Main pages

ٱقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمۡ وَهُمۡ فِی غَفۡلَةࣲ مُّعۡرِضُونَ ﴿1﴾

মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

জহুরুল হক

মানুষের কাছে তাদের হিসেব-নিকেশ আসন্ন, তথাপি তারা বেখেয়ালিতে ফিরে যাচ্ছে।

مَا یَأۡتِیهِم مِّن ذِكۡرࣲ مِّن رَّبِّهِم مُّحۡدَثٍ إِلَّا ٱسۡتَمَعُوهُ وَهُمۡ یَلۡعَبُونَ ﴿2﴾

তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।

জহুরুল হক

আর তাদের কাছে তাদের প্রভুর কাছ থেকে কোনো নতুন স্মারক আসে না যা তারা শোনে যখন তারা খেলতে থাকে, --

لَاهِیَةࣰ قُلُوبُهُمۡۗ وَأَسَرُّوا۟ ٱلنَّجۡوَى ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ هَلۡ هَـٰذَاۤ إِلَّا بَشَرࣱ مِّثۡلُكُمۡۖ أَفَتَأۡتُونَ ٱلسِّحۡرَ وَأَنتُمۡ تُبۡصِرُونَ ﴿3﴾

তাদের অন্তর থাকে খেলায় মত্ত। জালেমরা গোপনে পরামর্শ করে, সে তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ; এমতাবস্থায় দেখে শুনে তোমরা তার যাদুর কবলে কেন পড়?

জহুরুল হক

তাদের হৃদয় কোনো মনোযোগ দেয় না। আর যারা অন্যায়কারী তারা গোপনে শলাপরামর্শ করে -- এই জন কি তোমাদের মতন একজন মানুষ ছাড়া আর কিছু? তোমরা কি তবে জাদুর বশীভূত হবে, অথচ তোমরা দেখতে পাচ্ছ।’’

قَالَ رَبِّی یَعۡلَمُ ٱلۡقَوۡلَ فِی ٱلسَّمَاۤءِ وَٱلۡأَرۡضِۖ وَهُوَ ٱلسَّمِیعُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿4﴾

পয়গম্বর বললেনঃ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের কথাই আমার পালনকর্তা জানেন। তিনি সবকিছু শোনেন, সবকিছু জানেন।

জহুরুল হক

বলো -- ''আমার প্রভু জানেন সব কথাবার্তা মহাকাশ-মন্ডলীতে ও পৃথিবীতে, কেননা তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।’’

بَلۡ قَالُوۤا۟ أَضۡغَـٰثُ أَحۡلَـٰمِۭ بَلِ ٱفۡتَرَىٰهُ بَلۡ هُوَ شَاعِرࣱ فَلۡیَأۡتِنَا بِـَٔایَةࣲ كَمَاۤ أُرۡسِلَ ٱلۡأَوَّلُونَ ﴿5﴾

এছাড়া তারা আরও বলেঃ অলীক স্বপ্ন; না সে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে, না সে একজন কবি। অতএব সে আমাদের কাছে কোন নিদর্শন আনয়ন করুক, যেমন নিদর্শন সহ আগমন করেছিলেন পূর্ববর্তীগন।

জহুরুল হক

তারা বলে -- ''না, এলোমেলো স্বপ্ন! না, সে এটি তৈরি করেছে! না, সে একজন কবি। সে বরং আমাদের কাছে এক নিদর্শন নিয়ে আসুক যেমন পূর্ববর্তীদের পাঠানো হয়েছিল।’’

مَاۤ ءَامَنَتۡ قَبۡلَهُم مِّن قَرۡیَةٍ أَهۡلَكۡنَـٰهَاۤۖ أَفَهُمۡ یُؤۡمِنُونَ ﴿6﴾

তাদের পূর্বে যেসব জনপদ আমি ধবংস করে দিয়েছি, তারা বিশ্বাস স্থাপন করেনি; এখন এরা কি বিশ্বাস স্থাপন করবে?

জহুরুল হক

ওদের আগে যেসব জনপদ বিশ্বাস করে নি তাদের আমরা ধ্বংস করেছি। এরা কি তবে বিশ্বাস করবে?

وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا قَبۡلَكَ إِلَّا رِجَالࣰا نُّوحِیۤ إِلَیۡهِمۡۖ فَسۡـَٔلُوۤا۟ أَهۡلَ ٱلذِّكۡرِ إِن كُنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ﴿7﴾

আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।

জহুরুল হক

আর তোমার আগে আমরা মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে পাঠাই নি যাদের কাছে আমরা প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম, কাজেই স্মারকগ্রন্থের অধিকারীদের তোমরা জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জানো।

وَمَا جَعَلۡنَـٰهُمۡ جَسَدࣰا لَّا یَأۡكُلُونَ ٱلطَّعَامَ وَمَا كَانُوا۟ خَـٰلِدِینَ ﴿8﴾

আমি তাদেরকে এমন দেহ বিশিষ্ট করিনি যে, তারা খাদ্য ভক্ষণ করত না এবং তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁদের এমন শরীর দিই নি যে তাঁরা খাদ্য খাবেন না, আর তাঁরা চিরস্থায়ীও ছিলেন না।

ثُمَّ صَدَقۡنَـٰهُمُ ٱلۡوَعۡدَ فَأَنجَیۡنَـٰهُمۡ وَمَن نَّشَاۤءُ وَأَهۡلَكۡنَا ٱلۡمُسۡرِفِینَ ﴿9﴾

অতঃপর আমি তাদেরকে দেয়া আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম সুতরাং তাদেরকে এবং যাদেরকে ইচ্ছা বাঁচিয়ে দিলাম এবং ধবংস করে ছিলাম সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে।

জহুরুল হক

তারপর তাঁদের কাছে আমরা ওয়াদা পূর্ণ করেছিলাম, সুতরাং আমরা তাঁদের উদ্ধার করেছিলাম আর তাদেরও যাদের আমরা ইচ্ছা করেছিলাম, আর আমরা ধ্বংস করেছিলাম সীমা-লংঘনকারীদের।

لَقَدۡ أَنزَلۡنَاۤ إِلَیۡكُمۡ كِتَـٰبࣰا فِیهِ ذِكۡرُكُمۡۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿10﴾

আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না?

জহুরুল হক

আমরা অবশ্যই তোমাদের কাছে অবতারণ করেছি এক গ্রন্থ যাতে রয়েছে তোমাদের মহত্ত্ব। তোমরা কি তবে বুঝবে না?

وَكَمۡ قَصَمۡنَا مِن قَرۡیَةࣲ كَانَتۡ ظَالِمَةࣰ وَأَنشَأۡنَا بَعۡدَهَا قَوۡمًا ءَاخَرِینَ ﴿11﴾

আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।

জহুরুল হক

আর আমরা চূর্ণবিচূর্ণ করেছিলাম কত জনপদ যারা অত্যাচার করেছিল, আর তাদের পরে পত্তন করেছিলাম অপর লোকদের।

فَلَمَّاۤ أَحَسُّوا۟ بَأۡسَنَاۤ إِذَا هُم مِّنۡهَا یَرۡكُضُونَ ﴿12﴾

অতঃপর যখন তারা আমার আযাবের কথা টের পেল, তখনই তারা সেখান থেকে পলায়ন করতে লাগল।

জহুরুল হক

তারপর তারা যখন অনুভব করেছিল আমাদের ক্ষমতা, দেখো! তারা এখান থেকে পলায়নপর হয়েছিল।

لَا تَرۡكُضُوا۟ وَٱرۡجِعُوۤا۟ إِلَىٰ مَاۤ أُتۡرِفۡتُمۡ فِیهِ وَمَسَـٰكِنِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تُسۡـَٔلُونَ ﴿13﴾

পলায়ন করো না এবং ফিরে এস, যেখানে তোমরা বিলাসিতায় মত্ত ছিলে ও তোমাদের আবাসগৃহে; সম্ভবত; কেউ তোমাদের জিজ্ঞেস করবে।

জহুরুল হক

''পালিও না, বরং ফিরে এসো তাতে যাতে তোমরা বিভোর ছিলে, -- তোমাদের বাসস্থানে যেন তোমাদের সওয়াল করা যেতে পারে।’’

قَالُوا۟ یَـٰوَیۡلَنَاۤ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِینَ ﴿14﴾

