Main pages

یسۤ ﴿1﴾

ইয়া-সীন

জহুরুল হক

ইয়া সীন!

وَٱلۡقُرۡءَانِ ٱلۡحَكِیمِ ﴿2﴾

প্রজ্ঞাময় কোরআনের কসম।

জহুরুল হক

জ্ঞানগর্ভ কুরআনের শপথ, --

إِنَّكَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿3﴾

নিশ্চয় আপনি প্রেরিত রসূলগণের একজন।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তুমি তো প্রেরিত পুরুষদের অন্যতম, --

عَلَىٰ صِرَ ٰ⁠طࣲ مُّسۡتَقِیمࣲ ﴿4﴾

সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।

জহুরুল হক

সহজ-সঠিক পথে অধিষ্ঠিত রয়েছে।

تَنزِیلَ ٱلۡعَزِیزِ ٱلرَّحِیمِ ﴿5﴾

কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ,

জহুরুল হক

মহাশক্তিশালী, অফুরন্ত ফলদাতার থেকে এক অবতারণ, --

لِتُنذِرَ قَوۡمࣰا مَّاۤ أُنذِرَ ءَابَاۤؤُهُمۡ فَهُمۡ غَـٰفِلُونَ ﴿6﴾

যাতে আপনি এমন এক জাতিকে সতর্ক করেন, যাদের পূর্ব পুরুষগণকেও সতর্ক করা হয়নি। ফলে তারা গাফেল।

জহুরুল হক

যেন তুমি সতর্ক করতে পার সেই জাতিকে যাদের পিতৃপুরুষদের সতর্ক করা হয় নি, যার ফলে তারা অজ্ঞ রয়ে গেছে।

لَقَدۡ حَقَّ ٱلۡقَوۡلُ عَلَىٰۤ أَكۡثَرِهِمۡ فَهُمۡ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿7﴾

তাদের অধিকাংশের জন্যে শাস্তির বিষয় অবধারিত হয়েছে। সুতরাং তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।

জহুরুল হক

সুনিশ্চিত যে বক্তব্যটি তাদের অনেকের সন্বন্ধে সত্য প্রতিপন্ন হয়েছে, তাই তারা বিশ্বাস করছে না।

إِنَّا جَعَلۡنَا فِیۤ أَعۡنَـٰقِهِمۡ أَغۡلَـٰلࣰا فَهِیَ إِلَى ٱلۡأَذۡقَانِ فَهُم مُّقۡمَحُونَ ﴿8﴾

আমি তাদের গর্দানে চিবুক পর্যন্ত বেড়ী পরিয়েছি। ফলে তাদের মস্তক উর্দ্ধমুখী হয়ে গেছে।

জহুরুল হক

আমরা নিশ্চয় তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দিয়েছি, আর তা পৌঁছেছে চিবুক পর্যন্ত, ফলে তারা মাথা চড়ানো অবস্থায় রয়েছে।

وَجَعَلۡنَا مِنۢ بَیۡنِ أَیۡدِیهِمۡ سَدࣰّا وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ سَدࣰّا فَأَغۡشَیۡنَـٰهُمۡ فَهُمۡ لَا یُبۡصِرُونَ ﴿9﴾

আমি তাদের সামনে ও পিছনে প্রাচীর স্থাপন করেছি, অতঃপর তাদেরকে আবৃত করে দিয়েছি, ফলে তারা দেখে না।

জহুরুল হক

আর আমরা তাদের সামনে স্থাপন করেছি এক বেড়া আর তাদের পেছনেও এক বেড়া, ফলে আমরা তাদের ঢেকে ফেলেছি, সুতরাং তারা দেখতে পায় না।

وَسَوَاۤءٌ عَلَیۡهِمۡ ءَأَنذَرۡتَهُمۡ أَمۡ لَمۡ تُنذِرۡهُمۡ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿10﴾

আপনি তাদেরকে সতর্ক করুন বা না করুন, তাদের পক্ষে দুয়েই সমান; তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না।

জহুরুল হক

এটি তাদের কাছে একাকার -- তুমি তাদের সতর্ক কর অথবা তুমি তাদের সতর্ক নাই কর, তারা বিশ্বাস করবে না।

إِنَّمَا تُنذِرُ مَنِ ٱتَّبَعَ ٱلذِّكۡرَ وَخَشِیَ ٱلرَّحۡمَـٰنَ بِٱلۡغَیۡبِۖ فَبَشِّرۡهُ بِمَغۡفِرَةࣲ وَأَجۡرࣲ كَرِیمٍ ﴿11﴾

আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে। অতএব আপনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দিন ক্ষমা ও সম্মানজনক পুরস্কারের।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ তুমি তো সতর্ক করতে পার তাকে যে উপদেশ অনুসরণ করে চলে, আর পরম করুণাময়কে নিভৃতে ভয় করে। সুতরাং তাকে তুমি সুসংবাদ দাও পরিত্রাণের এবং এক মহান প্রতিদানের।

إِنَّا نَحۡنُ نُحۡیِ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَنَكۡتُبُ مَا قَدَّمُوا۟ وَءَاثَـٰرَهُمۡۚ وَكُلَّ شَیۡءٍ أَحۡصَیۡنَـٰهُ فِیۤ إِمَامࣲ مُّبِینࣲ ﴿12﴾

আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ আমরা -- আমরা নিজেরাই মৃতকে জীবন্ত করি, আর আমরা লিখে রাখি যা তারা আগবাড়ায় আর তাদের পদচিহ্নসমূহ। আর সমস্ত ব্যাপার-স্যাপার -- আমরা তা সংরক্ষিত রেখেছি এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।

