Settings
الۤرۚ كِتَـٰبٌ أُحۡكِمَتۡ ءَایَـٰتُهُۥ ثُمَّ فُصِّلَتۡ مِن لَّدُنۡ حَكِیمٍ خَبِیرٍ ﴿1﴾
আলিফ, লা-ম, রা; এটি এমন এক কিতাব, যার আয়াত সমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত অতঃপর সবিস্তারে বর্ণিত এক মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ সত্তার পক্ষ হতে।
আলিফ, লাম, রা। এ গ্রন্থ যার আয়াতসমূহকে জ্ঞান-সমৃদ্ধ করা হয়েছে, তারপর বিশদ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে পরমজ্ঞানী পূর্ণ- ওয়াকিফহালের তরফ থেকে!
أَلَّا تَعۡبُدُوۤا۟ إِلَّا ٱللَّهَۚ إِنَّنِی لَكُم مِّنۡهُ نَذِیرࣱ وَبَشِیرࣱ ﴿2﴾
যেন তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো বন্দেগী না কর। নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তাঁরই পক্ষ হতে সতর্ককারী ও সুসংবাদ দাতা।
যেন তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উপাসনা করবে না। ''আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ককারী এবং সুসংবাদদাতা --
وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُوا۟ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوۤا۟ إِلَیۡهِ یُمَتِّعۡكُم مَّتَـٰعًا حَسَنًا إِلَىٰۤ أَجَلࣲ مُّسَمࣰّى وَیُؤۡتِ كُلَّ ذِی فَضۡلࣲ فَضۡلَهُۥۖ وَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَإِنِّیۤ أَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمࣲ كَبِیرٍ ﴿3﴾
আর তোমরা নিজেদের পালনকর্তা সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। অনন্তর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অধিক আমলকারীকে বেশী করে দেবেন আর যদি তোমরা বিমুখ হতে থাক, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।
''আর যেন তোমাদের প্রভুর কাছে পরিত্রাণ খোঁজো, তারপর তাঁর দিকে ফেরো, -- তিনি তোমাদের সুন্দর জীবনোপকরণ উপভোগ করতে দেবেন এক নির্দিষ্ট কালের জন্য, আর তিনি প্রত্যেক প্রাচুর্যের অধিকারীকে তাঁর প্রাচুর্য প্রদান করেন। আর যদি তোমরা ফিরে যাও তবে নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের জন্য আশংকা করি এক মহাদিনের শাস্তির।
إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ قَدِیرٌ ﴿4﴾
আল্লাহর সান্নিধ্যেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
''আল্লাহ্রই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন, আর তিনি সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।’’
أَلَاۤ إِنَّهُمۡ یَثۡنُونَ صُدُورَهُمۡ لِیَسۡتَخۡفُوا۟ مِنۡهُۚ أَلَا حِینَ یَسۡتَغۡشُونَ ثِیَابَهُمۡ یَعۡلَمُ مَا یُسِرُّونَ وَمَا یُعۡلِنُونَۚ إِنَّهُۥ عَلِیمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ﴿5﴾
জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তারা নিজেদের বক্ষদেশ ঘুরিয়ে দেয় যেন আল্লাহর নিকট হতে লুকাতে পারে। শুন, তারা তখন কাপড়ে নিজেদেরকে আচ্ছাদিত করে, তিনি তখনও জানেন যা কিছু তারা চুপিসারে বলে আর প্রকাশ্যভাবে বলে। নিশ্চয় তিনি জানেন যা কিছু অন্তর সমূহে নিহিত রয়েছে।
সাবধান! নিঃসন্দেহ তারা কি নিজেদের বুক ভাঁজ করেছে তাঁর কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যে? সাবধান! তারা যখন তাদের পোশাকের দ্বারা নিজেদের আবৃত করে, তিনি জানেন যা তারা লুকিয়ে রাখে ও যা তারা প্রকাশ করে। নিঃসন্দেহ বুকের ভেতরে যা আছে সে-সন্বন্ধে তিনি সর্বজ্ঞাতা।
۞ وَمَا مِن دَاۤبَّةࣲ فِی ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَیَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ كُلࣱّ فِی كِتَـٰبࣲ مُّبِینࣲ ﴿6﴾
আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।
আর পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যার জীবিকার ভার আল্লাহ্র উপরে নয়, আর তিনিই জানেন তার বাসস্থান ও তার বিশ্রামস্থল। সবই আছে এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।
وَهُوَ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِی سِتَّةِ أَیَّامࣲ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَاۤءِ لِیَبۡلُوَكُمۡ أَیُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلࣰاۗ وَلَىِٕن قُلۡتَ إِنَّكُم مَّبۡعُوثُونَ مِنۢ بَعۡدِ ٱلۡمَوۡتِ لَیَقُولَنَّ ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤا۟ إِنۡ هَـٰذَاۤ إِلَّا سِحۡرࣱ مُّبِینࣱ ﴿7﴾
তিনিই আসমান ও যমীন ছয় দিনে তৈরী করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভাল কাজ করে। আর যদি আপনি তাদেরকে বলেন যে, \"নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেরেরা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট যাদু!\";
আর তিনিই সেইজন যিনি মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ রয়েছে পানির উপরে, যেন তিনি তোমাদের যাচাই করতে পারেন যে তোমাদের মধ্যে কে আচরণে শ্রেষ্ঠ। আর যদি তোমাকে বলতে হয় -- ''নিঃসন্দেহ মৃত্যুর পরে তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে’’, যারা অবিশ্বাস করে তারা নিশ্চয় বলবে -- ''এ তো স্পষ্টতঃ জাদু বই নয়।’’
وَلَىِٕنۡ أَخَّرۡنَا عَنۡهُمُ ٱلۡعَذَابَ إِلَىٰۤ أُمَّةࣲ مَّعۡدُودَةࣲ لَّیَقُولُنَّ مَا یَحۡبِسُهُۥۤۗ أَلَا یَوۡمَ یَأۡتِیهِمۡ لَیۡسَ مَصۡرُوفًا عَنۡهُمۡ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا۟ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿8﴾
আর যদি আমি এক নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত তাদের আযাব স্থগিত রাখি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে কোন জিনিসে আযাব ঠেকিয়ে রাখছে? শুনে রাখ, যেদিন তাদের উপর আযাব এসে পড়বে, সেদিন কিন্তু তা ফিরে যাওয়ার নয়; তারা যে ব্যাপারে উপহাস করত তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলবে।
আর যদি তাদের থেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আমরা শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা নিশ্চয়ই বলবে -- ''কিসে একে বাধা দিচ্ছে?’’ এটি কি নয় যে যেদিন তাদের নিকটে এ আসবে সেদিন তাদের থেকে এটি প্রতিহত হবে না, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল তাই তাদের ঘেরাও করবে?
وَلَىِٕنۡ أَذَقۡنَا ٱلۡإِنسَـٰنَ مِنَّا رَحۡمَةࣰ ثُمَّ نَزَعۡنَـٰهَا مِنۡهُ إِنَّهُۥ لَیَـُٔوسࣱ كَفُورࣱ ﴿9﴾
আর অবশ্যই যদি আমি মানুষকে আমার রহমতের আস্বাদ গ্রহণ করতে দেই, অতঃপর তা তার থেকে ছিনিয়ে নেই; তাহলে সে হতাশ ও কৃতঘ্ন হয়।
আর যদি আমরা মানূষকে আমাদের থেকে করুণার আস্বাদ করাই ও পরে তার থেকে তা নিয়ে নিই, তাহলে সে নিশ্চয়ই হবে হতাশ্বাস, অকৃতজ্ঞ।
وَلَىِٕنۡ أَذَقۡنَـٰهُ نَعۡمَاۤءَ بَعۡدَ ضَرَّاۤءَ مَسَّتۡهُ لَیَقُولَنَّ ذَهَبَ ٱلسَّیِّـَٔاتُ عَنِّیۤۚ إِنَّهُۥ لَفَرِحࣱ فَخُورٌ ﴿10﴾
আর যদি তার উপর আপতিত দুঃখ কষ্টের পরে তাকে সুখভোগ করতে দেই, তবে সে বলতে থাকে যে, আমার অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে, আর সে আনন্দে আত্নহারা হয়, অহঙ্কারে উদ্দত হয়ে পড়ে।
আর যদি আমরা তাকে অনুগ্রহের আস্বাদ করাই দুঃখ-কষ্ট তাকে স্পর্শ করার পরে সে তখন বলেই থাকে -- ''আমার থেকে বিপদ-আপদ কেটে গেছে।’’ নিঃসন্দেহ সে উল্লসিত, অহংকারী, --
إِلَّا ٱلَّذِینَ صَبَرُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ لَهُم مَّغۡفِرَةࣱ وَأَجۡرࣱ كَبِیرࣱ ﴿11﴾
তবে যারা ধৈর্য্যধারণ করেছে এবং সৎকার্য করেছে তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান রয়েছে।
তারা ছাড়া যারা ধৈর্যধারণ করে ও সৎকর্ম করে, এরাই -- এদের জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও মহাপুরস্কার।
فَلَعَلَّكَ تَارِكُۢ بَعۡضَ مَا یُوحَىٰۤ إِلَیۡكَ وَضَاۤىِٕقُۢ بِهِۦ صَدۡرُكَ أَن یَقُولُوا۟ لَوۡلَاۤ أُنزِلَ عَلَیۡهِ كَنزٌ أَوۡ جَاۤءَ مَعَهُۥ مَلَكٌۚ إِنَّمَاۤ أَنتَ نَذِیرࣱۚ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ وَكِیلٌ ﴿12﴾
আর সম্ভবতঃ ঐসব আহকাম যা ওহীর মাধ্যমে তোমার নিকট পাঠানো হয়, তার কিছু অংশ বর্জন করবে? এবং এতে মন ছোট করে বসবে? তাদের এ কথায় যে, তাঁর উপর কোন ধন-ভান্ডার কেন অবতীর্ণ হয়নি? অথবা তাঁর সাথে কোন ফেরেশতা আসেনি কেন? তুমিতো শুধু সতর্ককারী মাত্র; আর সব কিছুরই দায়িত্বভার তো আল্লাহই নিয়েছেন।
তুমি কি তবে পরিত্যাগকারী হবে তোমার কাছে যা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে তার কিছু অংশ, আর তোমার বক্ষ এর দ্বারা সংকুচিত করবে যেহেতু তারা বলে -- ''তার কাছে কেন কোনো ধনভান্ডার পাঠানো হয় না অথবা তার সঙ্গে কোনো ফিরিশ্তা আসে না?’’ নিঃসন্দেহ তুমি তো একজন সতর্ককারী। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে কর্ণধার।
أَمۡ یَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُوا۟ بِعَشۡرِ سُوَرࣲ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَیَـٰتࣲ وَٱدۡعُوا۟ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿13﴾
তারা কি বলে? কোরআন তুমি তৈরী করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।
অথবা তারা কি বলে -- ''সে এটি বানিয়েছে?’’ বলো -- ''তাহলে এর মত দশটি বানানো সূরা নিয়ে এস, আর আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে যাকে পার ডাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’’
فَإِلَّمۡ یَسۡتَجِیبُوا۟ لَكُمۡ فَٱعۡلَمُوۤا۟ أَنَّمَاۤ أُنزِلَ بِعِلۡمِ ٱللَّهِ وَأَن لَّاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ﴿14﴾
অতঃপর তারা যদি তোমাদের কথা পুরণ করতে অপারগ হয়; তবে জেনে রাখ, এটি আল্লাহর এলম দ্বারা অবতীর্ণ হয়েছে; আরো একীন করে নাও যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। অতএব, এখন কি তোমরা আত্নসমর্পন করবে?
আর যদি তারা তোমাদের প্রতি সাড়া না দেয় তবে জেনে রেখো -- এ অবশ্যই অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহ্র জ্ঞানভান্ডার থেকে, আর তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তোমরা কি তবে আত্মসমর্পণকারী হবে না?