তারা বললঃ হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।

জহুরুল হক

তারা বলেছিল -- ''হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমরা তো আলবৎ অন্যায়কারী ছিলাম।’’

فَمَا زَالَت تِّلۡكَ دَعۡوَىٰهُمۡ حَتَّىٰ جَعَلۡنَـٰهُمۡ حَصِیدًا خَـٰمِدِینَ ﴿15﴾

তাদের এই আর্তনাদ সব সময় ছিল, শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে করে দিলাম যেন কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত অগ্নি।

জহুরুল হক

ফলে তাদের এই আর্তনাদ থামে নি যে পর্যন্ত না আমরা তাদের বানিয়েছিলাম কাটা শস্যের ন্যায়, পুড়িয়ে ফেলা।

وَمَا خَلَقۡنَا ٱلسَّمَاۤءَ وَٱلۡأَرۡضَ وَمَا بَیۡنَهُمَا لَـٰعِبِینَ ﴿16﴾

আকাশ পৃথিবী এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।

জহুরুল হক

আর আকাশ ও পৃথিবী এবং এ দুইয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সে-সমস্ত আমরা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করি নি।

لَوۡ أَرَدۡنَاۤ أَن نَّتَّخِذَ لَهۡوࣰا لَّٱتَّخَذۡنَـٰهُ مِن لَّدُنَّاۤ إِن كُنَّا فَـٰعِلِینَ ﴿17﴾

আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত।

জহুরুল হক

আমরা যদি চাইতাম আমোদ-প্রমোদের জন্য গ্রহণ করতে, তবে আমরা অবশ্যই আমাদের নিজেদের থেকেই তাকে গ্রহণ করতাম, আমরা নিশ্চয়ই তা করব না।

بَلۡ نَقۡذِفُ بِٱلۡحَقِّ عَلَى ٱلۡبَـٰطِلِ فَیَدۡمَغُهُۥ فَإِذَا هُوَ زَاهِقࣱۚ وَلَكُمُ ٱلۡوَیۡلُ مِمَّا تَصِفُونَ ﴿18﴾

বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতঃপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতঃপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তোমরা যা বলছ, তার জন্যে তোমাদের দুর্ভোগ।

জহুরুল হক

না, আমরা সত্যের দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি, ফলে তার মগজ চুরমার হয়ে যায়, তখন দেখো! তা অন্তর্হিত হয়। আর ধিক তোমাদের প্রতি! তোমরা যা আরোপ কর সেজন্য।

وَلَهُۥ مَن فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِۚ وَمَنۡ عِندَهُۥ لَا یَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَلَا یَسۡتَحۡسِرُونَ ﴿19﴾

নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে যারা আছে, তারা তাঁরই। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে আছে তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না এবং অলসতাও করে না।

জহুরুল হক

আর যারাই আছে মহাকাশগুলীতে ও পৃথিবীতে তারা সবাই তাঁর। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর উপাসনা করা থেকে গর্ববোধ করে না, আর তারা ক্লান্তও হয় না, --

یُسَبِّحُونَ ٱلَّیۡلَ وَٱلنَّهَارَ لَا یَفۡتُرُونَ ﴿20﴾

তারা রাত্রিদিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।

জহুরুল হক

তারা রাতে ও দিনে জপতপ করে, তারা শিথিলতা করে না।

أَمِ ٱتَّخَذُوۤا۟ ءَالِهَةࣰ مِّنَ ٱلۡأَرۡضِ هُمۡ یُنشِرُونَ ﴿21﴾

তারা কি মৃত্তিকা দ্বারা তৈরী উপাস্য গ্রহণ করেছে, যে তারা তাদেরকে জীবিত করবে?

জহুরুল হক

অপরপক্ষে তারা কি মাটি থেকে উপাস্যদের গ্রহণ করেছে যারা প্রাণবন্ত করতে পারে?

لَوۡ كَانَ فِیهِمَاۤ ءَالِهَةٌ إِلَّا ٱللَّهُ لَفَسَدَتَاۚ فَسُبۡحَـٰنَ ٱللَّهِ رَبِّ ٱلۡعَرۡشِ عَمَّا یَصِفُونَ ﴿22﴾

যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র।

জহুরুল হক

যদি ও দুইয়ের মধ্যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যান্য উপাস্যরা থাকত তবে এ দুটোই বিশৃঙ্খল হয়ে যেত। সুতরাং সকল মহিমা আল্লাহ্‌র, যিনি আরশের অধিপতি, -- তারা যা আরোপ করে তার উর্ধ্বে!

لَا یُسۡـَٔلُ عَمَّا یَفۡعَلُ وَهُمۡ یُسۡـَٔلُونَ ﴿23﴾

তিনি যা করেন, তৎসম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হবেন না এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।

জহুরুল হক

তিনি যা করেন যে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না, কিন্তু তাদের প্রশ্ন করা হবে।

أَمِ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِهِۦۤ ءَالِهَةࣰۖ قُلۡ هَاتُوا۟ بُرۡهَـٰنَكُمۡۖ هَـٰذَا ذِكۡرُ مَن مَّعِیَ وَذِكۡرُ مَن قَبۡلِیۚ بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ ٱلۡحَقَّۖ فَهُم مُّعۡرِضُونَ ﴿24﴾

তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে।

জহুরুল হক

অথবা, তারা কি তাঁকে ছেড়ে দিয়ে উপাস্যদের গ্রহণ করেছে? বলো -- ''তোমাদের প্রমাণ নিয়ে এস। এ হচ্ছে স্মরণীয় বার্তা তাদের জন্য যারা আমার সঙ্গে রয়েছে এবং স্মরণীয় বার্তা আমার পূর্ববর্তীদের জন্যেও।’’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না, ফলে তারা সত্য থেকে বিমুখ থাকে।

وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِیۤ إِلَیۡهِ أَنَّهُۥ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّاۤ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُونِ ﴿25﴾

আপনার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর।

জহুরুল হক

আর তোমার পূর্বে আমরা কোনো রসূল পাঠাই নি যাঁর কাছে আমরা প্রত্যাদেশ না দিয়েছি এই বলে যে, ''আমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, কাজেই আমারই উপাসনা করো’’।

وَقَالُوا۟ ٱتَّخَذَ ٱلرَّحۡمَـٰنُ وَلَدࣰاۗ سُبۡحَـٰنَهُۥۚ بَلۡ عِبَادࣱ مُّكۡرَمُونَ ﴿26﴾

তারা বললঃ দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছে। তাঁর জন্য কখনও ইহা যোগ্য নয়; বরং তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।

জহুরুল হক

আর তারা বলে -- ''পরম করুণাময় একটি পুত্র গ্রহণ করেছেন।’’ তাঁরই সব মহিমা! বরং তাঁরা তো সম্মানিত বান্দা, --

لَا یَسۡبِقُونَهُۥ بِٱلۡقَوۡلِ وَهُم بِأَمۡرِهِۦ یَعۡمَلُونَ ﴿27﴾

তারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।

জহুরুল হক

তাঁরা কথা বলতে তাঁর আগে বেড়ে যান না, আর তাঁরই আদেশ মোতাবেক তাঁরা কাজ করেন।

یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ أَیۡدِیهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا یَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡیَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ ﴿28﴾

তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে, তা তিনি জানেন। তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত।

জহুরুল হক

তিনি জানেন যা কিছু আছে তাঁদের সম্মুখে আর যা আছে তাঁদের পশ্চাতে, আর তাঁরা সুপারিশ করেন না তার জন্য ছাড়া যার প্রতি তিনি সন্তষ্ট হয়েছেন, আর তাঁর ভয়ে তাঁরা ভীত-সন্ত্রস্ত।

۞ وَمَن یَقُلۡ مِنۡهُمۡ إِنِّیۤ إِلَـٰهࣱ مِّن دُونِهِۦ فَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِیهِ جَهَنَّمَۚ كَذَ ٰ⁠لِكَ نَجۡزِی ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿29﴾

তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।

জহুরুল হক

আর তাঁদের মধ্যের যে বলবে -- ''তাঁর পরিবর্তে আমিই একজন উপাস্য’’, তার ক্ষেত্রে তাহলে -- আমরা তাকে প্রতিদান দেব জাহান্নাম। এইভাবেই আমরা প্রতিদান দিই অন্যায়কারীদের।

أَوَلَمۡ یَرَ ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤا۟ أَنَّ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضَ كَانَتَا رَتۡقࣰا فَفَتَقۡنَـٰهُمَاۖ وَجَعَلۡنَا مِنَ ٱلۡمَاۤءِ كُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّۚ أَفَلَا یُؤۡمِنُونَ ﴿30﴾

কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?

