Settings
Surah The heights [Al-Araf] in Bengali
الۤمۤصۤ ﴿1﴾
আলিফ, লাম, মীম, স্বাদ।
كِتَـٰبٌ أُنزِلَ إِلَیۡكَ فَلَا یَكُن فِی صَدۡرِكَ حَرَجࣱ مِّنۡهُ لِتُنذِرَ بِهِۦ وَذِكۡرَىٰ لِلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿2﴾
তোমার কাছে অবতীর্ণ একটি গ্রন্থ, -- অতএব তোমার বক্ষে এর জন্য কোন সংকোচ না থাকুক -- যেন তুমি এর দ্বারা সতর্ক করতে পারো, এবং মুমিনদের জন্য একটি স্মারক।
ٱتَّبِعُوا۟ مَاۤ أُنزِلَ إِلَیۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ وَلَا تَتَّبِعُوا۟ مِن دُونِهِۦۤ أَوۡلِیَاۤءَۗ قَلِیلࣰا مَّا تَذَكَّرُونَ ﴿3﴾
''তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে তোমাদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অনুসরণ করো আর তাঁকে বাদ দিয়ে অভিভাবকদের অনুসরণ করো না। অল্পই যা তোমরা মনে রাখো।’’
وَكَم مِّن قَرۡیَةٍ أَهۡلَكۡنَـٰهَا فَجَاۤءَهَا بَأۡسُنَا بَیَـٰتًا أَوۡ هُمۡ قَاۤىِٕلُونَ ﴿4﴾
আর জনবসতির মধ্যের কতটা যে আমরা ধ্বংস করেছি, তাই আমাদের শাস্তি তাতে এসেছিল নিশাকালে, অথবা তারা যখন দুপুরবেলায় ঘুম দিচ্ছিল।
فَمَا كَانَ دَعۡوَىٰهُمۡ إِذۡ جَاۤءَهُم بَأۡسُنَاۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوۤا۟ إِنَّا كُنَّا ظَـٰلِمِینَ ﴿5﴾
কাজেই তাদের কাছে যখন আমাদের শাস্তি এসে পড়েছিল তখন তাদের অজুহাত আর কিছু ছিল না এই বলা ছাড়া -- ''নিঃসন্দেহ আমরা ছিলাম অন্যায়কারী।’’
فَلَنَسۡـَٔلَنَّ ٱلَّذِینَ أُرۡسِلَ إِلَیۡهِمۡ وَلَنَسۡـَٔلَنَّ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿6﴾
আমরা তখন তাদের অবশ্যই প্রশ্ন করবো যাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল, আর আমরা নিশ্চয়ই প্রেরিত-পুরুষগণকেও জিজ্ঞাসা করবো।
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَیۡهِم بِعِلۡمࣲۖ وَمَا كُنَّا غَاۤىِٕبِینَ ﴿7﴾
তখন আমরা নিশ্চয়ই তাদের কাছে বর্ণনা করবো জ্ঞানের সাথে, আর আমরা তো অনুপস্থিত ছিলাম না।
وَٱلۡوَزۡنُ یَوۡمَىِٕذٍ ٱلۡحَقُّۚ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَ ٰزِینُهُۥ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ﴿8﴾
আর সেদিন ওজন হবে সঠিকভাবে। কাজেই যার পাল্লা ভারী হবে তারাই তবে হবে সফলকাম।
وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَ ٰزِینُهُۥ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ ٱلَّذِینَ خَسِرُوۤا۟ أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا یَظۡلِمُونَ ﴿9﴾
আর যার পাল্লা হাল্কা হবে এরাই তবে তারা যারা তাদের আত্মার ক্ষতি সাধন করেছে, কেননা তারা আমাদের নির্দেশাবলীর প্রতি অন্যায় করেছিল।
وَلَقَدۡ مَكَّنَّـٰكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَجَعَلۡنَا لَكُمۡ فِیهَا مَعَـٰیِشَۗ قَلِیلࣰا مَّا تَشۡكُرُونَ ﴿10﴾
আর আমরা তো পৃথিবীতে তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছি, আর তোমাদের জন্য তাতে করেছি জীবিকার ব্যবস্থা। অল্পই সেইটুকু যা কৃতজ্ঞতা তোমার জ্ঞাপন করো।
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَـٰكُمۡ ثُمَّ صَوَّرۡنَـٰكُمۡ ثُمَّ قُلۡنَا لِلۡمَلَـٰۤىِٕكَةِ ٱسۡجُدُوا۟ لِـَٔادَمَ فَسَجَدُوۤا۟ إِلَّاۤ إِبۡلِیسَ لَمۡ یَكُن مِّنَ ٱلسَّـٰجِدِینَ ﴿11﴾
আর নিশ্চয়ই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের রূপদান করেছি, তারপর ফিরিশ্তাদের বললাম -- ''আদমের প্রতি সিজদা করো।’’ কাজেই তারা সিজদা করলো, কিন্তু ইবলীস করলো না সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হলো না।
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسۡجُدَ إِذۡ أَمَرۡتُكَۖ قَالَ أَنَا۠ خَیۡرࣱ مِّنۡهُ خَلَقۡتَنِی مِن نَّارࣲ وَخَلَقۡتَهُۥ مِن طِینࣲ ﴿12﴾
তিনি বললেন -- ''কি তোমাকে বাধা দিয়েছিল যেজন্য তুমি সিজদা করলে না যখন আমি তোমাকে আদেশ করেছিলাম?’’ সে বললে -- ''আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, আমাকে তুমি আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছ, আর তাকে তুমি সৃষ্টি করেছ কাদা দিয়ে।’’
قَالَ فَٱهۡبِطۡ مِنۡهَا فَمَا یَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِیهَا فَٱخۡرُجۡ إِنَّكَ مِنَ ٱلصَّـٰغِرِینَ ﴿13﴾
তিনি বললেন -- ''তবে এখানে থেকে রসাতলে যাও, তোমার জন্য নয় যে তুমি এখানে অহংকার করবে। কাজেই বেরিয়ে যাও, তুমি আলবৎ অধমদের মধ্যেকার।’’
قَالَ أَنظِرۡنِیۤ إِلَىٰ یَوۡمِ یُبۡعَثُونَ ﴿14﴾
সে বললে -- ''আমাকে সময় দাও সেইদিন পর্যন্ত যখন তারা পুনরুত্থিত হবে।’’
قَالَ إِنَّكَ مِنَ ٱلۡمُنظَرِینَ ﴿15﴾
তিনি বললেন -- ''বেশ, তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের মধ্যেকার।’’
قَالَ فَبِمَاۤ أَغۡوَیۡتَنِی لَأَقۡعُدَنَّ لَهُمۡ صِرَ ٰطَكَ ٱلۡمُسۡتَقِیمَ ﴿16﴾
সে বললে -- ''তবে তুমি যেমন আমাকে বিপথে যেতে দিয়েছ, আমিও তেমনি ওত পেতে থাকবো তাদের জন্য তোমার সহজ- সঠিক পথে।
ثُمَّ لَـَٔاتِیَنَّهُم مِّنۢ بَیۡنِ أَیۡدِیهِمۡ وَمِنۡ خَلۡفِهِمۡ وَعَنۡ أَیۡمَـٰنِهِمۡ وَعَن شَمَاۤىِٕلِهِمۡۖ وَلَا تَجِدُ أَكۡثَرَهُمۡ شَـٰكِرِینَ ﴿17﴾
''তারপর আমি আলবৎ তাদের উপরে এসে পড়বো তাদের সামনে থেকে ও তাদের পেছন থেকে, আর তাদের ডাইনে থেকে ও তাদের বামে থেকে, আর তাদের অনেককেই তুমি কৃতজ্ঞ পাবে না।’’
قَالَ ٱخۡرُجۡ مِنۡهَا مَذۡءُومࣰا مَّدۡحُورࣰاۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنۡهُمۡ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿18﴾
তিনি বললেন -- ''বেরোও এখান থেকে, বেহায়া, বিতাড়িত! তাদের মধ্যের যে কেউ তোমার অনুসরণ করবে, -- আমি নিশ্চয় জাহান্নাম ভর্তি করবো তোমাদের মধ্যের সবকে দিয়ে।’’
وَیَـٰۤـَٔادَمُ ٱسۡكُنۡ أَنتَ وَزَوۡجُكَ ٱلۡجَنَّةَ فَكُلَا مِنۡ حَیۡثُ شِئۡتُمَا وَلَا تَقۡرَبَا هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿19﴾
আর -- ''হে আদম! তুমি ও তোমার সঙ্গিনী এই বাগানে বসবাস করো, আর যেখান থেকে তোমরা চাও আহার করো, কিন্তু এই বৃক্ষের ধারেকাছেও যেও না, তাহলে তোমরা অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’
فَوَسۡوَسَ لَهُمَا ٱلشَّیۡطَـٰنُ لِیُبۡدِیَ لَهُمَا مَا وُۥرِیَ عَنۡهُمَا مِن سَوۡءَ ٰ تِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَىٰكُمَا رَبُّكُمَا عَنۡ هَـٰذِهِ ٱلشَّجَرَةِ إِلَّاۤ أَن تَكُونَا مَلَكَیۡنِ أَوۡ تَكُونَا مِنَ ٱلۡخَـٰلِدِینَ ﴿20﴾
তারপর শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিলে যেন সে তাদের কাছে প্রকাশ করতে পারে তাদের লজ্জার বিষয়ের যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাই সে বললে -- ''তোমাদের প্রভু এই গাছের থেকে তোমাদের নিষেধ করেন নি এই জন্য ছাড়া যে তোমরা ফিরিশ্তা হয়ে যাবে কিংবা তোমরা হবে চিরজীবীদের অন্তর্ভুক্ত।’’
وَقَاسَمَهُمَاۤ إِنِّی لَكُمَا لَمِنَ ٱلنَّـٰصِحِینَ ﴿21﴾
আর সে তাদের কাছে কসম খেলো -- ''নিঃসন্দেহ আমি তো তোমাদের জন্য সদুপদেশদাতাদের মধ্যেকার।’’
فَدَلَّىٰهُمَا بِغُرُورࣲۚ فَلَمَّا ذَاقَا ٱلشَّجَرَةَ بَدَتۡ لَهُمَا سَوۡءَ ٰ تُهُمَا وَطَفِقَا یَخۡصِفَانِ عَلَیۡهِمَا مِن وَرَقِ ٱلۡجَنَّةِۖ وَنَادَىٰهُمَا رَبُّهُمَاۤ أَلَمۡ أَنۡهَكُمَا عَن تِلۡكُمَا ٱلشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَاۤ إِنَّ ٱلشَّیۡطَـٰنَ لَكُمَا عَدُوࣱّ مُّبِینࣱ ﴿22﴾
এভাবে সে তাদের বিপথে চালালো প্রতারণার দ্বারা, অতঃপর তারা যখন বৃক্ষের আস্বাদ গ্রহণ করলো, তখন তাদের লজ্জা তাদের কাছে প্রকাশ পেলো, আর তারা তাদের আবৃত করতে লাগলো সেই বাগানের পাতা দিয়ে। আর তাদের প্রভু তাদের ডেকে বললেন -- ''আমি কি তোমাদের নিষেধ করি নি ঐ বৃক্ষ সন্বন্ধে, আর তোমাদের তো আমি বলেইছি যে শয়তান তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু?’’
قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَاۤ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿23﴾
তারা বললে -- ''আমাদের প্রভু! আমরা আমাদের নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আর যদি তুমি আমাদের পরিত্রাণ না করো ও আমাদের তুমি দয়া করো তাহলে আমরা নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।’’
قَالَ ٱهۡبِطُوا۟ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوࣱّۖ وَلَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرࣱّ وَمَتَـٰعٌ إِلَىٰ حِینࣲ ﴿24﴾
তিনি বললেন -- '' তোমরা অধঃপাতে যাও। তোমাদের কেউ কেউ অন্য কারোর শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে রয়েছে জিরানোর স্থান ও কিছু সময়ের জন্য সংস্থান।’’
قَالَ فِیهَا تَحۡیَوۡنَ وَفِیهَا تَمُوتُونَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُونَ ﴿25﴾
তিনি বললেন -- ''এইখানেই তোমরা জীবন যাপন করবে, আর এতেই তোমরা মৃত্যু বরণ করবে, আর এরই মধ্য থেকে তোমাদের পুনরুত্থিত করা হবে।’’
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَیۡكُمۡ لِبَاسࣰا یُوَ ٰرِی سَوۡءَ ٰ تِكُمۡ وَرِیشࣰاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَ ٰلِكَ خَیۡرࣱۚ ذَ ٰلِكَ مِنۡ ءَایَـٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُونَ ﴿26﴾
হে আদম-সন্তানগণ! আমরা তোমাদের জন্য নিশ্চয়ই পোশাক পাঠিয়েছি তোমাদের লজ্জা ঢাকবার ও বেশভূষার জন্য। আর ধর্মপরায়ণতার পোশাক -- তাই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ হচ্ছে আল্লাহ্র নির্দেশাবলী থেকে, যেন তারা মনে রাখে।
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ لَا یَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ كَمَاۤ أَخۡرَجَ أَبَوَیۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ یَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِیُرِیَهُمَا سَوۡءَ ٰ تِهِمَاۤۚ إِنَّهُۥ یَرَىٰكُمۡ هُوَ وَقَبِیلُهُۥ مِنۡ حَیۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡۗ إِنَّا جَعَلۡنَا ٱلشَّیَـٰطِینَ أَوۡلِیَاۤءَ لِلَّذِینَ لَا یُؤۡمِنُونَ ﴿27﴾
হে আদম-সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদের কিছুতেই প্রলোভিত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে বের করে দিয়েছিল এই বাগান থেকে, তাদের থেকে তাদের পোশাক ছিন্ন ক’রে, যেন সে তাদের দেখাতে পারে তাদের লজ্জা। নিঃসন্দেহ সে তোমাদের দেখে -- সে ও তার কাফেলা, যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাও না। নিঃসন্দেহ আমরা শয়তানকে বানিয়েছি তাদের অভিভাবক যারা বিশ্বাস করে না।
وَإِذَا فَعَلُوا۟ فَـٰحِشَةࣰ قَالُوا۟ وَجَدۡنَا عَلَیۡهَاۤ ءَابَاۤءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا یَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَاۤءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿28﴾
আর যখন তারা কোনো অশ্লীল আচরণ করে তখন বলে -- ''আমরা আমাদের পিতৃপুরুষকে এতে পেয়েছি, আর আল্লাহ্ আমাদের এতে আদেশ করেছেন।’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ অশ্লীলতাতে আদেশ করেন না। তোমরা কি আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বলো যা তোমরা জানো না?’’
قُلۡ أَمَرَ رَبِّی بِٱلۡقِسۡطِۖ وَأَقِیمُوا۟ وُجُوهَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدࣲ وَٱدۡعُوهُ مُخۡلِصِینَ لَهُ ٱلدِّینَۚ كَمَا بَدَأَكُمۡ تَعُودُونَ ﴿29﴾
তুমি বলো -- ''আমার প্রভু আদেশ দেন ন্যায় বিচারের, আর তোমাদের মুখ সোজা দাঁড় করো প্রত্যেক সিজদাস্থলে, আর তাঁকে ডাকো তাঁর প্রতি ধর্মে একনিষ্ঠভাবে।’’ যেমন তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছিলেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে।
فَرِیقًا هَدَىٰ وَفَرِیقًا حَقَّ عَلَیۡهِمُ ٱلضَّلَـٰلَةُۚ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلشَّیَـٰطِینَ أَوۡلِیَاۤءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَیَحۡسَبُونَ أَنَّهُم مُّهۡتَدُونَ ﴿30﴾
একদলকে তিনি সুপথগামী করেছেন, আর আরেক দলের পথভ্রান্তি তাদের উপরে সংগত হয়েছে। নিঃসন্দেহ তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে শয়তানদের গ্রহণ করেছিল অভিভাবকরূপে, আর তারা মনে করত যে তারা অবশ্যই সুপথে চালিত।
۞ یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ خُذُوا۟ زِینَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدࣲ وَكُلُوا۟ وَٱشۡرَبُوا۟ وَلَا تُسۡرِفُوۤا۟ۚ إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِینَ ﴿31﴾
হে আদম-সন্তানরা! তোমাদের বেশভূষা গ্রহণ করো প্রত্যেক সিজদাস্থলে, আর খাও ও পান করো, কিন্তু অপচয় করো না, নিঃসন্দেহ তিনি অমিতব্যয়ীদের ভালোবাসেন না।
قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِینَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِیۤ أَخۡرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّیِّبَـٰتِ مِنَ ٱلرِّزۡقِۚ قُلۡ هِیَ لِلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَا خَالِصَةࣰ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِۗ كَذَ ٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَعۡلَمُونَ ﴿32﴾
বলো -- ''কে নিষিদ্ধ করেছে আল্লাহ্র শোভা, -- যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, আর জীবিকা থেকে বিশুদ্ধ বস্তুসমূহ?’’ বলো -- ''এ-সব এই দুনিয়ার জীবনে তাদের জন্য যারা ঈমান এনেছে, -- পুনর্জাগরণের দিনে বিশেষভাবে।’’ এইভাবে আমরা আমাদের নির্দেশাবলী বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি তেমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা জানে।
قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ ٱلۡفَوَ ٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَـٰنࣰا وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿33﴾
বলো -- ''নিঃসন্দেহ আমার প্রভু নিষিদ্ধ করেছেন অশ্লীলতা -- তার যা প্রকাশ পায় ও যা গোপন থাকে, আর পাপাচার, আর ন্যায়বিরুদ্ধ বিদ্রোহাচরণ, আর আল্লাহ্র সঙ্গে তোমরা যা শরিক করো যার জন্য কোনো দলিল তিনি অবতীর্ণ করেন নি, আর যেন তোমরা আল্লাহ্র বিরুদ্ধে বলো যা তোমরা জানো না।’’
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلࣱۖ فَإِذَا جَاۤءَ أَجَلُهُمۡ لَا یَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةࣰ وَلَا یَسۡتَقۡدِمُونَ ﴿34﴾
আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে একটি নির্ধারিত কাল, কাজেই যখন তাদের নির্ধারিত কাল এসে পড়ে তখন তারা দেরি করতে পারবে না ঘন্টাখানেকের জন্যে, আর তারা এগিয়েও আনতে পারবে না।
یَـٰبَنِیۤ ءَادَمَ إِمَّا یَأۡتِیَنَّكُمۡ رُسُلࣱ مِّنكُمۡ یَقُصُّونَ عَلَیۡكُمۡ ءَایَـٰتِی فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَلَا هُمۡ یَحۡزَنُونَ ﴿35﴾
হে আদমের বংশধরগণ! যখন তোমাদের কাছে তোমাদের মধ্যে থেকে রসূলগণ আসেন তোমাদের কাছে আমার নির্দেশাবলী বর্ণনা করেন, তখন যে কেউ ভয়-ভক্তি করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য তবে থাকবে না ভয়ভীতি, আর তারা করবেও না অনুতাপ।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُوا۟ عَنۡهَاۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿36﴾
আর যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে মিথ্যারোপ করে আর সে-সব থেকে গর্ববোধ করে, তারাই হচ্ছে আগুনের বাসিন্দা, তারা তাতে থাকবে দীর্ঘকাল।
فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔایَـٰتِهِۦۤۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ یَنَالُهُمۡ نَصِیبُهُم مِّنَ ٱلۡكِتَـٰبِۖ حَتَّىٰۤ إِذَا جَاۤءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا یَتَوَفَّوۡنَهُمۡ قَالُوۤا۟ أَیۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُوا۟ كَـٰفِرِینَ ﴿37﴾
অতএব তার চাইতে কে বেশী অন্যায়কারী যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে অথবা তাঁর নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করে? এরাই, -- এদের কাছে পৌঁছুবে কিতাব থেকে তাদের ভাগ। শেষ পর্যন্ত যখন আমাদের দূতরা তাদের কাছে আসবে তখন তারা তাদের মৃত্যু ঘটাবে, তারা বলবে -- ''কোথায় আছে তারা যাদের তোমরা আহ্বান করতে আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে?’’ তারা বলবে -- ''তারা আমাদের থেকে চলে গেছে । আর তারা নিজেদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে তারা নিঃসন্দেহ অবিশ্বাসী ছিল।
قَالَ ٱدۡخُلُوا۟ فِیۤ أُمَمࣲ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِكُم مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ فِی ٱلنَّارِۖ كُلَّمَا دَخَلَتۡ أُمَّةࣱ لَّعَنَتۡ أُخۡتَهَاۖ حَتَّىٰۤ إِذَا ٱدَّارَكُوا۟ فِیهَا جَمِیعࣰا قَالَتۡ أُخۡرَىٰهُمۡ لِأُولَىٰهُمۡ رَبَّنَا هَـٰۤؤُلَاۤءِ أَضَلُّونَا فَـَٔاتِهِمۡ عَذَابࣰا ضِعۡفࣰا مِّنَ ٱلنَّارِۖ قَالَ لِكُلࣲّ ضِعۡفࣱ وَلَـٰكِن لَّا تَعۡلَمُونَ ﴿38﴾
তিনি বলবেন -- ''তোমরা প্রবেশ করো আগুনের মধ্যে দলগতভাবে যারা তোমাদের আগে গত হয়ে গেছে জিন ও মানুষের মধ্য থেকে। যখনি একটি দল প্রবেশ করবে সে অভিশাপ দেবে তার ভগিনীকে। তারপর যখন তারা সবে মিলে তাতে এসে পড়বে, তাদের পশ্চাদগামীরা তাদের অগ্রগামীদের সন্বন্ধে বলবে -- ''আমাদের প্রভু! এরা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল, সেজন্য তাদের দাও আগুন দ্বারা দ্বিগুণ শাস্তি।’’ তিনি বলবেন -- ''প্রত্যেকের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জানো না।’’