وَٱضۡرِبۡ لَهُم مَّثَلًا أَصۡحَـٰبَ ٱلۡقَرۡیَةِ إِذۡ جَاۤءَهَا ٱلۡمُرۡسَلُونَ ﴿13﴾

আপনি তাদের কাছে সে জনপদের অধিবাসীদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করুন, যখন সেখানে রসূল আগমন করেছিলেন।

জহুরুল হক

আর তাদের জন্য উপমা ছোঁড়ো এক জনপদের অধিবাসীদের -- যখন সেখানে রসূলগণ এসেছিলেন।

إِذۡ أَرۡسَلۡنَاۤ إِلَیۡهِمُ ٱثۡنَیۡنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزۡنَا بِثَالِثࣲ فَقَالُوۤا۟ إِنَّاۤ إِلَیۡكُم مُّرۡسَلُونَ ﴿14﴾

আমি তাদের নিকট দুজন রসূল প্রেরণ করেছিলাম, অতঃপর ওরা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। তখন আমি তাদেরকে শক্তিশালী করলাম তৃতীয় একজনের মাধ্যমে। তারা সবাই বলল, আমরা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।

জহুরুল হক

দেখো! আমরা তাদের কাছে দুজনকে পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তারা এদের দুজনেরই প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, তখন আমরা তৃতীয় জনকে দিয়ে শক্তিবৃদ্ধি করি। সুতরাং তাঁরা বলেছিলেন -- ''নিঃসন্দেহ তোমাদের কাছে আমরা প্রেরিত হয়েছি।’’

قَالُوا۟ مَاۤ أَنتُمۡ إِلَّا بَشَرࣱ مِّثۡلُنَا وَمَاۤ أَنزَلَ ٱلرَّحۡمَـٰنُ مِن شَیۡءٍ إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا تَكۡذِبُونَ ﴿15﴾

তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ।

জহুরুল হক

তারা বলেছিল -- ''তোমরা তো আমাদের ন্যায় মানুষ ছাড়া আর কিছু নও, আর পরম করুণাময় কোনো কিছুই অবতারণ করেন নি, তোমরা তো কেবল মিথ্যা কথা বলছ।’’

قَالُوا۟ رَبُّنَا یَعۡلَمُ إِنَّاۤ إِلَیۡكُمۡ لَمُرۡسَلُونَ ﴿16﴾

রাসূলগণ বলল, আমাদের পরওয়ারদেগার জানেন, আমরা অবশ্যই তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।

জহুরুল হক

তাঁরা বলেছিলেন -- ''আমাদের প্রভু জানেন যে আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে প্রেরিতপুরুষই বটে।

وَمَا عَلَیۡنَاۤ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِینُ ﴿17﴾

পরিস্কারভাবে আল্লাহর বাণী পৌছে দেয়াই আমাদের দায়িত্ব।

জহুরুল হক

''আর আমাদের উপরে হচ্ছে স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া ছাড়া অন্য কিছু নয়।’’

قَالُوۤا۟ إِنَّا تَطَیَّرۡنَا بِكُمۡۖ لَىِٕن لَّمۡ تَنتَهُوا۟ لَنَرۡجُمَنَّكُمۡ وَلَیَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِیمࣱ ﴿18﴾

তারা বলল, আমরা তোমাদেরকে অশুভ-অকল্যাণকর দেখছি। যদি তোমরা বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তর বর্ষণে হত্যা করব এবং আমাদের পক্ষ থেকে তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে।

জহুরুল হক

তারা বললে, ''তোমাদের থেকে আমরা অবশ্যই অমঙ্গল আশঙ্কা করি, যদি তোমরা বিরত না হও তবে আমরা অবশ্যই তোমাদের পাথর মেরে মেরে ফেলব, আর আমাদের থেকে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের স্পর্শ করবে।’’

قَالُوا۟ طَـٰۤىِٕرُكُم مَّعَكُمۡ أَىِٕن ذُكِّرۡتُمۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمࣱ مُّسۡرِفُونَ ﴿19﴾

রসূলগণ বলল, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই! এটা কি এজন্যে যে, আমরা তোমাদেরকে সদুপদেশ দিয়েছি? বস্তুতঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায় বৈ নও।

জহুরুল হক

তাঁরা বললেন, ''তোমাদের পাখিগুলো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছে। তোমাদের তো স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে! বস্তুতঃ তোমরা হচ্ছ অমিতাচারী জাতি।

وَجَاۤءَ مِنۡ أَقۡصَا ٱلۡمَدِینَةِ رَجُلࣱ یَسۡعَىٰ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱتَّبِعُوا۟ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿20﴾

অতঃপর শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এল। সে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা রসূলগণের অনুসরণ কর।

জহুরুল হক

আর শহরের দূর প্রান্ত থেকে একজন লোক দেড়ে এল, সে বললে -- ''হে আমার স্বজাতি! প্রেরিতপুরুষগণকে অনুসরণ করো, --

ٱتَّبِعُوا۟ مَن لَّا یَسۡـَٔلُكُمۡ أَجۡرࣰا وَهُم مُّهۡتَدُونَ ﴿21﴾

অনুসরণ কর তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় কামনা করে না, অথচ তারা সুপথ প্রাপ্ত।

জহুরুল হক

''অনুসরণ করো তাঁদের যারা তোমাদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিকের সওয়াল করেন না, আর তাঁরা হচ্ছেন সৎপথে চালিত।’’

وَمَا لِیَ لَاۤ أَعۡبُدُ ٱلَّذِی فَطَرَنِی وَإِلَیۡهِ تُرۡجَعُونَ ﴿22﴾

আমার কি হল যে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যার কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে, আমি তাঁর এবাদত করব না?

