Settings
Surah Originator [Fatir] in Bengali
ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ فَاطِرِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ جَاعِلِ ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةِ رُسُلًا أُو۟لِیۤ أَجۡنِحَةࣲ مَّثۡنَىٰ وَثُلَـٰثَ وَرُبَـٰعَۚ یَزِیدُ فِی ٱلۡخَلۡقِ مَا یَشَاۤءُۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَیۡءࣲ قَدِیرࣱ ﴿1﴾
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও যমীনের স্রষ্টা এবং ফেরেশতাগণকে করেছেন বার্তাবাহক-তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখাবিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টি মধ্যে যা ইচ্ছা যোগ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ববিষয়ে সক্ষম।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্র -- মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদিস্রষ্টা, ফিরিশ্তাদের সৃষ্টিকর্তা বাণীবাহকরূপে -- দুই বা তিন বা চারখানা ডানা সংযুক্ত। তিনি সৃষ্টির সঙ্গে বাড়াতে থাকেন যা-কিছু তিনি চান। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তি মান।
مَّا یَفۡتَحِ ٱللَّهُ لِلنَّاسِ مِن رَّحۡمَةࣲ فَلَا مُمۡسِكَ لَهَاۖ وَمَا یُمۡسِكۡ فَلَا مُرۡسِلَ لَهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِیزُ ٱلۡحَكِیمُ ﴿2﴾
আল্লাহ মানুষের জন্য অনুগ্রহের মধ্য থেকে যা খুলে দেন, তা ফেরাবার কেউ নেই এবং তিনি যা বারণ করেন, তা কেউ প্রেরণ করতে পারে না তিনি ব্যতিত। তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।
আল্লাহ্ লোকেদের জন্য করুণা থেকে যা খুলে ধরেন সেটি তবে রোধ করবার কেউ থাকবে না, আর যা তিনি রোধ করে রাখেন সেটি তবে এরপরে পাঠানোর কেউ থাকবে না। আর তিনি মহাশক্তিশালী, পরমজ্ঞানী।
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ ٱذۡكُرُوا۟ نِعۡمَتَ ٱللَّهِ عَلَیۡكُمۡۚ هَلۡ مِنۡ خَـٰلِقٍ غَیۡرُ ٱللَّهِ یَرۡزُقُكُم مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ ﴿3﴾
হে মানুষ, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন স্রষ্টা আছে কি, যে তোমাদেরকে আসমান ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতএব তোমরা কোথায় ফিরে যাচ্ছ?
ওহে মানবগোষ্ঠী! তোমাদের উপরে আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ করো। আল্লাহ্ ছাড়া কি অন্য স্রষ্টা রয়েছে যে মহাকাশ ও পৃথিবী থেকে তোমাদের জীবিকা দান করে? তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই, সুতরাং কোথা থেকে তোমাদের ফেরানো হচ্ছে!
وَإِن یُكَذِّبُوكَ فَقَدۡ كُذِّبَتۡ رُسُلࣱ مِّن قَبۡلِكَۚ وَإِلَى ٱللَّهِ تُرۡجَعُ ٱلۡأُمُورُ ﴿4﴾
তারা যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে আপনার পূর্ববর্তী পয়গম্বরগণকেও তো মিথ্যাবাদী বলা হয়েছিল। আল্লাহর প্রতিই যাবতীয় বিষয় প্রত্যাবর্তিত হয়।
আর যদি তারা মিথ্যা আরোপ করে তবে তোমার আগেও রসূলগণ অবশ্য মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত হয়েছিলেন। আর আল্লাহ্র তরফেই সব ব্যাপারকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقࣱّۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَا وَلَا یَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلۡغَرُورُ ﴿5﴾
হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারণা না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে।
ওহে মানবগোষ্ঠী! নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র ওয়াদা ধ্রুব সত্য, কাজেই এই দুনিয়ার জীবন তোমাদের যেন কিছুতেই প্রবঞ্চনা না করে।
إِنَّ ٱلشَّیۡطَـٰنَ لَكُمۡ عَدُوࣱّ فَٱتَّخِذُوهُ عَدُوًّاۚ إِنَّمَا یَدۡعُوا۟ حِزۡبَهُۥ لِیَكُونُوا۟ مِنۡ أَصۡحَـٰبِ ٱلسَّعِیرِ ﴿6﴾
শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়।