وَقَالَتۡ أُولَىٰهُمۡ لِأُخۡرَىٰهُمۡ فَمَا كَانَ لَكُمۡ عَلَیۡنَا مِن فَضۡلࣲ فَذُوقُوا۟ ٱلۡعَذَابَ بِمَا كُنتُمۡ تَكۡسِبُونَ ﴿39﴾
আর তাদের অগ্রগামীরা তাদের পশ্চাদগামীদের বলবে -- ''তাহলে তোমাদের কারণে আমাদের উপরে কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই, অতএব তোমরা যা অর্জন করে যাচ্ছিলে তার জন্য শাস্তি আস্বাদন করো।’’
إِنَّ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُوا۟ عَنۡهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَ ٰبُ ٱلسَّمَاۤءِ وَلَا یَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ یَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِی سَمِّ ٱلۡخِیَاطِۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿40﴾
নিঃসন্দেহ যারা আমাদের নির্দেশসমূহে মিথ্যারোপ করে আর সে-সব থেকে হামবড়াই করে, তাদের জন্য মহাকাশের দ্বার উন্নুক্ত করা হবে না আর তারা বেহেশতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না উট প্রবেশ করে সূচের ছিদ্র দিয়ে। আর এইভাবে আমরা অপরাধীদের প্রতিফল দিই।
لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادࣱ وَمِن فَوۡقِهِمۡ غَوَاشࣲۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿41﴾
তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শয্যা আর তাদের উপরে রয়েছে আবরণ। আর এইভাবে আমরা প্রতিফল দিই অন্যায়-কারীদের।
وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ لَا نُكَلِّفُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَنَّةِۖ هُمۡ فِیهَا خَـٰلِدُونَ ﴿42﴾
আর যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করছে -- আমরা কোনো সত্ত্বাকে ভারাক্রান্ত করি না তার ক্ষমতার অতিরিক্ত, -- এরাই হচ্ছে জান্নাতের বাসিন্দা, তারা সেখানে থাকবে চিরকাল।
وَنَزَعۡنَا مَا فِی صُدُورِهِم مِّنۡ غِلࣲّ تَجۡرِی مِن تَحۡتِهِمُ ٱلۡأَنۡهَـٰرُۖ وَقَالُوا۟ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِی هَدَىٰنَا لِهَـٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهۡتَدِیَ لَوۡلَاۤ أَنۡ هَدَىٰنَا ٱللَّهُۖ لَقَدۡ جَاۤءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلۡحَقِّۖ وَنُودُوۤا۟ أَن تِلۡكُمُ ٱلۡجَنَّةُ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ﴿43﴾
আর আমরা দূর করে দেবো মনোমালিন্যের যা-কিছু আছে তাদের বুকে, -- তাদের নিচে দিয়ে বয়ে চলবে ঝরনারাজি, আর তারা বলবে -- ''সমুদয় প্রশংসা আল্লাহ্রই যিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন এই দিকে, আর আমরা নিজেরা সুপথ পেতাম না যদি আল্লাহ্ আমাদের পথ না দেখাতেন, নিশ্চয়ই আমাদের প্রভুর রসূলগণ সত্য নিয়ে এসেছিলেন।’’ আর তাদের কাছে ঘোষণা করা হবে -- ''দেখো! এই বেহেশত তোমাদের সামনে, তোমরা এ উত্তরাধিকার করলে তোমরা যা করতে তার জন্য।’’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡجَنَّةِ أَصۡحَـٰبَ ٱلنَّارِ أَن قَدۡ وَجَدۡنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقࣰّا فَهَلۡ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمۡ حَقࣰّاۖ قَالُوا۟ نَعَمۡۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنُۢ بَیۡنَهُمۡ أَن لَّعۡنَةُ ٱللَّهِ عَلَى ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿44﴾
আর জান্নাতবাসীরা আগুনের বাসিন্দাদের ডেকে বলবে -- ''আমরা নিশ্চয়ই পেয়েছি আমাদের প্রভু আমাদের কাছে যা ওয়াদা করেছিলেন তা সত্য, তোমরাও কি তবে তোমাদের প্রভু যা ওয়াদা করেছিলেন তা সত্য পেয়েছ?’’ তারা বলবে -- ''হাঁ।’’ তখন জনৈক মুওজ্জিন তাদের মধ্যে ঘোষণা করবে -- ''আল্লাহ্র ধিক্কার হোক দুরাচারীদের উপরে --
ٱلَّذِینَ یَصُدُّونَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ وَیَبۡغُونَهَا عِوَجࣰا وَهُم بِٱلۡـَٔاخِرَةِ كَـٰفِرُونَ ﴿45﴾
''যারা আল্লাহ্র পথ থেকে সরিয়ে দেয় আর তাকে কুটিল করতে চেষ্টা করে, আর তারা আখেরাতের সন্বন্ধে অবিশ্বাসী।’’
وَبَیۡنَهُمَا حِجَابࣱۚ وَعَلَى ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالࣱ یَعۡرِفُونَ كُلَّۢا بِسِیمَىٰهُمۡۚ وَنَادَوۡا۟ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَن سَلَـٰمٌ عَلَیۡكُمۡۚ لَمۡ یَدۡخُلُوهَا وَهُمۡ یَطۡمَعُونَ ﴿46﴾
আর এই দুয়ের মধ্যে থাকবে একটি পর্দা। আর উঁচু স্থানসমূহে থাকবে কিছু লোক যাঁরা সবাইকে চেনেন তাদের চিহ্নের দ্বারা। আর তাঁরা বেহেশতের আগন্তক বাসিন্দাদের ডেকে বলবেন -- ''সালামুন আলাইকুম।’’ তারা এখনও তাতে প্রবেশ করে নি, তবে তারা আশা রাখে।
۞ وَإِذَا صُرِفَتۡ أَبۡصَـٰرُهُمۡ تِلۡقَاۤءَ أَصۡحَـٰبِ ٱلنَّارِ قَالُوا۟ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿47﴾
আর যখন তাদের দৃষ্টি ফেরানো হবে তখন তা নকরবাসীদের সাক্ষাৎ পাবে, তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভু! অন্যায়কারী দলের সঙ্গে আমাদের ফেলে দিও না।’’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالࣰا یَعۡرِفُونَهُم بِسِیمَىٰهُمۡ قَالُوا۟ مَاۤ أَغۡنَىٰ عَنكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ ﴿48﴾
আর উঁচুস্থানসমূহের বাসিন্দারা ডাকবেন সেইসব লোকদের যাদের তাঁরা চিনতে পারবেন ওদের চিহ্নের দ্বারা, তাঁরা বলবেন -- ''তোমাদের কোনো কাজে এলো না তোমাদের সঞ্চয় আর যা নিয়ে তোমরা হামবড়াই করতে!
أَهَـٰۤؤُلَاۤءِ ٱلَّذِینَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا یَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُوا۟ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡكُمۡ وَلَاۤ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ﴿49﴾
''এরাই কি! তারা যাদের সন্বন্ধে তোমরা কসম খেয়েছিলে যে আল্লাহ্ তাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করবেন না?’’ ''বেহেশতে প্রবেশ করো, তোমাদের উপরে কোনো ভয় নেই, আর তোমরা অনুতাপও করবে না।’’
وَنَادَىٰۤ أَصۡحَـٰبُ ٱلنَّارِ أَصۡحَـٰبَ ٱلۡجَنَّةِ أَنۡ أَفِیضُوا۟ عَلَیۡنَا مِنَ ٱلۡمَاۤءِ أَوۡ مِمَّا رَزَقَكُمُ ٱللَّهُۚ قَالُوۤا۟ إِنَّ ٱللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿50﴾
আর নরকবাসীরা জান্নাতবাসীদের ডেকে বলবে -- ''আমাদের উপরে পানি কিছুটা ঢেলে দাও, অথবা আল্লাহ্ তোমাদের যা খাওয়াচ্ছেন তা থেকে।’’ তারা বলবে -- ''নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ এ দুটোই নিষেধ করেছেন অবিশ্বাসীদের জন্য --
ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُوا۟ دِینَهُمۡ لَهۡوࣰا وَلَعِبࣰا وَغَرَّتۡهُمُ ٱلۡحَیَوٰةُ ٱلدُّنۡیَاۚ فَٱلۡیَوۡمَ نَنسَىٰهُمۡ كَمَا نَسُوا۟ لِقَاۤءَ یَوۡمِهِمۡ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا یَجۡحَدُونَ ﴿51﴾
''যারা তাদের ধর্মকে গ্রহণ করেছিল খেলা ও কৌতুকরূপে, আর এই দুনিয়ার জীবন যাদের ভুলিয়েছিল।’’ সুতরাং আজ আমরা তাদের পরিত্যাগ করেছি যেমন তারা অবহেলা করেছিল তাদের এই দিনটির সঙ্গে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে, আর যেহেতু তারা আমাদের নির্দেশাবলী প্রত্যাখ্যান করেছিল।
وَلَقَدۡ جِئۡنَـٰهُم بِكِتَـٰبࣲ فَصَّلۡنَـٰهُ عَلَىٰ عِلۡمٍ هُدࣰى وَرَحۡمَةࣰ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿52﴾
আর নিশ্চয়ই আমরা তাদের জন্য নিয়ে এসেছি একখানা কিতাব যাতে বিশদ ব্যাখ্যা করেছি জ্ঞান দ্বারা, -- এক পথনির্দেশ ও করুণা যারা বিশ্বাস করে তেমন লোকের জন্য।
هَلۡ یَنظُرُونَ إِلَّا تَأۡوِیلَهُۥۚ یَوۡمَ یَأۡتِی تَأۡوِیلُهُۥ یَقُولُ ٱلَّذِینَ نَسُوهُ مِن قَبۡلُ قَدۡ جَاۤءَتۡ رُسُلُ رَبِّنَا بِٱلۡحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاۤءَ فَیَشۡفَعُوا۟ لَنَاۤ أَوۡ نُرَدُّ فَنَعۡمَلَ غَیۡرَ ٱلَّذِی كُنَّا نَعۡمَلُۚ قَدۡ خَسِرُوۤا۟ أَنفُسَهُمۡ وَضَلَّ عَنۡهُم مَّا كَانُوا۟ یَفۡتَرُونَ ﴿53﴾
তারা কি আর কিছুর অপেক্ষা করে ওর পরিণাম ছাড়া? যেদিন এর পরিণাম আসবে, যারা এর আগে এটি অবহেলা করেছিল তারা বলবে -- ''আমাদের প্রভুর রসূলগণ নিশ্চয়ই সত্য নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের জন্য কোনো সুপারিশকারী আছে কি? তারা তবে আমাদের জন্য সুপারিশ করুক, অথবা আমরা কি প্রত্যাবৃত্ত হতে পারি যেন আমরা যা করতাম তার বিপরীত কিছু করতে পারি?’’ তারা আলবৎ তাদের অন্তরাত্মা হারিয়েছে, আর তাদের থেকে বিদায় নিয়েছে সেইসব যাদের তারা উদ্ভাবন করেছিল।
إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِی خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِی سِتَّةِ أَیَّامࣲ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ یُغۡشِی ٱلَّیۡلَ ٱلنَّهَارَ یَطۡلُبُهُۥ حَثِیثࣰا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَ ٰتِۭ بِأَمۡرِهِۦۤۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿54﴾
নিঃসন্দেহ তোমাদের প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি সৃষ্টি করেছেন মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী ছয় দিনে, তখন তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হন। তিনি দিনকে আবৃত করেন রাত্রি দিয়ে, -- যা দ্রতগতিতে তার অনুসরণ করে। আর সূর্য ও চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি তাঁর হুকুমের আজ্ঞাধীন। সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দান কি তাঁর অধিকারভুক্ত নয়? মহিমাময় আল্লাহ্ -- বিশ্বজগতের প্রভু!
