিত্রাণ করবেন এবং যাকে ইচ্ছা করবেন শাস্তিও দেবেন। আর আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَأْكُلُوا۟ ٱلرِّبَوٰٓا۟ أَضْعَٰفًۭا مُّضَٰعَفَةًۭ ۖ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿١٣٠﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! সুদ গলাধঃকরণ করো না তাকে দ্বিগুণ ও বহুগুণিত করে; আর আল্লাহ্কে ভয়-শ্রদ্ধা করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
وَٱتَّقُوا۟ ٱلنَّارَ ٱلَّتِىٓ أُعِدَّتْ لِلْكَٰفِرِينَ ﴿١٣١﴾
এবং তোমরা সে আগুন থেকে বেঁচে থাক, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
আর সতর্কতা অবলন্বন করো সেই আগুন সন্বন্ধে যা তৈরি করা হয়েছে অবিশ্বাসীদের জন্য।
وَأَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ ﴿١٣٢﴾
আর তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহ ও রসূলের, যাতে তোমাদের উপর রহমত করা হয়।
আর আল্লাহ্ ও রসূলের প্রতি অনুগত হও, যেন তোমাদের করুণা দেখানো হয়।
۞ وَسَارِعُوٓا۟ إِلَىٰ مَغْفِرَةٍۢ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ ﴿١٣٣﴾
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য।
আর তৎপর হও তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য এবং স্বর্গোদ্যানের জন্য যার বিস্তার হচ্ছে মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী জুড়ে -- তৈরী হয়েছে ধর্মপরায়ণদের জন্য --
ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِى ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلْكَٰظِمِينَ ٱلْغَيْظَ وَٱلْعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ﴿١٣٤﴾
যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন।
যারা খরচ করে সচ্ছল অবস্থায় ও অসচ্ছল অবস্থায়, আর যারা ক্রোধ সংবরণকারী, আর যারা লোকজনের প্রতি ক্ষমাশীল। আর আল্লাহ্ সৎকর্মীদের ভালোবাসেন, --
وَٱلَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا۟ فَٰحِشَةً أَوْ ظَلَمُوٓا۟ أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا۟ ٱللَّهَ فَٱسْتَغْفَرُوا۟ لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ إِلَّا ٱللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا۟ عَلَىٰ مَا فَعَلُوا۟ وَهُمْ يَعْلَمُونَ ﴿١٣٥﴾
তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।
আর যারা, যখন কোনো গর্হিত কাজ করে বা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে, তখন আল্লাহ্কে স্মরণ করে ও তাদের অপরধের জন্য পরিত্রাণ চায়, -- বস্তুতঃ আল্লাহ্ ছাড়া আর কে অপরাধ ক্ষমা করে? আর তারা যা করেছিল তাতে জেনেশুনে আঁকড়ে ধরে থাকে না।
أُو۟لَٰٓئِكَ جَزَآؤُهُم مَّغْفِرَةٌۭ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ ٱلْعَٰمِلِينَ ﴿١٣٦﴾
তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।
এরা? -- এদের পুরস্কার হচ্ছে এদের প্রভুর কাছ থেকে পরিত্রাণ ও স্বর্গোদ্যানসমূহ যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি, সেখানে তারা থাকবে স্থায়ীভাবে, আর কর্মীবৃন্দের পুরস্কার কী চমৎকার!
قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌۭ فَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَٱنظُرُوا۟ كَيْفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلْمُكَذِّبِينَ ﴿١٣٧﴾
তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের জীবনাচরণ। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে।
নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে বহু জীবনধারা গত হয়ে গেছে। অতএব পৃথিবীতে ভ্রমণ করো ও দেখো কেমন হয়েছিল মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম।
هَٰذَا بَيَانٌۭ لِّلنَّاسِ وَهُدًۭى وَمَوْعِظَةٌۭ لِّلْمُتَّقِينَ ﴿١٣٨﴾
এই হলো মানুষের জন্য বর্ণনা। আর যারা ভয় করে তাদের জন্য উপদেশবাণী।
এই হচ্ছে মানব জাতির জন্য সুস্পষ্ট ঘোষণা ও পথনির্দেশ ও উপদেশ -- ধর্মপরায়ণদের জন্য।
وَلَا تَهِنُوا۟ وَلَا تَحْزَنُوا۟ وَأَنتُمُ ٱلْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣٩﴾
আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে।
অতএব দুর্বলচিত্ত হয়ো না ও অনুশোচনা করো না, কারণ তোমরাই হবে উচ্চপদস্থ যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌۭ فَقَدْ مَسَّ ٱلْقَوْمَ قَرْحٌۭ مِّثْلُهُۥ ۚ وَتِلْكَ ٱلْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ ٱلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَآءَ ۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿١٤٠﴾
তোমরা যদি আহত হয়ে থাক, তবে তারাও তো তেমনি আহত হয়েছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।
যদি কোনো আঘাত তোমাদের পীড়া দিয়ে থাকে তবে তার সমান আঘাত পীড়া দিয়েছে দলকে। আর এইসব দিনগুলো আমরা লোকদের কাছে পালাক্রমে এনে থাকি যাতে আল্লাহ্ অবধারণ করতে পারেন তাদের যারা ঈমান এনেছে, আর যাতে তোমাদের মধ্যে থেকে সাক্ষী মনোনীত করতে পারেন। আর আল্লাহ্ অন্যায়কারীদের ভালোবাসেন না, --
وَلِيُمَحِّصَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَيَمْحَقَ ٱلْكَٰفِرِينَ ﴿١٤١﴾
আর এ কারণে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করতে চান এবং কাফেরদেরকে ধবংস করে দিতে চান।
আর যেন আল্লাহ্ বিমুক্ত করতে পারেন যারা ঈমান এনেছে তাদের, আর নিষ্ফল করতে পারেন অবিশ্বাসীদের।
أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا۟ ٱلْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ جَٰهَدُوا۟ مِنكُمْ وَيَعْلَمَ ٱلصَّٰبِرِينَ ﴿١٤٢﴾
তোমাদের কি ধারণা, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনও দেখেননি তোমাদের মধ্যে কারা জেহাদ করেছে এবং কারা ধৈর্য্যশীল।
তোমরা কি বিবেচনা করছো যে তোমরা বেহেশতে প্রবেশ করবে, অথচ আল্লাহ্ এখনো অবধারণ করেন নি তোমাদের মধ্যে কারা সংগ্রাম করেছে, আর যাচাই করেন নি কারা ধৈর্যশীল?
وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ ٱلْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ ﴿١٤٣﴾
আর তোমরা তো মৃত্যু আসার আগেই মরণ কামনা করতে, কাজেই এখন তো তোমরা তা চোখের সামনে উপস্থিত দেখতে পাচ্ছ।
আর নিঃসন্দেহ তোমরা চেয়েছিলে মৃত্যুবরণ করতে -- তার সঙ্গে দেখা হবার আগে, এখন কিন্তু তোমরা তা দেখেছ, আর তোমরা দেখতে থাকো!