مَن كَانَ یُرِیدُ ٱلۡحَیَوٰةَ ٱلدُّنۡیَا وَزِینَتَهَا نُوَفِّ إِلَیۡهِمۡ أَعۡمَـٰلَهُمۡ فِیهَا وَهُمۡ فِیهَا لَا یُبۡخَسُونَ ﴿15﴾
যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, হয় আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না।
যে কেউ পার্থিব জীবন ও এর শোভা-সৌন্দর্য কামনা করে তাদের ক্রিয়াকর্মের জন্য এখানেই আমরা তাদের পুরোপুরি প্রতিফল প্রদান করি, আর এ ব্যাপারে তারা ক্ষতিসাধিত হবে না।
أُو۟لَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ لَیۡسَ لَهُمۡ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا۟ فِیهَا وَبَـٰطِلࣱ مَّا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿16﴾
এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।
এরাই তারা যাদের জন্য পরকালে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই, আর তারা যা করেছে তা সেখানে বৃথা যাবে, আর তারা যা করে যাচ্ছিল সে-সবই নিরর্থক।
أَفَمَن كَانَ عَلَىٰ بَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّهِۦ وَیَتۡلُوهُ شَاهِدࣱ مِّنۡهُ وَمِن قَبۡلِهِۦ كِتَـٰبُ مُوسَىٰۤ إِمَامࣰا وَرَحۡمَةًۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ یُؤۡمِنُونَ بِهِۦۚ وَمَن یَكۡفُرۡ بِهِۦ مِنَ ٱلۡأَحۡزَابِ فَٱلنَّارُ مَوۡعِدُهُۥۚ فَلَا تَكُ فِی مِرۡیَةࣲ مِّنۡهُۚ إِنَّهُ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكَ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿17﴾
আচ্ছা বল তো, যে ব্যক্তি তার প্রভুর সুস্পষ্ট পথে রয়েছে, আর সাথে সাথে আল্লাহর তরফ থেকে একটি সাক্ষীও বর্তমান রয়েছে এবং তার পূর্ববর্তী মূসা (আঃ) এর কিতাবও সাক্ষী যা ছিল পথনির্দেশক ও রহমত স্বরূপ, (তিনি কি অন্যান্যের সমান) অতএব তাঁরা কোরআনের প্রতি ঈমান আনেন। আর ঐসব দলগুলি যে কেউ তা অস্বীকার করে, দোযখই হবে তার ঠিকানা। অতএব, আপনি তাতে কোন সন্দেহে থাকবেন না। নিঃসন্দেহে তা আপনার পালনকর্তার পক্ষ হতে ধ্রুব সত্য; তথাপি অনেকেই তা বিশ্বাস করে না।
তবে কি যে রয়েছে তার প্রভুর কাছে থেকে স্পষ্ট-প্রমাণের উপরে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর কাছ থেকে একজন সাক্ষী তা পাঠ করেন, আর এর আগে মুসার গ্রন্থ পথনির্দেশক ও করুণাস্বরূপ? এরা এতে বিশ্বাস করে। আর দলগুলোর মধ্যের যে এতে অবিশ্বাস পোষণ করে তার প্রতিশ্রুত স্থান তবে আগুন, অতএব তুমি এ-সন্বন্ধে সন্দেহে থেকো না। নিঃসন্দেহ এটি তোমার প্রভুর কাছ থে কে ধ্রুবসত্য, কিন্তু বেশিরভাগ লোকেই বিশ্বাস করে না।
وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًاۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ یُعۡرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمۡ وَیَقُولُ ٱلۡأَشۡهَـٰدُ هَـٰۤؤُلَاۤءِ ٱلَّذِینَ كَذَبُوا۟ عَلَىٰ رَبِّهِمۡۚ أَلَا لَعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿18﴾
আর তাদের চেয়ে বড় যালেম কে হতে পারে, যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে। এসব লোককে তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত সম্মূখীন করা হবে আর সাক্ষিগণ বলতে থাকবে, এরাই ঐসব লোক, যারা তাদের পালনকর্তার প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল। শুনে রাখ, যালেমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত রয়েছে।
আর কে তার চাইতে বেশী অন্যায়কারী যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে? এদের আনা হবে তাদের প্রভুর সামনে, আর সাক্ষীগণ বলবে -- ''এরাই তারা যারা তাদের প্রভুর বিরুদ্ধে মিথ্যা আরোপ করেছিল।’’ এমন কি নয় যে আল্লাহ্র অসন্তষ্টি যালিমদের উপরে --
ٱلَّذِینَ یَصُدُّونَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ وَیَبۡغُونَهَا عِوَجࣰا وَهُم بِٱلۡـَٔاخِرَةِ هُمۡ كَـٰفِرُونَ ﴿19﴾
যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়, আর তাতে বক্রতা খুজে বেড়ায়, এরাই আখরাতকে অস্বীকার করে।
যারা আল্লাহ্র পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে এবং একে করতে চায় কুটিল? আর এরা নিজেরাই পরকাল সন্বন্ধে অবিশ্বাসী।
أُو۟لَـٰۤىِٕكَ لَمۡ یَكُونُوا۟ مُعۡجِزِینَ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَمَا كَانَ لَهُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِیَاۤءَۘ یُضَـٰعَفُ لَهُمُ ٱلۡعَذَابُۚ مَا كَانُوا۟ یَسۡتَطِیعُونَ ٱلسَّمۡعَ وَمَا كَانُوا۟ یُبۡصِرُونَ ﴿20﴾
তারা পৃথিবীতেও আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারীও নেই, তাদের জন্য দ্বিগুণ শাস্তি রয়েছে; তারা শুনতে পারত না এবং দেখতেও পেত না।
এরা পৃথিবীতে প্রতিহত করতে পারত না, আর তাদের জন্য আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে কোনো অভিভাবক নেই। তাদের জন্য শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। তারা শোনা সহ্য করতে পারত না, আর তারা দেখতেও পারত না।
أُو۟لَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ خَسِرُوۤا۟ أَنفُسَهُمۡ وَضَلَّ عَنۡهُم مَّا كَانُوا۟ یَفۡتَرُونَ ﴿21﴾
এরা সে লোক, যারা নিজেরাই নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, আর এরা যা কিছু মিথ্যা মা’বুদ সাব্যস্ত করেছিল, তা সবই তাদের থেকে হারিয়ে গেছে।
এরাই তারা যারা তাদের অন্তরাত্মার ক্ষতিসাধন করেছে, আর যা তারা উদ্ভাবন করেছিল তা তাদের থেকে বিদায় নিয়েছে।
لَا جَرَمَ أَنَّهُمۡ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ هُمُ ٱلۡأَخۡسَرُونَ ﴿22﴾
আখেরাতে এরাই হবে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কোন সন্দেহ নেই।
সন্দেহ নেই যে পরকালে তারা নিজেরা অবশ্যই হবে সব চাইতে ক্ষতিগ্রস্ত।
إِنَّ ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ وَأَخۡبَتُوۤا۟ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَنَّةِۖ هُمۡ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿23﴾
নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে এবং স্বীয় পালনকর্তার সমীপে বিনতি প্রকাশ করেছে তারাই বেহেশতবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে।
নিঃসন্দেহ যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, এবং বিনয়াবনত হয় তাদের প্রভুর কাছে, -- তারাই বেহেশতের বাসিন্দা, এতে তারা থাকবে চিরকাল।
۞ مَثَلُ ٱلۡفَرِیقَیۡنِ كَٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡأَصَمِّ وَٱلۡبَصِیرِ وَٱلسَّمِیعِۚ هَلۡ یَسۡتَوِیَانِ مَثَلًاۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿24﴾
উভয় পক্ষের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন অন্ধ ও বধির এবং যে দেখতে পায় ও শুনতে পায় উভয়ের অবস্থা কি এক সমান? তবুও তোমরা কি ভেবে দেখ না?
দল দুটির উপমা হচ্ছে অন্ধ ও বধিরের এবং চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তিমানের মতো, -- উভয় কি তুলনায় সমান-সমান? তবুও কি তোমরা মনোনিবেশ করবে না?
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦۤ إِنِّی لَكُمۡ نَذِیرࣱ مُّبِینٌ ﴿25﴾
আর অবশ্যই আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর জাতির প্রতি প্রেরণ করেছি, (তিনি বললেন) নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী।
আর নিশ্চয়ই আমরা নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে, ''নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের জন্য একজন সতর্ক কারী, --
أَن لَّا تَعۡبُدُوۤا۟ إِلَّا ٱللَّهَۖ إِنِّیۤ أَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ أَلِیمࣲ ﴿26﴾
তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো এবাদত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের ভয় করছি।
''যেন তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া কারো উপাসনা করবে না। নিঃসন্দেহ আমি আশংকা করি তোমাদের জন্য মর্মন্তুদ দিনের শাস্তি।’’
فَقَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ مِن قَوۡمِهِۦ مَا نَرَىٰكَ إِلَّا بَشَرࣰا مِّثۡلَنَا وَمَا نَرَىٰكَ ٱتَّبَعَكَ إِلَّا ٱلَّذِینَ هُمۡ أَرَاذِلُنَا بَادِیَ ٱلرَّأۡیِ وَمَا نَرَىٰ لَكُمۡ عَلَیۡنَا مِن فَضۡلِۭ بَلۡ نَظُنُّكُمۡ كَـٰذِبِینَ ﴿27﴾
তখন তাঁর কওমের কাফের প্রধানরা বলল আমরা তো আপনাকে আমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত আর কিছু মনে করি না; আর আমাদের মধ্যে যারা ইতর ও স্থুল-বুদ্ধিসম্পন্ন তারা ব্যতীত কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না এবং আমাদের উপর আপনাদের কেন প্রাধান্য দেখি না, বরং আপনারা সবাই মিথ্যাবাদী বলে আমারা মনে করি।
কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যের যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদের প্রধানরা বললে -- ''আমরা তো তোমাকে আমাদের মতো একজন মানুষ বই দেখছি না, আর আমরা তোমাকে দেখছি না যে তোমাকে তারা ছাড়া এমন অন্য কেউ অনুসরণ করছে যারা হচ্ছে প্রথম দৃষ্টিতেই আমাদের মধ্যে অধম, আর আমরা তোমাদের মধ্যে আমাদের চাইতে কোনো গুণপনাও দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মনে করি মিথ্যাবাদী।’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ أَرَءَیۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّی وَءَاتَىٰنِی رَحۡمَةࣰ مِّنۡ عِندِهِۦ فَعُمِّیَتۡ عَلَیۡكُمۡ أَنُلۡزِمُكُمُوهَا وَأَنتُمۡ لَهَا كَـٰرِهُونَ ﴿28﴾
নূহ (আঃ) বললেন-হে আমার জাতি! দেখ তো আমি যদি আমার পালনকর্তার পক্ষ হতে স্পষ্ট দলীলের উপর থাক, আর তিনি যদি তাঁর পক্ষ হতে আমাকে রহমত দান করে থাকেন, তারপরেও তা তোমাদের চোখে না পড়ে, তাহলে আমি কি উহা তোমাদের উপর তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই চাপিয়ে দিতে পারি ?
তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ -- আমি যদি আমার প্রভুর কাছ থেকে স্পষ্ট-প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি আমাকে তাঁর তরফ থেকে অনুগ্রহ প্রদান করে থাকেন, অথচ তোমাদের কাছে এটি ঝাপসা হয়ে গেছে, আমরা কি তবে এটিতে তোমাদের বাধ্য করতে পারি যখন তোমরা এর প্রতি বিরূপ?
وَیَـٰقَوۡمِ لَاۤ أَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَیۡهِ مَالًاۖ إِنۡ أَجۡرِیَ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِۚ وَمَاۤ أَنَا۠ بِطَارِدِ ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ۚ إِنَّهُم مُّلَـٰقُوا۟ رَبِّهِمۡ وَلَـٰكِنِّیۤ أَرَىٰكُمۡ قَوۡمࣰا تَجۡهَلُونَ ﴿29﴾
আর হে আমার জাতি! আমি তো এজন্য তোমাদের কাছে কোন অর্থ চাই না; আমার পারিশ্রমিক তো আল্লাহর জিম্মায় রয়েছে। আমি কিন্তু ঈমানদারদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার সাক্ষাত লাভ করবে। বরঞ্চ তোমাদেরই আমি অজ্ঞ সম্প্রদায় দেখছি।
''আর হে আমার সম্প্রদায়! এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে ধনদৌলত চাই না। আমার শ্রমফল কেবল আল্লাহ্র কাছেই রয়েছে, আর যারা বিশ্বাস করেছে তাদের আমি তাড়িয়েও দেবার নই। নিঃসন্দেহ তাদের প্রভুর কাছে তারা মুলাকাত করতে যাচ্ছে, কিন্তু আমি তোমাদের দেখছি একটি অজ্ঞানতাকুশল সম্প্রদায়।
وَیَـٰقَوۡمِ مَن یَنصُرُنِی مِنَ ٱللَّهِ إِن طَرَدتُّهُمۡۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿30﴾
আর হে আমার জাতি! আমি যদি তাদের তাড়িয়ে দেই তাহলে আমাকে আল্লাহ হতে রেহাই দেবে কে? তোমরা কি চিন্তা করে দেখ না?
''আর হে আমার সম্প্রদায়! কে আমাকে সাহায্য করবে আল্লাহ্র বিরুদ্ধে যদি আমি তাদের তাড়িয়ে দিই? তোমরা কি তবে ভেবে দেখবে না?