ٱدۡعُوا۟ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعࣰا وَخُفۡیَةًۚ إِنَّهُۥ لَا یُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِینَ ﴿55﴾
তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনীতভাবে ও গোপনতার সাথে। নিঃসন্দেহ তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।
وَلَا تُفۡسِدُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَـٰحِهَا وَٱدۡعُوهُ خَوۡفࣰا وَطَمَعًاۚ إِنَّ رَحۡمَتَ ٱللَّهِ قَرِیبࣱ مِّنَ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿56﴾
আর দুনিয়াতে গন্ডগোল সৃষ্টি করো না তার মধ্যে শান্তিপ্রতিষ্ঠার পরে, আর তাঁকে ডাকো ভয়ে ও আশায়। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।
وَهُوَ ٱلَّذِی یُرۡسِلُ ٱلرِّیَـٰحَ بُشۡرَۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِهِۦۖ حَتَّىٰۤ إِذَاۤ أَقَلَّتۡ سَحَابࣰا ثِقَالࣰا سُقۡنَـٰهُ لِبَلَدࣲ مَّیِّتࣲ فَأَنزَلۡنَا بِهِ ٱلۡمَاۤءَ فَأَخۡرَجۡنَا بِهِۦ مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَ ٰتِۚ كَذَ ٰلِكَ نُخۡرِجُ ٱلۡمَوۡتَىٰ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ﴿57﴾
আর তিনিই সেইজন যিনি মলয়বায়ুপ্রবাহ পাঠান তাঁর অনুগ্রহের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহীরূপে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা সঘন মেঘমালা বহন ক’রে আনে, আমরা তখন তা মৃত ভূখন্ডের দিকে পাঠাই, তারপর আমরা তাতে পানি বর্ষণ করি, তারপরে এর সাহায্যে উৎপাদন করি সব রকমের ফলফসল। এইভাবে আমরা মৃতকে বের করে আনি, যেন তোমরা স্মরণ করতে পারো।
وَٱلۡبَلَدُ ٱلطَّیِّبُ یَخۡرُجُ نَبَاتُهُۥ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَٱلَّذِی خَبُثَ لَا یَخۡرُجُ إِلَّا نَكِدࣰاۚ كَذَ ٰلِكَ نُصَرِّفُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لِقَوۡمࣲ یَشۡكُرُونَ ﴿58﴾
আর ভালো জমি -- এর গাছপালা গজায় তার প্রভুর অনুমতিক্রমে, আর যা মন্দ -- কিছুই গজায় না অল্পস্বল্প ছাড়া। এই ভাবে আমরা নির্দেশসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি যারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তেমন লোকের জন্য।
لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۤ إِنِّیۤ أَخَافُ عَلَیۡكُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیمࣲ ﴿59﴾
আমরা অবশ্যই নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে। তিনি তখন বলেছিলেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা করো, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য উপাস্য নেই। নিঃসন্দেহ আমি তোমাদের জন্য আশংকা করছি এক ভয়ংকর দিনের শাস্তি।’’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِهِۦۤ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِی ضَلَـٰلࣲ مُّبِینࣲ ﴿60﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমরা তো তোমাকে দেখছি স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে।’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ لَیۡسَ بِی ضَلَـٰلَةࣱ وَلَـٰكِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿61﴾
তিনি বললেন -- ''হে আমার জনগণ! আমার মধ্যে কোনো পথভ্রান্তি নেই, বরং আমি হচ্ছি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল।
أُبَلِّغُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَأَنصَحُ لَكُمۡ وَأَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ﴿62﴾
''আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ এবং আমি তোমাদের সদুপদেশ দিই, কারণ আমি আল্লাহ্র কাছ থেকে জানি যা তোমরা জানো না।
أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَاۤءَكُمۡ ذِكۡرࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلࣲ مِّنكُمۡ لِیُنذِرَكُمۡ وَلِتَتَّقُوا۟ وَلَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿63﴾
''আচ্ছা, তোমরা কি বিস্মিত হচ্ছো যে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ এসেছে তোমাদেরই মধ্যেকার একজন মানুষের মাধ্যমে যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন, আর যেন তোমরা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করো, আর যেন তোমাদের করুণা প্রদর্শন করা হয়?
فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَٱلَّذِینَ مَعَهُۥ فِی ٱلۡفُلۡكِ وَأَغۡرَقۡنَا ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَاۤۚ إِنَّهُمۡ كَانُوا۟ قَوۡمًا عَمِینَ ﴿64﴾
কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যারোপ করলো, তাই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম জাহাজে, আর ডুবিয়ে দিয়েছিলাম তাদের যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল। নিঃসন্দেহ তারা ছিল এক অন্ধ সম্প্রদায়।
۞ وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمۡ هُودࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۤۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ ﴿65﴾
আর 'আদ জাতির কাছে তাদের ভাই হূদকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তোমরা কি তবে ধর্মভীরুতা অবলন্বন করবে না?’’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ مِن قَوۡمِهِۦۤ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِی سَفَاهَةࣲ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلۡكَـٰذِبِینَ ﴿66﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমরা তো তোমাকে দেখছি অকাট- বোকামিতে, আর আমরা আলবৎ তোমাকে মিথ্যাবাদীদের মধ্যে গণ্য করি।’’
قَالَ یَـٰقَوۡمِ لَیۡسَ بِی سَفَاهَةࣱ وَلَـٰكِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿67﴾
তিনি বললেন -- ''হে আমার লোকেরা! আমার মধ্যে কোনো মূর্খতা নেই, বরং আমি হচ্ছি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল।
أُبَلِّغُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِینٌ ﴿68﴾
''আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ, আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা।
أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَاۤءَكُمۡ ذِكۡرࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلࣲ مِّنكُمۡ لِیُنذِرَكُمۡۚ وَٱذۡكُرُوۤا۟ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَاۤءَ مِنۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوحࣲ وَزَادَكُمۡ فِی ٱلۡخَلۡقِ بَصۜۡطَةࣰۖ فَٱذۡكُرُوۤا۟ ءَالَاۤءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴿69﴾
''আচ্ছা, তোমরা কি তাজ্জব হচ্ছো যে তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে উপদেশ এসেছে তোমাদেরই মধ্যেকার একজন মানুষের মাধ্যমে যেন তিনি তোমাদের সতর্ক করেন? আর স্মরণ করো, কেমন ক’রে তিনি তোমাদের নূহ্-এর সম্প্রদায়ের পরবর্তীকালে প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন, আর তোমাদের বর্ধিত করেছেন আকৃতির বৈশিষ্ট্যে। সুতরাং তোমরা আল্লাহ্র অনুগ্রহসমূহ স্মরণ করো যেন তোমরা সফল হতে পারো।’’
قَالُوۤا۟ أَجِئۡتَنَا لِنَعۡبُدَ ٱللَّهَ وَحۡدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ یَعۡبُدُ ءَابَاۤؤُنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿70﴾
তারা বললে -- ''তুমি কি আমাদের কাছে এসেছ যেন আমরা একমাত্র আল্লাহ্র উপাসনা করি, আর বর্জন করি আমাদের পিতৃপুরুষরা যার উপাসনা করতো? অতএব নিয়ে এসো আমাদের উপরে যার দ্বারা তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছ, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’’
قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَیۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ رِجۡسࣱ وَغَضَبٌۖ أَتُجَـٰدِلُونَنِی فِیۤ أَسۡمَاۤءࣲ سَمَّیۡتُمُوهَاۤ أَنتُمۡ وَءَابَاۤؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَـٰنࣲۚ فَٱنتَظِرُوۤا۟ إِنِّی مَعَكُم مِّنَ ٱلۡمُنتَظِرِینَ ﴿71﴾
তিনি বললেন -- ''তোমাদের উপরে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে শাস্তি ও ক্রোধ তো হাজির হয়েই আছে। তোমরা কি আমার সঙ্গে বচসা করো কতকগুলি নাম সন্বন্ধে যে-সব নাম দিয়েছ -- তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার জন্যে আল্লাহ্ কোনো সনদ পাঠান নি? অতএব অপেক্ষা করো, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের মধ্যে রয়েছি।’’
فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَٱلَّذِینَ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةࣲ مِّنَّا وَقَطَعۡنَا دَابِرَ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَاۖ وَمَا كَانُوا۟ مُؤۡمِنِینَ ﴿72﴾
কাজে কাজেই তাঁকে ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের আমরা উদ্ধার করেছিলাম আমাদের থেকে অনুগ্রহ বশতঃ, আর কেটে দিয়েছিলাম তাদের শিকড় যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছিল ও যারা মুমিন ছিল না।
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَـٰلِحࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ قَدۡ جَاۤءَتۡكُم بَیِّنَةࣱ مِّن رَّبِّكُمۡۖ هَـٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَایَةࣰۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِیۤ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوۤءࣲ فَیَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٌ أَلِیمࣱ ﴿73﴾
আর ছামূদ জাতির কাছে তাদের ভাই সালিহ্কে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। আলবৎ তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট থেকে এসেছে স্পষ্ট প্রমাণ। এটি হচ্ছে আল্লাহ্র উষ্টী, -- তোমাদের জন্য একটি নিদর্শন, অতএব এটিকে ছেড়ে দাও আল্লাহ্র মাটিতে চরে খেতে, আর তাকে কোনো ক্ষতিতে ক্ষতি করো না, পাছে মর্মন্তুদ শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করে।
وَٱذۡكُرُوۤا۟ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَاۤءَ مِنۢ بَعۡدِ عَادࣲ وَبَوَّأَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورࣰا وَتَنۡحِتُونَ ٱلۡجِبَالَ بُیُوتࣰاۖ فَٱذۡكُرُوۤا۟ ءَالَاۤءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِینَ ﴿74﴾
''আর স্মরণ করো! কেমন ক’রে তিনি তোমাদের 'আদ-এর পরবর্তীকালে প্রতিনিধি বানিয়েছিলেন, আর তোমাদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পৃথিবীতে -- যার সমতলক্ষেত্রে তোমরা প্রাসাদ গড়েছিলে আর পাহাড় কেটে বানালে বাড়িঘর। সেজন্য তোমরা স্মরণ করো আল্লাহ্র অনুগ্রহসমূহ, আর দেশে গর্হিত আচরণ করো না গন্ডগোল সৃষ্টিকারী হয়ে।’’
قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُوا۟ مِن قَوۡمِهِۦ لِلَّذِینَ ٱسۡتُضۡعِفُوا۟ لِمَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُمۡ أَتَعۡلَمُونَ أَنَّ صَـٰلِحࣰا مُّرۡسَلࣱ مِّن رَّبِّهِۦۚ قَالُوۤا۟ إِنَّا بِمَاۤ أُرۡسِلَ بِهِۦ مُؤۡمِنُونَ ﴿75﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গর্ব করেছিল তাদের প্রধানরা বললে ওদের যারা দুর্বলতা বোধ করতো -- ওদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদের -- ''তোমরা কি জানো যে সালিহ্ তার প্রভুর কাছ থেকে একজন প্রেরিত-পুরুষ?’’ তারা বললে -- ''নিঃসন্দেহ তাঁকে দিয়ে যা পাঠানো হয়েছে তাতে আমরা বিশ্বাসী।’’
قَالَ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُوۤا۟ إِنَّا بِٱلَّذِیۤ ءَامَنتُم بِهِۦ كَـٰفِرُونَ ﴿76﴾
যারা গর্ববোধ করতো তারা বললে -- ''তোমরা যে-সব বিষয়ে বিশ্বাস করো তাতে আমরা নিশ্চয়ই অবিশ্বাসী।’’
فَعَقَرُوا۟ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوۡا۟ عَنۡ أَمۡرِ رَبِّهِمۡ وَقَالُوا۟ یَـٰصَـٰلِحُ ٱئۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِینَ ﴿77﴾
অতঃপর তারা উষ্টী হত্যা করলে, আর অমান্য করলে তাদের প্রভুর নির্দেশ ও বললে -- ''হে সালিহ্! এনো তো আমাদের জন্য যা দিয়ে তুমি আমাদের ভয় দেখাচ্ছ, যদি তুমি রসূলদের একজন হও।’’
فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُوا۟ فِی دَارِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿78﴾
সুতরাং তাদের পাকড়াও করল ভূমিকম্প, কাজেই তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরেই নিথরদেহী।
فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ یَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَالَةَ رَبِّی وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِینَ ﴿79﴾
তারপর তিনি তাদের থেকে ফিরে গেলেন আর বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বাণীসমূহ নিশ্চয়ই পৌঁছে দিয়েছিলাম, আর তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা উপদেষ্টাদের পছন্দ করলে না। ’’
وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦۤ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَـٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدࣲ مِّنَ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿80﴾
আর লূত। স্মরণ করো! তিনি তাঁর লোকদের বললেন -- ''তোমরা কি এমন অশ্লীলতা করছো যা তোমাদের পূর্বে জগদ্বাসীদের আর কেউ চালু করে নি?
إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةࣰ مِّن دُونِ ٱلنِّسَاۤءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمࣱ مُّسۡرِفُونَ ﴿81﴾
''নিঃসন্দেহ তোমরা তো কামাতুর হয়ে কামিনীদের ছেড়ে দিয়ে পুরুষদের কাছে আস। না, তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী লোক।’’
وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦۤ إِلَّاۤ أَن قَالُوۤا۟ أَخۡرِجُوهُم مِّن قَرۡیَتِكُمۡۖ إِنَّهُمۡ أُنَاسࣱ یَتَطَهَّرُونَ ﴿82﴾
আর তাঁর লোকদের উত্তর এ ভিন্ন অন্য কিছু ছিল না যে তারা বললে -- ''তোমাদের জনপদ থেকে এদের বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র হতে চায়!’’
فَأَنجَیۡنَـٰهُ وَأَهۡلَهُۥۤ إِلَّا ٱمۡرَأَتَهُۥ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَـٰبِرِینَ ﴿83﴾
কাজেই আমরা তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করেছিলাম -- তাঁর স্ত্রী ব্যতীত, সে ছিল পেছনে-পড়ে-থাকাদের অন্তর্ভুক্ত।
وَأَمۡطَرۡنَا عَلَیۡهِم مَّطَرࣰاۖ فَٱنظُرۡ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُجۡرِمِینَ ﴿84﴾
আর তাদের উপরে আমরা বর্ষণ করেছিলাম এক বর্ষণ। অতএব দেখো, অপরাধীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল?
وَإِلَىٰ مَدۡیَنَ أَخَاهُمۡ شُعَیۡبࣰاۚ قَالَ یَـٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَـٰهٍ غَیۡرُهُۥۖ قَدۡ جَاۤءَتۡكُم بَیِّنَةࣱ مِّن رَّبِّكُمۡۖ فَأَوۡفُوا۟ ٱلۡكَیۡلَ وَٱلۡمِیزَانَ وَلَا تَبۡخَسُوا۟ ٱلنَّاسَ أَشۡیَاۤءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَـٰحِهَاۚ ذَ ٰلِكُمۡ خَیۡرࣱ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِینَ ﴿85﴾
আর মাদয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শোআইবকে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্র উপাসনা করো, তোমাদের জন্য তিনি ব্যতীত অন্য উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে নিশ্চয়ই এসেছে স্পষ্ট প্রমাণ। কাজেই পুরো মাপ ও ওজন দেবে, আর কোন লোককে বঞ্চিত করো না তাদের বিষয়বস্তুতে, আর পৃথিবীতে গন্ডগোল সৃষ্টি করো না তাতে সুব্যবস্থা আনয়নের পরে এটিই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
وَلَا تَقۡعُدُوا۟ بِكُلِّ صِرَ ٰطࣲ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِیلِ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبۡغُونَهَا عِوَجࣰاۚ وَٱذۡكُرُوۤا۟ إِذۡ كُنتُمۡ قَلِیلࣰا فَكَثَّرَكُمۡۖ وَٱنظُرُوا۟ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿86﴾
''আর প্রত্যেক রাস্তায় ওত পেতে থেকো না ভয় দেখিয়ে, আর আল্লাহ্র পথ থেকে তাকে ফিরিয়ে নিতে যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে, আর তাকে কুটিল করতে যেও না। আর স্মরণ করো -- যখন তোমরা অল্প ছিলে, তখন তিনি তোমাদের বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অতএব দেখো, কি হয়েছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম!
وَإِن كَانَ طَاۤىِٕفَةࣱ مِّنكُمۡ ءَامَنُوا۟ بِٱلَّذِیۤ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَطَاۤىِٕفَةࣱ لَّمۡ یُؤۡمِنُوا۟ فَٱصۡبِرُوا۟ حَتَّىٰ یَحۡكُمَ ٱللَّهُ بَیۡنَنَاۚ وَهُوَ خَیۡرُ ٱلۡحَـٰكِمِینَ ﴿87﴾
''আর যদি তোমাদের একদলও বিশ্বাস করে আমাকে যা দিয়ে পাঠানো হয়েছে তাতে, আর একদল বিশ্বাস করে না, তখন ধৈর্য ধরো যে পর্যন্ত না আল্লাহ্ আমাদের উভয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, আর তিনিই বিচারকর্তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।’’
۞ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ ٱسۡتَكۡبَرُوا۟ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ یَـٰشُعَیۡبُ وَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ مَعَكَ مِن قَرۡیَتِنَاۤ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِی مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَـٰرِهِینَ ﴿88﴾
তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা গর্ব করেছিল তাদের প্রধানরা বললে, ''আমরা নিশ্চয়ই তোমাকে তাড়িয়ে দেবো, হে শোআইব! আর যারা তোমার সঙ্গে ঈমান এনেছে তাদেরও, আমাদের জনপদ থেকে, অথবা আমাদের ধর্মমতে তোমাদের ফিরে আসতেই হবে।’’ তিনি বললেন, ''কি! যদিও আমরা ঘৃণা করি?
قَدِ ٱفۡتَرَیۡنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنۡ عُدۡنَا فِی مِلَّتِكُم بَعۡدَ إِذۡ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنۡهَاۚ وَمَا یَكُونُ لَنَاۤ أَن نَّعُودَ فِیهَاۤ إِلَّاۤ أَن یَشَاۤءَ ٱللَّهُ رَبُّنَاۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَیۡءٍ عِلۡمًاۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَاۚ رَبَّنَا ٱفۡتَحۡ بَیۡنَنَا وَبَیۡنَ قَوۡمِنَا بِٱلۡحَقِّ وَأَنتَ خَیۡرُ ٱلۡفَـٰتِحِینَ ﴿89﴾
''আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহ্র বিরুদ্ধে মিথ্যা সৃষ্টি করবো যদি আমরা ফিরে যাই তোমাদের ধর্মমতে তা থেকে আল্লাহ্ আমাদের উদ্ধার করার পরেও, আর এটি আমাদের সমীচীন হবে না যে আমরা ওতে ফিরে যাই, যদি না আমাদের প্রভু আল্লাহ্ ইচ্ছে করেন। আমাদের প্রভু জ্ঞানে সব-কিছুতে ব্যাপকতা রাখেন। আল্লাহ্র উপরেই আমরা নির্ভর করি -- 'আমাদের প্রভু! আমাদের মধ্যে ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায্যভাবে নিস্পত্তি করে দাও, আর তুমিই নিস্পত্তিকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ।’’
وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِینَ كَفَرُوا۟ مِن قَوۡمِهِۦ لَىِٕنِ ٱتَّبَعۡتُمۡ شُعَیۡبًا إِنَّكُمۡ إِذࣰا لَّخَـٰسِرُونَ ﴿90﴾
আর তাঁর লোকদের মধ্যের যারা অবিশ্বাস করেছিল তাদের প্রধানরা বললে -- ''যদি তোমরা শোআইবকে অনুসরণ কর তবে তোমরা আলবৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’’
فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُوا۟ فِی دَارِهِمۡ جَـٰثِمِینَ ﴿91﴾
তারপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়ালো, ফলে তারা হয়ে গেল আপন বাড়িঘরেই নিথরদেহী।
ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ شُعَیۡبࣰا كَأَن لَّمۡ یَغۡنَوۡا۟ فِیهَاۚ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ شُعَیۡبࣰا كَانُوا۟ هُمُ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿92﴾
যারা শোআইবকে মিথ্যারোপ করেছিল তাদের দশা হলো -- তারা যেন কখনো সেখানে বসবাস করে নি, যারা শোআইবকে মিথ্যারোপ করেছিল তারা নিজেরাই হলো ক্ষতিগ্রস্ত!
فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ یَـٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَـٰلَـٰتِ رَبِّی وَنَصَحۡتُ لَكُمۡۖ فَكَیۡفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوۡمࣲ كَـٰفِرِینَ ﴿93﴾
এর পর তিনি তাদের থেকে ফিরে দাঁড়ালেন ও বললেন -- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো অবশ্যই তোমাদের কাছে আমার প্রভুর নির্দেশসমূহ পৌঁছে দিয়েছিলাম আর তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছিলাম, সুতরাং কেনই বা আমি দুঃখ করবো এক অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য!’’
وَمَاۤ أَرۡسَلۡنَا فِی قَرۡیَةࣲ مِّن نَّبِیٍّ إِلَّاۤ أَخَذۡنَاۤ أَهۡلَهَا بِٱلۡبَأۡسَاۤءِ وَٱلضَّرَّاۤءِ لَعَلَّهُمۡ یَضَّرَّعُونَ ﴿94﴾
আর আমরা কোনো জনপদে কোনো নবী পাঠাইনি তাদের বাসিন্দাদের দুঃখ ও দুর্দশা দিয়ে পাকড়াও না-ক’বে, যেন তারা নিজেরা বিনয়াবনত হয়।
ثُمَّ بَدَّلۡنَا مَكَانَ ٱلسَّیِّئَةِ ٱلۡحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا۟ وَّقَالُوا۟ قَدۡ مَسَّ ءَابَاۤءَنَا ٱلضَّرَّاۤءُ وَٱلسَّرَّاۤءُ فَأَخَذۡنَـٰهُم بَغۡتَةࣰ وَهُمۡ لَا یَشۡعُرُونَ ﴿95﴾
তারপর আমরা দুঃখকষ্টের অবস্থা বদলে দিলাম ভালো দিয়ে, যে পর্যন্ত না তারা ফেঁপে উঠলো ও বললে -- ''আমাদের পিতৃপুরুষদেরও দুঃখদুর্দশা ও আমোদ-আহ্লাদ স্পর্শ করেছিল।’’ কাজেই আমরা তাদের পাকড়াও করলাম অতর্কিতে, আর তারা টেরও পেলো না।
وَلَوۡ أَنَّ أَهۡلَ ٱلۡقُرَىٰۤ ءَامَنُوا۟ وَٱتَّقَوۡا۟ لَفَتَحۡنَا عَلَیۡهِم بَرَكَـٰتࣲ مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ وَٱلۡأَرۡضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا۟ فَأَخَذۡنَـٰهُم بِمَا كَانُوا۟ یَكۡسِبُونَ ﴿96﴾
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনতো ও ধর্ম-ভীরুতা অবলন্বন করতো তবে আমরা নিশ্চয়ই তাদের জন্য উন্নুক্ত করতাম মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী থেকে আশীর্বাদসমূহ, কিন্তু তারা তো অবিশ্বাস করেছিল, তাই আমরা তাদের পাকড়াও করলাম যা তারা অর্জন করেছিল তার জন্যে।
أَفَأَمِنَ أَهۡلُ ٱلۡقُرَىٰۤ أَن یَأۡتِیَهُم بَأۡسُنَا بَیَـٰتࣰا وَهُمۡ نَاۤىِٕمُونَ ﴿97﴾
তবে কি জনপদের বাসিন্দারা নিরাপদ বোধ করছে তাদের উপরে আমাদের বিপর্যয় এসে পড়া সম্পর্কে রাত্রির আক্রমণরূপে, যখন তারা থাকে নিদ্রামগ্ন?