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌۭ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ ٱلرُّسُلُ ۚ أَفَإِي۟ن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ ٱنقَلَبْتُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَٰبِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ ٱللَّهَ شَيْـًۭٔا ۗ وَسَيَجْزِى ٱللَّهُ ٱلشَّٰكِرِينَ ﴿١٤٤﴾
আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।
আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নন। নিঃসন্দেহ তাঁর পূর্বে রসূলগণ গত হয়ে গেছেন। অতএব তিনি যদি মারা যান অথবা তাঁকে কাতল করা হয় তাহলে কি তোমরা তোমাদের গোড়ালির উপরে মোড় ফেরাবে? আর যে কেউ তার গোড়ালির উপরে মোড় ফেরে সে কিন্তু, আর আল্লাহ্ অচিরেই পুরস্কার দেবেন কৃতজ্ঞদের।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ ٱللَّهِ كِتَٰبًۭا مُّؤَجَّلًۭا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا نُؤْتِهِۦ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ ٱلْءَاخِرَةِ نُؤْتِهِۦ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِى ٱلشَّٰكِرِينَ ﴿١٤٥﴾
আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না-সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে। বস্তুতঃ যে লোক দুনিয়ায় বিনিময় কামনা করবে, আমি তাকে তা দুনিয়াতেই দান করব। পক্ষান্তরে-যে লোক আখেরাতে বিনিময় কামনা করবে, তা থেকে আমি তাকে তাই দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদেরকে আমি প্রতিদান দেবো
আর কোনো লোকের পক্ষে তার মরে যাওয়া চলে না আল্লাহ্র অনুমতি ব্যতীত, লিপিবদ্ধ থাকা নির্ধারিত সময় অনুসারে। আর যে কেউ ইহজীবনের পুরস্কার কামনা করে আমরা তাকে তা’ থেকে আদায় করি, আর যে কেউ চায় পরলোকের পুরস্কার আমরা তাকেও তা থেকে প্রদান করি। আর আমরা অচিরেই পুরস্কৃত করবো কৃতজ্ঞদের।
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّۢ قَٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌۭ فَمَا وَهَنُوا۟ لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا۟ وَمَا ٱسْتَكَانُوا۟ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلصَّٰبِرِينَ ﴿١٤٦﴾
আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে-তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।
আর আরো কত নবী যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ছিল প্রভুর অনুগত বহু লোক, আর আল্লাহ্র পথে তাদের উপরে যা বর্তেছিল তার জন্য তারা অবসাদগ্রস্ত হয় নি, আর তারা দুর্বলও হয় নি, আর তারা নিজেদের হীনও করে নি। আর আল্লাহ্ ভালোবাসেন ধৈর্যশীলদের।
وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّآ أَن قَالُوا۟ رَبَّنَا ٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِىٓ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَٱنصُرْنَا عَلَى ٱلْقَوْمِ ٱلْكَٰفِرِينَ ﴿١٤٧﴾
তারা আর কিছুই বলেনি-শুধু বলেছে, হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদিগকে দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদিগকে সাহায্য কর।
আর তাদের বক্তব্য এই বলা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না -- ''আমাদের প্রভু! ক্ষমা করো আমাদের সব অপরাধ ও আমাদের কাজকর্মে আমাদের সমস্ত অমিতাচার, আর দৃঢ় করো আমাদের পদক্ষেপ, আর আমাদের সাহায্য করো অবিশ্বাসী দলের বিরুদ্ধে।’’
فَـَٔاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ ثَوَابَ ٱلدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ ٱلْءَاخِرَةِ ۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلْمُحْسِنِينَ ﴿١٤٨﴾
অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়ার সওয়াব দান করেছেন এবং যথার্থ আখেরাতের সওয়াব। আর যারা সৎকর্মশীল আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।
কাজেই আল্লাহ্ তাদের দিয়েছিলেন ইহজীবনের পুরস্কার, আর পরলোকের পুরস্কার আরো চমৎকার! আর আল্লাহ্ ভালোবাসেন সৎকর্মীদের।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓا۟ إِن تُطِيعُوا۟ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰٓ أَعْقَٰبِكُمْ فَتَنقَلِبُوا۟ خَٰسِرِينَ ﴿١٤٩﴾
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীণ হয়ে পড়বে।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তোমরা যদি তাদের অনুগত হও তবে তারা তোমাদের গোড়ালির উপরে তোমাদের মোড় ফিরিয়ে দেবে, ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফিরবে।
بَلِ ٱللَّهُ مَوْلَىٰكُمْ ۖ وَهُوَ خَيْرُ ٱلنَّٰصِرِينَ ﴿١٥٠﴾
বরং আল্লাহ তোমাদের সাহায্যকারী, আর তাঁর সাহায্যই হচ্ছে উত্তম সাহায্য।
না, আল্লাহ্ তোমাদের রক্ষাকারী বন্ধু, আর তিনি সাহায্যকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম।
سَنُلْقِى فِى قُلُوبِ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ ٱلرُّعْبَ بِمَآ أَشْرَكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَٰنًۭا ۖ وَمَأْوَىٰهُمُ ٱلنَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى ٱلظَّٰلِمِينَ ﴿١٥١﴾
খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।
যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের হৃদয়ে আমরা অচিরেই ভীতি নিক্ষেপ করবো, কেননা তারা আল্লাহ্র সাথে শরীক করেছিল যার জন্য তিনি কোনো বিধান অবতারণ করেন নি, ফলে তাদের বাসস্থান হচ্ছে আগুন, আর অন্যায়কারীদের বাসস্থান মন্দ বটে!
وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ ٱللَّهُ وَعْدَهُۥٓ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِۦ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَٰزَعْتُمْ فِى ٱلْأَمْرِ وَعَصَيْتُم مِّنۢ بَعْدِ مَآ أَرَىٰكُم مَّا تُحِبُّونَ ۚ مِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ ٱلْءَاخِرَةَ ۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْ ۖ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ ۗ وَٱللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿١٥٢﴾
আর আল্লাহ সে ওয়াদাকে সত্যে পরিণত করেছেন, যখন তোমরা তাঁরই নির্দেশে ওদের খতম করছিলে। এমনকি যখন তোমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে ও কর্তব্য স্থির করার ব্যাপারে বিবাদে লিপ্ত হয়েছে। আর যা তোমরা চাইতে তা দেখার পর কৃতঘ্নতা প্রদর্শন করেছ, তাতে তোমাদের কারো কাম্য ছিল দুনিয়া আর কারো বা কাম্য ছিল আখেরাত। অতঃপর তোমাদিগকে সরিয়ে দিলেন ওদের উপর থেকে যাতে তোমাদিগকে পরীক্ষা করেন। বস্তুতঃ তিনি তোমাদিগকে ক্ষমা করেছেন। আর আল্লাহর মুমিনদের প্রতি অনুগ্রহশীল।
আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ইতিপূর্বে তোমাদের কাছে তাঁর অঙ্গীকার পালন করেছিলেন যখন তোমরা তাঁর ইচ্ছায় তাদের টুকরো- টুকরো করছিলে, যতক্ষণ না তোমরা দুর্বলচিত্ত হয়ে পড়লে, আর তোমরা আদেশ সন্বন্ধে বিরোধ করলে ও অবাধ্য হলে যা তোমরা ভালোবাস তা তোমাদের দেখাবার পরে। তোমাদের মধ্যে কেউ ছিল যারা এই দুনিয়া চাচ্ছিল, আর তোমাদের মধ্যে কেউ ছিল যারা পরকাল চাচ্ছিল, তারপর তিনি তোমাদের তাদের থেকে পলায়নপর করলেন যেন তিনি তোমাদের শাসন করতে পারেন। আর তিনি নিঃসন্দেহ তোমাদের অপরাধ মার্জনা করলেন। আর আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের প্রতি অশেষ কৃপাময়।
۞ إِذْ تُصْعِدُونَ وَلَا تَلْوُۥنَ عَلَىٰٓ أَحَدٍۢ وَٱلرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ فِىٓ أُخْرَىٰكُمْ فَأَثَٰبَكُمْ غَمًّۢا بِغَمٍّۢ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوا۟ عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَآ أَصَٰبَكُمْ ۗ وَٱللَّهُ خَبِيرٌۢ بِمَا تَعْمَلُونَ ﴿١٥٣﴾
আর তোমরা উপরে উঠে যাচ্ছিলে এবং পেছন দিকে ফিরে তাকাচ্ছিলে না কারো প্রতি, অথচ রসূল ডাকছিলেন তোমাদিগকে তোমাদের পেছন দিক থেকে। অতঃপর তোমাদের উপর এলো শোকের ওপরে শোক, যাতে তোমরা হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়া বস্তুর জন্য দুঃখ না কর এবং যার সম্মুখীণ হচ্ছ সেজন্য বিমর্ষ না হও। আর আল্লাহ তোমাদের কাজের ব্যাপারে অবহিত রয়েছেন।
স্মরণ করো! তোমরা পাহাড়ে উঠছিলে আর কারো দিকে ভ্রক্ষেপ করছিলে না, আর রসূল তোমাদের পিছন থেকে তোমাদের ডাকছিলেন, কাজেই তিনি তোমাদের এক বিষাদের উপরে আরেক বিষাদ উপহার দিলেন, যেন তোমরা অনুশোচনা না করো যা তোমাদের থেকে ফসকে গেছে, আর যা তোমাদের উপরে বর্তেছে তার জন্যেও না। আর তোমরা যা করো সে- সন্বন্ধে আল্লাহ্ চির-ওয়াকিফহাল।
ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنۢ بَعْدِ ٱلْغَمِّ أَمَنَةًۭ نُّعَاسًۭا يَغْشَىٰ طَآئِفَةًۭ مِّنكُمْ ۖ وَطَآئِفَةٌۭ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِٱللَّهِ غَيْرَ ٱلْحَقِّ ظَنَّ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ ۖ يَقُولُونَ هَل لَّنَا مِنَ ٱلْأَمْرِ مِن شَىْءٍۢ ۗ قُلْ إِنَّ ٱلْأَمْرَ كُلَّهُۥ لِلَّهِ ۗ يُخْفُونَ فِىٓ أَنفُسِهِم مَّا لَا يُبْدُونَ لَكَ ۖ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ ٱلْأَمْرِ شَىْءٌۭ مَّا قُتِلْنَا هَٰهُنَا ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِى بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ ٱلَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ ٱلْقَتْلُ إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِىَ ٱللَّهُ مَا فِى صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِى قُلُوبِكُمْ ۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ﴿١٥٤﴾
অতঃপর তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝিমোচ্ছিল আর কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ভাবছিল। আল্লাহ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। তারা বলছিল আমাদের হাতে কি কিছুই করার নেই? তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তারা যা কিছু মনে লুকিয়ে রাখে-তোমার নিকট প্রকাশ করে না সে সবও। তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন।
তারপর বিষাদের পরে তিনি তোমাদের উপরে বর্ষণ করলেন নিরাপত্তা, তোমাদের একদলের উপরে নেমে এল প্রশান্তি, আর অন্য এক দলের নিজেদের মন তাদের উৎকতি করেছিল, তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে অজ্ঞানতাকালীন সন্দেহপ্রবণতায় সন্দিহান হয়েছিল অসঙ্গতভাবে। তারা বলছিল -- ''এই ব্যাপারে আমাদের কি কোনো কিছু আছে?’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ ব্যাপারটি সর্বতোভাবে আল্লাহ্র।’’ তারা তাদের নিজেদের মধ্যে যা লুকিয়ে রেখেছে তা তোমার কাছে প্রকাশ করছে না, তারা বলছিল -- ''এই ব্যাপারে যদি আমাদের কিছু থাকতো তবে এখানে আমাদের কাতল করা হতো না।’’ তুমি বলো -- ''তোমরা যদি তোমাদের বাড়ির ভিতরেও থাকতে তথাপি যাদের জন্য প্রাণঘাত লিখিত হয়েছে তারা নিশ্চয়ই তাদের নির্ধারিত-স্থলে গিয়ে হাজির হতো।’’ আর আল্লাহ্ যেন যাচাই করতে পারেন কি আছে তোমাদের বুকের ভেতরে, আর যেন নিংড়ে বের করে দিতে পারেন যা আছে তোমাদের অন্তরে। আর বুকের ভেতরে যা আছে সে-সন্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা।
إِنَّ ٱلَّذِينَ تَوَلَّوْا۟ مِنكُمْ يَوْمَ ٱلْتَقَى ٱلْجَمْعَانِ إِنَّمَا ٱسْتَزَلَّهُمُ ٱلشَّيْطَٰنُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا۟ ۖ وَلَقَدْ عَفَا ٱللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌۭ ﴿١٥٥﴾
তোমাদের যে দুটি দল লড়াইয়ের দিনে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিল, তাদেরই পাপের দরুন।
নিঃসন্দেহ যেদিন দুই সৈন্যদল পরস্পর সম্মুখীন হয়েছিল সেদিন তোমাদের মধ্যে যারা পলায়নপর হলে, তাদের পদস্খলন করেছিল শয়তান যেহেতু তারা কিছু কামিয়েছিল, আর অবশ্য আল্লাহ্ তাদের মার্জনা করলেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ পরিত্রাণকারী, অতি অমায়িক।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ وَقَالُوا۟ لِإِخْوَٰنِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ أَوْ كَانُوا۟ غُزًّۭى لَّوْ كَانُوا۟ عِندَنَا مَا مَاتُوا۟ وَمَا قُتِلُوا۟ لِيَجْعَلَ ٱللَّهُ ذَٰلِكَ حَسْرَةًۭ فِى قُلُوبِهِمْ ۗ وَٱللَّهُ يُحْىِۦ وَيُمِيتُ ۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌۭ ﴿١٥٦﴾
