Main pages

Surah The Spider [Al-Ankaboot] in Bengali

Surah The Spider [Al-Ankaboot] Ayah 69 Location Makkah Number 29

الۤمۤ ﴿1﴾

আলিফ-লাম-মীম।

জহুরুল হক

আলিফ, লাম, মীম।

أَحَسِبَ ٱلنَّاسُ أَن یُتۡرَكُوۤا۟ أَن یَقُولُوۤا۟ ءَامَنَّا وَهُمۡ لَا یُفۡتَنُونَ ﴿2﴾

মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?

জহুরুল হক

লোকেরা কি মনে করে যে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে যদি তারা বলে -- ''আমরা ঈমান এনেছি’’, আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না?

وَلَقَدۡ فَتَنَّا ٱلَّذِینَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَلَیَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِینَ صَدَقُوا۟ وَلَیَعۡلَمَنَّ ٱلۡكَـٰذِبِینَ ﴿3﴾

আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।

জহুরুল হক

আর এদের পূর্বে যারা ছিল তাদের আমরা ইতিপূর্বে অবশ্যই পরীক্ষা করেছিলাম, এইভাবেই আল্লাহ্ জানতে পারেন তাদের যারা সত্যপরায়ণতা অবলন্বন করে, আর জানতে পারেন মিথ্যাচারীদের।

أَمۡ حَسِبَ ٱلَّذِینَ یَعۡمَلُونَ ٱلسَّیِّـَٔاتِ أَن یَسۡبِقُونَاۚ سَاۤءَ مَا یَحۡكُمُونَ ﴿4﴾

যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ।

জহুরুল হক

আথবা, যারা পাপাচার করে তারা কি ভাবে যে তারা আমাদের এড়িয়ে যেতে পারবে? তারা যা সিদ্ধান্ত করে তা কত মন্দ!

مَن كَانَ یَرۡجُوا۟ لِقَاۤءَ ٱللَّهِ فَإِنَّ أَجَلَ ٱللَّهِ لَـَٔاتࣲۚ وَهُوَ ٱلسَّمِیعُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿5﴾

যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবে। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

জহুরুল হক

যারাই আল্লাহ্‌র সঙ্গে মোলাকাতের কামনা করে আল্লাহ্‌র নির্ধারিত কাল তবে নিশ্চয়ই আগতপ্রায়। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

وَمَن جَـٰهَدَ فَإِنَّمَا یُجَـٰهِدُ لِنَفۡسِهِۦۤۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَغَنِیٌّ عَنِ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿6﴾

যে কষ্ট স্বীকার করে, সে তো নিজের জন্যেই কষ্ট স্বীকার করে। আল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে বে-পরওয়া।

জহুরুল হক

আর যে কেউ জিহাদ করে, সে তাহলে নিশ্চয়ই সংগ্রাম করে তার নিজেরই জন্যে। আল্লাহ্ নিঃসন্দেহ বিশ্বজগতের উপরে অনন্য- নির্ভর।

وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَنُكَفِّرَنَّ عَنۡهُمۡ سَیِّـَٔاتِهِمۡ وَلَنَجۡزِیَنَّهُمۡ أَحۡسَنَ ٱلَّذِی كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿7﴾

আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব।

জহুরুল হক

আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আমরা তাদের থেকে তাদের দোষত্রুটিগুলো অবশ্যই দূর করে দেব, আর তারা যা করত সেজন্য উত্তমভাবে আমরা অবশ্যই তাদের প্রতিদান দেব।

وَوَصَّیۡنَا ٱلۡإِنسَـٰنَ بِوَ ٰ⁠لِدَیۡهِ حُسۡنࣰاۖ وَإِن جَـٰهَدَاكَ لِتُشۡرِكَ بِی مَا لَیۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمࣱ فَلَا تُطِعۡهُمَاۤۚ إِلَیَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿8﴾

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।

জহুরুল হক

আর আমরা মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু তারা যদি তোমার সঙ্গে জেদ করে যেন তুমি আমার সাথে এমন কিছু শরিক কর যার সন্বন্ধে তোমার কাছে কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাদের আজ্ঞাপালন করো না। আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন আমি তোমাদের জানিয়ে দেব যা কিছু তোমরা করছিলে।

وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَنُدۡخِلَنَّهُمۡ فِی ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿9﴾

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব।

জহুরুল হক

বস্তুতঃ যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে আমরা নিশ্চয়ই তাদের প্রবেশ করাব সৎকর্মীদের মধ্যে।

وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن یَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ فَإِذَاۤ أُوذِیَ فِی ٱللَّهِ جَعَلَ فِتۡنَةَ ٱلنَّاسِ كَعَذَابِ ٱللَّهِۖ وَلَىِٕن جَاۤءَ نَصۡرࣱ مِّن رَّبِّكَ لَیَقُولُنَّ إِنَّا كُنَّا مَعَكُمۡۚ أَوَلَیۡسَ ٱللَّهُ بِأَعۡلَمَ بِمَا فِی صُدُورِ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿10﴾

কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি; কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নির্যাতিত হয়, তখন তারা মানুষের নির্যাতনকে আল্লাহর আযাবের মত মনে করে। যখন আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন সাহায্য আসে তখন তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলাম। বিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন?

জহুরুল হক

আর লোকেদের মধ্যে এমনও রয়েছে যে বলে -- ''আমরা আল্লাহ্‌তে ঈমান এনেছি’’, কিন্তু যখন তাকে আল্লাহ্‌র পথে কষ্ট দেওয়া হয় তখন সে লোকদের উৎপীড়নকে আল্লাহ্‌র শাস্তি বলে জ্ঞান করে। আর যদি তোমার প্রভুর নিকট থেকে কোনো সাহায্য আসে তবে তারা অবশ্যই বলবে -- ''আমরা নিঃসন্দেহ তোমাদের সাথে ছিলাম।’’ এ কি নয় যে আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন যা কিছু বিশ্ববাসীর হৃদয়ে রয়েছে?