নিঃসন্দেহ শয়তান তোমাদের শত্রু, কাজেই তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ কর! সে তো তার সাঙ্গোপাঙ্গকে কেবলই আহ্বান করে যেন তারা জ্বলন্ত আগুনের বাসিন্দা হয়।
ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ لَهُمۡ عَذَابࣱ شَدِیدࣱۖ وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَهُم مَّغۡفِرَةࣱ وَأَجۡرࣱ كَبِیرٌ ﴿7﴾
যারা কুফর করে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর আযাব। আর যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে পরিত্রাণ ও এক বিরাট প্রতিদান।
أَفَمَن زُیِّنَ لَهُۥ سُوۤءُ عَمَلِهِۦ فَرَءَاهُ حَسَنࣰاۖ فَإِنَّ ٱللَّهَ یُضِلُّ مَن یَشَاۤءُ وَیَهۡدِی مَن یَشَاۤءُۖ فَلَا تَذۡهَبۡ نَفۡسُكَ عَلَیۡهِمۡ حَسَرَ ٰتٍۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِیمُۢ بِمَا یَصۡنَعُونَ ﴿8﴾
যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন। সুতরাং আপনি তাদের জন্যে অনুতাপ করে নিজেকে ধ্বংস করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন তারা যা করে।
কাউকেও যদি তার মন্দ কাজকে তার কাছে চিত্তাকর্ষক করা হয় এবং সেও এটি ভাল বলে দেখে সে কি তবে? সুতরাং আল্লাহ্ অবশ্য বিপথে চলতে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর সৎপথে পরিচালিত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। অতএব তুমি তাদের জন্য আক্ষেপের দ্বারা তোমার নিজেকে বিনাশ হতে দিয়ো না। নিঃসন্দেহ তারা যা করে সে সন্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা।
وَٱللَّهُ ٱلَّذِیۤ أَرۡسَلَ ٱلرِّیَـٰحَ فَتُثِیرُ سَحَابࣰا فَسُقۡنَـٰهُ إِلَىٰ بَلَدࣲ مَّیِّتࣲ فَأَحۡیَیۡنَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَاۚ كَذَ ٰلِكَ ٱلنُّشُورُ ﴿9﴾
আল্লাহই বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর সে বায়ু মেঘমালা সঞ্চারিত করে। অতঃপর আমি তা মৃত ভূ-খন্ডের দিকে পরিচালিত করি, অতঃপর তদ্বারা সে ভূ-খন্ডকে তার মৃত্যুর পর সঞ্জীবিত করে দেই। এমনিভাবে হবে পুনরুত্থান।
আর আল্লাহ্ই তিনি যিনি বায়ুপ্রবাহ পাঠান, ফলে এটি মেঘমালা সঞ্চালিত করে, তারপর আমরা তাকে নিয়ে যাই মৃত ভূখন্ডের দিকে, ফলে তার দ্বারা আমরা পৃথিবীকে তার মৃত্যুর পরে জীবনদান করি। এইভাবেই পুনরুত্থান হয়।
مَن كَانَ یُرِیدُ ٱلۡعِزَّةَ فَلِلَّهِ ٱلۡعِزَّةُ جَمِیعًاۚ إِلَیۡهِ یَصۡعَدُ ٱلۡكَلِمُ ٱلطَّیِّبُ وَٱلۡعَمَلُ ٱلصَّـٰلِحُ یَرۡفَعُهُۥۚ وَٱلَّذِینَ یَمۡكُرُونَ ٱلسَّیِّـَٔاتِ لَهُمۡ عَذَابࣱ شَدِیدࣱۖ وَمَكۡرُ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُوَ یَبُورُ ﴿10﴾
কেউ সম্মান চাইলে জেনে রাখুন, সমস্ত সম্মান আল্লাহরই জন্যে। তাঁরই দিকে আরোহণ করে সৎবাক্য এবং সৎকর্ম তাকে তুলে নেয়। যারা মন্দ কার্যের চক্রান্তে লেগে থাকে, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। তাদের চক্রান্ত ব্যর্থ হবে।
যে কেউ মানসম্মান চায় সমস্ত মানসম্মান তো আল্লাহ্র। তাঁরই দিকে উত্থিত হয় সকল খাঁটি বাক্যালাপ, আর পূণ্যময় কাজ -- তিনি তার উন্নতি সাধন করেন। আর যারা মন্দ কাজের ফন্দি আঁটে তাদের জন্য আছে কঠিন শাস্তি। আর এদের ফন্দি -- তা ব্যর্থ হবেই।
وَٱللَّهُ خَلَقَكُم مِّن تُرَابࣲ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةࣲ ثُمَّ جَعَلَكُمۡ أَزۡوَ ٰجࣰاۚ وَمَا تَحۡمِلُ مِنۡ أُنثَىٰ وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلۡمِهِۦۚ وَمَا یُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرࣲ وَلَا یُنقَصُ مِنۡ عُمُرِهِۦۤ إِلَّا فِی كِتَـٰبٍۚ إِنَّ ذَ ٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ یَسِیرࣱ ﴿11﴾
আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর বীর্য থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল। কোন নারী গর্ভধারণ করে না এবং সন্তান প্রসব করে না; কিন্তু তাঁর জ্ঞাতসারে। কোন বয়স্ক ব্যক্তি বয়স পায় না। এবং তার বয়স হ্রাস পায় না; কিন্তু তা লিখিত আছে কিতাবে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।
আর আল্লাহ্ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্রকীট থেকে, তারপরে তিনি তোমাদের বানিয়েছেন যুগল। আর কোনো নারী গর্ভধারণ করে না অথবা প্রসব করে না তাঁর জানার বাইরে। আর কোনো বয়স্ক লোকের বয়েস বাড়ে না এবং তার বয়েস থেকে কিছু কমেও না, বরং তা রয়েছে কিতাবে। এটি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র পক্ষে সহজসাধ্য।
وَمَا یَسۡتَوِی ٱلۡبَحۡرَانِ هَـٰذَا عَذۡبࣱ فُرَاتࣱ سَاۤىِٕغࣱ شَرَابُهُۥ وَهَـٰذَا مِلۡحٌ أُجَاجࣱۖ وَمِن كُلࣲّ تَأۡكُلُونَ لَحۡمࣰا طَرِیࣰّا وَتَسۡتَخۡرِجُونَ حِلۡیَةࣰ تَلۡبَسُونَهَاۖ وَتَرَى ٱلۡفُلۡكَ فِیهِ مَوَاخِرَ لِتَبۡتَغُوا۟ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ﴿12﴾
দু’টি সমুদ্র সমান হয় না-একটি মিঠা ও তৃষ্ণানিবারক এবং অপরটি লোনা। ঊভয়টি থেকেই তোমরা তাজা গোশত (মৎস) আহার কর এবং পরিধানে ব্যবহার্য গয়নাগাটি আহরণ কর। তুমি তাতে তার বুক চিরে জাহাজ চলতে দেখ, যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
আর দুটি সাগর একসমান নয়, এই একটি বিশুদ্ধ, তৃষ্ণানিবারক, যার পানকরণ সুমিষ্ট, আর এইটি লোনা, বিস্বাদ। তবুও তাদের প্রত্যেকটি থেকে তোমরা টাটকা মাংস খাও, আর বের করে আনো অলংকার যা তোমরা পরো। আর তুমি দেখতে পাও জাহাজগুলো তাতে বুকচিরে চলছে যেন তোমরা তাঁর করুণাভান্ডার থেকে রোজগার করতে পারো, আর যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।
یُولِجُ ٱلَّیۡلَ فِی ٱلنَّهَارِ وَیُولِجُ ٱلنَّهَارَ فِی ٱلَّیۡلِ وَسَخَّرَ ٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَۖ كُلࣱّ یَجۡرِی لِأَجَلࣲ مُّسَمࣰّىۚ ذَ ٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا یَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِیرٍ ﴿13﴾
তিনি রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন। তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকটি আবর্তন করে এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। ইনি আল্লাহ; তোমাদের পালনকর্তা, সাম্রাজ্য তাঁরই। তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা তুচ্ছ খেজুর আঁটিরও অধিকারী নয়।
তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান ও দিনকে প্রবেশ করান রাতের মধ্যে, আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন -- প্রত্যেকটিই ভেসে চলে এক নির্দিষ্টকালের জন্য। এই হচ্ছেন আল্লাহ্, তোমাদের প্রভু, তাঁরই হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে যাদের তোমরা ডাক তারা তো তুচ্ছ কিছুরও ক্ষমতা রাখে না।
إِن تَدۡعُوهُمۡ لَا یَسۡمَعُوا۟ دُعَاۤءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُوا۟ مَا ٱسۡتَجَابُوا۟ لَكُمۡۖ وَیَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ یَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا یُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِیرࣲ ﴿14﴾
তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শেরক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না।
যদি তোমরা তাদের ডাক তারা তোমাদের ডাক শুনবে না, আর তারা যদিও শুনতে পায় তবু তারা তোমাদের প্রতি সাড়া দেবে না। আর কিয়ামতের দিনে তারা অস্বীকার করবে তোমাদের শরীক করার কথা। আর কেউ তোমাকে জানাতে পারে না পূর্ণ- ওয়াকিফহালের।
۞ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ أَنتُمُ ٱلۡفُقَرَاۤءُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلۡغَنِیُّ ٱلۡحَمِیدُ ﴿15﴾
হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর গলগ্রহ। আর আল্লাহ; তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