হে ঈমাণদারগণ! তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা কাফের হয়েছে এবং নিজেদের ভাই বন্ধুরা যখন কোন অভিযানে বের হয় কিংবা জেহাদে যায়, তখন তাদের সম্পর্কে বলে, তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো, তাহলে মরতোও না আহতও হতো না। যাতে তারা এ ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের মনে অনুতাপ সৃষ্টি করতে পারে। অথচ আল্লাহই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। তোমাদের সমস্ত কাজই, তোমরা যা কিছুই কর না কেন, আল্লাহ সবকিছুৃই দেখেন।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তাদের মতো হয়ো না যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছে, আর যারা তাদের ভাইদের বলে যখন তারা দেশে পরিভ্রমণ করে অথবা অভিযানে লিপ্ত হয় -- ''তারা যদি আমাদের সাথে থাকতো তবে তারা মারা পড়তো না বা তাদের কাতল করা হতো না।’’ পরিণামে আল্লাহ্ এটি তাদের অন্তরে আক্ষেপের বিষয় করেছেন। আর আল্লাহ্ জীবনদান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তোমরা যা করছো আল্লাহ্ তার দর্শক।
وَلَئِن قُتِلْتُمْ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌۭ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌۭ مِّمَّا يَجْمَعُونَ ﴿١٥٧﴾
আর তোমরা যদি আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তোমরা যা কিছু সংগ্রহ করে থাক আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও করুণা সে সবকিছুর চেয়ে উত্তম।
আর যদি আল্লাহ্র পথে তোমাদের হত্যা করা হয় অথবা তোমরা মারা যাও, -- নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র কাছ থেকে পরিত্রাণলাভ ও করুণাপ্রাপ্তি তারা যা জমা করে তার চাইতে উৎকৃষ্টতর।
وَلَئِن مُّتُّمْ أَوْ قُتِلْتُمْ لَإِلَى ٱللَّهِ تُحْشَرُونَ ﴿١٥٨﴾
আর তোমরা মৃত্যুই বরণ কর অথবা নিহতই হও, অবশ্য আল্লাহ তা’আলার সামনেই সমবেত হবে।
আর যদি তোমরা মারাই যাও বা তোমাদের কাতল করা হয়, নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র কাছে তোমাদের একত্রিত করা হবে।
فَبِمَا رَحْمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلْقَلْبِ لَٱنفَضُّوا۟ مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَٱعْفُ عَنْهُمْ وَٱسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِى ٱلْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُتَوَكِّلِينَ ﴿١٥٩﴾
আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।
তারপর আল্লাহ্র করুণার ফলেই তুমি তাদের প্রতি কোমল হয়েছিলে। আর তুমি যদি রুক্ষ ও কঠোর-হৃদয় হতে তবে নিঃসন্দেহ তারা তোমার চারপাশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। অতএব তাদের অপরাধ মার্জনা করো, আর তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো, আর তাদের সঙ্গে কাজেকর্মে পরামর্শ করো। আর যখন সংকল্প গ্রহণ করেছ তখন আল্লাহ্র উপরে নির্ভর করো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ ভালোবাসেন নির্ভরশীলদের।
إِن يَنصُرْكُمُ ٱللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا ٱلَّذِى يَنصُرُكُم مِّنۢ بَعْدِهِۦ ۗ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ﴿١٦٠﴾
যদি আল্লাহ তোমাদের সহায়তা করেন, তাহলে কেউ তোমাদের উপর পরাক্রান্ত হতে পারবে না। আর যদি তিনি তোমাদের সাহায্য না করেন, তবে এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহর ওপরই মুসলমানগনের ভরসা করা উচিত।
যদি আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করেন তবে কেউ তোমাদের পরাভূত করতে পারবে না, আর যদি তিনি তোমাদের পরিত্যাগ করেন তবে তাঁর পরে আর কে আছে যে তোমাদের সাহায্য করতে পারে? আর আল্লাহ্র উপরেই তাহলে বিশ্বাসীদের নির্ভর করা উচিত।
وَمَا كَانَ لِنَبِىٍّ أَن يَغُلَّ ۚ وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۚ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ ﴿١٦١﴾
আর কোন বিষয় গোপন করে রাখা নবীর কাজ নয়। আর যে লোক গোপন করবে সে কিয়ামতের দিন সেই গোপন বস্তু নিয়ে আসবে। অতঃপর পরিপূর্ণভাবে পাবে প্রত্যেকে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না।
আর কোনো নবীর পক্ষে এটি নয় যে তিনি প্রতারণা করবেন। আর যে কেউ প্রতারণা করে সে যা-কিছু প্রতারণা করেছে তা কিয়ামতের দিনে নিয়ে আসবে। তারপর প্রত্যেক সত্ত্বাকে পুরোপুরি দেয়া হবে যা সে অর্জন করেছে, আর তাদের অন্যায় করা হবে না।
أَفَمَنِ ٱتَّبَعَ رِضْوَٰنَ ٱللَّهِ كَمَنۢ بَآءَ بِسَخَطٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَمَأْوَىٰهُ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ ٱلْمَصِيرُ ﴿١٦٢﴾
যে লোক আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত, সে কি ঐ লোকের সমান হতে পারে, যে আল্লাহর রোষ অর্জন করেছে? বস্তুতঃ তার ঠিকানা হল দোযখ। আর তা কতইনা নিকৃষ্ট অবস্থান!
কি! যে আল্লাহ্র সন্তষ্টির অনুবর্তী সে কি তার মতো যে আল্লাহ্র কাছ থেকে অসন্তোষ আনয়ন করেছে ও যার ঠাঁই হচ্ছে জাহান্নাম? আর জঘন্য সেই গন্তব্যস্থল!
هُمْ دَرَجَٰتٌ عِندَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ بَصِيرٌۢ بِمَا يَعْمَلُونَ ﴿١٦٣﴾
আল্লাহর নিকট মানুষের মর্যাদা বিভিন্ন স্তরের আর আল্লাহ দেখেন যা কিছু তারা করে।
আল্লাহ্র কাছে তাদের স্তরভেদ আছে। আর তারা যা করছে আল্লাহ্ তার দর্শক।
لَقَدْ مَنَّ ٱللَّهُ عَلَى ٱلْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًۭا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُوا۟ عَلَيْهِمْ ءَايَٰتِهِۦ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبْلُ لَفِى ضَلَٰلٍۢ مُّبِينٍ ﴿١٦٤﴾
আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুতঃ তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।
নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন যখন তিনি তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকে দাঁড় করালেন একজন রসূল যিনি তাঁর নির্দেশাবলী তাদের কাছে পাঠ করেন ও তাদের পরিশোধিত করেন ও তাদের কিতাব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা দেন; যদিও এর আগে নিঃসন্দেহ তারা ছিল স্পষ্ট ভুলের মধ্যে।
أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتْكُم مُّصِيبَةٌۭ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌۭ ﴿١٦٥﴾
যখন তোমাদের উপর একটি মুসীবত এসে পৌছাল, অথচ তোমরা তার পূর্বেই দ্বিগুণ কষ্টে পৌছে গিয়েছ, তখন কি তোমরা বলবে, এটা কোথা থেকে এল? তাহলে বলে দাও, এ কষ্ট তোমাদের উপর পৌছেছে তোমারই পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের উপর ক্ষমতাশীল।
কি! যখন কোনো দুর্যোগ তোমাদের উপরে ঘটলো, ইতিপূর্বে তোমরা আঘাত করেছিলে এর দ্বিগুণ পরিমাণ, তোমরা বলতে থাকলে -- ''এ কোথা থেকে?’’ বলো -- ''এসব তোমাদের নিজেদের থেকে।’’ নিশ্চয় আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।
وَمَآ أَصَٰبَكُمْ يَوْمَ ٱلْتَقَى ٱلْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ ٱللَّهِ وَلِيَعْلَمَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿١٦٦﴾