وَلَیَعۡلَمَنَّ ٱللَّهُ ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَلَیَعۡلَمَنَّ ٱلۡمُنَـٰفِقِینَ ﴿11﴾

আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নিশ্চয় জেনে নেবেন যারা মুনাফেক।

জহুরুল হক

আর আল্লাহ্ অবশ্যই জানিয়ে দেবেন তাদের যারা ঈমান এনেছে, আর জানিয়ে দেবেন মুনাফিকদের।

وَقَالَ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ ٱتَّبِعُوا۟ سَبِیلَنَا وَلۡنَحۡمِلۡ خَطَـٰیَـٰكُمۡ وَمَا هُم بِحَـٰمِلِینَ مِنۡ خَطَـٰیَـٰهُم مِّن شَیۡءٍۖ إِنَّهُمۡ لَكَـٰذِبُونَ ﴿12﴾

কাফেররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ কর। আমরা তোমাদের পাপভার বহন করব। অথচ তারা পাপভার কিছুতেই বহন করবে না। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।

জহুরুল হক

আর যারা অবিশ্বাস করে তারা যারা বিশ্বাস করেছে তাদের বলে -- ''আমাদের পথ অনুসরণ কর, তাহলে আমরা তোমাদের পাপ বহন করব।’’ বস্তুত তারা তো ওদের পাপের থেকে কিছুরই ভারবাহক হবে না। নিঃসন্দেহ তারাই তো মিথ্যাবাদী।

وَلَیَحۡمِلُنَّ أَثۡقَالَهُمۡ وَأَثۡقَالࣰا مَّعَ أَثۡقَالِهِمۡۖ وَلَیُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ عَمَّا كَانُوا۟ یَفۡتَرُونَ ﴿13﴾

তারা নিজেদের পাপভার এবং তার সাথে আরও কিছু পাপভার বহন করবে। অবশ্য তারা যে সব মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।

জহুরুল হক

আর তারা তাদের বোঝা অবশ্যই বইবে, আর তাদের বোঝার সঙ্গে অন্য বোঝাও। আর কিয়ামতের দিনে তাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে যা তারা উাবন করেছিল সে-সন্বন্ধে।

وَلَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَلَبِثَ فِیهِمۡ أَلۡفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمۡسِینَ عَامࣰا فَأَخَذَهُمُ ٱلطُّوفَانُ وَهُمۡ ظَـٰلِمُونَ ﴿14﴾

আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবণ গ্রাস করেছিল। তারা ছিল পাপী।

জহুরুল হক

আর ইতিপূর্বে আমরা অবশ্যই নূহ্‌কে পাঠিয়েছিলাম তাঁর লোকদের কাছে, তিনি তখন তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিলেন পঞ্চাশ বছর কম এক হাজার বৎসর। তখন মহাপ্লাবন তাদের পাকড়াও করল, যেহেতু তারা ছিল অত্যাচারী।

فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَأَصۡحَـٰبَ ٱلسَّفِینَةِ وَجَعَلۡنَـٰهَاۤ ءَایَةࣰ لِّلۡعَـٰلَمِینَ ﴿15﴾

অতঃপর আমি তাঁকে ও নৌকারোহীগণকে রক্ষা করলাম এবং নৌকাকে নিদর্শন করলাম বিশ্ববাসীর জন্যে।

জহুরুল হক

তখন আমরা তাঁকে ও জাহাজের আরোহীদের উদ্ধার করেছিলাম, আর একে আমরা বিশ্ববাসীর জন্য একটি নিদর্শন বানিয়েছিলাম।

وَإِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱتَّقُوهُۖ ذَ ٰ⁠لِكُمۡ خَیۡرࣱ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ﴿16﴾

স্মরণ কর ইব্রাহীমকে। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন; তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ।

জহুরুল হক

আর ইব্রাহীমকে, -- স্মরণ করো! তিনি তাঁর লোকদের বলেছিলেন -- ''আল্লাহ্‌র এবাদত কর ও তাঁকে ভয়ভক্তি কর, এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।

إِنَّمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡثَـٰنࣰا وَتَخۡلُقُونَ إِفۡكًاۚ إِنَّ ٱلَّذِینَ تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ لَا یَمۡلِكُونَ لَكُمۡ رِزۡقࣰا فَٱبۡتَغُوا۟ عِندَ ٱللَّهِ ٱلرِّزۡقَ وَٱعۡبُدُوهُ وَٱشۡكُرُوا۟ لَهُۥۤۖ إِلَیۡهِ تُرۡجَعُونَ ﴿17﴾

তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ। তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়। কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

''আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তোমরা তো শুধু প্রতিমাদের পূজা করছ, আর তোমরা একটি মিথ্যা উদ্ভাবন করেছ। নিঃসন্দেহ তোমরা আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে যাদের আরাধনা করছ তারা তোমাদের জন্য জীবিকার উপরে কোনো কর্তৃত্ব রাখে না, কাজেই আল্লাহ্‌র কাছে জীবিকা অণ্বেষণ কর ও তাঁরই উপাসনা কর, আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর, তাঁর কাছেই তো তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

وَإِن تُكَذِّبُوا۟ فَقَدۡ كَذَّبَ أُمَمࣱ مِّن قَبۡلِكُمۡۖ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِینُ ﴿18﴾

তোমরা যদি মিথ্যাবাদী বল, তবে তোমাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যাবাদী বলেছে। স্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছে দেয়াই তো রসূলের দায়িত্ব।

জহুরুল হক

''আর যদি তোমরা প্রত্যাখ্যান কর তবে তোমাদের পূর্বযুগের সম্প্রদায়গুলোও প্রত্যাখ্যান করেছিল। আর রসূলের উপরে পরিস্কারভাবে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।’’