أَوَأَمِنَ أَهۡلُ ٱلۡقُرَىٰۤ أَن یَأۡتِیَهُم بَأۡسُنَا ضُحࣰى وَهُمۡ یَلۡعَبُونَ ﴿98﴾
অথবা জনপদের বাসিন্দারা কি নিরাপদ ভাবে তাদের উপরে আমাদের বিপর্যয় এসে পড়া সম্পর্কে সকাল বেলায় যখন তারা থাকে খেলায় রত?
أَفَأَمِنُوا۟ مَكۡرَ ٱللَّهِۚ فَلَا یَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَـٰسِرُونَ ﴿99﴾
তারা কি তবে নিরাপদ বোধ করে আল্লাহ্র পরিকল্পনা থেকে? আর আল্লাহ্র পরিকল্পনা থেকে কেউ নিরাপদ থাকতে পারে না ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত।
أَوَلَمۡ یَهۡدِ لِلَّذِینَ یَرِثُونَ ٱلۡأَرۡضَ مِنۢ بَعۡدِ أَهۡلِهَاۤ أَن لَّوۡ نَشَاۤءُ أَصَبۡنَـٰهُم بِذُنُوبِهِمۡۚ وَنَطۡبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَهُمۡ لَا یَسۡمَعُونَ ﴿100﴾
এটি কি নির্দেশাত্মক নয় তাদের জন্য যারা দেশের উত্তরাধিকারপ্রাপ্ত হয় তার বাসিন্দাদের পরে, যে যদি আমরা ইচ্ছা করি তবে তাদেরও আমরা আঘাত হানতে পারি তাদের অপরাধের জন্য, আর তাদের হৃদয়ের উপরে সিল এঁটে দিতে পারি, ফলে তারা শুনবে না?
تِلۡكَ ٱلۡقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَیۡكَ مِنۡ أَنۢبَاۤىِٕهَاۚ وَلَقَدۡ جَاۤءَتۡهُمۡ رُسُلُهُم بِٱلۡبَیِّنَـٰتِ فَمَا كَانُوا۟ لِیُؤۡمِنُوا۟ بِمَا كَذَّبُوا۟ مِن قَبۡلُۚ كَذَ ٰلِكَ یَطۡبَعُ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ ٱلۡكَـٰفِرِینَ ﴿101﴾
এই জনবসতিগুলো -- তাদের কাহিনী থেকে কিছুটা আমরা তোমার কাছে বর্ণনা করছি। আর নিশ্চয়ই তাদের কাছে তাদের রসূলগণ এসেছিলেন স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, কিন্তু তাদের বিশ্বাস করবার অবস্থা ছিল না তাতে যা তারা ইতিপূর্বে অবিশ্বাস করেছিল। এইভাবে আল্লাহ্ মোহর মেরে দেন অবিশ্বাসীদের হৃদয়ের উপরে।
وَمَا وَجَدۡنَا لِأَكۡثَرِهِم مِّنۡ عَهۡدࣲۖ وَإِن وَجَدۡنَاۤ أَكۡثَرَهُمۡ لَفَـٰسِقِینَ ﴿102﴾
আর তাদের বেশিরভাগের মধ্যে আমরা প্রতিশ্রুতি পালনের কিছুই পাই নি, বরং তাদের অধিকাংশকে অবশ্যই পেয়েছি ডাহা অসৎকর্মা।
ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِم مُّوسَىٰ بِـَٔایَـٰتِنَاۤ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِی۟هِۦ فَظَلَمُوا۟ بِهَاۖ فَٱنظُرۡ كَیۡفَ كَانَ عَـٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿103﴾
অবশেষে তাদের পরে আমরা মূসাকে নিযুক্ত করেছিলাম ফিরআউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে আমাদের নির্দেশাবলী সঙ্গে দিয়ে, কিন্তু তারা এগুলোর প্রতি অবিচার করেছিল, অতএব দেখো কেমন হয়েছিল বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম!
وَقَالَ مُوسَىٰ یَـٰفِرۡعَوۡنُ إِنِّی رَسُولࣱ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿104﴾
আর মূসা বললেন -- ''হে ফিরআউন, নিঃসন্দেহ আমি বিশ্বজগতের প্রভুর তরফ থেকে একজন রসূল, --
حَقِیقٌ عَلَىٰۤ أَن لَّاۤ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ قَدۡ جِئۡتُكُم بِبَیِّنَةࣲ مِّن رَّبِّكُمۡ فَأَرۡسِلۡ مَعِیَ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ﴿105﴾
''স্থিরনিশ্চিত যে আল্লাহ্ সন্বন্ধে আমি সত্য ছাড়া বলবো না। আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাবলী নিয়ে, সুতরাং আমার সঙ্গে পাঠিয়ে দাও ইসরাইলবংশীয় লোকদের।’’
قَالَ إِن كُنتَ جِئۡتَ بِـَٔایَةࣲ فَأۡتِ بِهَاۤ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّـٰدِقِینَ ﴿106﴾
সে বললে -- ''যদি তুমি কোনো নিদর্শন নিয়ে এসে থাকো তবে তা উপস্থাপিত করো, যদি তুমি সত্যবাদীদের মধ্যেকার হও।’’
فَأَلۡقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِیَ ثُعۡبَانࣱ مُّبِینࣱ ﴿107﴾
কাজেই তিনি তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন, তখন আশ্চর্য! তা হলো এক স্পষ্ট সাপ।
وَنَزَعَ یَدَهُۥ فَإِذَا هِیَ بَیۡضَاۤءُ لِلنَّـٰظِرِینَ ﴿108﴾
আর তিনি তাঁর হাত বের করলেন, তখন আশ্চর্য! তা হলো দর্শকদের কাছে সাদা।
قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَـٰحِرٌ عَلِیمࣱ ﴿109﴾
ফিরআউনের লোকদের প্রধানরা বললে -- ''নিঃসন্দেহ এ একজন বিজ্ঞ জাদুকর।’’
یُرِیدُ أَن یُخۡرِجَكُم مِّنۡ أَرۡضِكُمۡۖ فَمَاذَا تَأۡمُرُونَ ﴿110﴾
''সে চায় তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে, কাজেই তোমরা কি পরামর্শ দাও?’’
قَالُوۤا۟ أَرۡجِهۡ وَأَخَاهُ وَأَرۡسِلۡ فِی ٱلۡمَدَاۤىِٕنِ حَـٰشِرِینَ ﴿111﴾
তারা বললে -- ''তাকে ও তার ভাইকে কিঞ্চিৎ অবকাশ দাও, আর শহরে-নগরে পাঠাও তলবকারীদের --
یَأۡتُوكَ بِكُلِّ سَـٰحِرٍ عَلِیمࣲ ﴿112﴾
''তোমার কাছে তারা নিয়ে আসুক প্রত্যেক ঝানু জাদুকর।’’
وَجَاۤءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرۡعَوۡنَ قَالُوۤا۟ إِنَّ لَنَا لَأَجۡرًا إِن كُنَّا نَحۡنُ ٱلۡغَـٰلِبِینَ ﴿113﴾
আর জাদুকররা ফিরআউনের কাছে এলো। তারা বললে -- ''আমাদের পুরস্কার থাকা চাই যদি আমরা নিজেরা বিজেতা হই।’’
قَالَ نَعَمۡ وَإِنَّكُمۡ لَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِینَ ﴿114﴾
সে বললে -- ''হাঁ আর আলবৎ তোমরা হবে নিকটবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত।’’
قَالُوا۟ یَـٰمُوسَىٰۤ إِمَّاۤ أَن تُلۡقِیَ وَإِمَّاۤ أَن نَّكُونَ نَحۡنُ ٱلۡمُلۡقِینَ ﴿115﴾
তারা বললে -- ''হে মূসা! তুমি কি নিক্ষেপ করবে, না আমরাই হবো নিক্ষেপকারী?
قَالَ أَلۡقُوا۟ۖ فَلَمَّاۤ أَلۡقَوۡا۟ سَحَرُوۤا۟ أَعۡیُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ وَجَاۤءُو بِسِحۡرٍ عَظِیمࣲ ﴿116﴾
তিনি বললেন -- ''তোমরাই ফেলো।’’ অতঃপর যখন তারা ফেললো তখন লোকদের চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিল আর তাদের ভয়াতুর করলো, আর তারা নিয়ে এলো এক বড় রকমের জাদু!
۞ وَأَوۡحَیۡنَاۤ إِلَىٰ مُوسَىٰۤ أَنۡ أَلۡقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِیَ تَلۡقَفُ مَا یَأۡفِكُونَ ﴿117﴾
তখন আমরা মূসাকে প্রত্যাদেশ দিলাম যে -- ''তোমার লাঠি নিক্ষেপ করো।’’ তখন কি আশ্চর্য! তা গ্রাস করতে লাগলো যা তারা রচনা করেছিল।
فَوَقَعَ ٱلۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿118﴾
কাজেই সত্য প্রতিষ্ঠা লাভ করলো এবং তারা যা করছিল তা বাতিল হয়ে গেল।
فَغُلِبُوا۟ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُوا۟ صَـٰغِرِینَ ﴿119﴾
সুতরাং তারা সেইখানেই পরাভূত হলো, আর তারা মোড় ফেরালো ছোট হয়ে।
وَأُلۡقِیَ ٱلسَّحَرَةُ سَـٰجِدِینَ ﴿120﴾
আর জাদুকররা লুটিয়ে পড়লো সিজদারত অবস্থায়।
قَالُوۤا۟ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿121﴾
তারা বললে -- ''আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজগতের প্রভুর প্রতি --
رَبِّ مُوسَىٰ وَهَـٰرُونَ ﴿122﴾
''মূসা ও হারূনের প্রভু।’’
قَالَ فِرۡعَوۡنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكۡرࣱ مَّكَرۡتُمُوهُ فِی ٱلۡمَدِینَةِ لِتُخۡرِجُوا۟ مِنۡهَاۤ أَهۡلَهَاۖ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ﴿123﴾
ফিরআউন বললে -- ''তোমরা তাতে বিশ্বাস করছ আমি তোমাদের অনুমতি দেবার আগেই! নিশ্চয় এটি এক চক্রান্ত যা তোমরা এ শহরে ফেদেছঁ যেন তোমরা এ থেকে এর লোকদের বার করে দিতে পারো। বেশ, শীঘ্রই তোমরা টের পাবে!