وَلَاۤ أَقُولُ لَكُمۡ عِندِی خَزَاۤىِٕنُ ٱللَّهِ وَلَاۤ أَعۡلَمُ ٱلۡغَیۡبَ وَلَاۤ أَقُولُ إِنِّی مَلَكࣱ وَلَاۤ أَقُولُ لِلَّذِینَ تَزۡدَرِیۤ أَعۡیُنُكُمۡ لَن یُؤۡتِیَهُمُ ٱللَّهُ خَیۡرًاۖ ٱللَّهُ أَعۡلَمُ بِمَا فِیۤ أَنفُسِهِمۡ إِنِّیۤ إِذࣰا لَّمِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿31﴾
আর আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও জানি; একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা; আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্ছিত আল্লাহ তাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব।
''আর আমি তোমাদের বলি না -- আমার কাছে আল্লাহ্র ধনভান্ডার রয়েছে, আর আমি অদৃশ্য সন্বন্ধেও জানি না, আর আমি বলি না যে আমি তো একজন ফিরিশ্তা, আর তোমাদের চোখে যাদের নগণ্য ভাব তাদের সন্বন্ধে আমি বলি না যে আল্লাহ্ কখনো তাদের করুণাভান্ডার দেবেন না। আল্লাহ্ ভাল জানেন যা-কিছু আছে তাদের অন্তরে, -- তাহলে আমি আলবৎ অন্যায়কারীদের মধ্যেকার হতাম।’’
قَالُوا۟ یَـٰنُوحُ قَدۡ جَـٰدَلۡتَنَا فَأَكۡثَرۡتَ جِدَ ٰلَنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿32﴾
তারা বলল-হে নূহ! আমাদের সাথে আপনি তর্ক করেছেন এবং অনেক কলহ করেছেন। এখন আপনার সেই আযাব নিয়ে আসুন, যে সম্পর্কে আপনি আমাদিগকে সতর্ক করেছেন, যদি আপনি সত্যবাদী হয়ে থাকেন।
তারা বললে -- ''হে নূহ্! তুমি অবশ্যই আমাদের সঙ্গে বিতর্ক করছ আর আমাদের সঙ্গে তর্ক বাড়িয়ে তুলেছ, সুতরাং আমাদের কাছে নিয়ে এস যার ভয় আমাদের দেখাচ্ছ, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’
قَالَ إِنَّمَا یَأۡتِیكُم بِهِ ٱللَّهُ إِن شَاۤءَ وَمَاۤ أَنتُم بِمُعۡجِزِینَ ﴿33﴾
তিনি বলেন, উহা তোমাদের কাছে আল্লাহই আনবেন, যদি তিনি ইচ্ছা করেন তখন তোমরা পালিয়ে তাঁকে অপারগ করতে পারবে না।
তিনি বললেন -- ''শুধু আল্লাহ্ই তোমাদের উপরে তা নিয়ে আসবেন যদি তিনি ইচ্ছা করেন, আর তোমরা এড়িয়ে যাবার নও।
وَلَا یَنفَعُكُمۡ نُصۡحِیۤ إِنۡ أَرَدتُّ أَنۡ أَنصَحَ لَكُمۡ إِن كَانَ ٱللَّهُ یُرِیدُ أَن یُغۡوِیَكُمۡۚ هُوَ رَبُّكُمۡ وَإِلَیۡهِ تُرۡجَعُونَ ﴿34﴾
আর আমি তোমাদের নসীহত করতে চাইলেও তা তোমাদের জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যদি আল্লাহ তোমাদেরকে গোমরাহ করতে চান; তিনিই তোমাদের পালনকর্তা এবং তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরে যেতে হবে।
''আর আমার উপদেশ তোমাদের উপকার করবে না যদিও আমি চাই তোমাদের উপদেশ দিতে, যদি আল্লাহ্ চান যে তিনি তোমাদের বিভ্রান্ত করবেন। তিনিই তোমাদের প্রভু, আর তাঁর কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।’’
أَمۡ یَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ إِنِ ٱفۡتَرَیۡتُهُۥ فَعَلَیَّ إِجۡرَامِی وَأَنَا۠ بَرِیۤءࣱ مِّمَّا تُجۡرِمُونَ ﴿35﴾
তারা কি বলে? আপনি কোরআন রচনা করে এনেছেন? আপনি বলে দিন আমি যদি রচনা করে এনে থাকি, তবে সে অপরাধ আমার, আর তোমরা যেসব অপরাধ কর তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই।
অথবা তারাও কি বলে -- ''তিনি এটি বানিয়েছেন?’’ বলো -- ''যদি আমি এটি বানিয়ে থাকি তবে আমার উপরেই আমার অপরাধ, আর তোমরা যে-সব অপরাধ করছ সে-সব থেকে আমি নিষ্কৃত।’’
وَأُوحِیَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُۥ لَن یُؤۡمِنَ مِن قَوۡمِكَ إِلَّا مَن قَدۡ ءَامَنَ فَلَا تَبۡتَىِٕسۡ بِمَا كَانُوا۟ یَفۡعَلُونَ ﴿36﴾
আর নূহ (আঃ) এর প্রতি ওহী প্রেরণ করা হলো যে, যারা ইতিমধ্যেই ঈমান এনেছে তাদের ছাড়া আপনার জাতির অন্য কেউ ঈমান আনবেনা এতএব তাদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হবেন না।
আর নূহের কাছে প্রত্যাদেশ দেয়া হল -- ''নিঃসন্দেহ তোমার সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে কেউ কখনও বিশ্বাস করবে না সে ব্যতীত যে ইতিমধ্যে বিশ্বাস করেছে, সুতরাং তারা যা করে চলেছে তার জন্য দুঃখ কর না।
وَٱصۡنَعِ ٱلۡفُلۡكَ بِأَعۡیُنِنَا وَوَحۡیِنَا وَلَا تُخَـٰطِبۡنِی فِی ٱلَّذِینَ ظَلَمُوۤا۟ إِنَّهُم مُّغۡرَقُونَ ﴿37﴾
আর আপনি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশ মোতাবেক একটি নৌকা তৈরী করুন এবং পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোন কথা বলবেন না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে।
''আর আমাদের চোখের সামনে ও আমাদের প্রত্যাদেশ মতে জাহাজ তৈরি কর, আর যারা অত্যাচার করেছে তাদের সন্বন্ধে আমার কাছে আবেদন কর না, নিঃসন্দেহ তারা নিমজ্জিত হবে।”
وَیَصۡنَعُ ٱلۡفُلۡكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَیۡهِ مَلَأࣱ مِّن قَوۡمِهِۦ سَخِرُوا۟ مِنۡهُۚ قَالَ إِن تَسۡخَرُوا۟ مِنَّا فَإِنَّا نَسۡخَرُ مِنكُمۡ كَمَا تَسۡخَرُونَ ﴿38﴾
তিনি নৌকা তৈরী করতে লাগলেন, আর তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন পার্শ্ব দিয়ে যেত, তখন তাঁকে বিদ্রুপ করত। তিনি বললেন, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে তোমরা যেমন উপহাস করছ আমরাও তদ্রুপ তোমাদের উপহাস করছি।
আর তিনি জাহাজ তৈরি করতে লাগলেন, আর যখনই তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানেরা তাঁর পাশ দিয়ে যেতো তারা তাঁর প্রতি উপহাস করত। তিনি বলেছিলেন -- ''যদি তোমরা আমাদের সন্বন্ধে হাসাহাসি কর তবে আমরাও তোমাদের সন্বন্ধে তেমনি হাসব যেমন তোমরা হাসছ।
فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن یَأۡتِیهِ عَذَابࣱ یُخۡزِیهِ وَیَحِلُّ عَلَیۡهِ عَذَابࣱ مُّقِیمٌ ﴿39﴾
অতঃপর অচিরেই জানতে পারবে-লাঞ্ছনাজনক আযাব কার উপর আসে এবং চিরস্থায়ী আযাব কার উপর অবতরণ করে।
''সুতরাং অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কার উপরে শাস্তি আসছে যা তাকে লাঞ্ছিত করে, আর কার উপরে নামছে স্থায়ী শাস্তি।
حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءَ أَمۡرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ قُلۡنَا ٱحۡمِلۡ فِیهَا مِن كُلࣲّ زَوۡجَیۡنِ ٱثۡنَیۡنِ وَأَهۡلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَیۡهِ ٱلۡقَوۡلُ وَمَنۡ ءَامَنَۚ وَمَاۤ ءَامَنَ مَعَهُۥۤ إِلَّا قَلِیلࣱ ﴿40﴾
অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল এবং ভুপৃষ্ঠ উচ্ছসিত হয়ে উঠল, আমি বললামঃ সর্বপ্রকার জোড়ার দুটি করে এবং যাদের উপরে পূর্বহেߦ#2439; হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদি দিয়ে, আপনার পরিজনবর্গ ও সকল ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল।
যে পর্যন্ত না আমাদের আদেশ এল এবং মাটঘাট প্লাবিত হল, আমরা বললাম -- ''এতে বোঝাই কর প্রত্যেক জাতের দুটি -- এক জোড়া, এবং তোমার পরিবার -- তাকে ছাড়া যার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত বর্তিত হয়েছে, আর যারা বিশ্বাস করেছে তাদের।’’ আর যারা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাস করেছিল তারা তো স্বল্পসংখ্যক।
۞ وَقَالَ ٱرۡكَبُوا۟ فِیهَا بِسۡمِ ٱللَّهِ مَجۡرٜىٰهَا وَمُرۡسَىٰهَاۤۚ إِنَّ رَبِّی لَغَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿41﴾
আর তিনি বললেন, তোমরা এতে আরোহন কর। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। আমার পালনকর্তা অতি ক্ষমাপরায়ন, মেহেরবান।
আর তিনি বললেন -- ''এতে আরোহণ কর, আল্লাহ্র নামে হোক এর যাত্রা ও এর পৌঁছা, নিঃসন্দেহ আমার প্রভু তো পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।’’
وَهِیَ تَجۡرِی بِهِمۡ فِی مَوۡجࣲ كَٱلۡجِبَالِ وَنَادَىٰ نُوحٌ ٱبۡنَهُۥ وَكَانَ فِی مَعۡزِلࣲ یَـٰبُنَیَّ ٱرۡكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿42﴾
আর নৌকাখানি তাদের বহন করে চলল পর্বত প্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝে, আর নূহ (আঃ) তাঁর পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফেরদের সাথে থেকো না।
আর তাদের নিয়ে এটি বয়ে চললো পাহাড়ের মত ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে, আর নূহ তাঁর পুত্রকে ডেকে বললেন আর সে ডাঙায় রয়েছিল, -- ''হে আমার পুত্র! আমাদের সঙ্গে চড়, আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গী হয়ো না।’’
قَالَ سَـَٔاوِیۤ إِلَىٰ جَبَلࣲ یَعۡصِمُنِی مِنَ ٱلۡمَاۤءِۚ قَالَ لَا عَاصِمَ ٱلۡیَوۡمَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِ إِلَّا مَن رَّحِمَۚ وَحَالَ بَیۡنَهُمَا ٱلۡمَوۡجُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُغۡرَقِینَ ﴿43﴾
সে বলল, আমি অচিরেই কোন পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নূহ (আঃ) বল্লেন আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কোন রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হল।
সে বললে -- ''আমি এখনি কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নেব, তা আমাকে প্লাবন থেকে রক্ষা করবে।’’ তিনি বললেন -- ''আজকের দিনে আল্লাহ্র হুকুম থেকে রক্ষা করার কেউ নেই, শুধু সে যাকে তিনি দয়া করবেন।’’ আর তাদের উভয়ের মধ্যে ঢেউ এসে পড়ল, ফলে সে হয়ে গেল নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত।
وَقِیلَ یَـٰۤأَرۡضُ ٱبۡلَعِی مَاۤءَكِ وَیَـٰسَمَاۤءُ أَقۡلِعِی وَغِیضَ ٱلۡمَاۤءُ وَقُضِیَ ٱلۡأَمۡرُ وَٱسۡتَوَتۡ عَلَى ٱلۡجُودِیِّۖ وَقِیلَ بُعۡدࣰا لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿44﴾
আর নির্দেশ দেয়া হল-হে পৃথিবী! তোমার পানি গিলে ফেল, আর হে আকাশ, ক্ষান্ত হও। আর পানি হ্রাস করা হল এবং কাজ শেষ হয়ে গেল, আর জুদী পর্বতে নৌকা ভিড়ল এবং ঘোষনা করা হল, দুরাত্না কাফেররা নিপাত যাক।
এরপর বলা হল -- ''হে পৃথিবী। তোমার জল শোষণ করে নাও, আর হে আকাশ! ক্ষান্ত হও।’’ তখন জল শুকিয়ে এটি জুদী পর্বতের উপরে থামল, আর বলা হল -- ''দূর হোক অন্যায়কারিগোষ্ঠী!’’