জহুরুল হক

''আর আমার কি হয়েছে যে আমি তাঁর উপাসনা করব না, যিনি আমাকে সৃজন করেছেন, আর তাঁরই কাছে তোমাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে?

ءَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِۦۤ ءَالِهَةً إِن یُرِدۡنِ ٱلرَّحۡمَـٰنُ بِضُرࣲّ لَّا تُغۡنِ عَنِّی شَفَـٰعَتُهُمۡ شَیۡـࣰٔا وَلَا یُنقِذُونِ ﴿23﴾

আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না।

জহুরুল হক

''আমি কি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য উপাস্যদের গ্রহণ করব, পরম করুণাময় যদি আমাকে দুঃখ-দুর্দশা দিতে চাইতেন তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনো কাজে আসবে না, আর তারা আমাকে উদ্ধার করতেও পারবে না?

إِنِّیۤ إِذࣰا لَّفِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینٍ ﴿24﴾

এরূপ করলে আমি প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হব।

জহুরুল হক

''এমন ক্ষেত্রে আমি তো নিশ্চয় স্পষ্ট ভুলের মধ্যে পড়ব।

إِنِّیۤ ءَامَنتُ بِرَبِّكُمۡ فَٱسۡمَعُونِ ﴿25﴾

আমি নিশ্চিতভাবে তোমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম। অতএব আমার কাছ থেকে শুনে নাও।

জহুরুল হক

''আমি আলবৎ তোমাদের প্রভুর প্রতি ঈমান এনেছি, সেজন্য আমার কথা শোনো।’’

قِیلَ ٱدۡخُلِ ٱلۡجَنَّةَۖ قَالَ یَـٰلَیۡتَ قَوۡمِی یَعۡلَمُونَ ﴿26﴾

তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল হায়, আমার সম্প্রদায় যদি কোন ক্রমে জানতে পারত-

জহুরুল হক

বলা হলো -- ''জান্নাতে প্রবেশ কর।’’ তিনি বললেন -- ''হায় আফসোস! আমার স্বজাতি যদি জানতে পারত, --

بِمَا غَفَرَ لِی رَبِّی وَجَعَلَنِی مِنَ ٱلۡمُكۡرَمِینَ ﴿27﴾

যে আমার পরওয়ারদেগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

জহুরুল হক

''কি কারণে আমার প্রভু আমাকে পরিত্রাণ করেছেন, আর আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’’

۞ وَمَاۤ أَنزَلۡنَا عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ مِنۢ بَعۡدِهِۦ مِن جُندࣲ مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ وَمَا كُنَّا مُنزِلِینَ ﴿28﴾

তারপর আমি তার সম্প্রদায়ের উপর আকাশ থেকে কোন বাহিনী অবতীর্ণ করিনি এবং আমি (বাহিনী) অবতরণকারীও না।

জহুরুল হক

আর তাঁর পরে তাঁর লোকদের প্রতি আমরা আকাশ থেকে কোনো বাহিনী পাঠাই নি, আর আমরা কখনো প্রেরণকারী নই।

إِن كَانَتۡ إِلَّا صَیۡحَةࣰ وَ ٰ⁠حِدَةࣰ فَإِذَا هُمۡ خَـٰمِدُونَ ﴿29﴾

বস্তুতঃ এ ছিল এক মহানাদ। অতঃপর সঙ্গে সঙ্গে সবাই স্তদ্ধ হয়ে গেল।

জহুরুল হক

এটি অবশ্য একটিমাত্র মহাগর্জন বৈ তো নয়, তখন দেখো, তারা নিথরদেহী হয়ে গেল!

یَـٰحَسۡرَةً عَلَى ٱلۡعِبَادِۚ مَا یَأۡتِیهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا۟ بِهِۦ یَسۡتَهۡزِءُونَ ﴿30﴾

বান্দাদের জন্যে আক্ষেপ যে, তাদের কাছে এমন কোন রসূলই আগমন করেনি যাদের প্রতি তারা বিদ্রুপ করে না।

জহুরুল হক

হায় আফসোস বান্দাদের জন্য! তাদের কাছে এমন কোনো রসূল আসেন নি যাঁকে নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করেছে!

أَلَمۡ یَرَوۡا۟ كَمۡ أَهۡلَكۡنَا قَبۡلَهُم مِّنَ ٱلۡقُرُونِ أَنَّهُمۡ إِلَیۡهِمۡ لَا یَرۡجِعُونَ ﴿31﴾

তারা কি প্রত্যক্ষ করে না, তাদের পূর্বে আমি কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি যে, তারা তাদের মধ্যে আর ফিরে আসবে না।

জহুরুল হক

তারা কি দেখে নি তাদের পূর্বে কত মানবগোষ্ঠীকে আমরা ধ্বংস করেছি, কেননা তারা তাঁদের প্রতি ফিরতো না?