أَوَلَمۡ یَرَوۡا۟ كَیۡفَ یُبۡدِئُ ٱللَّهُ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیدُهُۥۤۚ إِنَّ ذَ ٰ⁠لِكَ عَلَى ٱللَّهِ یَسِیرࣱ ﴿19﴾

তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেন অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন? এটা আল্লাহর জন্যে সহজ।

জহুরুল হক

তারা কি তবে দেখে নি কেমন ক’রে আল্লাহ্ সৃষ্টি শুরু করেন, তারপর তা পুনরুৎপাদন করেন। নিঃসন্দেহ এ আল্লাহ্‌র কাছে সহজসাধ্য।

قُلۡ سِیرُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ فَٱنظُرُوا۟ كَیۡفَ بَدَأَ ٱلۡخَلۡقَۚ ثُمَّ ٱللَّهُ یُنشِئُ ٱلنَّشۡأَةَ ٱلۡـَٔاخِرَةَۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ قَدِیرࣱ ﴿20﴾

বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম।

জহুরুল হক

বলো -- ''পৃথিবীতে তোমরা ভ্রমণ কর আর দেখ কিভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছিলেন, তারপর আল্লাহ্ পরবর্তী সৃষ্টিকে সৃজন করেন।’’ নিশ্চয় আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।

یُعَذِّبُ مَن یَشَاۤءُ وَیَرۡحَمُ مَن یَشَاۤءُۖ وَإِلَیۡهِ تُقۡلَبُونَ ﴿21﴾

তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা রহমত করেন। তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

তিনি শাস্তি দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন এবং করুণা করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর তাঁর দিকেই তো তোমাদের ফেরানো হবে।

وَمَاۤ أَنتُم بِمُعۡجِزِینَ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِی ٱلسَّمَاۤءِۖ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ مِن وَلِیࣲّ وَلَا نَصِیرࣲ ﴿22﴾

তোমরা স্থলে ও অন্তরীক্ষে আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন হিতাকাঙ্খী নেই, সাহায্যকারীও নেই।

জহুরুল হক

আর তোমরা এড়িয়ে যাবার লোক হবে না এই পৃথিবীতে আর মহাকাশেও নয়, আর আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে তোমাদের জন্য কোনো অভিভাবক নেই এবং সাহায্যকারীও নেই।

وَٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ بِـَٔایَـٰتِ ٱللَّهِ وَلِقَاۤىِٕهِۦۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ یَىِٕسُوا۟ مِن رَّحۡمَتِی وَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِیمࣱ ﴿23﴾

যারা আল্লাহর আয়াত সমূহ ও তাঁর সাক্ষাত অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে নিরাশ হবে এবং তাদের জন্যেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

জহুরুল হক

আর যারা আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলী ও তাঁর সঙ্গে মোলাকাত হওয়া অস্বীকার করে তারা আমার করুণা থেকে নিরাশ হয়েছে, আর তারা -- তাদেরই জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوا۟ ٱقۡتُلُوهُ أَوۡ حَرِّقُوهُ فَأَنجَىٰهُ ٱللَّهُ مِنَ ٱلنَّارِۚ إِنَّ فِی ذَ ٰ⁠لِكَ لَـَٔایَـٰتࣲ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿24﴾

তখন ইব্রাহীমের সম্প্রদায়ের এছাড়া কোন জওয়াব ছিল না যে তারা বলল, তাকে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ কর। অতঃপর আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেন। নিশ্চয় এতে বিশ্বাসী লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

জহুরুল হক

সেজন্য তাঁর লোকদের জবাব এ ভিন্ন আর কিছু ছিল না যে তারা বলল -- ''তাকে কাতল কর অথবা তাকে পুড়িয়ে ফেল।’’ কিন্তু আল্লাহ্ তাঁকে উদ্ধার করলেন আগুন থেকে। নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে সেই লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।

وَقَالَ إِنَّمَا ٱتَّخَذۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡثَـٰنࣰا مَّوَدَّةَ بَیۡنِكُمۡ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَاۖ ثُمَّ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ یَكۡفُرُ بَعۡضُكُم بِبَعۡضࣲ وَیَلۡعَنُ بَعۡضُكُم بَعۡضࣰا وَمَأۡوَىٰكُمُ ٱلنَّارُ وَمَا لَكُم مِّن نَّـٰصِرِینَ ﴿25﴾

ইব্রাহীম বললেন, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা রক্ষার জন্যে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে প্রতিমাগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছ। এরপর কেয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরকে লানত করবে। তোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

জহুরুল হক

আর তিনি বলেছিলেন -- ''তোমরা তো আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে প্রতিমা-গুলোকে গ্রহণ করে, তোমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব এই দুনিয়ার জীবনেই, তারপর কিয়ামতের দিনে তোমাদের একপক্ষ অপর পক্ষকে অস্বীকার করবে এবং তোমাদের একে অপরকে অভিশাপ দেবে, আর তোমাদের আবাস হবে আগুন, আর তোমাদের জন্য সাহায্যকারীদের কেউ থাকবে না।’’

۞ فَـَٔامَنَ لَهُۥ لُوطࣱۘ وَقَالَ إِنِّی مُهَاجِرٌ إِلَىٰ رَبِّیۤۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡعَزِیزُ ٱلۡحَكِیمُ ﴿26﴾

অতঃপর তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেন লূত। ইব্রাহীম বললেন, আমি আমার পালনকর্তার উদ্দেশে দেশত্যাগ করছি। নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

জহুরুল হক

অতএব লূত তাঁর প্রতি বিশ্বাস করেছিলেন। আর তিনি বলেছিলেন -- ''আমি তো আমার প্রভুর উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করছি। নিঃসন্দেহ তিনি স্বয়ং মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।