وَنَادَىٰ نُوحࣱ رَّبَّهُۥ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ٱبۡنِی مِنۡ أَهۡلِی وَإِنَّ وَعۡدَكَ ٱلۡحَقُّ وَأَنتَ أَحۡكَمُ ٱلۡحَـٰكِمِینَ ﴿45﴾
আর নূহ (আঃ) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী।
আর নূহ্ তাঁর প্রভুকে ডাকলেন ও বললেন -- ''আমার প্রভু! আমার পুত্র আলবৎ আমার পরিবারভুক্ত আর তোমার ওয়াদা নিঃসন্দেহ সত্য, আর তুমি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক।’’
قَالَ یَـٰنُوحُ إِنَّهُۥ لَیۡسَ مِنۡ أَهۡلِكَۖ إِنَّهُۥ عَمَلٌ غَیۡرُ صَـٰلِحࣲۖ فَلَا تَسۡـَٔلۡنِ مَا لَیۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۖ إِنِّیۤ أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ ٱلۡجَـٰهِلِینَ ﴿46﴾
আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।
তিনি বললেন -- ''হে নূহ! নিঃসন্দেহ সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিঃসন্দেহ তার কাজকর্ম সৎকর্মের বর্হিভূত, কাজেই আমার কাছে সওয়াল কর না যে-সন্বন্ধে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। আমি অবশ্যই তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি -- পাছে তুমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়।’’
قَالَ رَبِّ إِنِّیۤ أَعُوذُ بِكَ أَنۡ أَسۡـَٔلَكَ مَا لَیۡسَ لِی بِهِۦ عِلۡمࣱۖ وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِی وَتَرۡحَمۡنِیۤ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿47﴾
নূহ (আঃ) বলেন-হে আমার পালনকর্তা আমার যা জানা নেই এমন কোন দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।
তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমি অবশ্যই তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি পাছে যে ব্যাপারে আমার কোনো জ্ঞান নেই সে- সন্বন্ধে তোমার কাছে প্রার্থনা করে ফেলি। আর তুমি যদি আমাকে রক্ষা না কর ও আমার প্রতি করুণা না দর্শাও তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’’
قِیلَ یَـٰنُوحُ ٱهۡبِطۡ بِسَلَـٰمࣲ مِّنَّا وَبَرَكَـٰتٍ عَلَیۡكَ وَعَلَىٰۤ أُمَمࣲ مِّمَّن مَّعَكَۚ وَأُمَمࣱ سَنُمَتِّعُهُمۡ ثُمَّ یَمَسُّهُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِیمࣱ ﴿48﴾
হুকুম হল-হে নূহ (আঃ)! আমার পক্ষ হতে নিরাপত্তা এবং আপনার নিজের ও সঙ্গীয় সম্প্রদায়গুলির উপর বরকত সহকারে অবতরণ করুণ। আর অন্যান্য যেসব সম্প্রদায় রয়েছে আমি তাদের কেও উপকৃত হতে দেব। অতঃপর তাদের উপর আমার দরুন আযাব আপতিত হবে।
বলা হল -- ''হে নূহ! অবতরণ কর আমাদের থেকে শান্তির সাথে, আর তোমার উপরে ও তোমার সাথে যারা রয়েছে তাদের সম্প্রদায়ের উপরে আশীর্বাদ নিয়ে। আর এমন জাতিরাও হবে যাদের আমরা অচিরেই জীবনোপকরণ দেব, তারপর আমাদের থেকে মর্মন্তুদ শাস্তি তাদের স্পর্শ করবে।’’
تِلۡكَ مِنۡ أَنۢبَاۤءِ ٱلۡغَیۡبِ نُوحِیهَاۤ إِلَیۡكَۖ مَا كُنتَ تَعۡلَمُهَاۤ أَنتَ وَلَا قَوۡمُكَ مِن قَبۡلِ هَـٰذَاۖ فَٱصۡبِرۡۖ إِنَّ ٱلۡعَـٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِینَ ﴿49﴾
এটি গায়বের খবর, আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরন করছি। ইতিপূর্বে এটা আপনার এবং আপনার জাতির জানা ছিল না। আপনি ধৈর্য্যধারণ করুন। যারা ভয় করে চলে, তাদের পরিণাম ভাল, সন্দেহ নেই।
এসব হচ্ছে অদৃশ্য সন্বন্ধে সংবাদ যা আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করছি। তুমি এর আগে এ-সব জানতে না -- তুমিও না, তোমার সম্প্রদায়ও না। অতএব অধ্যবসায় অবলন্বন কর। নিঃসন্দেহ শুভপরিণাম ধর্মভীরুদেরই জন্যে।
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمۡ هُودࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۤۖ إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا مُفۡتَرُونَ ﴿50﴾
আর আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদকে প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন-হে আমার জাতি, আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ভিন্ন তোমাদের কোন মাবুদ নেই, তোমরা সবাই মিথ্যা আরোপ করছ।
আর 'আদ-এর কাছে তাদের ভাই হূদকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা কর, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তোমরা তো শুধু মিথ্যা রচনাকারী।
یَـٰقَوۡمِ لَاۤ أَسۡـَٔلُكُمۡ عَلَیۡهِ أَجۡرًاۖ إِنۡ أَجۡرِیَ إِلَّا عَلَى ٱلَّذِی فَطَرَنِیۤۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿51﴾
হে আমার জাতি! আমি এজন্য তোমাদের কাছে কোন মজুরী চাই না; আমার মজুরী তাঁরই কাছে যিনি আমাকে পয়দা করেছেন; তবু তোমরা কেন বোঝ না?
''হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাইছি না। আমার শ্রমফল কেবল তাঁর কাছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবে বুঝবে না?
وَیَـٰقَوۡمِ ٱسۡتَغۡفِرُوا۟ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوۤا۟ إِلَیۡهِ یُرۡسِلِ ٱلسَّمَاۤءَ عَلَیۡكُم مِّدۡرَارࣰا وَیَزِدۡكُمۡ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمۡ وَلَا تَتَوَلَّوۡا۟ مُجۡرِمِینَ ﴿52﴾
আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।
''আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের প্রভুর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁর দিকে ফেরো, তিনি আকাশকে তোমাদের প্রতি পাঠাবেন বর্ষণোন্নুখ করে, আর তোমাদের শক্তির উপরে তোমাদের শক্তি বাড়িয়ে দেবেন, আর তোমরা ফিরে যেও না অপরাধী হয়ে।’’
قَالُوا۟ یَـٰهُودُ مَا جِئۡتَنَا بِبَیِّنَةࣲ وَمَا نَحۡنُ بِتَارِكِیۤ ءَالِهَتِنَا عَن قَوۡلِكَ وَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِینَ ﴿53﴾
তারা বলল-হে হুদ, তুমি আমাদের কাছে কোন প্রমাণ নিয়ে আস নাই, আমরা তোমার কথায় আমাদের দেব-দেবীদের বর্জন করতে পারি না আর আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনয়নকারীও নই।
তারা বললে -- ''হে হূদ! তুমি আমাদের কাছে কোনো স্পষ্ট প্রমাণ আন নি, আর তোমার কথায় আমরা আমাদের দেবতাদের পরিত্যাগ করতে যাচ্ছি না, আর তোমার প্রতি আমরা বিশ্বাসীও নই।
إِن نَّقُولُ إِلَّا ٱعۡتَرَىٰكَ بَعۡضُ ءَالِهَتِنَا بِسُوۤءࣲۗ قَالَ إِنِّیۤ أُشۡهِدُ ٱللَّهَ وَٱشۡهَدُوۤا۟ أَنِّی بَرِیۤءࣱ مِّمَّا تُشۡرِكُونَ ﴿54﴾
বরং আমরাও তো বলি যে, আমাদের কোন দেবতা তোমার উপরে শোচনীয় ভূত চাপিয়ে দিয়েছে। হুদ বললেন-আমি আল্লাহকে সাক্ষী করেছি আর তোমাও সাক্ষী থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক নাই তাঁদের সাথে যাদের কে তোমরা শরিক করছ;
''আমরা বলি নি এ ছাড়া অন্য কিছু যে আমাদের কোনো দেবতা তোমাতে ভর করেছেন খারাপ ভাবে।’’ তিনি বললেন -- ''নিঃসন্দেহ আমি আল্লাহ্কে সাক্ষী করি, আর তোমরাও সাক্ষী থেকো যে আমি আলবাৎ সংস্রবহীন তাদের সঙ্গে যাদের তোমরা শরিক কর --
مِن دُونِهِۦۖ فَكِیدُونِی جَمِیعࣰا ثُمَّ لَا تُنظِرُونِ ﴿55﴾
তাকে ছাড়া, তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর আমাকে কোন অবকাশ দিও না।
''তাঁকে ছেড়ে দিয়ে, কাজেই তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাও এবং আমাকে অবকাশ দিয় না।
إِنِّی تَوَكَّلۡتُ عَلَى ٱللَّهِ رَبِّی وَرَبِّكُمۚ مَّا مِن دَاۤبَّةٍ إِلَّا هُوَ ءَاخِذُۢ بِنَاصِیَتِهَاۤۚ إِنَّ رَبِّی عَلَىٰ صِرَ ٰطࣲ مُّسۡتَقِیمࣲ ﴿56﴾
আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার পালকর্তার সরল পথে সন্দেহ নেই।
''আমি অবশ্যই নির্ভর করি আল্লাহ্র উপরে -- যিনি আমার প্রভু ও তোমাদেরও প্রভু। এমন কোনো প্রাণী নেই যার আলচুল তিনি ধরে না আছেন। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু সহজ-সঠিক পথে অধিষ্ঠিত।
فَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُم مَّاۤ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦۤ إِلَیۡكُمۡۚ وَیَسۡتَخۡلِفُ رَبِّی قَوۡمًا غَیۡرَكُمۡ وَلَا تَضُرُّونَهُۥ شَیۡـًٔاۚ إِنَّ رَبِّی عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءٍ حَفِیظࣱ ﴿57﴾
তথাপি যদি তোমরা মুখ ফেরাও, তবে আমি তোমাদেরকে তা পৌছিয়েছি যা আমার কাছে তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছে; আর আমার পালনকর্তা অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, আর তোমরা তাঁর কিছুই বিগড়াতে পারবে না; নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগারই প্রতিটি বস্তুর হেফাজতকারী।
''কিন্তু তোমরা যদি ফিরে যাও তবে আমি নিশ্চয় তোমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি যা দিয়ে আমাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আর আমার প্রভু তোমাদের থেকে পৃথক কোনো সম্প্রদায়কে স্থলাভিষিক্ত করবেন, আর তোমরা তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু সব-কিছুর উপরে তত্ত্বাবধায়ক।’’
وَلَمَّا جَاۤءَ أَمۡرُنَا نَجَّیۡنَا هُودࣰا وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةࣲ مِّنَّا وَنَجَّیۡنَـٰهُم مِّنۡ عَذَابٍ غَلِیظࣲ ﴿58﴾
আর আমার আদেশ যখন উপস্থিত হল, তখন আমি নিজ রহমতে হুদ এবং তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে পরিত্রাণ করি এবং তাদেরকে এক কঠিন শাস্তি থেকে রক্ষা করি।
আর যখন আমাদের নির্দেশ ঘনিয়ে এল তখন আমরা হূদকে ও তাঁর সঙ্গে যারা আস্থা রেখেছিল তাদের উদ্ধার করেছিলাম আমাদের অনুগ্রহের ফলে, আর আমরা তাদের উদ্ধার করেছিলাম কঠিন শাস্তি থেকে।
وَتِلۡكَ عَادࣱۖ جَحَدُوا۟ بِـَٔایَـٰتِ رَبِّهِمۡ وَعَصَوۡا۟ رُسُلَهُۥ وَٱتَّبَعُوۤا۟ أَمۡرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِیدࣲ ﴿59﴾
এ ছিল আদ জাতি, যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতকে অমান্য করেছে, আর তদীয় রসূলগণের অবাধ্যতা করেছে এবং প্রত্যেক উদ্ধত বিরোধীদের আদেশ পালন করেছে।
আর এই ছিল 'আদ জাতি, তারা তাদের প্রভুর নির্দেশাবলী অস্বীকার করেছিল ও তাঁর রসূলগণকে অমান্য করেছিল, আর অনুসরণ করেছিল।
وَأُتۡبِعُوا۟ فِی هَـٰذِهِ ٱلدُّنۡیَا لَعۡنَةࣰ وَیَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِۗ أَلَاۤ إِنَّ عَادࣰا كَفَرُوا۟ رَبَّهُمۡۗ أَلَا بُعۡدࣰا لِّعَادࣲ قَوۡمِ هُودࣲ ﴿60﴾
এ দুনিয়ায় তাদের পিছনে পিছনে লা’নত রয়েছে এবং কেয়ামতের দিনেও; জেনে রাখ, আদ জাতি তাদের পালনকর্তাকে অস্বীকার করেছে, হুদের জ্ঞাতি আদ জাতির প্রতি অভিসম্পাত রয়েছে জেনে রাখ।
আর এই দুনিয়াতে অভিশাপকে তাদের পিছু ধরান হয়েছিল, আর কিয়ামতের দিনেও। এটি কি নয় যে 'আদ জাতি তাদের প্রভুকে অস্বীকার করেছিল? এটি কি নয় -- “দূর হও 'আদ জাতি -- হূদের সম্প্রদায়!’’