জহুরুল হক

যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা কি দেখে না যে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী উভয়ে একাকার ছিল, তারপর আমরা তাদের দুটিকে বিচ্ছিন্ন করে দিলাম, আর পানি থেকে আমরা সৃষ্টি করলাম প্রাণবন্ত সবকিছু। তারা কি তবুও বিশ্বাস করবে না?

وَجَعَلۡنَا فِی ٱلۡأَرۡضِ رَوَ ٰ⁠سِیَ أَن تَمِیدَ بِهِمۡ وَجَعَلۡنَا فِیهَا فِجَاجࣰا سُبُلࣰا لَّعَلَّهُمۡ یَهۡتَدُونَ ﴿31﴾

আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়।

জহুরুল হক

আর পৃথিবীতে আমরা পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছি পাছে তাদের সঙ্গে এটি আন্দোলিত হয়, আর ওতে আমরা বানিয়েছি চওড়া পথঘাট যেন তারা সৎপথ প্রাপ্ত হয়।

وَجَعَلۡنَا ٱلسَّمَاۤءَ سَقۡفࣰا مَّحۡفُوظࣰاۖ وَهُمۡ عَنۡ ءَایَـٰتِهَا مُعۡرِضُونَ ﴿32﴾

আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

জহুরুল হক

আর আমরা আকাশকে করেছি এক সুরক্ষিত ছাদ। কিন্তু তারা এর নিদর্শনাবলী থেকে বিমুখ থাকে।

وَهُوَ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلَّیۡلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلࣱّ فِی فَلَكࣲ یَسۡبَحُونَ ﴿33﴾

তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।

জহুরুল হক

আর তিনিই সেই জন যিনি রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সৃষ্টি করেছেন। সব ক’টি কক্ষপথে ভেসে চলেছে।

وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرࣲ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِی۟ن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَـٰلِدُونَ ﴿34﴾

আপনার পূর্বেও কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?

জহুরুল হক

আর তোমার আগে আমরা কোনো মানুষের জন্য স্থায়িত্ব দিই নি। সুতরাং যদি তোমাকেই মারা যেতে হয় তবে কি তারা চিরজীবী হবে?

كُلُّ نَفۡسࣲ ذَاۤىِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَیۡرِ فِتۡنَةࣰۖ وَإِلَیۡنَا تُرۡجَعُونَ ﴿35﴾

প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

প্রত্যেক সত্ত্বাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। আর আমরা তোমাদের পরীক্ষা করি মন্দ ও ভাল দিয়ে যাচাই ক’রে। আর আমাদের কাছেই তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

وَإِذَا رَءَاكَ ٱلَّذِینَ كَفَرُوۤا۟ إِن یَتَّخِذُونَكَ إِلَّا هُزُوًا أَهَـٰذَا ٱلَّذِی یَذۡكُرُ ءَالِهَتَكُمۡ وَهُم بِذِكۡرِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ هُمۡ كَـٰفِرُونَ ﴿36﴾

কাফেররা যখন আপনাকে দেখে তখন আপনার সাথে ঠাট্টা করা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ থাকে না, একি সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের দেব-দেবীদের সমালোচনা করে? এবং তারাই তো রহমান’ এর আলোচনায় অস্বীকার করে।

জহুরুল হক

আর যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে বিদ্রপের পাত্র ছাড়া অন্যভাবে গ্রহণ করে না। ''একি সে যে তোমাদের দেবদেবী সন্বন্ধে সমালোচনা করে?’’ বস্তুতঃ তারা নিজেরাই পরম করুণাময়ের নাম-কীর্তনের বেলা অবিশ্বাস ভাজন করে।

خُلِقَ ٱلۡإِنسَـٰنُ مِنۡ عَجَلࣲۚ سَأُو۟رِیكُمۡ ءَایَـٰتِی فَلَا تَسۡتَعۡجِلُونِ ﴿37﴾

সৃষ্টিগত ভাবে মানুষ ত্বরাপ্রবণ, আমি সত্তরই তোমাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাব। অতএব আমাকে শীঘ্র করতে বলো না।

জহুরুল হক

মানুষ সৃষ্ট হয়েছে ব্যস্তসমস্ত ছাঁদে। আমি শীঘ্রই তোমাদের দেখাব আমার নিদর্শন সমূহ, সুতরাং তোমারা আমাকে তাড়াতাড়ি করতে বলো না।

وَیَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا ٱلۡوَعۡدُ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿38﴾

এবং তারা বলেঃ যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে এই ওয়াদা কবে পুর্ণ হবে?

জহুরুল হক

আর তারা বলে -- ''কখন এই ওয়াদা ফলবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’’

لَوۡ یَعۡلَمُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ حِینَ لَا یَكُفُّونَ عَن وُجُوهِهِمُ ٱلنَّارَ وَلَا عَن ظُهُورِهِمۡ وَلَا هُمۡ یُنصَرُونَ ﴿39﴾

যদি কাফেররা ঐ সময়টি জানত, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পৃষ্ঠদেশ থেকে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।

জহুরুল হক

যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা যদি জানত সেই সময়ের কথা যখন তারা আগুন সরিয়ে দিতে পারবে না তাদের মুখের থেকে, আর তাদের পিঠের থেকেও না, আর তাদের সাহায্যও করা হবে না।

بَلۡ تَأۡتِیهِم بَغۡتَةࣰ فَتَبۡهَتُهُمۡ فَلَا یَسۡتَطِیعُونَ رَدَّهَا وَلَا هُمۡ یُنظَرُونَ ﴿40﴾

বরং তা আসবে তাদের উপর অতর্কিত ভাবে, অতঃপর তাদেরকে তা হতবুদ্ধি করে দেবে, তখন তারা তা রোধ করতেও পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।

জহুরুল হক

বস্তুতঃ তা তাদের উপরে এসে পড়বে অতর্কিতভাবে, ফলে তাদের তা হতবুদ্ধি করে দেবে, সেজন্যে তা এড়াবার ক্ষমতা থাকবে না, এবং তাদের অবকাশও দেওয়া হবে না।

وَلَقَدِ ٱسۡتُهۡزِئَ بِرُسُلࣲ مِّن قَبۡلِكَ فَحَاقَ بِٱلَّذِینَ سَخِرُوا۟ مِنۡهُم مَّا كَانُوا۟ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿41﴾

আপনার পূর্বেও অনেক রাসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছে। অতঃপর যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা করত তা উল্টো ঠাট্টাকারীদের উপরই আপতিত হয়েছে।

জহুরুল হক

আর তোমার পূর্বেও রসূলগণকে নিশ্চয়ই বিদ্রপ করা হয়েছিল, তারপর তাদের মধ্যের যারা বিদ্রপ করেছিল তারা যে সন্বন্ধে বিদ্রপ করত সেটাই তাদের পরিবেষ্টন করল।

قُلۡ مَن یَكۡلَؤُكُم بِٱلَّیۡلِ وَٱلنَّهَارِ مِنَ ٱلرَّحۡمَـٰنِۚ بَلۡ هُمۡ عَن ذِكۡرِ رَبِّهِم مُّعۡرِضُونَ ﴿42﴾

বলুনঃ ‘রহমান’ থেকে কে তোমাদেরকে হেফাযত করবে রাত্রে ও দিনে। বরং তারা তাদের পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

জহুরুল হক

বলো -- ''কি তোমাদের রক্ষা করবে রাতে ও দিনে পরম করুণাময়ের শাস্তি থেকে?’’ বস্তুতঃ তাদের প্রভুর নামকীর্তন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।

أَمۡ لَهُمۡ ءَالِهَةࣱ تَمۡنَعُهُم مِّن دُونِنَاۚ لَا یَسۡتَطِیعُونَ نَصۡرَ أَنفُسِهِمۡ وَلَا هُم مِّنَّا یُصۡحَبُونَ ﴿43﴾

তবে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন দেব-দেবী আছে যারা তাদেরকে রক্ষা করবে? তারা তো নিজেদেরই সাহায্য করতে সক্ষম নয় এবং তারা আমার মোকাবেলায় সাহায্যকারীও পাবে না।

জহুরুল হক

অথবা আমাদের ছেড়ে তোমাদের কি দেবদেবী রয়েছে যারা তাদের রক্ষা করতে পারে? তারা তাদের নিজেদের সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না, আর তারা আমাদের থেকেও রক্ষা পাবে না।

بَلۡ مَتَّعۡنَا هَـٰۤؤُلَاۤءِ وَءَابَاۤءَهُمۡ حَتَّىٰ طَالَ عَلَیۡهِمُ ٱلۡعُمُرُۗ أَفَلَا یَرَوۡنَ أَنَّا نَأۡتِی ٱلۡأَرۡضَ نَنقُصُهَا مِنۡ أَطۡرَافِهَاۤۚ أَفَهُمُ ٱلۡغَـٰلِبُونَ ﴿44﴾

বরং আমি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদাকে ভোগসম্বার দিয়েছিলাম, এমনকি তাদের আয়ুস্কালও দীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক থেকে হ্রাস করে আনছি। এরপরও কি তারা বিজয়ী হবে?