আর যেদিন দু’দল সৈন্যের মোকাবিলা হয়েছে; সেদিন তোমাদের উপর যা আপতিত হয়েছে তা আল্লাহর হুকুমেই হয়েছে এবং তা এজন্য যে, তাতে ঈমানদারদিগকে জানা যায়।
আর যেদিন দুই সৈন্যদল মুখোমুখি হয়েছিল সেদিন যা তোমাদের উপরে ঘটেছিল তা আল্লাহ্র জ্ঞাতসারে, আব যেন তিনি বিশ্বাসীদের জানতে পারেন,
وَلِيَعْلَمَ ٱلَّذِينَ نَافَقُوا۟ ۚ وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا۟ قَٰتِلُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَوِ ٱدْفَعُوا۟ ۖ قَالُوا۟ لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًۭا لَّٱتَّبَعْنَٰكُمْ ۗ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْإِيمَٰنِ ۚ يَقُولُونَ بِأَفْوَٰهِهِم مَّا لَيْسَ فِى قُلُوبِهِمْ ۗ وَٱللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ ﴿١٦٧﴾
এবং তাদেরকে যাতে সনাক্ত করা যায় যারা মুনাফিক ছিল। আর তাদেরকে বলা হল এসো, আল্লাহর রাহে লড়াই কর কিংবা শত্রুদিগকে প্রতিহত কর। তারা বলেছিল, আমরা যদি জানতাম যে, লড়াই হবে, তাহলে অবশ্যই তোমাদের সাথে থাকতাম। সে দিন তারা ঈমানের তুলনায় কুফরীর কাছাকাছি ছিল। যা তাদের অন্তরে নেই তারা নিজের মুখে সে কথাই বলে বস্তুতঃআল্লাহ ভালভাবে জানেন তারা যা কিছু গোপন করে থাকে।
আর যেন তিনি জানতে পারেন তাদের যারা কপটতা করে, আর তাদের বলা হয়েছিল -- ''এসো, আল্লাহ্র পথে যুদ্ধ করো, অথবা আত্মরক্ষা করো।’’ তারা বলেছিল -- ''আমরা যদি যুদ্ধ করতে জানতাম তবে আমরা নিঃসন্দেহ তোমাদের অনুসরণ করতাম।’’ সেদিন তারা ঈমানের চাইতে অবিশ্বাসের নিকটতর হয়েছিল। তারা তাদের মুখ দিয়ে বলছিল যা তাদের অন্তরে ছিল না, আর আল্লাহ্ ভালো জানেন যা তারা লুকোচ্ছে।
ٱلَّذِينَ قَالُوا۟ لِإِخْوَٰنِهِمْ وَقَعَدُوا۟ لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا۟ ۗ قُلْ فَٱدْرَءُوا۟ عَنْ أَنفُسِكُمُ ٱلْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ﴿١٦٨﴾
ওরা হলো যে সব লোক, যারা বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বদ্ধে বলে, যদি তারা আমাদের কথা শুনত, তবে নিহত হত না। তাদেরকে বলে দিন, এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
তারা বাড়িতে বসে থেকে তাদের ভাইদের সন্বন্ধে বলেছিল -- ''তারা যদি আমাদের কথা শুনতো তবে তাদের কাতল করা হতো না।’’ বলো -- ''তাহলে নিজেদের থেকে তোমরা মৃত্যুকে ঠেকাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’
وَلَا تَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُوا۟ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمْوَٰتًۢا ۚ بَلْ أَحْيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ﴿١٦٩﴾
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।
আর যাদের আল্লাহ্র পথে হত্যা করা হয়েছে তাদের মৃত ভেবো না, বরং তাদের প্রভুর দরবারে জীবন্ত, তাদের রিযেক দেওয়া হবে,
فَرِحِينَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِٱلَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا۟ بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٧٠﴾
আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই।
আল্লাহ্ তাঁর করুণাভান্ডার থেকে তাদের যা দিয়েছেন সেজন্যে খুশিতে ডগমগ, আর তারা আনন্দ করবে তাদের জন্য যারা তাদের সঙ্গে মিলিত হয়নি তাদের পশ্চাদভাগ থেকে, কেননা তাদের উপরে কোনো ভয় নেই আর তারা অনুতাপও করবে না।
۞ يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضْلٍۢ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ ٱلْمُؤْمِنِينَ ﴿١٧١﴾
আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং তা এভাবে যে, আল্লাহ, ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না।
তারা আনন্দ করবে আল্লাহ্র কাছ থেকে অনুগ্রহের জন্য এবং করুণাভান্ডারের জন্য, আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের প্রাপ্য বিফল করেন না।
ٱلَّذِينَ ٱسْتَجَابُوا۟ لِلَّهِ وَٱلرَّسُولِ مِنۢ بَعْدِ مَآ أَصَابَهُمُ ٱلْقَرْحُ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا۟ مِنْهُمْ وَٱتَّقَوْا۟ أَجْرٌ عَظِيمٌ ﴿١٧٢﴾
যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব।
যারা আল্লাহ্ ও রসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল তাদের উপরে দুর্যোগ ঘটার পরে, -- তাদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে ও ভয়শ্রদ্ধা করে তাদের জন্য আছে বিরাট পুরস্কার।
ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدْ جَمَعُوا۟ لَكُمْ فَٱخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَٰنًۭا وَقَالُوا۟ حَسْبُنَا ٱللَّهُ وَنِعْمَ ٱلْوَكِيلُ ﴿١٧٣﴾
যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; তাদের ভয় কর। তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; কতই না চমৎকার কামিয়াবীদানকারী।
লোকেরা যাদের বলেছিল -- ''নিঃসন্দেহ তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েৎ হয়েছে, অতএব তাদের ভয় করো।’’ কিন্তু তাদের ঈমান বেড়ে গেল, আর তারা বললে -- ''আল্লাহ্ আমাদের জন্য যথেষ্ট ও তিনি অতি উত্তম রক্ষাকর্তা।’’
فَٱنقَلَبُوا۟ بِنِعْمَةٍۢ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضْلٍۢ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوٓءٌۭ وَٱتَّبَعُوا۟ رِضْوَٰنَ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ ﴿١٧٤﴾
অতঃপর ফিরে এল মুসলমানরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হল। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অতি বিরাট।
সুতরাং তারা ফিরে এল আল্লাহ্র কাছ থেকে নিয়ামত ও করুণাভান্ডার নিয়ে, কোনো অনিষ্ট তাদের স্পর্শ করে নি, বস্তুতঃ তারা আল্লাহ্র প্রসন্নতার অনুগমন করেছিল। আর আল্লাহ্ অফুরন্ত করুণাভান্ডারের মালিক।
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ ٱلشَّيْطَٰنُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَآءَهُۥ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٧٥﴾
এরা যে রয়েছে, এরাই হলে শয়তান, এরা নিজেদের বন্ধুদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না। আর তোমরা যদি ঈমানদার হয়ে থাক, তবে আমাকে ভয় কর।
নিঃসন্দেহ তোমাদের সেই শয়তানই ভয় দেখায় তার বন্ধুবান্ধবকে, কিন্তু তোমরা তাদের ভয় করো না, বরং আমাকে ভয় করো, -- যদি তোমরা ঈমানদার হও।
وَلَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًۭٔا ۗ يُرِيدُ ٱللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّۭا فِى ٱلْءَاخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ﴿١٧٦﴾
আর যারা কুফরের দিকে ধাবিত হচ্ছে তারা যেন তোমাদিগকে চিন্তাম্বিত করে না তোলে। তারা আল্লাহ তা’আলার কোন কিছুই অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না। আখেরাতে তাদেরকে কোন কল্যাণ দান না করাই আল্লাহর ইচ্ছা। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে মহা শাস্তি।