وَوَهَبۡنَا لَهُۥۤ إِسۡحَـٰقَ وَیَعۡقُوبَ وَجَعَلۡنَا فِی ذُرِّیَّتِهِ ٱلنُّبُوَّةَ وَٱلۡكِتَـٰبَ وَءَاتَیۡنَـٰهُ أَجۡرَهُۥ فِی ٱلدُّنۡیَاۖ وَإِنَّهُۥ فِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿27﴾

আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব, তাঁর বংশধরদের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব রাখলাম এবং দুনিয়াতে তাঁকে পুরস্কৃত করলাম। নিশ্চয় পরকালে ও সে সৎলোকদর অন্তর্ভূক্ত হবে।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে দিয়েছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুবকে, আর তাঁর বংশধরদের মধ্যে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম নবুওৎ ও ধর্মগ্রন্থ, আর আমরা তাঁর পুরস্কার দুনিয়াতেই তাঁকে প্রদান করেছিলাম, আর পরকালে তিনি আলবৎ হবেন সৎকর্মীদেরই অন্তর্ভুক্ত।

وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦۤ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلۡفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدࣲ مِّنَ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿28﴾

আর প্রেরণ করেছি লূতকে। যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি।

জহুরুল হক

আর লূতকে। স্মরণ করো! তিনি তাঁর লোকদের বলেছিলেন -- ''নিঃসন্দেহ তোমরা তো অশ্লীল আচরণে আকৃষ্ট হয়েছ যা বিশ্ববাসীর মধ্যে কেউই তোমাদের আগে করত না।

أَىِٕنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ وَتَقۡطَعُونَ ٱلسَّبِیلَ وَتَأۡتُونَ فِی نَادِیكُمُ ٱلۡمُنكَرَۖ فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوا۟ ٱئۡتِنَا بِعَذَابِ ٱللَّهِ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿29﴾

তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করছ? জওয়াবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও।

জহুরুল হক

কী! তোমরা তো নিশ্চয়ই পুরুষদের কাছে এসে থাক, রাজপথগুলো বিচ্ছিন্ন করে থাক, আর তোমাদের জনসভাসমূহে জঘন্য কাজ করে থাক।’’ কিন্তু তাঁর লোকদের উত্তর অন্য কিছু ছিল না এ ভিন্ন যে তারা বলেছিল -- ''আমাদের উপরে আল্লাহ্‌র শাস্তি নিয়ে এস যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’

قَالَ رَبِّ ٱنصُرۡنِی عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿30﴾

সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে ফেসাদ সৃষ্টিকারী লোকদের বিরুদ্ধে সাহায্য করো।’’

وَلَمَّا جَاۤءَتۡ رُسُلُنَاۤ إِبۡرَ ٰ⁠هِیمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُوۤا۟ إِنَّا مُهۡلِكُوۤا۟ أَهۡلِ هَـٰذِهِ ٱلۡقَرۡیَةِۖ إِنَّ أَهۡلَهَا كَانُوا۟ ظَـٰلِمِینَ ﴿31﴾

যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা জালেম।

জহুরুল হক

আর যখন আমাদের বাণীবাহকরা ইব্রাহীমের কাছে এসেছিল সুসংবাদ নিয়ে তখন তারা বলল -- ''আমরা এই শহরের বাসিন্দাদের নিশ্চয়ই ধ্বংস করতে যাচ্ছি, কেননা এর বাসিন্দারা অন্যায়াচারী হয়ে রয়েছে।’’

قَالَ إِنَّ فِیهَا لُوطࣰاۚ قَالُوا۟ نَحۡنُ أَعۡلَمُ بِمَن فِیهَاۖ لَنُنَجِّیَنَّهُۥ وَأَهۡلَهُۥۤ إِلَّا ٱمۡرَأَتَهُۥ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَـٰبِرِینَ ﴿32﴾

সে বলল, এই জনপদে তো লূতও রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

জহুরুল হক

তিনি বললেন -- ''এর মধ্যে তো লূতও রয়েছেন।’’ তারা বলল -- ''আমরা ভাল জানি কারা সেখানে রয়েছে। আমরা অবশ্যই তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করব -- তাঁর স্ত্রী ব্যতীত, সে হচ্ছে পেছনে-পড়েথাকাদের দলের।’’

وَلَمَّاۤ أَن جَاۤءَتۡ رُسُلُنَا لُوطࣰا سِیۤءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعࣰاۖ وَقَالُوا۟ لَا تَخَفۡ وَلَا تَحۡزَنۡ إِنَّا مُنَجُّوكَ وَأَهۡلَكَ إِلَّا ٱمۡرَأَتَكَ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَـٰبِرِینَ ﴿33﴾

যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেল। তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

জহুরুল হক

আর যখন আমাদের বাণীবাহকরা লূতের কাছে এসেছিল, তিনি তাদের জন্য দুঃখিত হয়েছিলেন এবং তাদের জন্য অসমর্থ মনে করলেন। কিন্তু তারা বলেছিল -- ''ভয় করো না আর দুঃখও করো না। আমরা আলবৎ তোমাকে উদ্ধার করব আর তোমার পরিজনবর্গকেও -- তোমার স্ত্রীকে ব্যতীত, সে হচ্ছে পেছনে পড়ে থাকাদের দলের।

إِنَّا مُنزِلُونَ عَلَىٰۤ أَهۡلِ هَـٰذِهِ ٱلۡقَرۡیَةِ رِجۡزࣰا مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ بِمَا كَانُوا۟ یَفۡسُقُونَ ﴿34﴾

আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে।

জহুরুল হক

''আমরা নিশ্চয়ই এই জনপদের বাসিন্দাদের উপরে অবতীর্ণ করতে যাচ্ছি আকাশ থেকে এক দুর্যোগ, যেহেতু তারা সীমালংঘন করে চলেছিল।’’