জহুরুল হক

বস্তুতঃ আমরা এদের আর এদের পিতৃপুরুষদের ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলাম যে পর্যন্ত না তাদের জন্য জীবন সুদীর্ঘ হয়েছিল। তারা কি তবে দেখে না যে আমরা দেশটাতে এগিয়ে আসছি এর চৌহদ্দিকে সংকুচিত ক’রে নিয়ে? তারা কি এমতাবস্থায় জয়ী হতে পারবে?

قُلۡ إِنَّمَاۤ أُنذِرُكُم بِٱلۡوَحۡیِۚ وَلَا یَسۡمَعُ ٱلصُّمُّ ٱلدُّعَاۤءَ إِذَا مَا یُنذَرُونَ ﴿45﴾

বলুনঃ আমি তো কেবল ওহীর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু বধিরদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সে সতর্কবাণী শোনে না।

জহুরুল হক

বলো -- ''আমি তো তোমাদের সতর্ক করি কেবল প্রত্যাদেশের দ্বারা, আর বধির লোকে আহ্বান শোনে না যখন তাদের সতর্ক করা হয়।’’

وَلَىِٕن مَّسَّتۡهُمۡ نَفۡحَةࣱ مِّنۡ عَذَابِ رَبِّكَ لَیَقُولُنَّ یَـٰوَیۡلَنَاۤ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِینَ ﴿46﴾

আপনার পালনকর্তার আযাবের কিছুমাত্রও তাদেরকে স্পর্শ করলে তারা বলতে থাকবে, হায় আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।

জহুরুল হক

আর যদি তোমার প্রভুর শাস্তির তোড় তাদের স্পর্শ করত তবে তারা নিশ্চয়ই বলত -- ''হায় আমাদের দুর্ভোগ! আমরা নিঃসন্দেহ অন্যায়াচারী ছিলাম।’’

وَنَضَعُ ٱلۡمَوَ ٰ⁠زِینَ ٱلۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ ٱلۡقِیَـٰمَةِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسࣱ شَیۡـࣰٔاۖ وَإِن كَانَ مِثۡقَالَ حَبَّةࣲ مِّنۡ خَرۡدَلٍ أَتَیۡنَا بِهَاۗ وَكَفَىٰ بِنَا حَـٰسِبِینَ ﴿47﴾

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।

জহুরুল হক

আর কিয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, সেজন্য কারো প্রতি এতটুকুও অন্যায় করা হবে না। আর যদি তা সরসে-বীজের ওজন পরিমাণও হয় আমরা সেটা নিয়ে আসব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমরাই যথেষ্ট।

وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَا مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ ٱلۡفُرۡقَانَ وَضِیَاۤءࣰ وَذِكۡرࣰا لِّلۡمُتَّقِینَ ﴿48﴾

আমি মূসা ও হারুণকে দান করেছিলাম মীমাংসাকারী গ্রন্থ, আলো ও উপদেশ, আল্লাহ ভীরুদের জন্যে

জহুরুল হক

আর আমরা অবশ্যই মূসা ও হারূনকে দিয়েছিলাম ফুরকান, আর আলো, আর স্মরণীয় গ্রন্থ -- ধর্মনিষ্ঠদের জন্য, --

ٱلَّذِینَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُم بِٱلۡغَیۡبِ وَهُم مِّنَ ٱلسَّاعَةِ مُشۡفِقُونَ ﴿49﴾

যারা না দেখেই তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত।

জহুরুল হক

যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে নিভৃতে আর তারা ঘড়িঘন্টা সন্বন্ধে ভীত সন্ত্রস্ত।

وَهَـٰذَا ذِكۡرࣱ مُّبَارَكٌ أَنزَلۡنَـٰهُۚ أَفَأَنتُمۡ لَهُۥ مُنكِرُونَ ﴿50﴾

এবং এটা একটা বরকতময় উপদেশ, যা আমি নাযিল করেছি। অতএব তোমরা কি একে অস্বীকার কর?

জহুরুল হক

আর এটি এক কল্যাণময় স্মারকগ্রন্থ যা আমরা অবতারণ করেছি। তোমরা কি তবে এটির প্রতি অমান্যকারী হবে?

۞ وَلَقَدۡ ءَاتَیۡنَاۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ رُشۡدَهُۥ مِن قَبۡلُ وَكُنَّا بِهِۦ عَـٰلِمِینَ ﴿51﴾

আর, আমি ইতিপূর্বে ইব্রাহীমকে তার সৎপন্থা দান করেছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত ও ছিলাম।

জহুরুল হক

আর অবশ্যই আমরা ইব্রাহীমকে ইতিপূর্বে তাঁর সত্যনিষ্ঠতা দিয়েছিলাম, আর তাঁর সন্বন্ধে আমরা সম্যক পরিজ্ঞাত ছিলাম।

إِذۡ قَالَ لِأَبِیهِ وَقَوۡمِهِۦ مَا هَـٰذِهِ ٱلتَّمَاثِیلُ ٱلَّتِیۤ أَنتُمۡ لَهَا عَـٰكِفُونَ ﴿52﴾

যখন তিনি তাঁর পিতা ও তাঁর সম্প্রদায়কে বললেনঃ এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা পূজারী হয়ে বসে আছ।

জহুরুল হক

স্মরণ করো! তিনি তাঁর পিতৃপুরুষকে এবং তাঁর লোকদের বললেন -- ''এই মূর্তিগুলো কী যাদের উপাসনায় তোমরা লেগে আছ?’’

قَالُوا۟ وَجَدۡنَاۤ ءَابَاۤءَنَا لَهَا عَـٰبِدِینَ ﴿53﴾

তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের পুজা করতে দেখেছি।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের এগুলোকে পূজো করতে দেখেছি।’’

قَالَ لَقَدۡ كُنتُمۡ أَنتُمۡ وَءَابَاۤؤُكُمۡ فِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینࣲ ﴿54﴾

তিনি বললেনঃ তোমরা প্রকাশ্য গোমরাহীতে আছ এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''নিশ্চয়ই তোমরা, তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।’’

قَالُوۤا۟ أَجِئۡتَنَا بِٱلۡحَقِّ أَمۡ أَنتَ مِنَ ٱللَّـٰعِبِینَ ﴿55﴾

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের কাছে সত্যসহ আগমন করেছ, না তুমি কৌতুক করছ?

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''তুমি কি আমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছ, না কি তুমি ঠাট্টাবিদ্রপকারীদের একজন?’’