আর যারা অবিশ্বাসের প্রতি ধাবিত হয় তারা যেন তোমাকে দুঃখিত না করে, নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্র কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ্ চান যে আখেরাতে তাদের জন্য লাভের কিছুই থাকুক না, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।
إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱشْتَرَوُا۟ ٱلْكُفْرَ بِٱلْإِيمَٰنِ لَن يَضُرُّوا۟ ٱللَّهَ شَيْـًۭٔا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ﴿١٧٧﴾
যারা ঈমানের পরিবর্তে কুফর ক্রয় করে নিয়েছে, তারা আল্লাহ তা’আলার কিছুই ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।
নিঃসন্দেহ যারা ঈমানের বিনিময়ে অবিশ্বাস কিনেছে তারা আল্লাহ্র কোনো ক্ষতি করতে পারবে না; আর তাদের জন্য রয়েছে ন্তন্ত শাস্তি।
وَلَا يَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُوٓا۟ أَنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ خَيْرٌۭ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِى لَهُمْ لِيَزْدَادُوٓا۟ إِثْمًۭا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌۭ ﴿١٧٨﴾
কাফেররা যেন মনে না করে যে আমি যে, অবকাশ দান করি, তা তাদের পক্ষে কল্যাণকর। আমি তো তাদেরকে অবকাশ দেই যাতে করে তারা পাপে উন্নতি লাভ করতে পারে। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাজনক শাস্তি।
আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যেন না ভাবে যে আমরা তাদের যে বিরাম দিয়েছি তা তাদের নিজেদের ভালোর জন্য। নিঃসন্দেহ আমরা তাদের অবকাশ দিই যেন তারা পাপের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে, আর তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
مَّا كَانَ ٱللَّهُ لِيَذَرَ ٱلْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَآ أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ ٱلْخَبِيثَ مِنَ ٱلطَّيِّبِ ۗ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى ٱلْغَيْبِ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ يَجْتَبِى مِن رُّسُلِهِۦ مَن يَشَآءُ ۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌۭ ﴿١٧٩﴾
নাপাককে পাক থেকে পৃথক করে দেয়া পর্যন্ত আল্লাহ এমন নন যে, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতেই রাখবেন যাতে তোমরা রয়েছ, আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদিগকে গায়বের সংবাদ দেবেন। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় রসূল গণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর ওপর এবং তাঁর রসূলগণের ওপর তোমরা প্রত্যয় স্থাপন কর। বস্তুতঃ তোমরা যদি বিশ্বাস ও পরহেযগারীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাক, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে বিরাট প্রতিদান।
তোমরা যে অবস্থায় আছ সে অবস্থায় আল্লাহ্ কোনোক্রমেই বিশ্বাসীদের ফেলে রাখবেন না, যে পর্যন্ত না তিনি ভালোদের থেকে মন্দদের পৃথক করেন। আর আল্লাহ্ অদৃশ্য সন্বন্ধে তোমাদের কাছে গোচরীভূত করবেন না, তবে আল্লাহ্ তাঁর রসূলদের মধ্যে থেকে যাঁকে ইচ্ছা করেন নির্বাচিত করেন। অতএব আল্লাহ্তে ও তাঁর রসূলগণে ঈমান আনো। আর যদি তোমরা বিশ্বাস করো ও ভয়শ্রদ্ধা করো তবে তোমাদের জন্য রয়েছে বিরাট পুরস্কার।
وَلَا يَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦ هُوَ خَيْرًۭا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّۭ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا۟ بِهِۦ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۗ وَلِلَّهِ مِيرَٰثُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌۭ ﴿١٨٠﴾
আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন।
আর আল্লাহ্ তাঁর করুণাভান্ডার থেকে তাদের যা দান করেছেন সে-বিষয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন না ভাবে যে তা তাদের জন্য ভালো। না, তা তাদের জন্য মন্দ। যে বিষয়ে তারা কঞ্জুসি করে তা কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় ঝুলানো থাকবে। আর মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর উত্তরাধিকার আল্লাহ্র। আর যা তোমরা করো আল্লাহ্ তার পূর্ণ ওয়াকিফহাল।
لَّقَدْ سَمِعَ ٱللَّهُ قَوْلَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ فَقِيرٌۭ وَنَحْنُ أَغْنِيَآءُ ۘ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا۟ وَقَتْلَهُمُ ٱلْأَنۢبِيَآءَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ وَنَقُولُ ذُوقُوا۟ عَذَابَ ٱلْحَرِيقِ ﴿١٨١﴾
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের কথা শুনেছেন, যারা বলেছে যে, আল্লাহ হচ্ছেন অভাবগ্রস্ত আর আমরা বিত্তবান! এখন আমি তাদের কথা এবং যেসব নবীকে তারা অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে তা লিখে রাখব, অতঃপর বলব, আস্বাদন কর জ্বলন্ত আগুনের আযাব।
আল্লাহ্ অবশ্যই শুনেছেন তাদের কথা যারা বলেছিল -- ''নিশ্চয় আল্লাহ্ গরিব, আর আমরা ধনী।’’ কাজেই আমরা লিখে রাখবো তারা যা বলে ও তাদের অন্যায়ভাবে নবীদের হত্যা করতে যাওয়া; আর আমরা বলবো -- ''পোড়ার যন্ত্রণার স্বাদ গ্রহণ করো।
ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ ٱللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍۢ لِّلْعَبِيدِ ﴿١٨٢﴾
এ হল তারই প্রতিফল যা তোমরা ইতিপূর্বে নিজের হাতে পাঠিয়েছ। বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যাচার করেন না।
''এ তার জন্য যা তোমাদের নিজ হাত আগ বাড়িয়েছে, আর যেহেতু আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি জালিম নন।’’
ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ إِنَّ ٱللَّهَ عَهِدَ إِلَيْنَآ أَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُولٍ حَتَّىٰ يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍۢ تَأْكُلُهُ ٱلنَّارُ ۗ قُلْ قَدْ جَآءَكُمْ رُسُلٌۭ مِّن قَبْلِى بِٱلْبَيِّنَٰتِ وَبِٱلَّذِى قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوهُمْ إِن كُنتُمْ صَٰدِقِينَ ﴿١٨٣﴾
সে সমস্ত লোক, যারা বলে যে, আল্লাহ আমাদিগকে এমন কোন রসূলের ওপর বিশ্বাস না করতে বলে রেখেছেন যতক্ষণ না তারা আমাদের নিকট এমন কোরবানী নিয়ে আসবেন যাকে আগুন গ্রাস করে নেবে। তুমি তাদের বলে দাও, তোমাদের মাঝে আমার পূর্বে বহু রসূল নিদর্শনসমূহ এবং তোমরা যা আব্দার করেছ তা নিয়ে এসেছিলেন, তখন তোমরা কেন তাদেরকে হত্যা করলে যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক।
যারা বলেছিল -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ আমাদের কাছে অঙ্গীকার করেছেন যে আমরা কোনো রসূলের প্রতি ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না তিনি আমাদের কাছে এমন কুরবানি আনেন যাকে আগুন পুড়িয়ে থাকে।’’ তুমি বলো -- ''নিশ্চয়ই আমার আগে তোমাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে আর তোমরা যার কথা বলছো তা নিয়ে, তবে কেন তোমরা তাঁদের হত্যা করতে যাচ্ছিলে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’
فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌۭ مِّن قَبْلِكَ جَآءُو بِٱلْبَيِّنَٰتِ وَٱلزُّبُرِ وَٱلْكِتَٰبِ ٱلْمُنِيرِ ﴿١٨٤﴾
তাছাড়া এরা যদি তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, তবে তোমার পূর্বেও এরা এমন বহু নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যারা নিদর্শন সমূহ নিয়ে এসেছিলেন। এবং এনেছিলেন সহীফা ও প্রদীপ্ত গ্রন্থ।
অতএব যদি তারা তোমাকে অস্বীকার করে তোমার আগের রসূলগণও এমনিভাবে অস্বীকৃত হয়েছিলেন, যাঁরা এসেছিলেন সঙ্গে নিয়ে স্পষ্ট প্রমাণাবলী ও যবূর ও উজ্জ্বল কিতাব।
كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدْخِلَ ٱلْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلْغُرُورِ ﴿١٨٥﴾
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।
প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যু আস্বাদন করতে হবে। আর নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিনে তোমাদের প্রাপ্য পুরোপুরি তোমাদের আদায় করা হবে। কাজেই যাকে আগুন থেকে বহুদূরে রাখা হবে ও স্বর্গোদ্যানে প্রবিষ্ট করা হবে, নিঃসন্দেহ সে হ’ল সফলকাম। আর এই দুনিয়ার জীবন ধোকার সন্বল ছাড়া কিছুই নয়।
۞ لَتُبْلَوُنَّ فِىٓ أَمْوَٰلِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ ٱلَّذِينَ أَشْرَكُوٓا۟ أَذًۭى كَثِيرًۭا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا۟ وَتَتَّقُوا۟ فَإِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ ٱلْأُمُورِ ﴿١٨٦﴾
অবশ্য ধন-সম্পদে এবং জনসম্পদে তোমাদের পরীক্ষা হবে এবং অবশ্য তোমরা শুনবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের কাছে এবং মুশরেকদের কাছে বহু অশোভন উক্তি। আর যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং পরহেযগারী অবলম্বন কর, তবে তা হবে একান্ত সৎসাহসের ব্যাপার।
নিশ্চয়ই তোমাদের পরীক্ষা করা হবে তোমাদের ধনসম্পত্তি ও তোমাদের লোকজনের মাধ্যমে, আর নিঃসন্দেহ তোমরা শুনতে পাবে তোমাদের আগে যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদের থেকে এবং যারা শরিক করে তাদের থেকে অনেক গালিগালাজ। আর যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ করো ও ভয়ভক্তি করো তবে নিশ্চয় সেটি হবে সৎসাহসের কাজ।
وَإِذْ أَخَذَ ٱللَّهُ مِيثَٰقَ ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ ٱلْكِتَٰبَ لَتُبَيِّنُنَّهُۥ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُۥ فَنَبَذُوهُ وَرَآءَ ظُهُورِهِمْ وَٱشْتَرَوْا۟ بِهِۦ ثَمَنًۭا قَلِيلًۭا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ ﴿١٨٧﴾
আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে এবং গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে নিজেদের পেছনে ফেলে রাখল আর তার কেনা-বেচা করল সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। সুতরাং কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা।
আর স্মরণ করো! যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের থেকে আল্লাহ্ অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন -- ''তোমরা নিশ্চয় এর কথা লোকেদের কাছে প্রকাশ করবে, আর তা লুকিয়ে রাখবে না।’’ কিন্তু তারা এটি তাদের পিঠের পেছনে ফেলে রেখে দিয়েছিল, আর এর জন্য তারা বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করেছিল। অতএব মন্দ তারা যা কেনে।
لَا تَحْسَبَنَّ ٱلَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَآ أَتَوا۟ وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا۟ بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا۟ فَلَا تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍۢ مِّنَ ٱلْعَذَابِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌۭ ﴿١٨٨﴾
তুমি মনে করো না, যারা নিজেদের কৃতকর্মের উপর আনন্দিত হয় এবং না করা বিষয়ের জন্য প্রশংসা কামনা করে, তারা আমার নিকট থেকে অব্যাহতি লাভ করেছে। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।
তুমি মনে করো না যারা উল্লসিত হয় যা তাদের দেয়া হয়েছে সেজন্য, আর প্রশংসা পেতে ভালোবাসে যা করে নি তার জন্যেও, -- কাজেই তুমি তাদের ভেবো না যে তারা শাস্তি থেকে নিরাপদ, আর তাদের জন্য রয়েছে ব্যথাদায়ক শাস্তি।
وَلِلَّهِ مُلْكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ ۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ قَدِيرٌ ﴿١٨٩﴾
আর আল্লাহর জন্যই হল আসমান ও যমিনের বাদশাহী। আল্লাহই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতার অধিকারী।
আর আল্লাহ্রই মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী রাজত্ব। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।
إِنَّ فِى خَلْقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ وَٱخْتِلَٰفِ ٱلَّيْلِ وَٱلنَّهَارِ لَءَايَٰتٍۢ لِّأُو۟لِى ٱلْأَلْبَٰبِ ﴿١٩٠﴾
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।
নিঃসন্দেহ মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে বিশেষ নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানবান লোকদের জন্য --
ٱلَّذِينَ يَذْكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمًۭا وَقُعُودًۭا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِى خَلْقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَٰذَا بَٰطِلًۭا سُبْحَٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ ﴿١٩١﴾
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
যারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে দাঁড়ানো ও বসা ও তাদের পার্শ্বের উপরে শায়িত অবস্থায় আর গভীর চিন্তা করে মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয়ে। ''আমাদের প্রভু! এসব তুমি বৃথা সৃষ্টি করো নি, তোমারই সব মহিমা। কাজেই আমাদের রক্ষা করো আগুনের শাস্তি থেকে।
رَبَّنَآ إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ ٱلنَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُۥ ۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍۢ ﴿١٩٢﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! নিশ্চয় তুমি যাকে দোযখে নিক্ষেপ করলে তাকে সবসময়ে অপমানিত করলে; আর জালেমদের জন্যে তো সাহায্যকারী নেই।
''আমাদের প্রভু! নিশ্চয়ই যাকে তুমি আগুনে প্রবিষ্ট করাও, তাকে তবে প্রকৃতই তুমি লাঞ্ছিত করেছ। আর অন্যায়কারীদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।