وَإِن كُلࣱّ لَّمَّا جَمِیعࣱ لَّدَیۡنَا مُحۡضَرُونَ ﴿32﴾

ওদের সবাইকে সমবেত অবস্থায় আমার দরবারে উপস্থিত হতেই হবে।

জহুরুল হক

আর নিশ্চয়ই সবাইকে, -- আলবৎ সব ক’জনকে, আমাদের সামনে হাজির করা হবে।

وَءَایَةࣱ لَّهُمُ ٱلۡأَرۡضُ ٱلۡمَیۡتَةُ أَحۡیَیۡنَـٰهَا وَأَخۡرَجۡنَا مِنۡهَا حَبࣰّا فَمِنۡهُ یَأۡكُلُونَ ﴿33﴾

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন মৃত পৃথিবী। আমি একে সঞ্জীবিত করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, তারা তা থেকে ভক্ষণ করে।

জহুরুল হক

আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে মৃত ভূখন্ড, আমরা তাতে প্রাণ সঞ্চার করি, আর তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে সেটি থেকে তারা আহার করে।

وَجَعَلۡنَا فِیهَا جَنَّـٰتࣲ مِّن نَّخِیلࣲ وَأَعۡنَـٰبࣲ وَفَجَّرۡنَا فِیهَا مِنَ ٱلۡعُیُونِ ﴿34﴾

আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে নির্ঝরিণী।

জহুরুল হক

আর আমরা তাতে বানিয়েছি খেজুর ও আঙুরের বাগানসমূহ, আর তার মাঝে আমরা উৎসারিত করি প্রস্রবণ,

لِیَأۡكُلُوا۟ مِن ثَمَرِهِۦ وَمَا عَمِلَتۡهُ أَیۡدِیهِمۡۚ أَفَلَا یَشۡكُرُونَ ﴿35﴾

যাতে তারা তার ফল খায়। তাদের হাত একে সৃষ্টি করে না। অতঃপর তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না কেন?

জহুরুল হক

যেন তারা এর ফলমূল থেকে আহার করতে পারে, অথচ তাদের হাতে এটি বানায় নি। তবু কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?

سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلۡأَزۡوَ ٰ⁠جَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلۡأَرۡضُ وَمِنۡ أَنفُسِهِمۡ وَمِمَّا لَا یَعۡلَمُونَ ﴿36﴾

পবিত্র তিনি যিনি যমীন থেকে উৎপন্ন উদ্ভিদকে, তাদেরই মানুষকে এবং যা তারা জানে না, তার প্রত্যেককে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।

জহুরুল হক

সকল মহিমা তাঁর যিনি জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন -- পৃথিবী যা উৎপাদন করে তার মধ্যের সব-কিছু, আর তাদের নিজেদের মধ্যেও, আর তারা যার কথা জানে না তাদের মধ্যেও।

وَءَایَةࣱ لَّهُمُ ٱلَّیۡلُ نَسۡلَخُ مِنۡهُ ٱلنَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظۡلِمُونَ ﴿37﴾

তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়।

জহুরুল হক

আর তাদের কাছে একটি নিদর্শন হচ্ছে রাত্রি, তা থেকে আমরা বের করে আনি দিনকে, তারপর দেখো! তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে!

وَٱلشَّمۡسُ تَجۡرِی لِمُسۡتَقَرࣲّ لَّهَاۚ ذَ ٰ⁠لِكَ تَقۡدِیرُ ٱلۡعَزِیزِ ٱلۡعَلِیمِ ﴿38﴾

সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ।

জহুরুল হক

আর সূর্য তার গন্তব্য পথে বিচরণ করে। এটিই মহাশক্তিশালী সর্বজ্ঞাতার নির্ধারিত বিধান।

وَٱلۡقَمَرَ قَدَّرۡنَـٰهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَٱلۡعُرۡجُونِ ٱلۡقَدِیمِ ﴿39﴾

চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়।

জহুরুল হক

আর চন্দ্রের বেলা -- আমরা এর জন্য বিধান করেছি বিভিন্ন অবস্থান, শেষপর্যন্ত তা শুকনো পুরোনো খেজুরবৃন্তের ন্যায় হয়ে যায়।

لَا ٱلشَّمۡسُ یَنۢبَغِی لَهَاۤ أَن تُدۡرِكَ ٱلۡقَمَرَ وَلَا ٱلَّیۡلُ سَابِقُ ٱلنَّهَارِۚ وَكُلࣱّ فِی فَلَكࣲ یَسۡبَحُونَ ﴿40﴾

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।

জহুরুল হক

সূর্যের নিজের সাধ্য নেই চন্দ্রকে ধরার, আর রাতেরও নেই দিনকে অতিক্রম করার। আর সবক’টিই কক্ষপথে ভাসছে।

وَءَایَةࣱ لَّهُمۡ أَنَّا حَمَلۡنَا ذُرِّیَّتَهُمۡ فِی ٱلۡفُلۡكِ ٱلۡمَشۡحُونِ ﴿41﴾

তাদের জন্যে একটি নিদর্শন এই যে, আমি তাদের সন্তান-সন্ততিকে বোঝাই নৌকায় আরোহণ করিয়েছি।

জহুরুল হক

আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন হচ্ছে এই যে আমরা তাদের সন্তান-সন্ততিকে বহন করি বোঝাই করা জাহাজে, --

وَخَلَقۡنَا لَهُم مِّن مِّثۡلِهِۦ مَا یَرۡكَبُونَ ﴿42﴾

এবং তাদের জন্যে নৌকার অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা আরোহণ করে।

জহুরুল হক

আর তাদের জন্য আমরা বানিয়েছি এগুলোর অনুরূপ অন্যান্য যা তারা চড়বে।

وَإِن نَّشَأۡ نُغۡرِقۡهُمۡ فَلَا صَرِیخَ لَهُمۡ وَلَا هُمۡ یُنقَذُونَ ﴿43﴾

আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে নিমজ্জত করতে পারি, তখন তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই এবং তারা পরিত্রাণও পাবে না।