قَالَ بَل رَّبُّكُمۡ رَبُّ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلَّذِی فَطَرَهُنَّ وَأَنَا۠ عَلَىٰ ذَ ٰ⁠لِكُم مِّنَ ٱلشَّـٰهِدِینَ ﴿56﴾

তিনি বললেনঃ না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''বরং তোমাদের প্রভু হচ্ছেন মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অধীশ্বর যিনি এগুলো শুরুতেই সৃষ্টি করেছেন, এবং এসব সন্বন্ধে আমি সাক্ষ্যদানকারীদের মধ্যেকার।

وَتَٱللَّهِ لَأَكِیدَنَّ أَصۡنَـٰمَكُم بَعۡدَ أَن تُوَلُّوا۟ مُدۡبِرِینَ ﴿57﴾

আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব।

জহুরুল হক

''আর আল্লাহ্‌র কসম, আমি অবশ্যই তোমাদের প্রতিমাদের সন্বন্ধে পরিকল্পনা গ্রহণ করব তোমরা যখন পিটটান দিয়ে ফিরে যাবে।’’

فَجَعَلَهُمۡ جُذَ ٰ⁠ذًا إِلَّا كَبِیرࣰا لَّهُمۡ لَعَلَّهُمۡ إِلَیۡهِ یَرۡجِعُونَ ﴿58﴾

অতঃপর তিনি সেগুলোকে চূর্ণ-বিচুর্ণ করে দিলেন ওদের প্রধানটি ব্যতীতঃ যাতে তারা তাঁর কাছে প্রত্যাবর্তন করে।

জহুরুল হক

তারপর তিনি তাদের টুক্‌রো টুক্‌রো করে ফেললেন তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা এর কাছে ফিরে আসতে পারে।

قَالُوا۟ مَن فَعَلَ هَـٰذَا بِـَٔالِهَتِنَاۤ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿59﴾

তারা বললঃ আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার কে করল? সে তো নিশ্চয়ই কোন জালিম।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমাদের দেবতাদের প্রতি এ কাজ কে করেছে? নিঃসন্দেহ সে তো অন্যায়কারীদের একজন।’’

قَالُوا۟ سَمِعۡنَا فَتࣰى یَذۡكُرُهُمۡ یُقَالُ لَهُۥۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمُ ﴿60﴾

কতক লোকে বললঃ আমরা এক যুবককে তাদের সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা করতে শুনেছি; তাকে ইব্রাহীম বলা হয়।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''আমরা এদের সন্বন্ধে একজন যুবককে বলাবলি করতে শুনেছিলাম, তাকে বলা হয় ইব্রাহীম।’’

قَالُوا۟ فَأۡتُوا۟ بِهِۦ عَلَىٰۤ أَعۡیُنِ ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ یَشۡهَدُونَ ﴿61﴾

তারা বললঃ তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখে।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''তাহলে তাকে লোকদের চোখের সামনে নিয়ে এসো, যেন তারা সাক্ষ্য দিতে পারে।’’

قَالُوۤا۟ ءَأَنتَ فَعَلۡتَ هَـٰذَا بِـَٔالِهَتِنَا یَـٰۤإِبۡرَ ٰ⁠هِیمُ ﴿62﴾

তারা বললঃ হে ইব্রাহীম তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ ব্যবহার করেছ?

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''হে ইব্রাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবতাদের প্রতি এই কাজ করেছ?

قَالَ بَلۡ فَعَلَهُۥ كَبِیرُهُمۡ هَـٰذَا فَسۡـَٔلُوهُمۡ إِن كَانُوا۟ یَنطِقُونَ ﴿63﴾

তিনি বললেনঃ না এদের এই প্রধানই তো একাজ করেছে। অতএব তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তারা কথা বলতে পারে।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''আলবৎ কেউ এটা করেছে, এই তো এদের প্রধান, কাজেই এদের জিজ্ঞেস করো, যদি তারা বলতে পারে।’’

فَرَجَعُوۤا۟ إِلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ فَقَالُوۤا۟ إِنَّكُمۡ أَنتُمُ ٱلظَّـٰلِمُونَ ﴿64﴾

অতঃপর মনে মনে চিন্তা করল এবং বললঃ লোক সকল; তোমরাই বে ইনসাফ।

জহুরুল হক

তখন তারা নিজেদের দিকে ফিরল এবং বললে -- ''নিঃসন্দেহ তোমরা নিজেরাই অন্যায়াচারী।’’

ثُمَّ نُكِسُوا۟ عَلَىٰ رُءُوسِهِمۡ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا هَـٰۤؤُلَاۤءِ یَنطِقُونَ ﴿65﴾

অতঃপর তারা ঝুঁকে গেল মস্তক নত করে, তুমি তো জান যে, এরা কথা বলে না

জহুরুল হক

তারপর তাদের হেটঁ করা হ’ল তাদের মাথার উপরে ''তুমি তো অবশ্যই জানো যে এরা কথা বলে না।’’

قَالَ أَفَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا یَنفَعُكُمۡ شَیۡـࣰٔا وَلَا یَضُرُّكُمۡ ﴿66﴾

তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর এবাদত কর, যা তোমাদের কোন উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ?

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''তোমরা কি তবে আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে এমন কিছুর উপাসনা কর যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না আর তোমাদের অপকারও করে না?

أُفࣲّ لَّكُمۡ وَلِمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿67﴾

ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরই এবাদত কর, ওদের জন্যে। তোমরা কি বোঝ না?

জহুরুল হক

''ধিক্ তোমাদের প্রতি এবং আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদেরও প্রতি! তোমরা কি তবুও বুঝবে না?’’

قَالُوا۟ حَرِّقُوهُ وَٱنصُرُوۤا۟ ءَالِهَتَكُمۡ إِن كُنتُمۡ فَـٰعِلِینَ ﴿68﴾

তারা বললঃ একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।

জহুরুল হক

তারা বললে -- ''তাকে পুড়িয়ে ফেলো, এবং তোমাদের দেবতাদের সাহায্য করো যদি তোমরা কিছু করতে চাও।’’

قُلۡنَا یَـٰنَارُ كُونِی بَرۡدࣰا وَسَلَـٰمًا عَلَىٰۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ ﴿69﴾

আমি বললামঃ হে অগ্নি, তুমি ইব্রাহীমের উপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।

জহুরুল হক

আমরা বললাম -- ''হে আগুন! তুমি শীতল ও শান্ত হও ইব্রাহীমের উপরে।’’

وَأَرَادُوا۟ بِهِۦ كَیۡدࣰا فَجَعَلۡنَـٰهُمُ ٱلۡأَخۡسَرِینَ ﴿70﴾

তারা ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম।

জহুরুল হক

আর তারা চেয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে, কিন্তু আমরা তাদেরই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিলাম।

وَنَجَّیۡنَـٰهُ وَلُوطًا إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِی بَـٰرَكۡنَا فِیهَا لِلۡعَـٰلَمِینَ ﴿71﴾

আমি তাঁকে ও লূতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম, যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে এবং লূতকে উদ্ধার করে এনেছিলাম সেই দেশে যেখানে আমরা জগদ্বাসীর জন্য কল্যাণ রেখেছিলাম।

وَوَهَبۡنَا لَهُۥۤ إِسۡحَـٰقَ وَیَعۡقُوبَ نَافِلَةࣰۖ وَكُلࣰّا جَعَلۡنَا صَـٰلِحِینَ ﴿72﴾

আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও পুরস্কার স্বরূপ দিলাম ইয়াকুব এবং প্রত্যেককেই সৎকর্ম পরায়ণ করলাম।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে দিয়েছিলাম ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকুবকে। আর সবাইকে আমরা বানিয়েছিলাম সৎপথাবলন্বী।

وَجَعَلۡنَـٰهُمۡ أَىِٕمَّةࣰ یَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا وَأَوۡحَیۡنَاۤ إِلَیۡهِمۡ فِعۡلَ ٱلۡخَیۡرَ ٰ⁠تِ وَإِقَامَ ٱلصَّلَوٰةِ وَإِیتَاۤءَ ٱلزَّكَوٰةِۖ وَكَانُوا۟ لَنَا عَـٰبِدِینَ ﴿73﴾

আমি তাঁদেরকে নেতা করলাম। তাঁরা আমার নির্দেশ অনুসারে পথ প্রদর্শন করতেন। আমি তাঁদের প্রতি ওহী নাযিল করলাম সৎকর্ম করার, নামায কায়েম করার এবং যাকাত দান করার। তাঁরা আমার এবাদতে ব্যাপৃত ছিল।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁদের বানিয়েছিলাম নেতৃবৃন্দ, তাঁরা আমাদের নির্দেশ অনুসারে সৎপথে চালাতেন, আর তাঁদের কাছে আমরা প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম সৎকাজ করতে ও নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে, আর তাঁরা আমাদের প্রতি বন্দনাকারী ছিলেন।