ওহে মানবজাতি! তোমরা তো আল্লাহ্র মুখাপেক্ষী, -- আর আল্লাহ্, তিনি স্বয়ংসমৃদ্ধ, পরম প্রশংসিত।
إِن یَشَأۡ یُذۡهِبۡكُمۡ وَیَأۡتِ بِخَلۡقࣲ جَدِیدࣲ ﴿16﴾
তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদেরকে বিলুপ্ত করে এক নতুন সৃষ্টির উদ্ভব করবেন।
যদি তিনি চান তবে তিনি তোমাদের গত করে দেবেন এবং নিয়ে আসবেন এক নতুন সৃষ্টি, --
وَمَا ذَ ٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ بِعَزِیزࣲ ﴿17﴾
এটা আল্লাহর পক্ষে কঠিন নয়।
আর এটি আল্লাহ্র জন্যে মোটেই কঠিন নয়।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةࣱ وِزۡرَ أُخۡرَىٰۚ وَإِن تَدۡعُ مُثۡقَلَةٌ إِلَىٰ حِمۡلِهَا لَا یُحۡمَلۡ مِنۡهُ شَیۡءࣱ وَلَوۡ كَانَ ذَا قُرۡبَىٰۤۗ إِنَّمَا تُنذِرُ ٱلَّذِینَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّهُم بِٱلۡغَیۡبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَۚ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا یَتَزَكَّىٰ لِنَفۡسِهِۦۚ وَإِلَى ٱللَّهِ ٱلۡمَصِیرُ ﴿18﴾
কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন।
আর কোনো বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বইবে না। আর গুরুভারে পীড়িত কেউ যদি তার বোঝার জন্যে ডাকে, তা থেকে কিছুই বয়ে নেওয়া হবে না, যদিও সে নিকটাত্মীয় হয়। তুমি তো সাবধান করতে পার কেবলমাত্র তাদের যারা তাদের প্রভুকে ভয় করে আড়ালে, আর নামায কায়েম করে। আর যে কেউ নিজেকে পবিত্র করে, সে তো তবে পবিত্র করে তার নিজেরই জন্যে। আর আল্লাহ্র কাছেই প্রত্যাবর্তন।
وَمَا یَسۡتَوِی ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِیرُ ﴿19﴾
দৃষ্টিমান ও দৃষ্টিহীন সমান নয়।
আর অন্ধ ও চক্ষুষ্মান একসমান নয়,
وَلَا ٱلظِّلُّ وَلَا ٱلۡحَرُورُ ﴿21﴾
সমান নয় ছায়া ও তপ্তরোদ।
আর ছায়া ও উত্তপ্ত নৈশ-বায়ুপ্রবাহও নয়।
وَمَا یَسۡتَوِی ٱلۡأَحۡیَاۤءُ وَلَا ٱلۡأَمۡوَ ٰتُۚ إِنَّ ٱللَّهَ یُسۡمِعُ مَن یَشَاۤءُۖ وَمَاۤ أَنتَ بِمُسۡمِعࣲ مَّن فِی ٱلۡقُبُورِ ﴿22﴾
আরও সমান নয় জীবিত ও মৃত। আল্লাহ শ্রবণ করান যাকে ইচ্ছা। আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন।
আর জীবন্ত এবং মৃতও একসমান নয়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে শুনিয়ে থাকেন, আর যারা কবরে রয়েছে তাদের তুমি শোনাতে সক্ষম নও।
إِنۡ أَنتَ إِلَّا نَذِیرٌ ﴿23﴾
আপনি তো কেবল একজন সতর্ককারী।
তুমি একজন সতর্ককারী বৈ তো নও।
إِنَّاۤ أَرۡسَلۡنَـٰكَ بِٱلۡحَقِّ بَشِیرࣰا وَنَذِیرࣰاۚ وَإِن مِّنۡ أُمَّةٍ إِلَّا خَلَا فِیهَا نَذِیرࣱ ﴿24﴾
আমি আপনাকে সত্যধর্মসহ পাঠিয়েছি সংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাতে সতর্ককারী আসেনি।
নিঃসন্দেহ আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সত্যের সঙ্গে -- সুসংবাদদাতারূপে ও সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোন সম্প্রদায় নেই যাদের মধ্যে একজন সতর্ককারী না গেছেন।
وَإِن یُكَذِّبُوكَ فَقَدۡ كَذَّبَ ٱلَّذِینَ مِن قَبۡلِهِمۡ جَاۤءَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَیِّنَـٰتِ وَبِٱلزُّبُرِ وَبِٱلۡكِتَـٰبِ ٱلۡمُنِیرِ ﴿25﴾
তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যারোপ করেছিল। তাদের কাছে তাদের রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শন, সহীফা এবং উজ্জল কিতাবসহ এসেছিলেন।
আর এরা যদি তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তাহলে এদের আগে যারা ছিল তারাও মিথ্যা আরোপ করেছিল, তাদের কাছে তাদের রসূলগণ এসেছিলেন সুস্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, আর ধর্মগ্রন্থাবলী নিয়ে ও উজ্জ্বল গ্রন্থ নিয়ে।
ثُمَّ أَخَذۡتُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ۖ فَكَیۡفَ كَانَ نَكِیرِ ﴿26﴾
অতঃপর আমি কাফেরদেরকে ধৃত করেছিলাম। কেমন ছিল আমার আযাব!