رَّبَّنَآ إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًۭا يُنَادِى لِلْإِيمَٰنِ أَنْ ءَامِنُوا۟ بِرَبِّكُمْ فَـَٔامَنَّا ۚ رَبَّنَا فَٱغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّـَٔاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ ٱلْأَبْرَارِ ﴿١٩٣﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা নিশ্চিতরূপে শুনেছি একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি আহবান করতে যে, তোমাদের পালনকর্তার প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষত্রুটি দুর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে।
''আমাদের প্রভু! নিঃসন্দেহ আমরা শুনেছি একজন ঘোষণাকারীকে ঈমানের প্রতি আহ্বান করতে এই বলে -- 'তোমাদের প্রভুরপ্রতি ঈমান আনো’, কাজেই আমরা ঈমান এনেছি। আমাদের প্রভু! অতএব আমাদের অপরাধ থেকে আমাদের পরিত্রাণ করো, আর আমাদের দোষত্রুটি আমাদের থেকে মুছে দাও, আর আমাদের প্রাণত্যাগ করতে দাও সজ্জনদের সঙ্গে।
رَبَّنَا وَءَاتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَىٰ رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ ٱلْقِيَٰمَةِ ۗ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ ٱلْمِيعَادَ ﴿١٩٤﴾
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে দাও, যা তুমি ওয়াদা করেছ তোমার রসূলগণের মাধ্যমে এবং কিয়ামতের দিন আমাদিগকে তুমি অপমানিত করো না। নিশ্চয় তুমি ওয়াদা খেলাফ করো না।
''আমাদের প্রভু! আর আমাদের প্রদান করো যা তুমি আমাদের কাছে ওয়াদা করেছ তোমার রসূলদের মাধ্যমে, আর আমাদের লাঞ্ছিত করো না কিয়ামতের দিনে। নিঃসন্দেহ তুমি ওয়াদার খেলাফ করো না।’’
فَٱسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّى لَآ أُضِيعُ عَمَلَ عَٰمِلٍۢ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ ۖ بَعْضُكُم مِّنۢ بَعْضٍۢ ۖ فَٱلَّذِينَ هَاجَرُوا۟ وَأُخْرِجُوا۟ مِن دِيَٰرِهِمْ وَأُوذُوا۟ فِى سَبِيلِى وَقَٰتَلُوا۟ وَقُتِلُوا۟ لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّـَٔاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّٰتٍۢ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ ثَوَابًۭا مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ ۗ وَٱللَّهُ عِندَهُۥ حُسْنُ ٱلثَّوَابِ ﴿١٩٥﴾
অতঃপর তাদের পালনকর্তা তাদের দোয়া (এই বলে) কবুল করে নিলেন যে, আমি তোমাদের কোন পরিশ্রমকারীর পরিশ্রমই বিনষ্ট করি না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রীলোক। তোমরা পরস্পর এক। তারপর সে সমস্ত লোক যারা হিজরত করেছে, তাদেরকে নিজেদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং তাদের প্রতি উৎপীড়ন করা হয়েছে আমার পথে এবং যারা লড়াই করেছে ও মৃত্যুবরণ করেছে, অবশ্যই আমি তাদের উপর থেকে অকল্যাণকে অপসারিত করব। এবং তাদেরকে প্রবিষ্ট করব জান্নাতে যার তলদেশে নহর সমূহ প্রবাহিত। এই হলো বিনিময় আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম বিনিময়।
তাদের প্রভু তখন তাদের আহ্বানে সাড়া দিলেন -- ''আমি নিশ্চয়ই বিফল করবো না তোমাদের মধ্যের কর্মীদের কোনো কাজ -- পুরুষ হও বা নারী -- তোমাদের একজন অন্যজন থেকে, সুতরাং যারা হিজরত করেছে ও তাদের ঘরবাড়ি থেকে যারা বহিষ্কৃত হয়েছে, ও আমার পথে যারা নির্যাতিত হয়েছে, আর যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে -- নিঃসন্দেহ তাদের দোষত্রুটি তাদের থেকে অবশ্যই মুছে দেব আর নিঃসন্দেহ তাদের অবশ্যই প্রবিষ্ট করাব স্বর্গোদ্যানসমূহে যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি -- একটি পুরস্কার আল্লাহ্র দরবার থেকে। আর আল্লাহ্ -- তাঁর কাছে রয়েছে আরো উত্তম পুরস্কার।’’
لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فِى ٱلْبِلَٰدِ ﴿١٩٦﴾
নগরীতে কাফেরদের চাল-চলন যেন তোমাদিগকে ধোঁকা না দেয়।
যারা অবিশ্বাস পোষণ করে শহরে-নগরে তাদের চলাফেরা তোমাকে যেন ধোকা না দেয়।
مَتَٰعٌۭ قَلِيلٌۭ ثُمَّ مَأْوَىٰهُمْ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ ٱلْمِهَادُ ﴿١٩٧﴾
এটা হলো সামান্য ফায়দা-এরপর তাদের ঠিকানা হবে দোযখ। আর সেটি হলো অতি নিকৃষ্ট অবস্থান।
তুচ্ছ ভোগ! তারপর তাদের বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম, আর জঘন্য এই বিশ্রামস্থল।
لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوْا۟ رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّٰتٌۭ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا ٱلْأَنْهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا نُزُلًۭا مِّنْ عِندِ ٱللَّهِ ۗ وَمَا عِندَ ٱللَّهِ خَيْرٌۭ لِّلْأَبْرَارِ ﴿١٩٨﴾
কিন্তু যারা ভয় করে নিজেদের পালনকর্তাকে তাদের জন্যে রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে প্রস্রবণ। তাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সদা আপ্যায়ন চলতে থাকবে। আর যা আল্লাহর নিকট রয়েছে, তা সৎকর্মশীলদের জন্যে একান্তই উত্তম।
কিন্তু যারা তাদের প্রভুকে ভয়-শ্রদ্ধা করে তাদের জন্য স্বর্গোদ্যানসমূহ, যাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি, তাতে তারা থাকবে চিরকাল -- আল্লাহ্র তরফ থেকে আপ্যায়ন। আর আল্লাহ্র কাছে যা রয়েছে তা পুণ্যাত্মাদের জন্য আরো উত্তম।
وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ ٱلْكِتَٰبِ لَمَن يُؤْمِنُ بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَٰشِعِينَ لِلَّهِ لَا يَشْتَرُونَ بِـَٔايَٰتِ ٱللَّهِ ثَمَنًۭا قَلِيلًا ۗ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ سَرِيعُ ٱلْحِسَابِ ﴿١٩٩﴾
আর আহলে কিতাবদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও রয়েছে, যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে এবং যা কিছু তোমার উপর অবতীর্ণ হয় আর যা কিছু তাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর উপর, আল্লাহর সামনে বিনয়াবনত থাকে এবং আল্লার আয়াতসমুহকে স্বল্পমুল্যের বিনিময়ে সওদা করে না, তারাই হলো সে লোক যাদের জন্য পারিশ্রমিক রয়েছে তাদের পালনকর্তার নিকট। নিশ্চয়ই আল্লাহ যথাশীঘ্র হিসাব চুকিয়ে দেন।
আর নিঃসন্দেহ গ্রন্থপ্রাপ্তদের মধ্যে যারা ঈমান আনে আল্লাহ্তে আর যা তোমাদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে আর যা তা দের কাছে নাযিল হয়েছিল তাতে, আল্লাহ্র কাছে বিনীত, তারা আল্লাহ্র বাণীসমূহের জন্য স্বল্পমূল্য কামাতে যায় না। এরাই, -- এদের জন্য এদের পুরস্কার রয়েছে এদের প্রভুর কাছে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হিসেব-নিকেশে তৎপর।
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱصْبِرُوا۟ وَصَابِرُوا۟ وَرَابِطُوا۟ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿٢٠٠﴾
হে ঈমানদানগণ! ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোকাবেলায় দৃঢ়তা অবলম্বন কর। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা তোমাদের উদ্দেশ্য লাভে সমর্থ হতে পার।
ওহে যারা ঈমান এনেছ! ধৈর্যধারণ করো আর ধৈর্যধারণে অগ্রণী হও, আর অবিচল থেকো, আর আল্লাহ্কে ভয়শ্রদ্ধা করো, যেন তোমরা সফলকাম হতে পারো।