وَلَقَد تَّرَكۡنَا مِنۡهَاۤ ءَایَةَۢ بَیِّنَةࣰ لِّقَوۡمࣲ یَعۡقِلُونَ ﴿35﴾

আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি।

জহুরুল হক

আর আমরা নিশ্চয়ই এতে এক সুস্পষ্ট নিদর্শন রেখে গেছি সেই লোকদের জন্য যারা বুঝতে পারে।

وَإِلَىٰ مَدۡیَنَ أَخَاهُمۡ شُعَیۡبࣰا فَقَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ وَٱرۡجُوا۟ ٱلۡیَوۡمَ ٱلۡـَٔاخِرَ وَلَا تَعۡثَوۡا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِینَ ﴿36﴾

আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শোআয়বকে প্রেরণ করেছি। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, শেষ দিবসের আশা রাখ এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না।

জহুরুল হক

আর মাদয়ানবাসীদের কাছে তাদের ভাই শোআইবকে। সুতরাং তিনি বলেছিলেন -- ''হে আমার স্বজাতি! আল্লাহ্‌র উপাসনা কর, আর শেষ দিনকে ভয় কর, আর পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটিয়ে ঘোরাঘুরি করো না।’’

فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُوا۟ فِی دَارِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿37﴾

কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল এবং নিজেদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল।

জহুরুল হক

কিন্তু তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করল সেজন্য এক ভূমিকম্প তাদের পাকড়ালো, কাজেই অচিরেই তারা নিজেদের বাড়িঘরে নিথরদেহী হয়ে গেল।

وَعَادࣰا وَثَمُودَا۟ وَقَد تَّبَیَّنَ لَكُم مِّن مَّسَـٰكِنِهِمۡۖ وَزَیَّنَ لَهُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ أَعۡمَـٰلَهُمۡ فَصَدَّهُمۡ عَنِ ٱلسَّبِیلِ وَكَانُوا۟ مُسۡتَبۡصِرِینَ ﴿38﴾

আমি আ’দ ও সামুদকে ধ্বংস করে দিয়েছি। তাদের বাড়ী-ঘর থেকেই তাদের অবস্থা তোমাদের জানা হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল, অতঃপর তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল এবং তারা ছিল হুশিয়ার।

জহুরুল হক

আর 'আদ ও ছামূদকে, তাদের বাড়িঘর থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট করা হয়েছে। আর শয়তান তাদের কাছে তাদের কাজ- কর্মকে চিত্তাকর্ষক করেছিল, এইভাবেই সে তাদের পথ ঠেকিয়ে রেখেছিল, যদিও তারা ছিল তীক্ষদৃষ্টিসম্পন্ন।

وَقَـٰرُونَ وَفِرۡعَوۡنَ وَهَـٰمَـٰنَۖ وَلَقَدۡ جَاۤءَهُم مُّوسَىٰ بِٱلۡبَیِّنَـٰتِ فَٱسۡتَكۡبَرُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَمَا كَانُوا۟ سَـٰبِقِینَ ﴿39﴾

আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছি। মূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল অতঃপর তারা দেশে দম্ভ করেছিল। কিন্তু তারা জিতে যায়নি।

জহুরুল হক

আর ক্কারূন ও ফিরআউন ও হামানকে! আর তাদের কাছে তো মূসা এসেই ছিলেন সুস্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, কিন্তু তারা দেশে আস্ফালন করত, তাই তারা এড়িয়ে যাবার ছিল না।

فَكُلًّا أَخَذۡنَا بِذَنۢبِهِۦۖ فَمِنۡهُم مَّنۡ أَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِ حَاصِبࣰا وَمِنۡهُم مَّنۡ أَخَذَتۡهُ ٱلصَّیۡحَةُ وَمِنۡهُم مَّنۡ خَسَفۡنَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ وَمِنۡهُم مَّنۡ أَغۡرَقۡنَاۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِیَظۡلِمَهُمۡ وَلَـٰكِن كَانُوۤا۟ أَنفُسَهُمۡ یَظۡلِمُونَ ﴿40﴾

আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে।

জহুরুল হক

সুতরাং প্রত্যেককেই তার পাপের কারণে আমরা পাকড়াও করেছিলাম। অতএব তাদের মধ্যে কেউ রয়েছে যার উপরে আমরা পাঠিয়েছিলাম, এক প্রচন্ড ঝড়, আর তাদের মধ্যে কেউ রয়েছে যাকে পাকড়াও করেছিল এক মহাগর্জন, আর তাদের মধ্যে কেউ আছে যাকে আমরা পৃথিবীকে দিয়ে গ্রাস করিয়েছিলাম, আর তাদের মধ্যে কাউকে আমরা ডুবিয়ে মেরেছিলাম। আর আল্লাহ্ তাদের প্রতি জুলুম করার পাত্র নন, কিন্তু তারা তাদের নিজেদের প্রতি অন্যায়াচরণ করে চলেছিল।

مَثَلُ ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَوۡلِیَاۤءَ كَمَثَلِ ٱلۡعَنكَبُوتِ ٱتَّخَذَتۡ بَیۡتࣰاۖ وَإِنَّ أَوۡهَنَ ٱلۡبُیُوتِ لَبَیۡتُ ٱلۡعَنكَبُوتِۚ لَوۡ كَانُوا۟ یَعۡلَمُونَ ﴿41﴾

যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সা। সে ঘর বানায়। আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত।

জহুরুল হক

যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য অভিভাবক গ্রহণ করে তাদের উপমা হচ্ছে মাকড়সার দৃষ্টান্তের ন্যায়, -- সে নিজের জন্য ঘর বানায়, অথচ নিঃসন্দেহ সবচেয়ে ঠুনকো বাসা হচ্ছে মাকড়সারই বাসা, -- যদি তারা জানত।

إِنَّ ٱللَّهَ یَعۡلَمُ مَا یَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مِن شَیۡءࣲۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِیزُ ٱلۡحَكِیمُ ﴿42﴾