وَلُوطًا ءَاتَیۡنَـٰهُ حُكۡمࣰا وَعِلۡمࣰا وَنَجَّیۡنَـٰهُ مِنَ ٱلۡقَرۡیَةِ ٱلَّتِی كَانَت تَّعۡمَلُ ٱلۡخَبَـٰۤىِٕثَۚ إِنَّهُمۡ كَانُوا۟ قَوۡمَ سَوۡءࣲ فَـٰسِقِینَ ﴿74﴾

এবং আমি লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান এবং তাঁকে ঐ জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যারা নোংরা কাজে লিপ্ত ছিল। তারা মন্দ ও নাফরমান সম্প্রদায় ছিল।

জহুরুল হক

আর লূতের ক্ষেত্রে -- আমরা তাঁকে দিয়েছিলাম বুদ্ধি-বিবেচনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর আমরা তাঁকে উদ্ধার করেছিলাম সেই জনপদ থেকে যারা জঘন্য কাজ করত। নিঃসন্দেহ তারা ছিল দুষ্ট দুরাচারী সম্প্রদায়।

وَأَدۡخَلۡنَـٰهُ فِی رَحۡمَتِنَاۤۖ إِنَّهُۥ مِنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿75﴾

আমি তাকে আমার অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। সে ছিল সৎকর্মশীলদের একজন।

জহুরুল হক

আর তাঁকে আমরা ভর্তি করেছিলাম আমাদের অনুগ্রহের মধ্যে। নিঃসন্দেহ তিনি ছিলেন সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত।

وَنُوحًا إِذۡ نَادَىٰ مِن قَبۡلُ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ فَنَجَّیۡنَـٰهُ وَأَهۡلَهُۥ مِنَ ٱلۡكَرۡبِ ٱلۡعَظِیمِ ﴿76﴾

এবং স্মরণ করুন নূহকে; যখন তিনি এর পূর্বে আহবান করেছিলেন। তখন আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছিলাম, অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে মহা সংকট থেকে উদ্ধার করেছিলাম।

জহুরুল হক

আর নূহের ক্ষেত্রে, -- স্মরণ করো, তিনি ইতিপূর্বে আহ্বান করেছিলেন, সেজন্য আমরা তাঁর প্রতি সাড়া দিয়েছিলাম, তাই তাঁকে ও তাঁর পরিজনবর্গকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম এক বিরাট সংকট থেকে।

وَنَصَرۡنَـٰهُ مِنَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَاۤۚ إِنَّهُمۡ كَانُوا۟ قَوۡمَ سَوۡءࣲ فَأَغۡرَقۡنَـٰهُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿77﴾

এবং আমি তাঁকে ঐ সম্প্রদায়ের বিপক্ষে সাহায্য করেছিলাম, যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল। নিশ্চয়, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে নিমজ্জত করেছিলাম।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে সাহায্য করেছিলাম সেই লোকদের বিরুদ্ধে যারা আমাদের নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করেছিল। নিঃসন্দেহ তারা ছিল দুষ্ট লোক, তাই তাদের সবাইকে আমরা ডুবিয়ে দিয়েছিলাম।

وَدَاوُۥدَ وَسُلَیۡمَـٰنَ إِذۡ یَحۡكُمَانِ فِی ٱلۡحَرۡثِ إِذۡ نَفَشَتۡ فِیهِ غَنَمُ ٱلۡقَوۡمِ وَكُنَّا لِحُكۡمِهِمۡ شَـٰهِدِینَ ﴿78﴾

এবং স্মরণ করুন দাউদ ও সুলায়মানকে, যখন তাঁরা শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে বিচার করেছিলেন। তাতে রাত্রিকালে কিছু লোকের মেষ ঢুকে পড়েছিল। তাদের বিচার আমার সম্মুখে ছিল।

জহুরুল হক

আর দাউদ এবং সুলাইমানের ক্ষেত্রে, -- স্মরণ করো, তাঁরা হুকুম দিয়েছিলেন এক শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে যাতে লোকদের ভেড়া ঢুকে পড়েছিল রাতের বেলা, আর আমরা তাঁদের হুকুমের সাক্ষী ছিলাম।

فَفَهَّمۡنَـٰهَا سُلَیۡمَـٰنَۚ وَكُلًّا ءَاتَیۡنَا حُكۡمࣰا وَعِلۡمࣰاۚ وَسَخَّرۡنَا مَعَ دَاوُۥدَ ٱلۡجِبَالَ یُسَبِّحۡنَ وَٱلطَّیۡرَۚ وَكُنَّا فَـٰعِلِینَ ﴿79﴾

অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম।

জহুরুল হক

আর আমরা সুলাইমানকে এটি বুঝতে দিয়েছিলাম। আর উভয়কেই আমরা দিয়েছিলাম বিচার-বিবেচনা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান, আর আমরা দাউদের সঙ্গে পাহাড়-পর্বতকে ও পাখিগুলোকে মহিমা ঘোষণায় অনুগত করেছিলাম। আর আমরাই কার্যকর্তা।

وَعَلَّمۡنَـٰهُ صَنۡعَةَ لَبُوسࣲ لَّكُمۡ لِتُحۡصِنَكُم مِّنۢ بَأۡسِكُمۡۖ فَهَلۡ أَنتُمۡ شَـٰكِرُونَ ﴿80﴾

আমি তাঁকে তোমাদের জন্যে বর্ম নির্মান শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে?

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে শিখিয়েছিলাম তোমাদের জন্য বর্ম তৈরি করতে যেন তা তোমাদের রক্ষা করতে পারে তো মাদের যুদ্ধবিগ্রহে। তোমরা কি তবে কৃতজ্ঞ হবে না?

وَلِسُلَیۡمَـٰنَ ٱلرِّیحَ عَاصِفَةࣰ تَجۡرِی بِأَمۡرِهِۦۤ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِی بَـٰرَكۡنَا فِیهَاۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَیۡءٍ عَـٰلِمِینَ ﴿81﴾

এবং সুলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে; তা তাঁর আদেশে প্রবাহিত হত ঐ দেশের দিকে, যেখানে আমি কল্যাণ দান করেছি। আমি সব বিষয়েই সম্যক অবগত রয়েছি।

জহুরুল হক

আর সুলাইমানকে প্রবল বাতাস, -- তা প্রবাহিত হয়েছিল তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী সেই দেশের দিকে যেখানে আমরা কল্যাণ নিহিত করেছিলাম। আর সব বিষয়ে আমরা সম্যক অবগত।

وَمِنَ ٱلشَّیَـٰطِینِ مَن یَغُوصُونَ لَهُۥ وَیَعۡمَلُونَ عَمَلࣰا دُونَ ذَ ٰ⁠لِكَۖ وَكُنَّا لَهُمۡ حَـٰفِظِینَ ﴿82﴾

এবং অধীন করেছি শয়তানদের কতককে, যারা তার জন্যে ডুবুরীর কাজ করত এবং এ ছাড়া অন্য আরও অনেক কাজ করত। আমি তাদেরকে নিয়ন্ত্রন করে রাখতাম।

জহুরুল হক

আর শয়তানদের কতক তাঁর জন্য ডুব দিত আর তা ছাড়া আরো কাজ করত, আর আমরা ছিলাম তাদের তত্ত্বাবধায়ক।

۞ وَأَیُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥۤ أَنِّی مَسَّنِیَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّ ٰ⁠حِمِینَ ﴿83﴾

এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেনঃ আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান।

জহুরুল হক

আর আইয়ুবের ক্ষেত্রে, -- স্মরণ করো, তাঁর প্রভুকে তিনি আহ্বান ক’রে বললেন -- ''নিঃসন্দেহ বিপদ আমাকে স্পর্শ করেছে, আর তুমিই তো দয়াশীলদের মধ্যে পরম করুণাময়।’’

فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ فَكَشَفۡنَا مَا بِهِۦ مِن ضُرࣲّۖ وَءَاتَیۡنَـٰهُ أَهۡلَهُۥ وَمِثۡلَهُم مَّعَهُمۡ رَحۡمَةࣰ مِّنۡ عِندِنَا وَذِكۡرَىٰ لِلۡعَـٰبِدِینَ ﴿84﴾

অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা এবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ।

জহুরুল হক

সুতরাং আমরা তাঁর প্রতি সাড়া দিলাম, এবং দুঃখকষ্টের যা থেকে তিনি ভুগছিলেন তা দূর করে দিলাম, আর তাঁকে তাঁর পরিবারবর্গ দিয়েছিলাম এবং তাদের সাথে তাদের মতো লোকদেরও -- আমাদের তরফ থেকে এ এক করুণা, আর বন্দনাকারীদের জন্য স্মরণীয় বিষয়।