জহুরুল হক

আর আমরা যদি ইচ্ছা করি তবে তাদের ডুবিয়েও দিতে পারি, তখন তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী থাকবে না, আর তাদের উদ্ধার করাও হবে না, --

إِلَّا رَحۡمَةࣰ مِّنَّا وَمَتَـٰعًا إِلَىٰ حِینࣲ ﴿44﴾

কিন্তু আমারই পক্ষ থেকে কৃপা এবং তাদেরকে কিছু কাল জীবনোপভোগ করার সুযোগ দেয়ার কারণে তা করি না।

জহুরুল হক

আমাদের থেকে করুণা ব্যতীত, আর কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগকরণ মাত্র।

وَإِذَا قِیلَ لَهُمُ ٱتَّقُوا۟ مَا بَیۡنَ أَیۡدِیكُمۡ وَمَا خَلۡفَكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿45﴾

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সামনের আযাব ও পেছনের আযাবকে ভয় কর, যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়, তখন তারা তা অগ্রাহ্য করে।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের বলা হয় -- ''ভয় করো যা তোমাদের সামনে রয়েছে আর যা তোমাদের পেছনে রয়েছে, যেন তোমাদের প্রতি করুণা করা হয়।’’

وَمَا تَأۡتِیهِم مِّنۡ ءَایَةࣲ مِّنۡ ءَایَـٰتِ رَبِّهِمۡ إِلَّا كَانُوا۟ عَنۡهَا مُعۡرِضِینَ ﴿46﴾

যখনই তাদের পালনকর্তার নির্দেশাবলীর মধ্যে থেকে কোন নির্দেশ তাদের কাছে আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখে ফিরিয়ে নেয়।

জহুরুল হক

আর তাদের প্রভুর বাণীসমূহের মধ্যে থেকে এমন কোনো বাণী তাদের কাছে আসে নি যা থেকে তারা বরাবর ফিরে না গেছে।

وَإِذَا قِیلَ لَهُمۡ أَنفِقُوا۟ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُ قَالَ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ لِلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ أَنُطۡعِمُ مَن لَّوۡ یَشَاۤءُ ٱللَّهُ أَطۡعَمَهُۥۤ إِنۡ أَنتُمۡ إِلَّا فِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینࣲ ﴿47﴾

যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় কর। তখন কাফেররা মুমিনগণকে বলে, ইচ্ছা করলেই আল্লাহ যাকে খাওয়াতে পারতেন, আমরা তাকে কেন খাওয়াব? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত রয়েছ।

জহুরুল হক

আর যখন তাদের বলা হয় -- ''আল্লাহ্ তোমাদের যা রিযেক দিয়েছেন তা থেকে খরচ করো।’’ তখন যারা অবিশ্বাস পোষণ করে তারা বলে তাদের যারা বিশ্বাস করেছে -- ''আমরা কি তাদের খাওয়াব যাদের, আল্লাহ্ যদি চাইতেন তবে তিনিই খাওয়াতে পারতেন? তোমরা স্পষ্ট ভুলের মধ্যে ছাড়া আর কোথাও তো নও।’’

وَیَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا ٱلۡوَعۡدُ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿48﴾

তারা বলে, তোমরা সত্যবাদী হলে বল এই ওয়াদা কবে পূর্ণ হবে?

জহুরুল হক

আর তারা বলে -- ''সেই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’’

مَا یَنظُرُونَ إِلَّا صَیۡحَةࣰ وَ ٰ⁠حِدَةࣰ تَأۡخُذُهُمۡ وَهُمۡ یَخِصِّمُونَ ﴿49﴾

তারা কেবল একটা ভয়াবহ শব্দের অপেক্ষা করছে, যা তাদেরকে আঘাত করবে তাদের পারস্পরিক বাকবিতন্ডাকালে।

জহুরুল হক

তারা একটিমাত্র মহাগর্জন ছাড়া আর কিছুর অপেক্ষা করছে না, এটি তাদের আঘাত করবে যখন তারা কথা কাটাকাটি করছে।

فَلَا یَسۡتَطِیعُونَ تَوۡصِیَةࣰ وَلَاۤ إِلَىٰۤ أَهۡلِهِمۡ یَرۡجِعُونَ ﴿50﴾

তখন তারা ওছিয়ত করতেও সক্ষম হবে না। এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও ফিরে যেতে পারবে না।

জহুরুল হক

তখন তারা ওসিয়ৎ করতেও সমর্থ হবে না, আর তারা তাদের পরিবারবর্গের কাছে ফিরতেও পারবে না।

وَنُفِخَ فِی ٱلصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ ٱلۡأَجۡدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمۡ یَنسِلُونَ ﴿51﴾

শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখনই তারা কবর থেকে তাদের পালনকর্তার দিকে ছুটে চলবে।

জহুরুল হক

আর শিঙায় ফুৎকার দেওয়া হবে, তখন দেখো! তারা কবরগুলো থেকে তাদের প্রভুর দিকে ছুটে আসবে।

قَالُوا۟ یَـٰوَیۡلَنَا مَنۢ بَعَثَنَا مِن مَّرۡقَدِنَاۜۗ هَـٰذَا مَا وَعَدَ ٱلرَّحۡمَـٰنُ وَصَدَقَ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ﴿52﴾