۞ وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَـٰلِحࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ وَٱسۡتَعۡمَرَكُمۡ فِیهَا فَٱسۡتَغۡفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوۤا۟ إِلَیۡهِۚ إِنَّ رَبِّی قَرِیبࣱ مُّجِیبࣱ ﴿61﴾
আর সামুদ জাতি প্রতি তাদের ভাই সালেহ কে প্রেরণ করি; তিনি বললেন, হে আমার জাতি। আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোন উপাস্য নাই। তিনিই যমীন হতে তোমাদেরকে পয়দা করেছেন, তন্মধ্যে তোমাদেরকে বসতি দান করেছেন। অতএব; তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে চল আমার পালনকর্তা নিকটেই আছেন, কবুল করে থাকেন; সন্দেহ নেই।
আর ছামুদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহ্কে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা কর, তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। তিনি তোমাদের গড়ে তুলেছেন মাটি থেকে আর এতেই তোমাদের বসবাস করিয়েছেন, অতএব তাঁর কাছেই পরিত্রাণ খোঁজো এবং তাঁর দিকেই ফেরো। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু নিকটেই, জবাবদয়াক।’’
قَالُوا۟ یَـٰصَـٰلِحُ قَدۡ كُنتَ فِینَا مَرۡجُوࣰّا قَبۡلَ هَـٰذَاۤۖ أَتَنۡهَىٰنَاۤ أَن نَّعۡبُدَ مَا یَعۡبُدُ ءَابَاۤؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِی شَكࣲّ مِّمَّا تَدۡعُونَاۤ إِلَیۡهِ مُرِیبࣲ ﴿62﴾
তারা বলল-হে সালেহ, ইতিপূর্বে তোমার কাছে আমাদের বড় আশা ছিল। আমাদের বাপ-দাদা যা পূজা করত তুমি কি আমাদেরকে তার পূজা করতে নিষেধ কর? কিন্তু যার প্রতি তুমি আমাদের আহবান জানাচ্ছ আমাদের তাতে এমন সন্দেহ রয়েছে যে, মন মোটেই সায় দিচ্ছে না।
তারা বললে -- ''হে সালিহ্! তুমি তো আমাদের কাছে এর আগে ছিলে আশা-ভরসার পাত্র, তুমি কি আমাদের পিতৃপুরুষরা যাদের উপাসনা করত তাদের উপাসনা করতে আমাদের নিষেধ করছ? আর আমরা তো অবশ্যই সন্দেহের মধ্যে রয়েছি সে-সন্বন্ধে যার প্রতি তুমি আমাদের আহ্বান করছ -- বিভ্রান্তিকর!’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ أَرَءَیۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّی وَءَاتَىٰنِی مِنۡهُ رَحۡمَةࣰ فَمَن یَنصُرُنِی مِنَ ٱللَّهِ إِنۡ عَصَیۡتُهُۥۖ فَمَا تَزِیدُونَنِی غَیۡرَ تَخۡسِیرࣲ ﴿63﴾
সালেহ বললেন-হে আমার জাতি! তোমরা কি মনে কর, আমি যদি আমার পালনকর্তার পক্ষ হতে বুদ্ধি বিবেচনা লাভ করে থাকি আর তিনি যদি আমাকে নিজের তরফ হতে রহমত দান করে থাকেন, অতঃপর আমি যদি তাঁর অবাধ্য হই তবে তার থেকে কে আমায় রক্ষা করবে? তোমরা তো আমার ক্ষতি ছাড়া কিছুই বৃদ্ধি করতে পরবে না
তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা কি ভেবে দেখেছ -- আমি যদি আমার প্রভু থেকে পাওয়া স্পষ্ট-প্রমাণের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর কাছ থেকে আমাকে অনুগ্রহ দান করে থাকেন তবে কে আমাকে সাহায্য করবে আল্লাহ্র কবল থেকে যদি আমি তাঁর অবাধ্যতা করি? সুতরাং তোমরা তো ক্ষতি সাধন করা ছাড়া আমার আর কিছুই বাড়াবে না।’’
وَیَـٰقَوۡمِ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَایَةࣰۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِیۤ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوۤءࣲ فَیَأۡخُذَكُمۡ عَذَابࣱ قَرِیبࣱ ﴿64﴾
আর হে আমার জাতি! আল্লাহর এ উষ্ট্রীটি তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব তাকে আল্লাহর যমীনে বিচরণ করে খেতে দাও, এবং তাকে মন্দভাবে স্পর্শও করবে না। নতুবা অতি সত্বর তোমাদেরকে আযাব পাকড়াও করবে।
''আর হে আমার সম্প্রদায়! এটি হচ্ছে আল্লাহ্র উষ্টী, -- তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন, অতএব এটিকে ছেড়ে দাও আল্লাহ্র মাটিতে চরে খেতে, আর তাকে কোনো ক্ষতিতে ক্ষতি কর না, পাছে আসন্ন শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করে।’’
فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا۟ فِی دَارِكُمۡ ثَلَـٰثَةَ أَیَّامࣲۖ ذَ ٰلِكَ وَعۡدٌ غَیۡرُ مَكۡذُوبࣲ ﴿65﴾
তবু তারা উহার পা কেটে দিল। তখন সালেহ বললেন-তোমরা নিজেদের গৃহে তিনটি দিন উপভোগ করে নাও। ইহা এমন ওয়াদা যা মিথ্যা হবে না।
কিন্তু তারা তাকে হত্যা করলে, সেজন্য তিনি বললেন -- ''তোমরা তোমাদের বাড়িঘরে তিন দিন জীবন উপভোগ করে নাও, এ একটি প্রতিশ্রুতি যা মিথ্যা হওয়ার নয়।’’
فَلَمَّا جَاۤءَ أَمۡرُنَا نَجَّیۡنَا صَـٰلِحࣰا وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةࣲ مِّنَّا وَمِنۡ خِزۡیِ یَوۡمِىِٕذٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ ٱلۡقَوِیُّ ٱلۡعَزِیزُ ﴿66﴾
অতঃপর আমার আযাব যখন উপস্থিত হল, তখন আমি সালেহকে ও তদীয় সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে উদ্ধার করি, এবং সেদিনকার অপমান হতে রক্ষা করি। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা তিনি সর্বশক্তিমান পরাক্রমশালী।
তারপর যখন আমাদের নির্দেশ এল তখন আমরা সলিহকে ও তাঁর সঙ্গে যারা আস্থা রেখেছিল তাদের উদ্ধার করেছিলাম আমাদের অনুগ্রহের ফলে, আর সেই দিনের লাঞ্ছনা থেকে। নিঃসন্দেহর তোমার প্রভু -- তিনিই মহাবলীয়ান, মহাশক্তিশালী।
وَأَخَذَ ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ ٱلصَّیۡحَةُ فَأَصۡبَحُوا۟ فِی دِیَـٰرِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿67﴾
আর ভয়ঙ্কর গর্জন পাপিষ্ঠদের পাকড়াও করল, ফলে ভোর হতে না হতেই তারা নিজ নিজ গৃহসমূহে উপুর হয়ে পড়ে রইল।
অতঃপর প্রচন্ড আওয়াজ পাকড়াও করল তাদের যারা অত্যাচার করেছিল, কাজেই তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরে নিথরদেহী, --
كَأَن لَّمۡ یَغۡنَوۡا۟ فِیهَاۤۗ أَلَاۤ إِنَّ ثَمُودَا۟ كَفَرُوا۟ رَبَّهُمۡۗ أَلَا بُعۡدࣰا لِّثَمُودَ ﴿68﴾
যেন তাঁরা কোনদিনই সেখানে ছিল না। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামুদ জাতি তাদের পালনকর্তার প্রতি অস্বীকার করেছিল। আরো শুনে রাখ, সামুদ জাতির জন্য অভিশাপ রয়েছে।
যেন তারা কখনও সেখানে বসবাস করে নি। এটি কি নয় যে ছামুদ জাতি তাদের প্রভুকে অস্বীকার করেছিল? এটি কি নয় -- ''দূর হও ছামুদ জাতি!’’?
وَلَقَدۡ جَاۤءَتۡ رُسُلُنَاۤ إِبۡرَ ٰهِیمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُوا۟ سَلَـٰمࣰاۖ قَالَ سَلَـٰمࣱۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَاۤءَ بِعِجۡلٍ حَنِیذࣲ ﴿69﴾
আর অবশ্যই আমার প্রেরিত ফেরেশতারা ইব্রাহীমেরে কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তারা বলল সালাম, তিনিও বললেন-সালাম। অতঃপর অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি একটি ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলেন!
আর আমাদের বাণীবাহকরা ইব্রাহীমের কাছে এসেছিলেন সুসংবাদ নিয়ে, তারা বললে -- ''সালাম’’। তিনিও বললেন -- ''সালাম’’, আর তিনি দেরি করলেন না একটি কাবাব করা গোরুর বাছুর আনতে।
فَلَمَّا رَءَاۤ أَیۡدِیَهُمۡ لَا تَصِلُ إِلَیۡهِ نَكِرَهُمۡ وَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِیفَةࣰۚ قَالُوا۟ لَا تَخَفۡ إِنَّاۤ أُرۡسِلۡنَاۤ إِلَىٰ قَوۡمِ لُوطࣲ ﴿70﴾
কিন্তু যখন দেখলেন যে, আহার্য্যের দিকে তাদের হস্ত প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তিনি সন্ধিগ্ধ হলেন এবং মনে মনে তাঁদের সম্পর্কে ভয় অনুভব করতে লাগলেন। তারা বলল-ভয় পাবেন না। আমরা লূতের কওমের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
কিন্তু যখন তিনি দেখলেন তাদের হাত ওর দিকে বাড়ছে না তখন তিনি তাদের বিস্ময়কর ভাবলেন এবাং তাদের সন্বন্ধে তিনি ভয় অনুভব করলেন। তারা বললে -- ''ভয় করো না, আমরা লুতের লোকদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’’
وَٱمۡرَأَتُهُۥ قَاۤىِٕمَةࣱ فَضَحِكَتۡ فَبَشَّرۡنَـٰهَا بِإِسۡحَـٰقَ وَمِن وَرَاۤءِ إِسۡحَـٰقَ یَعۡقُوبَ ﴿71﴾
তাঁর স্ত্রীও নিকটেই দাড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরের ইয়াকুবেরও।
আর তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং তিনি হাসলেন, আমরা তখন তাঁকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবের।
قَالَتۡ یَـٰوَیۡلَتَىٰۤ ءَأَلِدُ وَأَنَا۠ عَجُوزࣱ وَهَـٰذَا بَعۡلِی شَیۡخًاۖ إِنَّ هَـٰذَا لَشَیۡءٌ عَجِیبࣱ ﴿72﴾
সে বলল-কি দুর্ভাগ্য আমার! আমি সন্তান প্রসব করব? অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ, এতো ভারী আশ্চর্য কথা।
তিনি বললেন -- ''হায় আমার আফসোস! আমি কি সন্তান জন্ম দেব যখন আমি বৃদ্ধা হয়ে গেছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ? এটি নিশ্চয়ই আজব ব্যাপার।’’
قَالُوۤا۟ أَتَعۡجَبِینَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۖ رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَـٰتُهُۥ عَلَیۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَیۡتِۚ إِنَّهُۥ حَمِیدࣱ مَّجِیدࣱ ﴿73﴾
তারা বলল-তুমি আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে বিস্ময়বোধ করছ? হে গৃহবাসীরা, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও প্রভুত বরকত রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত মহিমাময়।
তারা বললে -- ''তুমি কি তাজ্জব হচ্ছ আল্লাহ্র হুকুমের প্রতি? আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও তাঁর আশীর্বাদ তোমাদের উপরে রয়েছে, হে পরিবারবর্গ, নিঃসন্দেহ তিনি প্রশংসার্হ, মহিমান্নিত।
فَلَمَّا ذَهَبَ عَنۡ إِبۡرَ ٰهِیمَ ٱلرَّوۡعُ وَجَاۤءَتۡهُ ٱلۡبُشۡرَىٰ یُجَـٰدِلُنَا فِی قَوۡمِ لُوطٍ ﴿74﴾
অতঃপর যখন ইব্রাহীম (আঃ) এর আতঙ্ক দূর হল এবং তিনি সুসংবাদ প্রাপ্ত হলেন, তখন তিনি আমার সাথে তর্ক শুরু করলেন কওমে লূত সম্পর্কে।
তারপর যখন ইব্রাহীমের থেকে ভয় চলে গেল এবং তাঁর কাছে সুসংবাদ এল তখন তিনি আমাদের কাছে কাকুতি-মিনতি শুরু করলেন লূতের লোকদের সম্পর্কে।
إِنَّ إِبۡرَ ٰهِیمَ لَحَلِیمٌ أَوَّ ٰهࣱ مُّنِیبࣱ ﴿75﴾
ইব্রাহীম (আঃ) বড়ই ধৈর্য্যশীল, কোমল অন্তর, আল্লাহমুখী সন্দেহ নেই।
নিঃসন্দেহ ইব্রাহীম তো ছিলেন সহনশীল, কোমল হৃদয়, সতত প্রত্যাবর্তনকারী।
یَـٰۤإِبۡرَ ٰهِیمُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَـٰذَاۤۖ إِنَّهُۥ قَدۡ جَاۤءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَإِنَّهُمۡ ءَاتِیهِمۡ عَذَابٌ غَیۡرُ مَرۡدُودࣲ ﴿76﴾
ইব্রাহীম, এহেন ধারণা পরিহার কর; তোমার পালনকর্তার হুকুম এসে গেছে, এবং তাদের উপর সে আযাব অবশ্যই আপতিত হবে, যা কখনো প্রতিহত হবার নয়।
''হে ইব্রাহীম! এ থেকে ক্ষান্ত হও, নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রভুর বিধান এসে পড়েছে, আর ওদের ক্ষেত্রে -- শাস্তি তাদের উপরে আসবেই, তা ফেরানো যাবে না।’’
وَلَمَّا جَاۤءَتۡ رُسُلُنَا لُوطࣰا سِیۤءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعࣰا وَقَالَ هَـٰذَا یَوۡمٌ عَصِیبࣱ ﴿77﴾
আর যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূত (আঃ) এর নিকট উপস্থিত হল। তখন তাঁদের আগমনে তিনি দুচিন্তাগ্রস্ত হলেন এবং তিনি বলতে লাগলেন, আজ অত্যন্ত কঠিন দিন।
আর যখন আমাদের বাণীবাহকরা লূত-এর কাছে এসেছিল তখন তিনি ব্যতিব্যস্ত হলেন, এবং তিনি তাদের রক্ষা করতে নিজেকে অসহায় বোধ করছিলেন, তাই তিনি বলেছিলেন -- ''এ এক নিদারুণ দিন!’’