لَأُقَطِّعَنَّ أَیۡدِیَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَـٰفࣲ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمۡ أَجۡمَعِینَ ﴿124﴾
''আমি আলবৎ তোমাদের হাত ও তোমাদের পা উল্টো-পাল্টা কেটে দেবো, তারপর তোমাদের নিশ্চয়ই শূলে চড়াবো একসঙ্গে।’’
قَالُوۤا۟ إِنَّاۤ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ ﴿125﴾
তারা বললে -- ''নিঃসন্দেহ আমাদের প্রভুর কাছেই আমরা প্রত্যাবর্তনকারী।
وَمَا تَنقِمُ مِنَّاۤ إِلَّاۤ أَنۡ ءَامَنَّا بِـَٔایَـٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاۤءَتۡنَاۚ رَبَّنَاۤ أَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرࣰا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِینَ ﴿126﴾
''আর তুমি আমাদের উপরে প্রতিহিংসা নিচ্ছ না শুধু এজন্য ছাড়া যে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি আমাদের প্রভুর নির্দেশাবলীতে যখন সে-সব আমাদের কাছে এসেছিল। 'আমাদের প্রভু! আমাদের উপরে ধৈর্য বর্ষণ করো, আর আমাদের মৃত্যু ঘটাও মুসলিমরূপে।’’
وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوۡمَهُۥ لِیُفۡسِدُوا۟ فِی ٱلۡأَرۡضِ وَیَذَرَكَ وَءَالِهَتَكَۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبۡنَاۤءَهُمۡ وَنَسۡتَحۡیِۦ نِسَاۤءَهُمۡ وَإِنَّا فَوۡقَهُمۡ قَـٰهِرُونَ ﴿127﴾
আর ফিরআউনের লোকদের প্রধানরা বললে -- ''আপনি কি মূসাকে ও তার লোকদের ছেড়ে দেবেন দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে এবং আপনাকে এবং আপনার দেবতাদের পরিত্যাগ করতে?’’ সে বললে -- ''আমরা তাদের পুত্রদের অবশ্যই হত্যা করবো আর তাদের কন্যাদের বাঁচতে দেবো, আর আমরা আলবৎ তাদের উপরে প্রতাপশালী।’’
قَالَ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِ ٱسۡتَعِینُوا۟ بِٱللَّهِ وَٱصۡبِرُوۤا۟ۖ إِنَّ ٱلۡأَرۡضَ لِلَّهِ یُورِثُهَا مَن یَشَاۤءُ مِنۡ عِبَادِهِۦۖ وَٱلۡعَـٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِینَ ﴿128﴾
মূসা তাঁর লোকদের বললেন -- ''আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাও ও ধৈর্য ধারণ করো, নিঃসন্দেহ পৃথিবী তো আল্লাহ্র, তিনি তার উত্তরাধিকার দেবেন তাঁর বান্দাদের মধ্যের যাদের তিনি পছন্দ করেন। আর পরিণাম হচ্ছে ধর্মপরায়ণদেরই জন্যে।’’
قَالُوۤا۟ أُوذِینَا مِن قَبۡلِ أَن تَأۡتِیَنَا وَمِنۢ بَعۡدِ مَا جِئۡتَنَاۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن یُهۡلِكَ عَدُوَّكُمۡ وَیَسۡتَخۡلِفَكُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ فَیَنظُرَ كَیۡفَ تَعۡمَلُونَ ﴿129﴾
তারা বললে -- ''আমরা অত্যাচারিত হয়েছি আমাদের কাছে তোমার আগমনের আগে এবং আমাদের কাছে তোমার আসার পরেও।’’ তিনি বললেন -- ''হতে পারে তোমাদের প্রভু তোমাদের শত্রুদের ধ্বংস করবেন, আর অচিরেই তোমাদের তিনি প্রতিনিধি ঠাওরাবেন দেশের মধ্যে, যেন তিনি দেখতে পারেন কেমনভাবে তোমরা কাজ করো।’’
وَلَقَدۡ أَخَذۡنَاۤ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ بِٱلسِّنِینَ وَنَقۡصࣲ مِّنَ ٱلثَّمَرَ ٰتِ لَعَلَّهُمۡ یَذَّكَّرُونَ ﴿130﴾
আর আমরা নিশ্চয়ই ফিরআউনের লোকদের পাকড়াও করেছিলাম বহুবৎসরের খরা আর ফল-ফসলের ক্ষতি দিয়ে, যেন তারা অনুধাবন করে।
فَإِذَا جَاۤءَتۡهُمُ ٱلۡحَسَنَةُ قَالُوا۟ لَنَا هَـٰذِهِۦۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَیِّئَةࣱ یَطَّیَّرُوا۟ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥۤۗ أَلَاۤ إِنَّمَا طَـٰۤىِٕرُهُمۡ عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿131﴾
কিন্তু যখন তাদের কাছে ভালো অবস্থা আসতো, তারা বলতো -- ''এ-সব আমাদের জন্য।’’ আর যখন মন্দ অবস্থা তাদের উপরে ঘটতো তারা আরোপ করতো মূসার ও তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাদের উপরে। একি নয় যে নিঃসন্দেহ তাদের ক্রিয়াকলাপ আল্লাহ্র কাছে রয়েছে? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
وَقَالُوا۟ مَهۡمَا تَأۡتِنَا بِهِۦ مِنۡ ءَایَةࣲ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِینَ ﴿132﴾
আর তারা বললে -- ''তুমি নিদর্শন থেকে যে কোনোটাই আমাদের কাছে আনো না কেন তা দিয়ে আমাদের জাদু করতে, আমরা কিন্তু তোমাতে বিশ্বাস স্থাপনকারী হবো না।’’
فَأَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلۡجَرَادَ وَٱلۡقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَایَـٰتࣲ مُّفَصَّلَـٰتࣲ فَٱسۡتَكۡبَرُوا۟ وَكَانُوا۟ قَوۡمࣰا مُّجۡرِمِینَ ﴿133﴾
তারপর আমরা তাদের উপরে পাঠালাম সুদূর প্রসারিত মৃত্যু, আর পঙ্গপাল ও উকুন, আর বেঙ ও রক্ত -- বিশদভাবে বর্ণিত নিদর্শনাবলী, কিন্তু তারা অহংকার করেছিল এবং তারা ছিল একটি অপরাধী সম্প্রদায়।
وَلَمَّا وَقَعَ عَلَیۡهِمُ ٱلرِّجۡزُ قَالُوا۟ یَـٰمُوسَى ٱدۡعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَۖ لَىِٕن كَشَفۡتَ عَنَّا ٱلرِّجۡزَ لَنُؤۡمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرۡسِلَنَّ مَعَكَ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ﴿134﴾
আর যখন তাদের উপরে মড়কের আবির্ভাব হলো তারা বললে -- ''হে মূসা! তোমার প্রভুর কাছে আমাদের জন্য প্রার্থনা করো যেমন তিনি তোমার কাছে ওয়াদা করেছেন, তুমি যদি আমাদের কাছ থেকে মহামারী অপসারিত করে দাও তবে আমরা নিশ্চয়ই তোমাতে ঈমান আনবো আর তোমার সঙ্গে অবশ্যই ইসরাইলবংশীয়দের পাঠিয়ে দেবো।
فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُمُ ٱلرِّجۡزَ إِلَىٰۤ أَجَلٍ هُم بَـٰلِغُوهُ إِذَا هُمۡ یَنكُثُونَ ﴿135﴾
কিন্তু যখন আমরা তাদের থেকে মহামারী দূর করলাম নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যাতে তারা পৌঁছুল, দেখো! তারা ভঙ্গ করলো!
فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَأَغۡرَقۡنَـٰهُمۡ فِی ٱلۡیَمِّ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنۡهَا غَـٰفِلِینَ ﴿136﴾
সেজন্য আমরা তাদের থেকে শেষপরিণতি নিলাম, আর তাদের আমরা ডুবিয়ে দিয়েছিলাম সাগরের জলে যেহেতু তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল আমাদের নির্দেশসমূহ, আর এতে তারা ছিল অমনোযোগী।
وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِینَ كَانُوا۟ یُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَـٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَـٰرِبَهَا ٱلَّتِی بَـٰرَكۡنَا فِیهَاۖ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلۡحُسۡنَىٰ عَلَىٰ بَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ بِمَا صَبَرُوا۟ۖ وَدَمَّرۡنَا مَا كَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَقَوۡمُهُۥ وَمَا كَانُوا۟ یَعۡرِشُونَ ﴿137﴾
আর আমরা উত্তরাধিকার দিয়েছিলাম সেই লোকদের যাদের দুর্বল গণ্য করা হয়েছিল, -- দেশের পূর্ব্বাঞ্চলসমূহ ও তার পশ্চিমাঞ্চল সমূহ -- যাতে আমরা সমৃদ্ধি অর্পণ করেছিলাম। আর তোমার প্রভুর মনোরম বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল ইসরাইলের বংশধরদের ক্ষেত্রে যেহেতু তারা ধৈর্য ধরেছিল। আর আমরা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম ফিরআউন ও তার লোকেরা যা গড়ে ছিল, আর যে- সব তারা বানিয়েছিল।
قَالَ یَـٰمُوسَىٰۤ إِنِّی ٱصۡطَفَیۡتُكَ عَلَى ٱلنَّاسِ بِرِسَـٰلَـٰتِی وَبِكَلَـٰمِی فَخُذۡ مَاۤ ءَاتَیۡتُكَ وَكُن مِّنَ ٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿144﴾
তিনি বললেন -- ''হে মূসা! নিঃসন্দেহ আমি তোমাকে নির্বাচন করেছি জনগণের উপরে আমার বাণী প্রেরণের দ্বারা ও আমার বাক্যালাপের দ্বারা, কাজেই তুমি ধারণ করো যা বিধান আমি তোমাকে দিয়েছি, আর কৃতজ্ঞদের মধ্যেকার হও।’’
وَكَتَبۡنَا لَهُۥ فِی ٱلۡأَلۡوَاحِ مِن كُلِّ شَیۡءࣲ مَّوۡعِظَةࣰ وَتَفۡصِیلࣰا لِّكُلِّ شَیۡءࣲ فَخُذۡهَا بِقُوَّةࣲ وَأۡمُرۡ قَوۡمَكَ یَأۡخُذُوا۟ بِأَحۡسَنِهَاۚ سَأُو۟رِیكُمۡ دَارَ ٱلۡفَـٰسِقِینَ ﴿145﴾
আর আমরা তাঁর জন্য লিপিবদ্ধ করেছিলাম ফলকগুলোতে হরেক রকমের উপদেশ আর সব-কিছুর ব্যাখ্যা, -- ''এ-সব তাহলে শক্তভাবে ধারণ করো, আর তোমার লোকদের নির্দেশ দাও শ্রেষ্ঠগুলো গ্রহণ করতে। আমি অচিরেই তোমাদের দেখাবো সত্যত্যাগীদের বাসস্থান।’’
سَأَصۡرِفُ عَنۡ ءَایَـٰتِیَ ٱلَّذِینَ یَتَكَبَّرُونَ فِی ٱلۡأَرۡضِ بِغَیۡرِ ٱلۡحَقِّ وَإِن یَرَوۡا۟ كُلَّ ءَایَةࣲ لَّا یُؤۡمِنُوا۟ بِهَا وَإِن یَرَوۡا۟ سَبِیلَ ٱلرُّشۡدِ لَا یَتَّخِذُوهُ سَبِیلࣰا وَإِن یَرَوۡا۟ سَبِیلَ ٱلۡغَیِّ یَتَّخِذُوهُ سَبِیلࣰاۚ ذَ ٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَكَانُوا۟ عَنۡهَا غَـٰفِلِینَ ﴿146﴾
অচিরেই আমার নির্দেশাবলী থেকে আমি ফিরিয়ে দেবো তাদের যারা দেশের মধ্যে অন্যায়ভাবে অহংকার করে। আর যদিও তারা প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখতে পায় তবু তারা ওতে বিশ্বাস করবে না, আর যদি তারা ভ্রান্ত পথের দেখা পায় তবে তাকে তারা পথ বলে গ্রহণ করে। এটি এজন্য যে তারা আমাদের নির্দেশ-সমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, আর তাতে তারা উদাসীন হয়েছিল।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَلِقَاۤءِ ٱلۡـَٔاخِرَةِ حَبِطَتۡ أَعۡمَـٰلُهُمۡۚ هَلۡ یُجۡزَوۡنَ إِلَّا مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿147﴾
আর যারা মিথ্যারোপ করেছিল আমাদের নির্দেশাবলীতে ও পরকালের মুলাকাতের সন্বন্ধে, তাদের ক্রিয়াকলাপ বৃথা হয়েছে। তাদের কি প্রতিফল দেয়া হবে যা তারা করে যাচ্ছিল তার বিপরীতে?