তারা বলবে, হায় আমাদের দুর্ভোগ! কে আমাদেরকে নিদ্রাস্থল থেকে উখিত করল? রহমান আল্লাহ তো এরই ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং রসূলগণ সত্য বলেছিলেন।

জহুরুল হক

তারা বলবে -- ''হায় ধিক্ আমাদের! কে আমাদের উঠিয়ে দিলে আমাদের ঘুমানোর স্থান থেকে? এটিই হচ্ছে যা পরম করুণাময় ওয়াদা করেছিলেন, আর রসূলগণ সত্য কথাই বলেছিলেন।’’

إِن كَانَتۡ إِلَّا صَیۡحَةࣰ وَ ٰ⁠حِدَةࣰ فَإِذَا هُمۡ جَمِیعࣱ لَّدَیۡنَا مُحۡضَرُونَ ﴿53﴾

এটা তো হবে কেবল এক মহানাদ। সে মুহুর্তেই তাদের সবাইকে আমার সামনে উপস্থিত করা হবে।

জহুরুল হক

সেটি একটিমাত্র মহাগর্জন বৈ তো নয়, তখন দেখো! তাদের সমবেতভাবে আমাদের সামনে হাজির করা হবে।

فَٱلۡیَوۡمَ لَا تُظۡلَمُ نَفۡسࣱ شَیۡـࣰٔا وَلَا تُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿54﴾

আজকের দিনে কারও প্রতি জুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল তারই প্রতিদান পাবে।

জহুরুল হক

সুতরাং সেইদিন কোনো লোকের প্রতি কিছুমাত্রও অবিচার করা হবে না, আর তোমরাও যা করে থাকতে তা ছাড়া তোমাদের অন্য প্রতিদান দেওয়া হবে না।

إِنَّ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡجَنَّةِ ٱلۡیَوۡمَ فِی شُغُلࣲ فَـٰكِهُونَ ﴿55﴾

এদিন জান্নাতীরা আনন্দে মশগুল থাকবে।

জহুরুল হক

নিঃসন্দেহ জান্নাতের বাসিন্দারা সেইদিন আনন্দের মাঝে কালাতিপাত করবে।

هُمۡ وَأَزۡوَ ٰ⁠جُهُمۡ فِی ظِلَـٰلٍ عَلَى ٱلۡأَرَاۤىِٕكِ مُتَّكِـُٔونَ ﴿56﴾

তারা এবং তাদের স্ত্রীরা উপবিষ্ট থাকবে ছায়াময় পরিবেশে আসনে হেলান দিয়ে।

জহুরুল হক

তারা ও তাদের সঙ্গিনীরা স্নিগ্ধ ছায়ায় উঁচু আসনের উপরে হেলান দিয়ে বসবে।

لَهُمۡ فِیهَا فَـٰكِهَةࣱ وَلَهُم مَّا یَدَّعُونَ ﴿57﴾

সেখানে তাদের জন্যে থাকবে ফল-মূল এবং যা চাইবে।

জহুরুল হক

তাদের জন্য সেখানে থাকবে ফলফসল, আর তাদের জন্য রইবে যা তারা কামনা করে।

سَلَـٰمࣱ قَوۡلࣰا مِّن رَّبࣲّ رَّحِیمࣲ ﴿58﴾

করুণাময় পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম।

জহুরুল হক

অফুরন্ত ফলদাতা প্রভুর তরফ থেকে সম্ভাষণ হচ্ছে -- ''সালাম’’।

وَٱمۡتَـٰزُوا۟ ٱلۡیَوۡمَ أَیُّهَا ٱلۡمُجۡرِمُونَ ﴿59﴾

হে অপরাধীরা! আজ তোমরা আলাদা হয়ে যাও।

জহুরুল হক

আর ''আজ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও, হে অপরাধিগণ!

۞ أَلَمۡ أَعۡهَدۡ إِلَیۡكُمۡ یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ أَن لَّا تَعۡبُدُوا۟ ٱلشَّیۡطَـٰنَۖ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوࣱّ مُّبِینࣱ ﴿60﴾

হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের এবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু?

জহুরুল হক

''হে আদম-সন্তানগণ! আমি কি তোমাদের নির্দেশ দিই নি যে তোমরা শয়তানের আরাধনা করবে না, নিঃসন্দেহ সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু, --

وَأَنِ ٱعۡبُدُونِیۚ هَـٰذَا صِرَ ٰ⁠طࣱ مُّسۡتَقِیمࣱ ﴿61﴾

এবং আমার এবাদত কর। এটাই সরল পথ।

জহুরুল হক

''বরং তোমরা আমারই উপাসনা করো? এটিই তো শুদ্ধ-সঠিক পথ।

وَلَقَدۡ أَضَلَّ مِنكُمۡ جِبِلࣰّا كَثِیرًاۖ أَفَلَمۡ تَكُونُوا۟ تَعۡقِلُونَ ﴿62﴾

শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে। তবুও কি তোমরা বুঝনি?

জহুরুল হক

''আর তোমাদের মধ্যের অনেক বড়বড় দলকে সে বিভ্রান্ত করেই ফেলেছে। তবুও কি তোমরা বুঝেসুঝে চলবে না?