তারপর আমি তাদের পাকড়াও করলাম যারা অবিশ্বাস পোষণ করেছিল, সুতরাং কেমন হয়েছিল তাদের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা!
أَلَمۡ تَرَ أَنَّ ٱللَّهَ أَنزَلَ مِنَ ٱلسَّمَاۤءِ مَاۤءࣰ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ ثَمَرَ ٰتࣲ مُّخۡتَلِفًا أَلۡوَ ٰنُهَاۚ وَمِنَ ٱلۡجِبَالِ جُدَدُۢ بِیضࣱ وَحُمۡرࣱ مُّخۡتَلِفٌ أَلۡوَ ٰنُهَا وَغَرَابِیبُ سُودࣱ ﴿27﴾
তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফল-মূল উদগত করি। পর্বতসমূহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ-সাদা, লাল ও নিকষ কালো কৃষ্ণ।
তুমি কি দেখতে পাও নি যে নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন? তারপর আমরা তার দ্বারা উৎপাদন করি ফলফসল -- যার রঙচঙ নানান ধরনের। আর পাহাড়গুলোতে আছে স্তর, সাদা ও লাল, বিচিত্র তার বর্ণ, আর নিকষ কালো।
وَمِنَ ٱلنَّاسِ وَٱلدَّوَاۤبِّ وَٱلۡأَنۡعَـٰمِ مُخۡتَلِفٌ أَلۡوَ ٰنُهُۥ كَذَ ٰلِكَۗ إِنَّمَا یَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَـٰۤؤُا۟ۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِیزٌ غَفُورٌ ﴿28﴾
অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।
আর লোকেদের ও জীবজন্তুর ও গবাদি-পশুর মধ্যেও তাদের রঙচঙে এ ধরনের বৈচিত্র রয়েছে। নিঃসন্দেহ তাঁর বান্দাদের মধ্যের আলীম-পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ আল্লাহ্কে ভয় করে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মহাশক্তিশালী, পরিত্রাণকারী।
إِنَّ ٱلَّذِینَ یَتۡلُونَ كِتَـٰبَ ٱللَّهِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُوا۟ مِمَّا رَزَقۡنَـٰهُمۡ سِرࣰّا وَعَلَانِیَةࣰ یَرۡجُونَ تِجَـٰرَةࣰ لَّن تَبُورَ ﴿29﴾
যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে, এবং আমি যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা কর, যাতে কখনও লোকসান হবে না।
নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্র গ্রন্থ পাঠ করে আর নামায কায়েম করে, আর আমরা তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে তারা গোপনে ও প্রকাশ্যভাবে খরচ করে থাকে, তারা এমন একটি বাণিজ্যের আশা রাখে যা কখনো বিনষ্ট হবে না, --
لِیُوَفِّیَهُمۡ أُجُورَهُمۡ وَیَزِیدَهُم مِّن فَضۡلِهِۦۤۚ إِنَّهُۥ غَفُورࣱ شَكُورࣱ ﴿30﴾
পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশী দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।
যেন তিনি তাদের পারিশ্রমিক পুরোপুরি তাদের দিতে পারেন এবং তাঁর করুণাভান্ডার থেকে তাদের বাড়িয়ে দিতে পারেন। নিঃসন্দেহ তিনি পরিত্রাণকারী, গুণগ্রাহী।
وَٱلَّذِیۤ أَوۡحَیۡنَاۤ إِلَیۡكَ مِنَ ٱلۡكِتَـٰبِ هُوَ ٱلۡحَقُّ مُصَدِّقࣰا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ بِعِبَادِهِۦ لَخَبِیرُۢ بَصِیرࣱ ﴿31﴾
আমি আপনার প্রতি যে কিতাব প্রত্যাদেশ করেছি, তা সত্য-পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন কারী নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে সব জানেন, দেখেন।
আর আমরা তোমার কাছে গ্রন্থ থেকে যা প্রত্যাদিষ্ট করেছি তা সত্য, সমর্থন করছে যা এর আগে রয়েছে। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের সন্বন্ধে পূর্ণ-ওয়াকিবহাল, সর্বদ্রষ্টা।
ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَـٰبَ ٱلَّذِینَ ٱصۡطَفَیۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمࣱ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدࣱ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَیۡرَ ٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَ ٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِیرُ ﴿32﴾
অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত করেছি। তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর নির্দেশক্রমে কল্যাণের পথে এগিয়ে গেছে। এটাই মহা অনুগ্রহ।
তারপর আমরা গ্রন্থখানা উত্তরাধিকার করতে দিয়েছি তাদের যাদের আমরা নির্বাচন করেছি আমাদের দাসদের মধ্য থেকে, তবে তাদের মধ্যে কেউ নিজেদের অন্তরাত্মার প্রতি অন্যায়কারী, আর তাদের মধ্যে কেউ হচ্ছে মধ্যমপন্থী, আর তাদের মধ্যে রয়েছে আল্লাহ্র অনুমতিক্রমে ভালোকাজে অগ্রগামী। এইটিই হচ্ছে মহান অনুগ্রহ প্রাচুর্য্য।
جَنَّـٰتُ عَدۡنࣲ یَدۡخُلُونَهَا یُحَلَّوۡنَ فِیهَا مِنۡ أَسَاوِرَ مِن ذَهَبࣲ وَلُؤۡلُؤࣰاۖ وَلِبَاسُهُمۡ فِیهَا حَرِیرࣱ ﴿33﴾
তারা প্রবেশ করবে বসবাসের জান্নাতে। তথায় তারা স্বর্ণনির্মিত, মোতি খচিত কংকন দ্বারা অলংকৃত হবে। সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।
নন্দন কানন -- তারা এটিতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদের অলঙ্কৃত করানো হবে সোনা ও মুক্তোর কঙ্কন দিয়ে, আর তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ সেখানে হবে রেশমের।
وَقَالُوا۟ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِیۤ أَذۡهَبَ عَنَّا ٱلۡحَزَنَۖ إِنَّ رَبَّنَا لَغَفُورࣱ شَكُورٌ ﴿34﴾
আর তারা বলবে-সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দূঃখ দূর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের পালনকর্তা ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।
আর তারা বলবে -- ''সকল প্রশংসা আল্লাহ্র, যিনি আমাদের থেকে দুঃখ-দুর্দশা দূর করে দিয়েছেন। আমাদের প্রভু অবশ্যই পরিত্রাণকারী, গুণগ্রাহী, --
ٱلَّذِیۤ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا یَمَسُّنَا فِیهَا نَصَبࣱ وَلَا یَمَسُّنَا فِیهَا لُغُوبࣱ ﴿35﴾
যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে বসবাসের গৃহে স্থান দিয়েছেন, তথায় কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং স্পর্শ করে না ক্লান্তি।
''যিনি তাঁর অনুগ্রহপ্রাচুর্য বশতঃ আমাদের বসবাস করিয়েছেন স্থায়ী বাসস্থানে, সেখানে পরিশ্রম আমাদের স্পর্শ করবে না, আর সেখানে আমাদের স্পর্শ করবে না পরিশ্রান্তি।’’
وَٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا یُقۡضَىٰ عَلَیۡهِمۡ فَیَمُوتُوا۟ وَلَا یُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی كُلَّ كَفُورࣲ ﴿36﴾
আর যারা কাফের হয়েছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে তার শাস্তিও লাঘব করা হবে না। আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি।
পক্ষান্তরে যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে না তাদের জন্যে, যার ফলে তারা মরে যেতে পারে, আর তাদের উপর থেকে এর শাস্তির কিছুটাও কমানো হবে না! এইভাবেই আমরা প্রতিদান দিই প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে।
وَهُمۡ یَصۡطَرِخُونَ فِیهَا رَبَّنَاۤ أَخۡرِجۡنَا نَعۡمَلۡ صَـٰلِحًا غَیۡرَ ٱلَّذِی كُنَّا نَعۡمَلُۚ أَوَلَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا یَتَذَكَّرُ فِیهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَاۤءَكُمُ ٱلنَّذِیرُۖ فَذُوقُوا۟ فَمَا لِلظَّـٰلِمِینَ مِن نَّصِیرٍ ﴿37﴾
সেখানে তারা আর্ত চিৎকার করে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, বের করুন আমাদেরকে, আমরা সৎকাজ করব, পূর্বে যা করতাম, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।
আর সেখানে তারা আর্তনাদ করবে -- ''আমাদের প্রভু! আমাদের বের করে আনো, আমরা ভালো কাজ করব, -- তা ব্যতীত যা আমরা করতাম।’’ ''আমরা কি তোমাদের দীর্ঘজীবন দিই নি যেন, যে মনোযোগ দিতে চায় সে সেখানে মনোযোগ দিতে পারে, আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিলেন? তাই আস্বাদন কর, আর অন্যায়কারীদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’’