وَجَاۤءَهُۥ قَوۡمُهُۥ یُهۡرَعُونَ إِلَیۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ٱلسَّیِّـَٔاتِۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ هَـٰۤؤُلَاۤءِ بَنَاتِی هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِی ضَیۡفِیۤۖ أَلَیۡسَ مِنكُمۡ رَجُلࣱ رَّشِیدࣱ ﴿78﴾
আর তাঁর কওমের লোকেরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তার (গৃহ) পানে ছুটে আসতে লাগল। পূর্ব থেকেই তারা কু-কর্মে তৎপর ছিল। লূত (আঃ) বললেন-হে আমার কওম, এ আমার কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতমা। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো না, তোমাদের মধ্যে কি কোন ভাল মানুষ নেই।
আর তাঁর লোকেরা তাঁর কাছে এল, উদভ্রান্ত হয়ে তাঁর দিকে এল, আর আগে থেকেই তারা কুকর্ম করে যাচ্ছিল। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! এরাই আমার কন্যা, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতর, কাজেই আল্লাহ্কে ভয়ভক্তি কর, আর আমার মেহ্মানদের সন্বন্ধে আমাকে লজ্জিত কর না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো ভাল মানুষ নেই?’’
قَالُوا۟ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا لَنَا فِی بَنَاتِكَ مِنۡ حَقࣲّ وَإِنَّكَ لَتَعۡلَمُ مَا نُرِیدُ ﴿79﴾
তারা বলল ু তুমি তো জানই, তোমার কন্যাদের নিয়ে আমাদের কোন গরজ নেই। আর আমরা কি চাই, তাও তুমি অবশ্যই জান।
তারা বললে -- ''তুমি নিশ্চয়ই জানো যে তোমার কন্যাদের প্রতি আমাদের কোনো দাবি নেই, আর নিশ্চয়ই তুমি ভাল করেই জান কি আমরা চাই।’’
قَالَ لَوۡ أَنَّ لِی بِكُمۡ قُوَّةً أَوۡ ءَاوِیۤ إِلَىٰ رُكۡنࣲ شَدِیدࣲ ﴿80﴾
লূত (আঃ) বললেন-হায়, তোমাদের বিরুদ্ধে যদি আমার শক্তি থাকত অথবা আমি কোন সূদৃঢ় আশ্রয় গ্রহণ করতে সক্ষম হতাম।
তিনি বললেন -- ''হায়, তোমাদের বাধা দেবার যদি আমার ক্ষমতা থাকতো, অথবা যদি কোনো জোরালো অবলন্বন পেতাম!’’
قَالُوا۟ یَـٰلُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن یَصِلُوۤا۟ إِلَیۡكَۖ فَأَسۡرِ بِأَهۡلِكَ بِقِطۡعࣲ مِّنَ ٱلَّیۡلِ وَلَا یَلۡتَفِتۡ مِنكُمۡ أَحَدٌ إِلَّا ٱمۡرَأَتَكَۖ إِنَّهُۥ مُصِیبُهَا مَاۤ أَصَابَهُمۡۚ إِنَّ مَوۡعِدَهُمُ ٱلصُّبۡحُۚ أَلَیۡسَ ٱلصُّبۡحُ بِقَرِیبࣲ ﴿81﴾
মেহমান ফেরেশতাগন বলল-হে লূত (আঃ) আমরা তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হতে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পিছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রী নিশ্চয় তার উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের উপর আপতিত হবে। ভোর বেলাই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?
তারা বললে -- ''হে লূত! আমরা নিশ্চয় তোমার প্রভুর দূত। তারা কখনই তোমার কাছে ঘেসতে পারবে না, সুতরাং তোমার পরিবারবর্গসহ যাত্রা করো রাতের এই প্রহরের মধ্যে, আর তোমাদের মধ্যের কেউই পেছন ফেরো না তোমার স্ত্রী ব্যতীত, কেননা ওদের যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে। নিঃসন্দেহ তাদের নির্ধারিত সময় হচ্ছে ভোরবেলা। ভোরবেলা কি আসন্ন নয়?’’
فَلَمَّا جَاۤءَ أَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَـٰلِیَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَیۡهَا حِجَارَةࣰ مِّن سِجِّیلࣲ مَّنضُودࣲ ﴿82﴾
অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল, তখন আমি উক্ত জনপদকে উপরকে নীচে করে দিলাম এবং তার উপর স্তরে স্তরে কাঁকর পাথর বর্ষণ করলাম।
অতঃপর আমাদের হুকুম যখন এল তখন আমরা এগুলোর উপরভাগ করে দিলাম তাদের নিচেরভাগ, আর তাদের উপরে বর্ষণ করলাম পোড়া-মাটির পাথর -- স্তরীভূতভাবে --
مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَۖ وَمَا هِیَ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ بِبَعِیدࣲ ﴿83﴾
যার প্রতিটি তোমার পালনকর্তার নিকট চিহ্নিত ছিল। আর সেই পাপিষ্ঠদের থেকে খুব দূরেও নয়।
যা তোমার প্রভুর কাছে চিহ্নিত ছিল। আর তা অন্যায়কারীদের থেকে দূরে নয়।
۞ وَإِلَىٰ مَدۡیَنَ أَخَاهُمۡ شُعَیۡبࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ وَلَا تَنقُصُوا۟ ٱلۡمِكۡیَالَ وَٱلۡمِیزَانَۖ إِنِّیۤ أَرَىٰكُم بِخَیۡرࣲ وَإِنِّیۤ أَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمࣲ مُّحِیطࣲ ﴿84﴾
আর মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েব (আঃ) কে প্রেরণ করেছি। তিনি বললেন-হে আমার কওম! আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ছাড়া আমাদের কোন মাবুদ নাই। আর পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না, আজ আমি তোমাদেরকে ভাল অবস্থায়ই দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদের উপর এমন একদিনের আযাবের আশঙ্কা করছি যেদিনটি পরিবেষ্টনকারী।
আর মাদয়ানবাসীর নিকট তাদের ভাই শোআইবকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। আর মাপে ও ওজনে কম কর না, নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের দেখছি সমৃদ্ধিশালী, আর আমি নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আশংকা করছি এক সর্বগ্রাসী দিনের শাস্তির।
وَیَـٰقَوۡمِ أَوۡفُوا۟ ٱلۡمِكۡیَالَ وَٱلۡمِیزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشۡیَاۤءَهُمۡ وَلَا تَعۡثَوۡا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِینَ ﴿85﴾
আর হে আমার জাতি, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনরূপ ক্ষতি করো না, আর পৃথিবীতে ফাসাদ করে বেড়াবে না।
''আর হে আমার সম্প্রদায়! পুরো মাপ ও ওজন দেবে ন্যায়সঙ্গতভাবে, আর কোনো লোককে তাদের বিষয়বস্তুতে বঞ্চিত কর না, আর পৃথিবীতে গর্হিত আচরণ কর না গোলযোগ সৃষ্টিকারী হয়ে।
بَقِیَّتُ ٱللَّهِ خَیۡرࣱ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِینَۚ وَمَاۤ أَنَا۠ عَلَیۡكُم بِحَفِیظࣲ ﴿86﴾
আল্লাহ প্রদত্ত উদ্ধৃত্ত তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা ঈমানদার হও, আর আমি তো তোমাদের উপর সদা পর্যবেক্ষণকারী নই।
''আল্লাহ্র কাছে যা বাকি থাকে তা তোমাদের জন্য উত্তম -- যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, আর আমি তোমাদের উপরে রক্ষক নই।’’
قَالُوا۟ یَـٰشُعَیۡبُ أَصَلَوٰتُكَ تَأۡمُرُكَ أَن نَّتۡرُكَ مَا یَعۡبُدُ ءَابَاۤؤُنَاۤ أَوۡ أَن نَّفۡعَلَ فِیۤ أَمۡوَ ٰلِنَا مَا نَشَـٰۤؤُا۟ۖ إِنَّكَ لَأَنتَ ٱلۡحَلِیمُ ٱلرَّشِیدُ ﴿87﴾
তারা বলল-হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনার নামায কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা যাদের উপাসনা করত? অথবা আমাদের ধন-সম্পদে ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা ছেড়ে দেব? আপনি তো একজন খাস মহৎ ব্যক্তি ও সৎপথের পথিক।
তারা বললে -- ''হে শোআইব! তোমার নামায কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে আমাদের পিতৃপুরুষরা যার উপাসনা করত তা আমাদের বর্জন করতে হবে, অথবা আমাদের ধন-সম্পদ সন্বন্ধে আমাদের যা খুশি তা করতে পারব না? তুমি তো সত্যিসত্যি সহনশীল, সদাচারী!’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ أَرَءَیۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّی وَرَزَقَنِی مِنۡهُ رِزۡقًا حَسَنࣰاۚ وَمَاۤ أُرِیدُ أَنۡ أُخَالِفَكُمۡ إِلَىٰ مَاۤ أَنۡهَىٰكُمۡ عَنۡهُۚ إِنۡ أُرِیدُ إِلَّا ٱلۡإِصۡلَـٰحَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُۚ وَمَا تَوۡفِیقِیۤ إِلَّا بِٱللَّهِۚ عَلَیۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَیۡهِ أُنِیبُ ﴿88﴾
শোয়ায়েব (আঃ) বললেন-হে দেশবাসী, তোমরা কি মনে কর! আমি যদি আমার পরওয়ারদেগারের পক্ষ হতে সুস্পষ্ট দলীলের উপর কায়েম থাকি আর তিনি যদি নিজের তরফ হতে আমাকে উত্তম রিযিক দান করে থাকেন, (তবে কি আমি তাঁর হুকুম অমান্য করতে পারি?) আর আমি চাই না যে তোমাদেরকে যা ছাড়াতে চাই পরে নিজেই সে কাজে লিপ্ত হব, আমি তো যথাসাধ্য শোধরাতে চাই। আল্লাহর মদদ দ্বারাই কিন্তু কাজ হয়ে থাকে, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি এবং তাঁরই প্রতি ফিরে যাই।
তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ভেবে দেখো -- আমি যদি আমার প্রভুর কাছ থেকে স্পষ্ট দলিল-প্রমাণে প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি যদি তাঁর কাছ থেকে উত্তম জীবনোপকরণ দিয়ে আমাকে জীবিকা দান করেন? আর আমি চাই না যে তোমাদের বিপরীতে আমি সেই আচরণ করি যা করতে আমি তোমাদের নিষেধ করে থাকি। আমি শুধু চাই সংস্কার করতে যতটা আমি সাধ্যমত পারি। আর আমার কার্যসাধন আল্লাহ্র সাহায্যে বৈ নয়। আমি তাঁরই উপরে নির্ভর করি আর তাঁরই দিকে আমি ফিরি।
وَیَـٰقَوۡمِ لَا یَجۡرِمَنَّكُمۡ شِقَاقِیۤ أَن یُصِیبَكُم مِّثۡلُ مَاۤ أَصَابَ قَوۡمَ نُوحٍ أَوۡ قَوۡمَ هُودٍ أَوۡ قَوۡمَ صَـٰلِحࣲۚ وَمَا قَوۡمُ لُوطࣲ مِّنكُم بِبَعِیدࣲ ﴿89﴾
আর হে আমার জাতি! আমার সাথে জিদ করে তোমরা নূহ বা হুদ অথবা সালেহ (আঃ) এর কওমের মত নিজেদের উপর আযাব ডেকে আনবে না। আর লূতের জাতি তো তোমাদের থেকে খুব দূরে নয়।
''আর, হে আমার সম্প্রদায়! আমার সঙ্গে মতানৈক্য তোমাদের অপরাধী না করুক যার ফলে তোমাদের উপরে ঘটতে পারে তার মতো যা ঘটেছিল নূহ-এর সম্প্রদায়ের উপরে, অথবা হূদ-এর সম্প্রদায়ের উপরে, কিংবা সালিহ্-এর সম্প্রদায়ের উপরে, আর লূত- এর সম্প্রদায়ও তোমাদের থেকে দূরে নয়।
وَٱسۡتَغۡفِرُوا۟ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوۤا۟ إِلَیۡهِۚ إِنَّ رَبِّی رَحِیمࣱ وَدُودࣱ ﴿90﴾
আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগার খুবই মেহেরবান অতিস্নেহময়।
''সুতরাং তোমাদের প্রভুর কাছে পরিত্রাণ খোঁজো, তারপর তাঁর দিকে ফেরো। নিঃসন্দেহ আমার প্রভু অফুরন্ত ফলদাতা, পরম প্রেমময়।’’
قَالُوا۟ یَـٰشُعَیۡبُ مَا نَفۡقَهُ كَثِیرࣰا مِّمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَىٰكَ فِینَا ضَعِیفࣰاۖ وَلَوۡلَا رَهۡطُكَ لَرَجَمۡنَـٰكَۖ وَمَاۤ أَنتَ عَلَیۡنَا بِعَزِیزࣲ ﴿91﴾