هَـٰذِهِۦ جَهَنَّمُ ٱلَّتِی كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ﴿63﴾

এই সে জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হতো।

জহুরুল হক

''এটিই হচ্ছে জাহান্নাম যে-সন্বন্ধে তোমাদের ওয়াদা করা হয়েছিল।

ٱصۡلَوۡهَا ٱلۡیَوۡمَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡفُرُونَ ﴿64﴾

তোমাদের কুফরের কারণে আজ এতে প্রবেশ কর।

জহুরুল হক

''এতে তোমরা প্রবেশ করো আজকের দিনে যেহেতু তোমরা অবিশ্বাস করেছিলে।’’

ٱلۡیَوۡمَ نَخۡتِمُ عَلَىٰۤ أَفۡوَ ٰ⁠هِهِمۡ وَتُكَلِّمُنَاۤ أَیۡدِیهِمۡ وَتَشۡهَدُ أَرۡجُلُهُم بِمَا كَانُوا۟ یَكۡسِبُونَ ﴿65﴾

আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।

জহুরুল হক

সেইদিন আমরা তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমাদের সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে।

وَلَوۡ نَشَاۤءُ لَطَمَسۡنَا عَلَىٰۤ أَعۡیُنِهِمۡ فَٱسۡتَبَقُوا۟ ٱلصِّرَ ٰ⁠طَ فَأَنَّىٰ یُبۡصِرُونَ ﴿66﴾

আমি ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টি শক্তি বিলুপ্ত করে দিতে পারতাম, তখন তারা পথের দিকে দৌড়াতে চাইলে কেমন করে দেখতে পেত!

জহুরুল হক

আর আমরা যদি চাইতাম তবে আমরা তাদের চোখের উপরে দৃষ্টিহীনতা এনে দিতাম, তখন তারা পথের দিকে ধাওয়া করত, কিন্তু কেমন করে তারা দেখতে পাবে?

وَلَوۡ نَشَاۤءُ لَمَسَخۡنَـٰهُمۡ عَلَىٰ مَكَانَتِهِمۡ فَمَا ٱسۡتَطَـٰعُوا۟ مُضِیࣰّا وَلَا یَرۡجِعُونَ ﴿67﴾

আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে স্ব স্ব স্থানে আকার বিকৃত করতে পারতাম, ফলে তারা আগেও চলতে পারত না এবং পেছনেও ফিরে যেতে পারত না।

জহুরুল হক

আর আমরা যদি চাইতাম তবে আমরা তাদের বাড়িগুলোতেই তাদের নিশ্চল-নিস্তব্ধ করে দিতাম, তখন তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম হবে না, ফিরে আসতেও পারবে না।

وَمَن نُّعَمِّرۡهُ نُنَكِّسۡهُ فِی ٱلۡخَلۡقِۚ أَفَلَا یَعۡقِلُونَ ﴿68﴾

আমি যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, তাকে সৃষ্টিগত পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেই। তবুও কি তারা বুঝে না?

জহুরুল হক

আর যাকে আমরা দীর্ঘ জীবন দান করি তাকে তো আমরা সৃষ্টিতে ঘুরিয়ে দিই। তবুও কি তারা বুঝে না।

وَمَا عَلَّمۡنَـٰهُ ٱلشِّعۡرَ وَمَا یَنۢبَغِی لَهُۥۤۚ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرࣱ وَقُرۡءَانࣱ مُّبِینࣱ ﴿69﴾

আমি রসূলকে কবিতা শিক্ষা দেইনি এবং তা তার জন্যে শোভনীয়ও নয়। এটা তো এক উপদেশ ও প্রকাশ্য কোরআন।

জহুরুল হক

আর আমরা তাঁকে কবিত্ব শেখাই নি, আর তা তাঁর পক্ষে সমীচীনও নয়। এটি স্মারক গ্রন্থ ও সুস্পষ্ট কুরআন বৈ তো নয়, --

لِّیُنذِرَ مَن كَانَ حَیࣰّا وَیَحِقَّ ٱلۡقَوۡلُ عَلَى ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿70﴾

যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতকে এবং যাতে কাফেরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

জহুরুল হক

যেন তিনি সাবধান করতে পারেন তাকে যে জীবন্ত রয়েছে, আর অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে রায় ন্যায়সঙ্গত হয়েছে।

أَوَلَمۡ یَرَوۡا۟ أَنَّا خَلَقۡنَا لَهُم مِّمَّا عَمِلَتۡ أَیۡدِینَاۤ أَنۡعَـٰمࣰا فَهُمۡ لَهَا مَـٰلِكُونَ ﴿71﴾

তারা কি দেখে না, তাদের জন্যে আমি আমার নিজ হাতের তৈরী বস্তুর দ্বারা চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।

জহুরুল হক

তারা কি লক্ষ্য করে নি যে আমরাই তো তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি আমাদের হাত যা বানিয়েছে তা থেকে গবাদি-পশুগুলো, তারপর তারাই এগুলোর মালিক হয়ে যায়?

وَذَلَّلۡنَـٰهَا لَهُمۡ فَمِنۡهَا رَكُوبُهُمۡ وَمِنۡهَا یَأۡكُلُونَ ﴿72﴾

আমি এগুলোকে তাদের হাতে অসহায় করে দিয়েছি। ফলে এদের কতক তাদের বাহন এবং কতক তারা ভক্ষণ করে।

জহুরুল হক

আর এগুলোকে আমরা তাদের বশীভূত করে দিয়েছি, ফলে এদের মধ্যের কিছু তাদের বাহন আর এদের কিছু তারা খায়।

وَلَهُمۡ فِیهَا مَنَـٰفِعُ وَمَشَارِبُۚ أَفَلَا یَشۡكُرُونَ ﴿73﴾

তাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তুর মধ্যে অনেক উপকারিতা ও পানীয় রয়েছে। তবুও কেন তারা শুকরিয়া আদায় করে না?