তারা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তা জানেন। তিনি শক্তিশালী, প্রজ্ঞাময়।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ জানেন তাঁকে বাদ দিয়ে তারা বিষয়বস্তুর যা-কিছু আহ্বান করে। আর তিনিই তো মহাশত্তি শালী, পরমজ্ঞানী।

وَتِلۡكَ ٱلۡأَمۡثَـٰلُ نَضۡرِبُهَا لِلنَّاسِۖ وَمَا یَعۡقِلُهَاۤ إِلَّا ٱلۡعَـٰلِمُونَ ﴿43﴾

এ সকল উদাহরণ আমি মানুষের জন্যে দেই; কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে।

জহুরুল হক

আর এই উপমাগুলো, লোকদের জন্য আমরা এগুলো দিয়ে থাকি, আর বিজ্ঞজন ব্যতীত অন্য কেউ এগুলো বুঝতে পারে না।

خَلَقَ ٱللَّهُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضَ بِٱلۡحَقِّۚ إِنَّ فِی ذَ ٰ⁠لِكَ لَـَٔایَةࣰ لِّلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿44﴾

আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে।

জহুরুল হক

মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে। নিঃসন্দেহ এতে তো এক নিদর্শন রয়েছে মুমিনদের জন্য।

ٱتۡلُ مَاۤ أُوحِیَ إِلَیۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَـٰبِ وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَۖ إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَاۤءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ وَلَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ وَٱللَّهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُونَ ﴿45﴾

আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুন। নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন তোমরা যা কর।

জহুরুল হক

তুমি পাঠ কর ধর্মগ্রন্থ থেকে যা তোমার কাছে প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, আর নামায কায়েম কর। নিঃসন্দেহ নামায অশালীনতা ও অন্যায়াচরণ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহ্‌র স্মরণই তো সর্বোত্তম। আর আল্লাহ্ জানেন তোমরা যা কর।

۞ وَلَا تُجَـٰدِلُوۤا۟ أَهۡلَ ٱلۡكِتَـٰبِ إِلَّا بِٱلَّتِی هِیَ أَحۡسَنُ إِلَّا ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ مِنۡهُمۡۖ وَقُولُوۤا۟ ءَامَنَّا بِٱلَّذِیۤ أُنزِلَ إِلَیۡنَا وَأُنزِلَ إِلَیۡكُمۡ وَإِلَـٰهُنَا وَإِلَـٰهُكُمۡ وَ ٰ⁠حِدࣱ وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ﴿46﴾

তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফ। এবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ।

জহুরুল হক

আর গ্রন্থধারীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করো না যা সুন্দর সেইভাবে ব্যতীত -- তাদের ক্ষেত্রে ছাড়া যারা তাদের মধ্যে অন্যায়াচরণ করে, আর বলো -- ''আমরা বিশ্বাস করি তাতে যা আমাদের কাছে অবতীর্ণ হয়েছে আর তোমাদের কাছেও অবতীর্ণ হয়েছে, আর আমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই, আর আমরা তাঁরই প্রতি আ‌ত্মসমর্পিত রয়েছি।’’

وَكَذَ ٰ⁠لِكَ أَنزَلۡنَاۤ إِلَیۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَۚ فَٱلَّذِینَ ءَاتَیۡنَـٰهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ یُؤۡمِنُونَ بِهِۦۖ وَمِنۡ هَـٰۤؤُلَاۤءِ مَن یُؤۡمِنُ بِهِۦۚ وَمَا یَجۡحَدُ بِـَٔایَـٰتِنَاۤ إِلَّا ٱلۡكَـٰفِرُونَ ﴿47﴾

এভাবেই আমি আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীণ করেছি। অতঃপর যাদের কে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা একে মেনে চলে এবং এদেরও (মক্কাবাসীদেরও) কেউ কেউ এতে বিশ্বাস রাখে। কেবল কাফেররাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে।

জহুরুল হক

আর এইভাবে আমরা তোমার কাছে গ্রন্থখানা অবতারণ করেছি। সুতরাং যাদের কাছে আমরা গ্রন্থ দিয়েছিলাম তারা এতে বিশ্বাস কবে, আর এদের মধ্যেও রয়েছে যারা এতে বিশ্বাস করে। আর অবিশ্বাসীদের ব্যতীত অন্যে আমাদের নির্দেশাবলীকে অস্বীকার করে না।

وَمَا كُنتَ تَتۡلُوا۟ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَـٰبࣲ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِیَمِینِكَۖ إِذࣰا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ﴿48﴾

আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।

জহুরুল হক

আর তুমি তো এর আগে কোনো গ্রন্থ থেকে পাঠ কর নি, আর তোমার ডান হাত দিয়ে তা লেখও নি, তেমন হলে ঝুটা আখ্যাদাতারা সন্দেহ করতে পারত।

بَلۡ هُوَ ءَایَـٰتُۢ بَیِّنَـٰتࣱ فِی صُدُورِ ٱلَّذِینَ أُوتُوا۟ ٱلۡعِلۡمَۚ وَمَا یَجۡحَدُ بِـَٔایَـٰتِنَاۤ إِلَّا ٱلظَّـٰلِمُونَ ﴿49﴾

বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে ইহা (কোরআন) তো স্পষ্ট আয়াত। কেবল বে-ইনসাফরাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে।

জহুরুল হক

বস্তুত এটি হচ্ছে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী তাদের হৃদয়ে যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে। আর অন্যায়কারীরা ব্যতীত অন্য কেউ আমাদের নির্দেশাবলী অস্বীকার করে না।

وَقَالُوا۟ لَوۡلَاۤ أُنزِلَ عَلَیۡهِ ءَایَـٰتࣱ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡـَٔایَـٰتُ عِندَ ٱللَّهِ وَإِنَّمَاۤ أَنَا۠ نَذِیرࣱ مُّبِینٌ ﴿50﴾

তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।

জহুরুল হক

আর তারা বলে -- ''কেন তার প্রভুর কাছ থেকে তার নিকটে নিদর্শনসমূহ অবতীর্ণ হয় না?’’ তুমি বলো -- ''নিঃসন্দেহ নিদর্শনসমূহ কেবল আল্লাহ্‌র কাছে রয়েছে। আর আমি তো একজন স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র।’’

أَوَلَمۡ یَكۡفِهِمۡ أَنَّاۤ أَنزَلۡنَا عَلَیۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَ یُتۡلَىٰ عَلَیۡهِمۡۚ إِنَّ فِی ذَ ٰ⁠لِكَ لَرَحۡمَةࣰ وَذِكۡرَىٰ لِقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿51﴾

এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে।

জহুরুল হক

আচ্ছা, এটি কি তবে তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে আমরাই তো তোমার কাছে গ্রন্থখানা পাঠিয়েছি যা তাদের কাছে পাঠ করা হচ্ছে? নিঃসন্দেহ এতে রয়েছে করুণা ও স্মরণীয় বার্তা সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান এনেছে।

قُلۡ كَفَىٰ بِٱللَّهِ بَیۡنِی وَبَیۡنَكُمۡ شَهِیدࣰاۖ یَعۡلَمُ مَا فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضِۗ وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ بِٱلۡبَـٰطِلِ وَكَفَرُوا۟ بِٱللَّهِ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡخَـٰسِرُونَ ﴿52﴾

বলুন, আমার মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষীরূপে যথেষ্ট। তিনি জানেন যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে আছে। আর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

জহুরুল হক

তুমি বলো -- ''আমার মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, তিনি জানেন যা-কিছু রয়েছে মহাকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে। আর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহ্‌তে অবিশ্বাস করে তারা নিজেরাই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত।’’

وَیَسۡتَعۡجِلُونَكَ بِٱلۡعَذَابِ وَلَوۡلَاۤ أَجَلࣱ مُّسَمࣰّى لَّجَاۤءَهُمُ ٱلۡعَذَابُۚ وَلَیَأۡتِیَنَّهُم بَغۡتَةࣰ وَهُمۡ لَا یَشۡعُرُونَ ﴿53﴾

তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের উপর এসে যেত। নিশ্চয়ই আকস্মিকভাবে তাদের কাছে আযাব এসে যাবে, তাদের খবরও থাকবে না।

জহুরুল হক

আর তারা তোমার কাছে শাস্তির জন্যে তাড়াহুড়ো করে। আর যদি না একটি নির্ধারিত কাল সাব্যস্ত থাকতো তাহলে তাদের প্রতি শাস্তি এসেই পড়তো। আর তাদের উপরে এটি অতর্কিতে এসেই পড়বে, আর তারা টেরও পাবে না!

یَسۡتَعۡجِلُونَكَ بِٱلۡعَذَابِ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِیطَةُۢ بِٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿54﴾

তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ জাহান্নাম কাফেরদেরকে ঘেরাও করছে।

জহুরুল হক

তারা তোমার কাছে শাস্তির জন্যে তাড়াহুড়ো করে। আর বস্তুত জাহান্নাম তো অবিশ্বাসীদের ঘিরেই রয়েছে।

یَوۡمَ یَغۡشَىٰهُمُ ٱلۡعَذَابُ مِن فَوۡقِهِمۡ وَمِن تَحۡتِ أَرۡجُلِهِمۡ وَیَقُولُ ذُوقُوا۟ مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿55﴾

যেদিন আযাব তাদেরকে ঘেরাও করবে মাথার উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকে। আল্লাহ বললেন, তোমরা যা করতে, তার স্বাদ গ্রহণ কর।

জহুরুল হক

সেইদিন শাস্তি তাদের লেপটে ফেলবে তাদের উপর থেকে ও তাদের পায়ের নিচে থেকে, তখন তিনি বলবেন -- ''তোমরা যা করে যাচ্ছিলে তা আস্বাদন করো।’’

یَـٰعِبَادِیَ ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِنَّ أَرۡضِی وَ ٰ⁠سِعَةࣱ فَإِیَّـٰیَ فَٱعۡبُدُونِ ﴿56﴾

হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর।

জহুরুল হক

হে আমার বান্দারা যারা ঈমান এনেছ! আমার পৃথিবী আলবৎ প্রশস্ত, সুতরাং কেবলমাত্র আমারই তবে তোমরা উপাসনা করো।

كُلُّ نَفۡسࣲ ذَاۤىِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِۖ ثُمَّ إِلَیۡنَا تُرۡجَعُونَ ﴿57﴾

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

প্রত্যেক সত্ত্বাই মৃত্যু আস্বাদনকারী, তারপর আমাদেরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।

وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَنُبَوِّئَنَّهُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ غُرَفࣰا تَجۡرِی مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَـٰرُ خَـٰلِدِینَ فِیهَاۚ نِعۡمَ أَجۡرُ ٱلۡعَـٰمِلِینَ ﴿58﴾

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। কত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের।

জহুরুল হক

আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করছে আমরা অবশ্যই তাদের বসবাস করাব স্বর্গোদ্যানের মাঝে উঁচু প্রাসাদে, যার নিচ দিয়ে বয়ে চলে ঝরনারাজি, তাতে তারা রইবে চিরকাল। কত উত্তম কর্তাদের পুরস্কার, --

ٱلَّذِینَ صَبَرُوا۟ وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ یَتَوَكَّلُونَ ﴿59﴾

যারা সবর করে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে।

জহুরুল হক

যারা অধ্যবসায় অবলন্বন করে এবং তাদের প্রভুর উপরে নির্ভর করে!