তারা বলল-হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনি যা বলেছেন তার অনেক কথাই আমরা বুঝি নাই, আমারা তো আপনাকে আমাদের মধ্যে দূর্বল ব্যক্তি রূপে মনে করি। আপনার ভাই বন্ধুরা না থাকলে আমরা আপনাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতাম। আমাদের দৃষ্টিতে আপনি কোন মর্যাদাবান ব্যক্তি নন।
তারা বললে -- ''হে শোআইব! তুমি যা বল তার অধিকাংশই আমরা বুঝি না, আর আমরা অবশ্য আমাদের মধ্যে তোমাকে দুর্বলই তো দেখছি, আর তোমার পরিজনবর্গের জন্যে না হলে আমরা তোমাকে পাথর মেরেই শেষ করতাম, আর তুমি আমাদের উপরে মোটেই শক্তিশালী নও।’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ أَرَهۡطِیۤ أَعَزُّ عَلَیۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَٱتَّخَذۡتُمُوهُ وَرَاۤءَكُمۡ ظِهۡرِیًّاۖ إِنَّ رَبِّی بِمَا تَعۡمَلُونَ مُحِیطࣱ ﴿92﴾
শোয়ায়েব (আঃ) বলেন-হে আমার জাতি, আমার ভাই বন্ধুরা কি তোমাদের কাছে আল্লাহর চেয়ে প্রভাবশালী? আর তোমরা তাকে বিস্মৃত হয়ে পেছনে ফেলে রেখেছ, নিশ্চয় তোমাদের কার্যকলাপ আমার পালনকর্তার আয়ত্তে রয়েছে।
তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমার পরিজনবর্গ কি তোমাদের কাছে আল্লাহ্র চেয়েও বেশী শ্রদ্ধেয়? আর তোমরা তাঁকে গ্রহণ করেছ তোমাদের পৃষ্ঠদেশের পশ্চাদভাগে ফেলা বস্তুর মত। নিঃসন্দেহ তোমরা যা কর আমার প্রভু তা ঘেরাও করে আছেন।
وَیَـٰقَوۡمِ ٱعۡمَلُوا۟ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمۡ إِنِّی عَـٰمِلࣱۖ سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن یَأۡتِیهِ عَذَابࣱ یُخۡزِیهِ وَمَنۡ هُوَ كَـٰذِبࣱۖ وَٱرۡتَقِبُوۤا۟ إِنِّی مَعَكُمۡ رَقِیبࣱ ﴿93﴾
আর হে আমার জাতি, তোমরা নিজ স্থানে কাজ করে যাও, আমিও কাজ করছি, অচিরেই জানতে পারবে কার উপর অপমানকর আযাব আসে আর কে মিথ্যাবাদী? আর তোমরাও অপেক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।
''আর, হে আমার সম্প্রদায়! তোমাদের বাড়িঘরে কাজ করে যাও, আমিও অবশ্য করে যাচ্ছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার উপরে শাস্তি নামবে যা তাকে লাঞ্ছিত করে, আর কে হচ্ছে মিথ্যাবাদী। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষাকারী।’’
وَلَمَّا جَاۤءَ أَمۡرُنَا نَجَّیۡنَا شُعَیۡبࣰا وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةࣲ مِّنَّا وَأَخَذَتِ ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ ٱلصَّیۡحَةُ فَأَصۡبَحُوا۟ فِی دِیَـٰرِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿94﴾
আর আমার হুকুম যখন এল, আমি শোয়ায়েব (আঃ) ও তাঁর সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে রক্ষা করি আর পাপিষ্ঠদের উপর বিকট গর্জন পতিত হলো। ফলে ভোর না হতেই তারা নিজেদের ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।
আর যখন আমাদের নির্দেশ এল তখন আমরা শোআইবকে ও যারা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাস করেছিল তাদের উদ্ধার করেছিলাম আমার তরফ থেকে অনুগ্রহের ফলে। আর যারা অত্যাচার করেছিল তাদের পাকড়াও করেছিল এক মহাধ্বনি, ফলে তারা হয়ে গেল তাদের ঘরে ঘরে নিথরদেহী, --
كَأَن لَّمۡ یَغۡنَوۡا۟ فِیهَاۤۗ أَلَا بُعۡدࣰا لِّمَدۡیَنَ كَمَا بَعِدَتۡ ثَمُودُ ﴿95﴾
যেন তারা সেখানে কখনো বসবাসই করে নাই। জেনে রাখ, সামুদের প্রতি অভিসম্পাতের মত মাদইয়ানবাসীর উপরেও অভিসম্পাত।
যেন তারা সেখানে বসবাস করে নি। এটি কি নয় -- ''দূর হও মাদয়ানবাসী, যেমন দূর করা হয়েছে ছামূদ জাতিকে?’’
وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا مُوسَىٰ بِـَٔایَـٰتِنَا وَسُلۡطَـٰنࣲ مُّبِینٍ ﴿96﴾
আর আমি মূসা (আঃ) কে প্রেরণ করি আমার নিদর্শনাদি ও সুস্পষ্ট সনদসহ;
আর আমরা অবশ্যই মূসাকে পাঠিয়েছিলাম আমাদের নির্দেশাবলী ও সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব দিয়ে --
إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِی۟هِۦ فَٱتَّبَعُوۤا۟ أَمۡرَ فِرۡعَوۡنَۖ وَمَاۤ أَمۡرُ فِرۡعَوۡنَ بِرَشِیدࣲ ﴿97﴾
ফেরাউন ও তার পারিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা ফেরাউনের হুকুমে চলতে থাকে, অথচ ফেরাউনের কোন কথা ন্যায় সঙ্গত ছিল না।
ফিরআউন ও তার প্রধানদের কাছে, কিন্তু তারা ফিরআউনের আদেশের অনুগমন করেছিল, অথচ ফিরআউনের নির্দেশ সঠিক ছিল না।
یَقۡدُمُ قَوۡمَهُۥ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ فَأَوۡرَدَهُمُ ٱلنَّارَۖ وَبِئۡسَ ٱلۡوِرۡدُ ٱلۡمَوۡرُودُ ﴿98﴾
কেয়ামতের দিন সে তার জাতির লোকদের আগে আগে থাকবে এবং তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে পৌঁছে দিবে। আর সেটা অতীব নিকৃষ্ট স্থান, সেখানে তারা পৌঁছেছে।।
সে কিয়ামতের দিন তার লোকদের চালিত করবে আর তাদের নামিয়ে দেবে আগুনে। আর নিকৃষ্ট সেই খাদ সেখানে তাদের নামান হবে!
وَأُتۡبِعُوا۟ فِی هَـٰذِهِۦ لَعۡنَةࣰ وَیَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِۚ بِئۡسَ ٱلرِّفۡدُ ٱلۡمَرۡفُودُ ﴿99﴾
আর এ জগতেও তাদের পেছনে লানত রয়েছে এবং কিয়ামতের দিনেও; অত্যন্ত জঘন্য প্রতিফল, যা তারা পেয়েছে।
আর এক অভিশাপ তাদের পিছু নিয়েছে এইখানে ও কিয়ামতের দিনে। নিকৃষ্ট সেই পুরস্কার যা তাদের দেয়া হবে!
ذَ ٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَاۤءِ ٱلۡقُرَىٰ نَقُصُّهُۥ عَلَیۡكَۖ مِنۡهَا قَاۤىِٕمࣱ وَحَصِیدࣱ ﴿100﴾
এ হচ্ছে কয়েকটি জনপদের সামান্য ইতিবৃত্ত, যা আমি আপনাকে শোনাচ্ছি। তন্মধ্যে কোন কোনটি এখনও বর্তমান আছে আর কোন কোনটির শিকড় কেটে দেয়া হয়েছে।
এই হচ্ছে জনপদসমূহের কিছু সংবাদ যা তোমার কাছে বর্ণনা করলাম, এগুলোর মধ্যে কতকটা দাঁড়িয়ে আছে, আর কেটে ফেলা হয়েছে।
وَمَا ظَلَمۡنَـٰهُمۡ وَلَـٰكِن ظَلَمُوۤا۟ أَنفُسَهُمۡۖ فَمَاۤ أَغۡنَتۡ عَنۡهُمۡ ءَالِهَتُهُمُ ٱلَّتِی یَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مِن شَیۡءࣲ لَّمَّا جَاۤءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَمَا زَادُوهُمۡ غَیۡرَ تَتۡبِیبࣲ ﴿101﴾
আমি কিন্তু তাদের প্রতি জুলুম করি নাই বরং তারা নিজেরাই নিজের উপর অবিচার করেছে। ফলে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যেসব মাবুদকে ডাকতো আপনার পালনকর্তার হুকুম যখন এসে পড়ল, তখন কেউ কোন কাজে আসল না। তারা শুধু বিপর্যয়ই বৃদ্ধি করল।
আর আমরা তাদের প্রতি অন্যায় করি নি, কিন্তু তারা তাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছিল, সুতরাং তাদের দেবতারা, যাদের তারা আহ্বান করত আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে, তাদের কোনো কাজে আসে নি যে-সময়ে তোমার প্রভুর বিধান এসে পৌঁছাল। আর তারা ধ্বংস ব্যতীত কিছুই তাদের জন্য সংযোগ করে নি।
وَكَذَ ٰلِكَ أَخۡذُ رَبِّكَ إِذَاۤ أَخَذَ ٱلۡقُرَىٰ وَهِیَ ظَـٰلِمَةٌۚ إِنَّ أَخۡذَهُۥۤ أَلِیمࣱ شَدِیدٌ ﴿102﴾
আর তোমার পরওয়ারদেগার যখন কোন পাপপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্নক, বড়ই কঠোর।
আর এইভাবেই হচ্ছে তোমার প্রভুর পাকড়ানো যখন তিনি পাকড়াও করেন জনপদগুলোকে যখন তারা অন্যায়াচরণ করে। নিঃসন্দেহ তাঁর পাকড়ানো মর্মন্তুদ, কঠিন।
إِنَّ فِی ذَ ٰلِكَ لَـَٔایَةࣰ لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ ٱلۡـَٔاخِرَةِۚ ذَ ٰلِكَ یَوۡمࣱ مَّجۡمُوعࣱ لَّهُ ٱلنَّاسُ وَذَ ٰلِكَ یَوۡمࣱ مَّشۡهُودࣱ ﴿103﴾
নিশ্চয় ইহার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন প্রতিটি মানুষের জন্য যে আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। উহা এমন একদিন, যে দিন সব মানুষেই সমবেত হবে, সেদিনটি যে হাযিরের দিন।
নিঃসন্দেহ এতে রয়েছে নিদর্শন তার জন্য যে পরকালের শাস্তিকে ভয় করে। এই হচ্ছে মানুষকে একত্রিত করণের দিন, আর এই হচ্ছে সাক্ষ্যদানের দিন।
وَمَا نُؤَخِّرُهُۥۤ إِلَّا لِأَجَلࣲ مَّعۡدُودࣲ ﴿104﴾
আর আমি যে উহা বিলম্বিত করি, তা শুধু একটি ওয়াদার কারণে যা নির্ধারিত রয়েছে।
আর আমরা এটি পিছিয়ে রাখি না একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্যতীত।
یَوۡمَ یَأۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ فَمِنۡهُمۡ شَقِیࣱّ وَسَعِیدࣱ ﴿105﴾
যেদিন তা আসবে সেদিন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোন কথা বলতে পারে না। অতঃপর কিছু লোক হবে হতভাগ্য আর কিছু লোক সৌভাগ্যবান।
যখন সে-দিনটি আসবে তখন কোনো সত্ত্বাই তাঁর অনুমতি ব্যতীত কথা বলতে পারবে না, কাজে-কাজেই তাদের মধ্যে কেউ হবে হতভাগ্য আর কেউ ভাগ্যবান।
فَأَمَّا ٱلَّذِینَ شَقُوا۟ فَفِی ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِیهَا زَفِیرࣱ وَشَهِیقٌ ﴿106﴾
অতএব যারা হতভাগ্য তারা দোযখে যাবে, সেখানে তারা আর্তনাদ ও চিৎকার করতে থাকবে।
তারপর যারা হবে হতভাগ্য তারা আগুনে, তাদের জন্য সেখানে থাকবে দীর্ঘশ্বাস ও আর্তনাদ, --
خَـٰلِدِینَ فِیهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَاۤءَ رَبُّكَۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالࣱ لِّمَا یُرِیدُ ﴿107﴾
তারা সেখানে চিরকাল থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রতিপালক অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। নিশ্চয় তোমার পরওয়ারদেগার যা ইচ্ছা করতে পারেন।
তারা সেখানে থাকবে যতদিন মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে -- যদি না তোমার প্রভু অন্যথা ইচ্ছা করেন। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু যা ইচ্ছা করেন তাই করে থাকেন।
۞ وَأَمَّا ٱلَّذِینَ سُعِدُوا۟ فَفِی ٱلۡجَنَّةِ خَـٰلِدِینَ فِیهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَاۤءَ رَبُّكَۖ عَطَاۤءً غَیۡرَ مَجۡذُوذࣲ ﴿108﴾
আর যারা সৌভাগ্যবান তারা বেহেশতের মাঝে, সেখানেই চিরদিন থাকবে, যতদিন আসমান ও যমীন বর্তমান থাকবে। তবে তোমার প্রভু অন্য কিছু ইচ্ছা করলে ভিন্ন কথা। এ দানের ধারাবাহিকতা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয়।
আর যারা হবে ভাগ্যবান তারা থাকবে বেহেশতে, তারা সেখানে থাকবে যতদিন মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকবে -- যদি না তোমার প্রভু অন্যথা ইচ্ছা করেন। একটি দান যা কখনো কাটছাঁট হবে না।