إِنَّ ٱللَّهَ عَـٰلِمُ غَیۡبِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّهُۥ عَلِیمُۢ بِذَاتِ ٱلصُّدُورِ ﴿38﴾
আল্লাহ আসমান ও যমীনের অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি অন্তরের বিষয় সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত।
আল্লাহ্ নিশ্চয়ই মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়-বস্তুর সম্যক জ্ঞাতা। তিনি বুকের ভেতরে যা রয়েছে সে-সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।
هُوَ ٱلَّذِی جَعَلَكُمۡ خَلَـٰۤىِٕفَ فِی ٱلۡأَرۡضِۚ فَمَن كَفَرَ فَعَلَیۡهِ كُفۡرُهُۥۖ وَلَا یَزِیدُ ٱلۡكَـٰفِرِینَ كُفۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ إِلَّا مَقۡتࣰاۖ وَلَا یَزِیدُ ٱلۡكَـٰفِرِینَ كُفۡرُهُمۡ إِلَّا خَسَارࣰا ﴿39﴾
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে স্বীয় প্রতিনিধি করেছেন। অতএব যে কুফরী করবে তার কুফরী তার উপরই বর্তাবে। কাফেরদের কুফর কেবল তাদের পালনকর্তার ক্রোধই বৃদ্ধি করে এবং কাফেরদের কুফর কেবল তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।
তিনিই সেইজন যিনি পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। সুতরাং যে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধেই তাহলে যাবে তার অবিশ্বাস। আর অবিশ্বাসীদের জন্য তাদের অবিশ্বাস তাদের প্রভুর নজরে কিছুই বাড়ায় না বিতৃষ্ণা ব্যতীত, আর অবিশ্বাসীদের জন্য তাদের অবিশ্বাস ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই বাড়ায় না।
قُلۡ أَرَءَیۡتُمۡ شُرَكَاۤءَكُمُ ٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَرُونِی مَاذَا خَلَقُوا۟ مِنَ ٱلۡأَرۡضِ أَمۡ لَهُمۡ شِرۡكࣱ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ أَمۡ ءَاتَیۡنَـٰهُمۡ كِتَـٰبࣰا فَهُمۡ عَلَىٰ بَیِّنَتࣲ مِّنۡهُۚ بَلۡ إِن یَعِدُ ٱلظَّـٰلِمُونَ بَعۡضُهُم بَعۡضًا إِلَّا غُرُورًا ﴿40﴾
বলুন, তোমরা কি তোমাদের সে শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ, যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা ডাক? তারা পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও। না আসমান সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশ আছে, না আমি তাদেরকে কোন কিতাব দিয়েছি যে, তারা তার দলীলের উপর কায়েম রয়েছে, বরং জালেমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক ওয়াদা দিয়ে থাকে।
তুমি বলো -- ''তোমরা কি ভেবে দেখেছ তোমাদের অংশীদেবতাদের কথা যাদের তোমরা আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে ডাক? আমাকে দেখাও তো পৃথিবীর কোনো অংশ তারা সৃষ্টি করেছে, না কি তাদের কোনো শরিকানা রয়েছে মহাকাশমন্ডলে?’’ না কি আমরা তাদের এমন কোনো গ্রন্থ দিয়েছি যার থেকে তারা স্পষ্ট প্রমাণের উপরে রয়েছে? না, অন্যায়াচারীরা তাদের একে অন্যকে প্রতারণা করা ব্যতীত অন্য প্রতিশ্রুতি দেয় না।
۞ إِنَّ ٱللَّهَ یُمۡسِكُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ أَن تَزُولَاۚ وَلَىِٕن زَالَتَاۤ إِنۡ أَمۡسَكَهُمَا مِنۡ أَحَدࣲ مِّنۢ بَعۡدِهِۦۤۚ إِنَّهُۥ كَانَ حَلِیمًا غَفُورࣰا ﴿41﴾
নিশ্চয় আল্লাহ আসমান ও যমীনকে স্থির রাখেন, যাতে টলে না যায়। যদি এগুলো টলে যায় তবে তিনি ব্যতীত কে এগুলোকে স্থির রাখবে? তিনি সহনশীল, ক্ষমাশীল।
আল্লাহ্ আলবৎ মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ধরে রেখেছেন পাছে তারা কক্ষচ্যুত হয়, আর যদি বা তারা কক্ষচ্যুত হয় তাহলে তিনি ব্যতীত তাদের ধরে রাখবার মতো কেউ নেই। নিঃসন্দেহ তিনি অতি অমায়িক, পরিত্রাণকারী।
وَأَقۡسَمُوا۟ بِٱللَّهِ جَهۡدَ أَیۡمَـٰنِهِمۡ لَىِٕن جَاۤءَهُمۡ نَذِیرࣱ لَّیَكُونُنَّ أَهۡدَىٰ مِنۡ إِحۡدَى ٱلۡأُمَمِۖ فَلَمَّا جَاۤءَهُمۡ نَذِیرࣱ مَّا زَادَهُمۡ إِلَّا نُفُورًا ﴿42﴾