وَإِسۡمَـٰعِیلَ وَإِدۡرِیسَ وَذَا ٱلۡكِفۡلِۖ كُلࣱّ مِّنَ ٱلصَّـٰبِرِینَ ﴿85﴾

এবং ইসমাঈল, ই’দ্রীস ও যুলকিফলের কথা স্মরণ করুন, তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সবরকারী।

জহুরুল হক

আর ইসমাইল ও ইদরীস ও যুল-কিফল, -- সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ীদের মধ্যেকার।

وَأَدۡخَلۡنَـٰهُمۡ فِی رَحۡمَتِنَاۤۖ إِنَّهُم مِّنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿86﴾

আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।

জহুরুল হক

আর তাঁদের আমরা প্রবেশ করিয়েছিলাম আমাদের করুণাভান্ডারে। নিঃসন্দেহ তাঁরা ছিলেন সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত ।

وَذَا ٱلنُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَـٰضِبࣰا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقۡدِرَ عَلَیۡهِ فَنَادَىٰ فِی ٱلظُّلُمَـٰتِ أَن لَّاۤ إِلَـٰهَ إِلَّاۤ أَنتَ سُبۡحَـٰنَكَ إِنِّی كُنتُ مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿87﴾

এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেনঃ তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার।

জহুরুল হক

আর যুন-নূন, -- স্মরণ করো, তিনি চলে গিয়েছিলেন রেগেমেগে, আর তিনি ভেবেছিলেন যে আমরা কখনো তাঁর উপরে ক্ষমতা চালাব না, তখন সেই সংকটে তিনি আহ্বান করলেন যে ''তুমি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তোমারই সব মহিমা, আমি নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।’’

فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَنَجَّیۡنَـٰهُ مِنَ ٱلۡغَمِّۚ وَكَذَ ٰ⁠لِكَ نُـۨجِی ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿88﴾

অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।

জহুরুল হক

সুতরাং আমরা তাঁর প্রতি সাড়া দিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাঁকে উদ্ধার করলাম। আর এইভাবেই আমরা মুমিনদের উদ্ধার করে থাকি।

وَزَكَرِیَّاۤ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ رَبِّ لَا تَذَرۡنِی فَرۡدࣰا وَأَنتَ خَیۡرُ ٱلۡوَ ٰ⁠رِثِینَ ﴿89﴾

এবং যাকারিয়ার কথা স্মরণ করুন, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল; হে আমার পালনকর্তা আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।

জহুরুল হক

আর যাকারিয়ার ক্ষেত্রে, -- স্মরণ করো, তিনি তাঁর প্রভুকে আহ্বান করে বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে একলা রেখো না, আর তুমি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।’’

فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَوَهَبۡنَا لَهُۥ یَحۡیَىٰ وَأَصۡلَحۡنَا لَهُۥ زَوۡجَهُۥۤۚ إِنَّهُمۡ كَانُوا۟ یُسَـٰرِعُونَ فِی ٱلۡخَیۡرَ ٰ⁠تِ وَیَدۡعُونَنَا رَغَبࣰا وَرَهَبࣰاۖ وَكَانُوا۟ لَنَا خَـٰشِعِینَ ﴿90﴾

অতঃপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া এবং তার জন্যে তার স্ত্রীকে প্রসব যোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।

জহুরুল হক

সুতরাং আমরা তাঁর প্রতি সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাঁকে দিয়েছিলাম ইয়াহ্‌য়া, আর তাঁর স্ত্রীকে তাঁর জন্য সুস্থ করেছিলাম। নিঃসন্দেহ তাঁরা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করতেন, এবং আমাদের ডাকতেন আশা নিয়ে ও ভয়ের সাথে। আর আমাদের প্রতি তাঁরা ছিলেন বিনীত।

وَٱلَّتِیۤ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِیهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلۡنَـٰهَا وَٱبۡنَهَاۤ ءَایَةࣰ لِّلۡعَـٰلَمِینَ ﴿91﴾

এবং সেই নারীর কথা আলোচনা করুন, যে তার কামপ্রবৃত্তিকে বশে রেখেছিল, অতঃপর আমি তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলাম।

জহুরুল হক

আর তাঁর ক্ষেত্রে, যিনি তাঁর সতীত্ব রক্ষা করেছিলেন, সেজন্য আমরা তার মধ্যে আমাদের কাছের আ‌ত্মা থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম, আর আমরা তাকে ও তার ছেলেকে একটি নিদর্শন বানিয়েছিলাম।

إِنَّ هَـٰذِهِۦۤ أُمَّتُكُمۡ أُمَّةࣰ وَ ٰ⁠حِدَةࣰ وَأَنَا۠ رَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُونِ ﴿92﴾

তারা সকলেই তোমাদের ধর্মের; একই ধর্মে তো বিশ্বাসী সবাই এবং আমিই তোমাদের পালনকর্তা, অতএব আমার বন্দেগী কর।

জহুরুল হক

''নিঃসন্দেহ তোমাদের এই সম্প্রদায় একই সম্প্রদায়, আর আমিই তোমাদের প্রভু, সুতরাং আমাকেই তোমরা উপাসনা করো।’’

وَتَقَطَّعُوۤا۟ أَمۡرَهُم بَیۡنَهُمۡۖ كُلٌّ إِلَیۡنَا رَ ٰ⁠جِعُونَ ﴿93﴾

এবং মানুষ তাদের কার্যকলাপ দ্বারা পারস্পরিক বিষয়ে ভেদ সৃষ্টি করেছে। প্রত্যেকেই আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

কিন্তু তারা নিজেদের মধ্যে তাদের অনুশাসন কেটে ফেলল। সকলেই আমাদের কাছে ফিরে আসবে।

فَمَن یَعۡمَلۡ مِنَ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ وَهُوَ مُؤۡمِنࣱ فَلَا كُفۡرَانَ لِسَعۡیِهِۦ وَإِنَّا لَهُۥ كَـٰتِبُونَ ﴿94﴾

অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।

জহুরুল হক

সুতরাং যে কেউ সৎকাজগুলো থেকে কাজ করে যায় আর সে মুমিন হয়, তবে তার কর্মপ্রচেষ্টার কোনো অস্বীকৃতি হবে না, আর নিঃসন্দেহ আমরা হচ্ছি তার জন্য লিপিকার।

وَحَرَ ٰ⁠مٌ عَلَىٰ قَرۡیَةٍ أَهۡلَكۡنَـٰهَاۤ أَنَّهُمۡ لَا یَرۡجِعُونَ ﴿95﴾

যেসব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত।

জহুরুল হক

আর এটি নিষিদ্ধ সেই জনপদের জন্য যাকে আমরা ধ্বংস করেছি, -- যে তারা আর ফিরে আসবে না।

حَتَّىٰۤ إِذَا فُتِحَتۡ یَأۡجُوجُ وَمَأۡجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبࣲ یَنسِلُونَ ﴿96﴾

যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।

জহুরুল হক

যদিবা ইয়াজুজ ও মাজুজকে ছেড়ে দেওয়া হয় আর তারা ছড়িয়ে আসে প্রতি ঊর্ধ্বদেশ থেকে।

وَٱقۡتَرَبَ ٱلۡوَعۡدُ ٱلۡحَقُّ فَإِذَا هِیَ شَـٰخِصَةٌ أَبۡصَـٰرُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ یَـٰوَیۡلَنَا قَدۡ كُنَّا فِی غَفۡلَةࣲ مِّنۡ هَـٰذَا بَلۡ كُنَّا ظَـٰلِمِینَ ﴿97﴾

আমোঘ প্রতিশ্রুত সময় নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; হায় আমাদের দূর্ভাগ্য, আমরা এ বিষয়ে বেখবর ছিলাম; বরং আমরা গোনাহগরই ছিলাম।

জহুরুল হক

আর যথার্থ ওয়াদা ঘনিয়ে আসছে, তখন দেখবে, যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছিল তাদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। ''ধিক্ আমাদের, আমরা তো এ বিষয়ে উদাসীনতায় পড়ে রয়েছিলাম! বরং আমরা অন্যায়কারী ছিলাম।’’