وَكَأَیِّن مِّن دَاۤبَّةࣲ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ یَرۡزُقُهَا وَإِیَّاكُمۡۚ وَهُوَ ٱلسَّمِیعُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿60﴾

এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে না। আল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

জহুরুল হক

আর কত না জীবজন্তু রয়েছে যারা তাদের জীবিকা বহন করে না, আল্লাহ্‌ই তাদের রিযেক দান করেন এবং তোমাদেরও, আর তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।

وَلَىِٕن سَأَلۡتَهُم مَّنۡ خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضَ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ لَیَقُولُنَّ ٱللَّهُۖ فَأَنَّىٰ یُؤۡفَكُونَ ﴿61﴾

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে?

জহুরুল হক

আর তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা কর -- 'কে সৃষ্টি করেছেন মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, আর সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন?’ -- তারা নিশ্চয়ই বলেবে -- ''আল্লাহ্‌।’’ তাহলে কোথায় তারা ফিরে যাচ্ছে?

ٱللَّهُ یَبۡسُطُ ٱلرِّزۡقَ لِمَن یَشَاۤءُ مِنۡ عِبَادِهِۦ وَیَقۡدِرُ لَهُۥۤۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَیۡءٍ عَلِیمࣱ ﴿62﴾

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেন। নিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।

জহুরুল হক

আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যের যাকে ইচ্ছা করেন তার জন্য রিযেক প্রসারিত করেন, আর তার জন্য সঙ্কুচিতও করেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞাতা।

وَلَىِٕن سَأَلۡتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ ٱلسَّمَاۤءِ مَاۤءࣰ فَأَحۡیَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ مِنۢ بَعۡدِ مَوۡتِهَا لَیَقُولُنَّ ٱللَّهُۚ قُلِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِۚ بَلۡ أَكۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡقِلُونَ ﴿63﴾

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না।

জহুরুল হক

আর যদি তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর -- 'কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন ও তার দ্বারা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পরে সঞ্জীবিত করেন?’ -- তারা নিশ্চয়ই বলবে -- ''আল্লাহ।’’ তুমি বলো -- ''সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই বুঝতে পারে না।

وَمَا هَـٰذِهِ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۤ إِلَّا لَهۡوࣱ وَلَعِبࣱۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡـَٔاخِرَةَ لَهِیَ ٱلۡحَیَوَانُۚ لَوۡ كَانُوا۟ یَعۡلَمُونَ ﴿64﴾

এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়। পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত।

জহুরুল হক

আর দুনিয়ার এই জীবনটা আমোদ-প্রমোদ ও খেলাধূলো বৈ তো নয়। আর নিশ্চয়ই পরকালের আবাস -- তাই তো জীবন। যদি তারা জানত!

فَإِذَا رَكِبُوا۟ فِی ٱلۡفُلۡكِ دَعَوُا۟ ٱللَّهَ مُخۡلِصِینَ لَهُ ٱلدِّینَ فَلَمَّا نَجَّىٰهُمۡ إِلَى ٱلۡبَرِّ إِذَا هُمۡ یُشۡرِكُونَ ﴿65﴾

তারা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে।

জহুরুল হক

সুতরাং তারা যখন জাহাজে আরোহণ করে তখন তারা আল্লাহ্‌কে ডাকে ধর্মবিশ্বাসে তাঁর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে, কিন্তু যখন তিনি ডাঙার দিকে তাদের উদ্ধার করেন তখন দেখো! তারা শরিক করে, --

لِیَكۡفُرُوا۟ بِمَاۤ ءَاتَیۡنَـٰهُمۡ وَلِیَتَمَتَّعُوا۟ۚ فَسَوۡفَ یَعۡلَمُونَ ﴿66﴾

যাতে তারা তাদের প্রতি আমার দান অস্বীকার করে এবং ভোগ-বিলাসে ডুবে থাকে। সত্বরই তারা জানতে পারবে।

জহুরুল হক

ফলে আমরা তাদের যা দান করেছিলাম তারা যেন তা অস্বীকার করতে পারে এবং ভোগবিলাসে মেতে উঠতে পারে। সুতরাং অচিরেই তারা জানতে পারবে।

أَوَلَمۡ یَرَوۡا۟ أَنَّا جَعَلۡنَا حَرَمًا ءَامِنࣰا وَیُتَخَطَّفُ ٱلنَّاسُ مِنۡ حَوۡلِهِمۡۚ أَفَبِٱلۡبَـٰطِلِ یُؤۡمِنُونَ وَبِنِعۡمَةِ ٱللَّهِ یَكۡفُرُونَ ﴿67﴾

তারা কি দেখে না যে, আমি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। তবে কি তারা মিথ্যায়ই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করবে?

জহুরুল হক

তারা কি তবে দেখে না যে আমরা পবিত্র স্থানকে নিরাপদ বানিয়েছি, তথাপি লোকদের ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে এই সবের আশপাশ থেকে? তারা কি তবুও ঝুটাতেই বিশ্বাস করবে, এবং অবিশ্বাস করবে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে?

وَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِٱلۡحَقِّ لَمَّا جَاۤءَهُۥۤۚ أَلَیۡسَ فِی جَهَنَّمَ مَثۡوࣰى لِّلۡكَـٰفِرِینَ ﴿68﴾

যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা গড়ে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অস্বীকার করে, তার কি স্মরণ রাখা উচিত নয় যে, জাহান্নামই সেসব কাফেরের আশ্রয়স্থল হবে?

জহুরুল হক

আর কে বেশী অন্যায়কারী তার চাইতে যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে, অথবা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে যখন তার কাছে তা আসে? অবিশ্বাসীদের জন্য কি জাহান্নামে কোনো আবাসস্থল নেই?

وَٱلَّذِینَ جَـٰهَدُوا۟ فِینَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿69﴾

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন।

জহুরুল হক

পক্ষান্তরে যারা আমাদের জন্য সংগ্রাম করে, আমরা অবশ্যই তাদের পরিচালিত করব আমাদের পথগুলোয়। আর আল্লাহ্ নিশ্চয়ই সৎকর্মীদের সাথেই রয়েছেন।