তারা জোর শপথ করে বলত, তাদের কাছে কোন সতর্ককারী আগমন করলে তারা অন্য যে কোন সম্প্রদায় অপেক্ষা অধিকতর সৎপথে চলবে। অতঃপর যখন তাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করল, তখন তাদের ঘৃণাই কেবল বেড়ে গেল।
আর তারা আল্লাহ্র নামে শপথ খায় তাদের সব চাইতে জোরালো শপথের দ্বারা যে যদি তাদের কাছে একজন সতর্ককারী আসতেন তাহলে তারা নিশ্চয়ই অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে কোনোটির চেয়ে অধিকতর সৎপথাবলন্বী হতো। কিন্তু যখন তাদের কাছে একজন সতর্ককারী এলেন তখন তাতে বিতৃষ্ণা ব্যতীত তাদের আর কিছুই বাড়লো না, --
ٱسۡتِكۡبَارࣰا فِی ٱلۡأَرۡضِ وَمَكۡرَ ٱلسَّیِّىِٕۚ وَلَا یَحِیقُ ٱلۡمَكۡرُ ٱلسَّیِّئُ إِلَّا بِأَهۡلِهِۦۚ فَهَلۡ یَنظُرُونَ إِلَّا سُنَّتَ ٱلۡأَوَّلِینَۚ فَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَبۡدِیلࣰاۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ ٱللَّهِ تَحۡوِیلًا ﴿43﴾
পৃথিবীতে ঔদ্ধত্যের কারণে এবং কুচক্রের কারণে। কুচক্র কুচক্রীদেরকেই ঘিরে ধরে। তারা কেবল পূর্ববর্তীদের দশারই অপেক্ষা করছে। অতএব আপনি আল্লাহর বিধানে পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর রীতি-নীতিতে কোন রকম বিচ্যুতিও পাবেন না।
উদ্ধত ব্যবহারে এই পৃথিবীতে ও কুটিল ষড়যন্ত্রে। আর কুটিল ষড়যন্ত্র অন্য কাউকে ঘেরাও করে না তার কর্তাদের ব্যতীত। কাজেই তারা কি পূর্ববর্তীদের নজির ছাড়া আর কিছুর প্রতীক্ষা করে? কিন্তু তুমি তো আল্লাহ্র বিধানের কোনো পরিবর্তন কখনও পাবে না, আর তুমি কখনো আল্লাহ্র বিধানের কোনো ব্যতিক্রম পাবে না।
أَوَلَمۡ یَسِیرُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ فَیَنظُرُوا۟ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلَّذِینَ مِن قَبۡلِهِمۡ وَكَانُوۤا۟ أَشَدَّ مِنۡهُمۡ قُوَّةࣰۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِیُعۡجِزَهُۥ مِن شَیۡءࣲ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَلَا فِی ٱلۡأَرۡضِۚ إِنَّهُۥ كَانَ عَلِیمࣰا قَدِیرࣰا ﴿44﴾
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না? করলে দেখত তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছে। অথচ তারা তাদের অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী ছিল। আকাশ ও পৃথিবীতে কোন কিছুই আল্লাহকে অপারগ করতে পারে না। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।
তারা কি তবে পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করে না, তাহলে তারা দেখতে পেতো কেমন হয়েছিল তাদের পরিণাম যারা ছিল এদের অগ্রগামী, আর তারা ছিল এদের চেয়েও শক্তিতে প্রবল? আর আল্লাহ্ এমন নন যে তাঁর থেকে কোন-কিছু এড়িয়ে যেতে পারে মহাকাশমন্ডলীতে, আর পৃথিবীতেও নয়। নিঃসন্দেহ তিনি হচ্ছেন সর্বজ্ঞাতা, পরম ক্ষমতাবান।
وَلَوۡ یُؤَاخِذُ ٱللَّهُ ٱلنَّاسَ بِمَا كَسَبُوا۟ مَا تَرَكَ عَلَىٰ ظَهۡرِهَا مِن دَاۤبَّةࣲ وَلَـٰكِن یُؤَخِّرُهُمۡ إِلَىٰۤ أَجَلࣲ مُّسَمࣰّىۖ فَإِذَا جَاۤءَ أَجَلُهُمۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِعِبَادِهِۦ بَصِیرَۢا ﴿45﴾
যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমানকাউকে ছেড়ে দিতেন না। কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন। অতঃপর যখন সে নির্দিষ্ট মেয়াদ এসে যাবে তখন আল্লাহর সব বান্দা তাঁর দৃষ্টিতে থাকবে।
আর আল্লাহ্ যদি লোকেদের পাকড়াও করতেন তারা যা অর্জন করেছে সেজন্য, তাহলে এর পিঠে তিনি জীবজন্তুদের কাউকেও ছাড়তেন না, কিন্তু তিনি এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন। সুতরাং যখন তাদের নির্ধারিত কাল এসে যায় তখন আল্লাহ্ আলবৎ তাঁর বান্দাদের প্রতি সর্বদ্রষ্টা।