জহুরুল হক

আর তাদের জন্য এগুলোতে রয়েছে উপকারিতা, আর পানীয় বস্তু। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?

وَٱتَّخَذُوا۟ مِن دُونِ ٱللَّهِ ءَالِهَةࣰ لَّعَلَّهُمۡ یُنصَرُونَ ﴿74﴾

তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।

জহুরুল হক

আর তারা আল্লাহ্‌কে বাদ দিয়ে উপাস্যদের গ্রহণ করেছে যাতে তাদের সাহায্য করা হয়।

لَا یَسۡتَطِیعُونَ نَصۡرَهُمۡ وَهُمۡ لَهُمۡ جُندࣱ مُّحۡضَرُونَ ﴿75﴾

অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।

জহুরুল হক

ওরা কোনো ক্ষমতা রাখে না তাদের সাহায্য করার, বরং তারা হবে এদের জন্য এক বাহিনী যাদের হাজির করা হবে।

فَلَا یَحۡزُنكَ قَوۡلُهُمۡۘ إِنَّا نَعۡلَمُ مَا یُسِرُّونَ وَمَا یُعۡلِنُونَ ﴿76﴾

অতএব তাদের কথা যেন আপনাকে দুঃখিত না করে। আমি জানি যা তারা গোপনে করে এবং যা তারা প্রকাশ্যে করে।

জহুরুল হক

সুতরাং তাদের কথাবার্তা তোমাকে যেন কষ্ট না দেয়। আমরা নিশ্চয়ই জানি যা তারা লুকিয়ে রাখে আর যা তারা প্রকাশ করে।

أَوَلَمۡ یَرَ ٱلۡإِنسَـٰنُ أَنَّا خَلَقۡنَـٰهُ مِن نُّطۡفَةࣲ فَإِذَا هُوَ خَصِیمࣱ مُّبِینࣱ ﴿77﴾

মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি বীর্য থেকে? অতঃপর তখনই সে হয়ে গেল প্রকাশ্য বাকবিতন্ডাকারী।

জহুরুল হক

আচ্ছা, মানুষ কি দেখে না যে আমারা তাকে নিশ্চয়ই এক শুক্রকীট থেকে সৃষ্টি করেছি? তারপর, কি আশ্চর্য! সে একজন প্রকাশ্য বিতর্ককারী হয়ে যায়।

وَضَرَبَ لَنَا مَثَلࣰا وَنَسِیَ خَلۡقَهُۥۖ قَالَ مَن یُحۡیِ ٱلۡعِظَـٰمَ وَهِیَ رَمِیمࣱ ﴿78﴾

সে আমার সম্পর্কে এক অদ্ভূত কথা বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টি ভুলে যায়। সে বলে কে জীবিত করবে অস্থিসমূহকে যখন সেগুলো পচে গলে যাবে?

জহুরুল হক

আর সে আমাদের সদৃশ বানায়, আর ভুলে যায় তার নিজের সৃষ্টির কথা। সে বলে -- ''হাড়-গোড়ের মধ্যে কে প্রাণ দেবে যখন তা গলে-পচে যাবে?’’

قُلۡ یُحۡیِیهَا ٱلَّذِیۤ أَنشَأَهَاۤ أَوَّلَ مَرَّةࣲۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلۡقٍ عَلِیمٌ ﴿79﴾

বলুন, যিনি প্রথমবার সেগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জীবিত করবেন। তিনি সর্বপ্রকার সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক অবগত।

জহুরুল হক

তুমি বলো -- ''তিনিই তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন যিনি প্রথমবারে তাদের সৃজন করেছিলেন। আর তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা, --

ٱلَّذِی جَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلشَّجَرِ ٱلۡأَخۡضَرِ نَارࣰا فَإِذَاۤ أَنتُم مِّنۡهُ تُوقِدُونَ ﴿80﴾

যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তখন তোমরা তা থেকে আগুন জ্বালাও।

জহুরুল হক

যিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন তৈরি করেন, তারপর দেখো! তোমরা তা দিয়ে আগুন জ্বালো।

أَوَلَیۡسَ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰ⁠تِ وَٱلۡأَرۡضَ بِقَـٰدِرٍ عَلَىٰۤ أَن یَخۡلُقَ مِثۡلَهُمۚ بَلَىٰ وَهُوَ ٱلۡخَلَّـٰقُ ٱلۡعَلِیمُ ﴿81﴾

যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, তিনিই কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হ্যাঁ তিনি মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।

জহুরুল হক

আচ্ছা, যিনি মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি কি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? হাঁ, বস্তুতঃ তিনিই তো মহাস্রষ্টা, সর্বজ্ঞাতা।

إِنَّمَاۤ أَمۡرُهُۥۤ إِذَاۤ أَرَادَ شَیۡـًٔا أَن یَقُولَ لَهُۥ كُن فَیَكُونُ ﴿82﴾

তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।

জহুরুল হক

যখন তিনি কোনো-কিছু ইচ্ছা করেন তখন তাঁর নির্দেশ হল যে তিনি সে-সন্বন্ধে শুধু বলেন -- ''হও’’, আর তা হয়ে যায়।

فَسُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِی بِیَدِهِۦ مَلَكُوتُ كُلِّ شَیۡءࣲ وَإِلَیۡهِ تُرۡجَعُونَ ﴿83﴾

অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

জহুরুল হক

সুতরাং সকল মহিমা তাঁরই যাঁর হাতে রয়েছে সমস্ত কিছুর শাসনভার, আর তাঁরই নিকট তোমাদের ফিরিয়ে আনা হবে।