إِنَّكُمۡ وَمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ حَصَبُ جَهَنَّمَ أَنتُمۡ لَهَا وَ ٰ⁠رِدُونَ ﴿98﴾

তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের পুজা কর, সেগুলো দোযখের ইন্ধন। তোমরাই তাতে প্রবেশ করবে।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তোমরা, আর আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যে-সবের উপাসনা কর তারা তো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা এতে আসতেই চলেছ।

لَوۡ كَانَ هَـٰۤؤُلَاۤءِ ءَالِهَةࣰ مَّا وَرَدُوهَاۖ وَكُلࣱّ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿99﴾

এই মূর্তিরা যদি উপাস্য হত, তবে জাহান্নামে প্রবেশ করত না। প্রত্যেকেই তাতে চিরস্থায়ী হয়ে পড়ে থাকবে।

জহুরুল হক

এইগুলো যদি উপাস্য হতো তাহলে তারা এতে আসত না। বস্তুতঃ সকলেই এতে স্থায়ীভাবে থাকবে।

لَهُمۡ فِیهَا زَفِیرࣱ وَهُمۡ فِیهَا لَا یَسۡمَعُونَ ﴿100﴾

তারা সেখানে চীৎকার করবে এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।

জহুরুল হক

তাদের জন্য তাতে রয়েছে আর্তনাদ, আর সেখানে তারা শুনতে পারবে না।

إِنَّ ٱلَّذِینَ سَبَقَتۡ لَهُم مِّنَّا ٱلۡحُسۡنَىٰۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ عَنۡهَا مُبۡعَدُونَ ﴿101﴾

যাদের জন্য প্রথম থেকেই আমার পক্ষ থেকে কল্যাণ নির্ধারিত হয়েছে তারা দোযখ থেকে দূরে থাকবে।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ যাদের জন্য আমাদের তরফ থেকে কল্যাণ ইতিমধ্যে ধার্য হয়ে গেছে তদের এ থেকে বহু দূরে রাখা হ বে,

لَا یَسۡمَعُونَ حَسِیسَهَاۖ وَهُمۡ فِی مَا ٱشۡتَهَتۡ أَنفُسُهُمۡ خَـٰلِدُونَ ﴿102﴾

তারা তার ক্ষীণতম শব্দও শুনবে না এবং তারা তাদের মনের বাসনা অনুযায়ী চিরকাল বসবাস করবে।

জহুরুল হক

তারা এর হিস্‌হিস্ শন্দটুকুও শুনবে না, আর তাদের অন্তর যা কামনা করে সেইখানেই তারা স্থায়ীভাবে থাকবে।

لَا یَحۡزُنُهُمُ ٱلۡفَزَعُ ٱلۡأَكۡبَرُ وَتَتَلَقَّىٰهُمُ ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةُ هَـٰذَا یَوۡمُكُمُ ٱلَّذِی كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ﴿103﴾

মহা ত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেঃ আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।

জহুরুল হক

ভয়ংকর আতঙ্ক তাদের বিষাদগ্রস্ত করবে না, আর ফিরিশ্‌তারা তাদের সঙ্গে মুলাকাত করবে -- ''এই হচ্ছে তোমাদের দিন যে সন্বন্ধে তোমাদের ওয়াদা করা হয়েছিল।’’

یَوۡمَ نَطۡوِی ٱلسَّمَاۤءَ كَطَیِّ ٱلسِّجِلِّ لِلۡكُتُبِۚ كَمَا بَدَأۡنَاۤ أَوَّلَ خَلۡقࣲ نُّعِیدُهُۥۚ وَعۡدًا عَلَیۡنَاۤۚ إِنَّا كُنَّا فَـٰعِلِینَ ﴿104﴾

সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। আমার ওয়াদা নিশ্চিত, আমাকে তা পূর্ণ করতেই হবে।

জহুরুল হক

সেই দিনে আমরা আকাশকে গুটিয়ে নেব যেমন গুটানো হয় লিখিত নথিপত্র! যেভাবে আমরা প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেইভাবে আমরা এটি পুনর্সৃষ্টি করব। ওয়াদা রক্ষাকরণ আমাদের উপরে ন্যস্ত। নিঃসন্দেহ আমরা কর্মকর্তা।

وَلَقَدۡ كَتَبۡنَا فِی ٱلزَّبُورِ مِنۢ بَعۡدِ ٱلذِّكۡرِ أَنَّ ٱلۡأَرۡضَ یَرِثُهَا عِبَادِیَ ٱلصَّـٰلِحُونَ ﴿105﴾

আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।

জহুরুল হক

আর স্মারক-গ্রন্থের পরে আমরা যবূর-গ্রন্থে লিখে দিয়েছি যে, দেশটা -- এটাকে উত্তরাধিকার করবে আমার সৎকর্মী বান্দারা।

إِنَّ فِی هَـٰذَا لَبَلَـٰغࣰا لِّقَوۡمٍ عَـٰبِدِینَ ﴿106﴾

এতে এবাদতকারী সম্প্রদায়ের জন্যে পর্যাপ্ত বিষয়বস্তু আছে।

জহুরুল হক

বস্তুতঃ এতে রয়েছে বাণী উপাসনাকারী লোকদের জন্য।

وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَـٰكَ إِلَّا رَحۡمَةࣰ لِّلۡعَـٰلَمِینَ ﴿107﴾

আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।

জহুরুল হক

আর আমরা তোমাকে পাঠাই নি বিশ্বজগতের জন্য এক করুণারূপে ভিন্ন।

قُلۡ إِنَّمَا یُوحَىٰۤ إِلَیَّ أَنَّمَاۤ إِلَـٰهُكُمۡ إِلَـٰهࣱ وَ ٰ⁠حِدࣱۖ فَهَلۡ أَنتُم مُّسۡلِمُونَ ﴿108﴾

বলুনঃ আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাংতোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে?

জহুরুল হক

বলো -- ''আমার কাছে আলবৎ প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে যে, নিঃসন্দেহ তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য। তোমরা কি তবে আ‌ত্মসমর্পণকারী হবে না?’’

فَإِن تَوَلَّوۡا۟ فَقُلۡ ءَاذَنتُكُمۡ عَلَىٰ سَوَاۤءࣲۖ وَإِنۡ أَدۡرِیۤ أَقَرِیبٌ أَم بَعِیدࣱ مَّا تُوعَدُونَ ﴿109﴾

অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলে দিনঃ আমি তোমাদেরকে পরিস্কার ভাবে সতর্ক করেছি এবং আমি জানি না, তোমাদেরকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তা নিকটবর্তী না দূরবর্তী।

জহুরুল হক

কিন্তু যদি তারা ফিরে যায় তবে তুমি বলো -- ''আমি তোমাদের সাবধান করে দিয়েছি যথাযথভাবে। আর আমি জানি না তোমাদের যা ওয়াদা করা হয়েছে তা আসন্ন না দূরবর্তী।

إِنَّهُۥ یَعۡلَمُ ٱلۡجَهۡرَ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ وَیَعۡلَمُ مَا تَكۡتُمُونَ ﴿110﴾

তিনি জানেন, যে কথা সশব্দে বল এবং যে কথা তোমরা গোপন কর।

জহুরুল হক

''নিঃসন্দেহ তিনি জানেন কথাবার্তার প্রকাশ্য দিক আর জানেন যা তোমরা গোপন কর।

وَإِنۡ أَدۡرِی لَعَلَّهُۥ فِتۡنَةࣱ لَّكُمۡ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِینࣲ ﴿111﴾

আমি জানি না সম্ভবতঃ বিলম্বের মধ্যে তোমাদের জন্যে একটি পরীক্ষা এবং এক সময় পর্যন্ত ভোগ করার সুযোগ।

জহুরুল হক

''আর জানি না, হতে পারে এ তোমাদের জন্য একটি পরীক্ষা, এবং কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ।’’

قَـٰلَ رَبِّ ٱحۡكُم بِٱلۡحَقِّۗ وَرَبُّنَا ٱلرَّحۡمَـٰنُ ٱلۡمُسۡتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ ﴿112﴾

পয়গাম্বর বললেনঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি ন্যায়ানুগ ফয়সালা করে দিন। আমাদের পালনকর্তা তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করে দাও।’’ আর আমাদের প্রভু পরম করুণাময় যাঁর সাহায্য প্রার্থনীয় তোমরা যা আরোপ কর তার বিরুদ্ধে।