فَلَا تَكُ فِی مِرۡیَةࣲ مِّمَّا یَعۡبُدُ هَـٰۤؤُلَاۤءِۚ مَا یَعۡبُدُونَ إِلَّا كَمَا یَعۡبُدُ ءَابَاۤؤُهُم مِّن قَبۡلُۚ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمۡ نَصِیبَهُمۡ غَیۡرَ مَنقُوصࣲ ﴿109﴾
অতএব, তারা যেসবের উপাসনা করে তুমি সে ব্যাপারে কোনরূপ ধোঁকায় পড়বে না। তাদের পূর্ববর্তী বাপ-দাদারা যেমন পূজা উপাসনা করত, এরাও তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু মাত্রও কম না করেই পুরোপুরি দান করবো।
কাজেই তুমি সন্দেহের মধ্যে থেকো না তারা যাদের উপাসনা করে তাদের সন্বন্ধে। তারা উপাসনা করে না যেভাবে তাদের পিতৃপুরুষরা ইতিপূর্বে উপাসনা করত সেভাবে ছাড়া। আর নিঃসন্দেহ তাদের পাওনা আমরা অবশ্যই তাদের পুরোপুরি মিটিয়ে দেবো কিছু মাত্র কমতি না ক’রে।
وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَا مُوسَى ٱلۡكِتَـٰبَ فَٱخۡتُلِفَ فِیهِۚ وَلَوۡلَا كَلِمَةࣱ سَبَقَتۡ مِن رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡۚ وَإِنَّهُمۡ لَفِی شَكࣲّ مِّنۡهُ مُرِیبࣲ ﴿110﴾
আর আমি মূসা (আঃ)-কে অবশ্যই কিতাব দিয়েছিলাম অতঃপর তাতে বিরোধ সৃষ্টি হল; বলাবাহুল্য তোমার পালনকর্তার পক্ষ হতে, একটি কথা যদি আগেই বলা না হত, তাহলে তাদের মধ্যে চুড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যেত তারা এ ব্যাপারে এমনই সন্দেহ প্রবণ যে, কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারছে না।
আর আমরা অবশ্য মুসাকে গ্রন্থ দিয়েছিলাম, কিন্তু তাতে মতভেদ ঘটেছিল। আর যদি তোমার প্রভুর তরফ থেকে ঘোষণাটি সাব্যস্ত না হতো তাহলে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত। আর নিঃসন্দেহ তারা তো সন্দেহের মধ্যে রয়েছে সে-সন্বন্ধে, -- বিভ্রান্তিকর।
وَإِنَّ كُلࣰّا لَّمَّا لَیُوَفِّیَنَّهُمۡ رَبُّكَ أَعۡمَـٰلَهُمۡۚ إِنَّهُۥ بِمَا یَعۡمَلُونَ خَبِیرࣱ ﴿111﴾
আর যত লোকই হোক না কেন, যখন সময় হবে, তোমার প্রভু তাদের সকলেরই আমলের প্রতিদান পুরোপুরি দান করবেন। নিশ্চয় তিনি তাদের যাবতীয় কার্যকলাপের খবর রাখেন।
আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু যথাসময়ে তাদের প্রত্যেকের কর্মফল তাদের কাছে অবশ্যই পুরোপুরি মিটিয়ে দেবেন। তারা যা করে সে-বিষয়ে তিনি নিশ্চয়ই সবিশেষ অবহিত।
فَٱسۡتَقِمۡ كَمَاۤ أُمِرۡتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطۡغَوۡا۟ۚ إِنَّهُۥ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِیرࣱ ﴿112﴾
অতএব, তুমি এবং তোমার সাথে যারা তওবা করেছে সবাই সোজা পথে চলে যাও-যেমন তোমায় হুকুম দেয়া হয়েছে এবং সীমা লঙ্ঘন করবে না, তোমরা যা কিছু করছ, নিশ্চয় তিনি তার প্রতি দৃষ্টি রাখেন।
অতএব তুমি সহজ-সঠিক পথে আঁকড়ে থেকো যেমন তোমাকে আদেশ করা হয়েছে, আর সেও যে তোমার সঙ্গে ফিরেছে, আর তোমরা সীমালংঘন করো না। তোমরা যা কর তিনি নিশ্চয়ই তার দ্রষ্টা।
وَلَا تَرۡكَنُوۤا۟ إِلَى ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ فَتَمَسَّكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِنۡ أَوۡلِیَاۤءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ ﴿113﴾
আর পাপিষ্ঠদের প্রতি ঝুঁকবে না। নতুবা তোমাদেরকেও আগুনে ধরবে। আর আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন বন্ধু নাই। অতএব কোথাও সাহায্য পাবে না।
আর তোমরা তাদের দিকে ঝুকোঁ না যারা অন্যায় করে, পাছে আগুন তোমাদের স্পর্শ করে। আর আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে তোমাদের জন্য কোনো অভিভাবকমন্ডলী নেই, সুতরাং তোমাদের সাহায্য করা হবে না।
وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَیِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفࣰا مِّنَ ٱلَّیۡلِۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَـٰتِ یُذۡهِبۡنَ ٱلسَّیِّـَٔاتِۚ ذَ ٰلِكَ ذِكۡرَىٰ لِلذَّ ٰكِرِینَ ﴿114﴾
আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায ঠিক রাখবে, এবং রাতের প্রান্তভাগে পূর্ণ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়, যারা স্মরণ রাখে তাদের জন্য এটি এক মহা স্মারক।
আর নামায কায়েম রাখো দিনের দুই প্রান্ত ভাগে, আর রাতের প্রথমাংশে। শুভকাজ নিশ্চয়ই মন্দ কাজকে দূর করে দেয়। এটি এক স্মরণীয় উপদেশ তাদের জন্য যারা স্মরণকারী।
وَٱصۡبِرۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا یُضِیعُ أَجۡرَ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿115﴾
আর ধৈর্য্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ পূণ্যবানদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।
আর অধ্যবসায় অবলন্বন কর, কেননা আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সৎকর্মশীলদের কর্মফল ব্যর্থ করেন না।
فَلَوۡلَا كَانَ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مِن قَبۡلِكُمۡ أُو۟لُوا۟ بَقِیَّةࣲ یَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡفَسَادِ فِی ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا قَلِیلࣰا مِّمَّنۡ أَنجَیۡنَا مِنۡهُمۡۗ وَٱتَّبَعَ ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ مَاۤ أُتۡرِفُوا۟ فِیهِ وَكَانُوا۟ مُجۡرِمِینَ ﴿116﴾
কাজেই, তোমাদের পূর্ববতী জাতি গুলির মধ্যে এমন সৎকর্মশীল কেন রইল না, যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে বাধা দিত; তবে মুষ্টিমেয় লোক ছিল যাদেরকে আমি তাদের মধ্য হতে রক্ষা করেছি। আর পাপিষ্ঠরা তো ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল যার সামগ্রী তাদেরকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছিল। আসলে তারা ছিল মহা অপরাধী।
তবে কেন তোমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে বাকী থাকা লোকজন নেই যারা নিষেধ করে পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটাতে -- যাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম তাদের মধ্য থেকে শুধু অল্প কয়েকজন ছাড়া? কিন্তু যারা অন্যায় আচরণ করেছিল তারা অনুসরণ করেছিল তাদের যারা এতে সচ্ছল-সমৃদ্ধ ছিল, ফলে তারা ছিল অপরাধী।
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِیُهۡلِكَ ٱلۡقُرَىٰ بِظُلۡمࣲ وَأَهۡلُهَا مُصۡلِحُونَ ﴿117﴾
আর তোমার পালনকর্তা এমন নন যে, জনবসতিগুলোকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন, সেখানকার লোকেরা সৎকর্মশীল হওয়া সত্ত্বেও।
আর তোমার প্রভুর পক্ষে এটি নয় যে তিনি কোনো জনপদকে ধ্বংস করবেন অন্যায়ভাবে, যখন সে-সবের অধিবাসীরা থাকে সৎপথাবলন্বী।
وَلَوۡ شَاۤءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ ٱلنَّاسَ أُمَّةࣰ وَ ٰحِدَةࣰۖ وَلَا یَزَالُونَ مُخۡتَلِفِینَ ﴿118﴾
আর তোমার পালনকর্তা যদি ইচ্ছা করতেন, তবে অবশ্যই সব মানুষকে একই জাতিসত্তায় পরিনত করতে পারতেন আর তারা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হতো না।
আর যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন তবে তিনি মানবগোষ্ঠীকে অবশ্য এক জাতি বানিয়ে নিতেন, কিন্তু তারা মতভেদ করতেই থাকবে, --
إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَۚ وَلِذَ ٰلِكَ خَلَقَهُمۡۗ وَتَمَّتۡ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلۡجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجۡمَعِینَ ﴿119﴾
তোমার পালনকর্তা যাদের উপর রহমত করেছেন, তারা ব্যতীত সবাই চিরদিন মতভেদ করতেই থাকবে এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমার আল্লাহর কথাই পূর্ণ হল যে, অবশ্যই আমি জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষ দ্বারা একযোগে ভর্তি করব।
সে ব্যতীত যাকে তোমার প্রভু করুণা করেছেন, আর এর জন্যেই তিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন। আর সম্পূর্ণ হয়েছে তোমার প্রভুর বাণী -- ''আমি আলবৎ একই সঙ্গে জিনদের ও মানুষদের দ্বারা জাহান্নাম ভর্তি করব।’’
وَكُلࣰّا نَّقُصُّ عَلَیۡكَ مِنۡ أَنۢبَاۤءِ ٱلرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِۦ فُؤَادَكَۚ وَجَاۤءَكَ فِی هَـٰذِهِ ٱلۡحَقُّ وَمَوۡعِظَةࣱ وَذِكۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿120﴾
আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যদ্দ্বারা তোমার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসীহত ও স্বরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে।
আর রসূলগণের কাহিনী থেকে সব-কিছু আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি এজন্য যে সে-সবের দ্বারা আমরা তোমার চিত্তকে বলিষ্ঠ করব, আর এতে তোমার কাছে এসেছে মুমিনদের জন্য সত্য ও উপদেশ ও স্মরণীয় বার্তা।
وَقُل لِّلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ ٱعۡمَلُوا۟ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمۡ إِنَّا عَـٰمِلُونَ ﴿121﴾
আর যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় কাজ করে যাও আমরাও কাজ করে যাই।
আর যারা বিশ্বাস করে না তাদের বলো -- ''তোমাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করে যাও, নিঃসন্দেহ আমরাও কর্তব্যরত।
وَٱنتَظِرُوۤا۟ إِنَّا مُنتَظِرُونَ ﴿122﴾
এবং তোমরাও অপেক্ষা করে থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম।
''আর অপেক্ষা কর, আমরাও নিঃসন্দেহ অপেক্ষারত।’’
وَلِلَّهِ غَیۡبُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَإِلَیۡهِ یُرۡجَعُ ٱلۡأَمۡرُ كُلُّهُۥ فَٱعۡبُدۡهُ وَتَوَكَّلۡ عَلَیۡهِۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَـٰفِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُونَ ﴿123﴾
আর আল্লাহর কাছেই আছে আসমান ও যমীনের গোপন তথ্য; আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে; অতএব, তাঁরই বন্দেগী কর এবং তাঁর উপর ভরসা রাখ, আর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার পালনকর্তা কিন্তু বে-খবর নন।
আর মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়বস্তু আল্লাহ্রই, আর তাঁরই কাছে বিষয়-আশয়ের সব-কিছু ফিরিয়ে আনা হবে। সুতরাং তাঁর উপাসনা কর আর তাঁরই উপরে নির্ভর কর। বস্তুতঃ তোমরা যা কর সে-সন্বন্ধে তোমার প্রভু অনবহিত নন।