وَٱتَّخَذَ قَوۡمُ مُوسَىٰ مِنۢ بَعۡدِهِۦ مِنۡ حُلِیِّهِمۡ عِجۡلࣰا جَسَدࣰا لَّهُۥ خُوَارٌۚ أَلَمۡ یَرَوۡا۟ أَنَّهُۥ لَا یُكَلِّمُهُمۡ وَلَا یَهۡدِیهِمۡ سَبِیلًاۘ ٱتَّخَذُوهُ وَكَانُوا۟ ظَـٰلِمِینَ ﴿148﴾
আর মূসার লোকেরা তাঁর পরে গ্রহণ করলো তাদের অলংকার দিয়ে একটি গোবৎসকে -- একটি দেহ, যাতে ফোকলা আওয়াজ হতো। তারা কি দেখলো না যে এটি তো তাদের সঙ্গে কথা বলে না আর তাদের পথে পরিচালিতও করে না? তারা এটিকে গ্রহণ করলো, আর তারা ছিল অন্যায়কারী।
وَلَمَّا سُقِطَ فِیۤ أَیۡدِیهِمۡ وَرَأَوۡا۟ أَنَّهُمۡ قَدۡ ضَلُّوا۟ قَالُوا۟ لَىِٕن لَّمۡ یَرۡحَمۡنَا رَبُّنَا وَیَغۡفِرۡ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَـٰسِرِینَ ﴿149﴾
আর যখন তাদের হাতে কামড় পড়লো আর দেখলো যে তারা বিপথে চলে গেছে, তারা বললে -- ''যদি না আমাদের প্রভু আমাদের প্রতি করুণা করেন ও আমাদের পরিত্রাণ করেন তবে আমরা আলবৎ ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’’
وَجَـٰوَزۡنَا بِبَنِیۤ إِسۡرَ ٰۤءِیلَ ٱلۡبَحۡرَ فَأَتَوۡا۟ عَلَىٰ قَوۡمࣲ یَعۡكُفُونَ عَلَىٰۤ أَصۡنَامࣲ لَّهُمۡۚ قَالُوا۟ یَـٰمُوسَى ٱجۡعَل لَّنَاۤ إِلَـٰهࣰا كَمَا لَهُمۡ ءَالِهَةࣱۚ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمࣱ تَجۡهَلُونَ ﴿138﴾
আর আমরা ইসরাইল বংশীয় লোকদের সমূদ্র পার করিয়ে দিই, তারপর তারা এল এক জাতির সংস্পর্শে যারা তাদের অবশিষ্ট প্রতিমাগুলোর প্রতি আসক্ত ছিল। তারা বললে -- ''হে মূসা! আমাদের জন্য একটি দেবতা গড়ে দাও যেমন তাদের দেবতারা রয়েছে ।’’ তিনি বললেন -- ''তোমরা নিঃসন্দেহ এমন এক সম্প্রদায় যারা বোকামো করছো।
إِنَّ هَـٰۤؤُلَاۤءِ مُتَبَّرࣱ مَّا هُمۡ فِیهِ وَبَـٰطِلࣱ مَّا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿139﴾
''নিঃসন্দেহ এদের ব্যাপারে -- যাতে তারা লিপ্ত রয়েছে তা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে যাচ্ছে, আর বৃথা যা তারা করে চলেছে।’’
قَالَ أَغَیۡرَ ٱللَّهِ أَبۡغِیكُمۡ إِلَـٰهࣰا وَهُوَ فَضَّلَكُمۡ عَلَى ٱلۡعَـٰلَمِینَ ﴿140﴾
তিনি বললেন -- ''আমি কি আল্লাহ্ ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য উপাস্য খুঁজবো, অথচ তিনি তোমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন সমস্ত বিশ্বজগতের উপরে?’’
وَإِذۡ أَنجَیۡنَـٰكُم مِّنۡ ءَالِ فِرۡعَوۡنَ یَسُومُونَكُمۡ سُوۤءَ ٱلۡعَذَابِ یُقَتِّلُونَ أَبۡنَاۤءَكُمۡ وَیَسۡتَحۡیُونَ نِسَاۤءَكُمۡۚ وَفِی ذَ ٰلِكُم بَلَاۤءࣱ مِّن رَّبِّكُمۡ عَظِیمࣱ ﴿141﴾
আর স্মরণ করো, আমরা তোমাদের উদ্ধার করেছিলাম ফিরআউনের লোকদের থেকে, তারা তোমাদের অত্যাচার করেছিল মর্মান্তিক শাস্তি দিয়ে, -- তারা তোমাদের পুত্রসন্তানদের হত্যা করতো ও বাচঁতে দিত তোমাদের কন্যাদের। আর এতে ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর তরফ থেকে এক বিরাট সঙ্কট।
۞ وَوَ ٰعَدۡنَا مُوسَىٰ ثَلَـٰثِینَ لَیۡلَةࣰ وَأَتۡمَمۡنَـٰهَا بِعَشۡرࣲ فَتَمَّ مِیقَـٰتُ رَبِّهِۦۤ أَرۡبَعِینَ لَیۡلَةࣰۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِیهِ هَـٰرُونَ ٱخۡلُفۡنِی فِی قَوۡمِی وَأَصۡلِحۡ وَلَا تَتَّبِعۡ سَبِیلَ ٱلۡمُفۡسِدِینَ ﴿142﴾
আর আমরা মূসার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলাম ত্রিশ রাত্রি, আর তা পূর্ণ করি দশ দিয়ে -- তাতে পূর্ণ হলো তাঁর প্রভুর নির্ধারিত চল্লিশ রাত্রি। আর মূসা তাঁর ভাই হারূনকে বললেন -- ''আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে ও ভালোভাবে চলবে, আর গন্ডগোল সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করো না।’’
وَلَمَّا جَاۤءَ مُوسَىٰ لِمِیقَـٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِیۤ أَنظُرۡ إِلَیۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِی وَلَـٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوۡفَ تَرَىٰنِیۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكࣰّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقࣰاۚ فَلَمَّاۤ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَـٰنَكَ تُبۡتُ إِلَیۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِینَ ﴿143﴾
আর যখন মূসা আমাদের নির্ধারিত-স্থলে এসে পৌঁছুলেন এবং তাঁর প্রভু তাঁর সাথে কথা বললেন, তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে দর্শন দাও, আমি তোমাকে দেখবো।’’ তিনি বললেন -- ''তুমি কখনই আমাকে দেখতে পাবে না, বরং পাহাড়টির দিকে তাকাও, যদি তা তার জায়গায় স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখবে।’’ তারপর যখন তাঁর প্রভু পাহাড়টিতে জ্যোতিষ্মান হলেন তখন তিনি তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করলেন, আর মূসা পড়ে গেলেন সংজ্ঞাহীন হয়ে। তারপর যখন তিনি চেতনা পেলেন, তিনি বললেন -- ''তোমারই সব মহিমা! আমি তোমারই দিকে ফিরছি, আর আমি হব মুমিনদের মধ্যে অগ্রণী।’’
وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰۤ إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ غَضۡبَـٰنَ أَسِفࣰا قَالَ بِئۡسَمَا خَلَفۡتُمُونِی مِنۢ بَعۡدِیۤۖ أَعَجِلۡتُمۡ أَمۡرَ رَبِّكُمۡۖ وَأَلۡقَى ٱلۡأَلۡوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأۡسِ أَخِیهِ یَجُرُّهُۥۤ إِلَیۡهِۚ قَالَ ٱبۡنَ أُمَّ إِنَّ ٱلۡقَوۡمَ ٱسۡتَضۡعَفُونِی وَكَادُوا۟ یَقۡتُلُونَنِی فَلَا تُشۡمِتۡ بِیَ ٱلۡأَعۡدَاۤءَ وَلَا تَجۡعَلۡنِی مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّـٰلِمِینَ ﴿150﴾
আর যখন মূসা ফিরে এলেন তাঁর লোকদের কাছে ক্ষুদ্ধ ও ত্রুদ্ধ হয়ে, তিনি বললেন -- ''আমার পরে তোমরা আমার স্থলে যা কারেছ তা জঘন্য! তোমরা কি তোমাদের প্রভুর বিচার এগিয়ে আনতে চাও?’’ আর তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন, আর তাঁর ভাইয়ের মাথা ধরলেন তাঁর দিকে তাঁকে টেনে আনতে। তিনি বললেন -- ''হে আমার সহোদর! নিঃসন্দেহ লোকেরা আমাকে দুর্বল ঠাওরেছিল ও আমাকে প্রায় মেরেই ফেলেছিল। সুতরাং আমার দশায় শত্রুদের পুলকিত করো না, আর, আমাকে পাপিষ্ঠ লোকদের দলভুক্ত করো না।’’
قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِی وَلِأَخِی وَأَدۡخِلۡنَا فِی رَحۡمَتِكَۖ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّ ٰحِمِینَ ﴿151﴾
তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! আমাকে ও আমার ভাইকে পরিত্রাণ করো, আর আমাদের দাখিল করো তোমার অনুগ্রহের মধ্যে, কেননা তুমিই দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ করুণাময়।’’
إِنَّ ٱلَّذِینَ ٱتَّخَذُوا۟ ٱلۡعِجۡلَ سَیَنَالُهُمۡ غَضَبࣱ مِّن رَّبِّهِمۡ وَذِلَّةࣱ فِی ٱلۡحَیَوٰةِ ٱلدُّنۡیَاۚ وَكَذَ ٰلِكَ نَجۡزِی ٱلۡمُفۡتَرِینَ ﴿152﴾
নিঃসন্দেহ যারা গো-বৎসকে গ্রহণ করেছিল তাদের পাকড়াও করবে তাদের প্রভুর ক্রোধ ও লাঞ্ছনা এই দুনিয়ার জীবনে। আর এইভাবেই আমরা প্রতিফল দিই মিথ্যারচনাকারীদের।
وَٱلَّذِینَ عَمِلُوا۟ ٱلسَّیِّـَٔاتِ ثُمَّ تَابُوا۟ مِنۢ بَعۡدِهَا وَءَامَنُوۤا۟ إِنَّ رَبَّكَ مِنۢ بَعۡدِهَا لَغَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿153﴾
আর যারা অসদাচরণ করে আর তারপরে ফেরে ও বিশ্বাস করে, -- নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু তো এর পরে পরম ক্ষমাশীল, অফুরন্ত ফলদাতা।
وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى ٱلۡغَضَبُ أَخَذَ ٱلۡأَلۡوَاحَۖ وَفِی نُسۡخَتِهَا هُدࣰى وَرَحۡمَةࣱ لِّلَّذِینَ هُمۡ لِرَبِّهِمۡ یَرۡهَبُونَ ﴿154﴾
আর মূসা থেকে ক্রোধ যখন প্রশমিত হলো তিনি তখন ফলকগুলো তুলে নিলেন, সে-সবের লেখনে ছিল পথনির্দেশ ও করুণা, তাদের জন্য যারা তাদের প্রভুর প্রতি ভয় করে।
وَٱخۡتَارَ مُوسَىٰ قَوۡمَهُۥ سَبۡعِینَ رَجُلࣰا لِّمِیقَـٰتِنَاۖ فَلَمَّاۤ أَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ قَالَ رَبِّ لَوۡ شِئۡتَ أَهۡلَكۡتَهُم مِّن قَبۡلُ وَإِیَّـٰیَۖ أَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلسُّفَهَاۤءُ مِنَّاۤۖ إِنۡ هِیَ إِلَّا فِتۡنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَاۤءُ وَتَهۡدِی مَن تَشَاۤءُۖ أَنتَ وَلِیُّنَا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَاۖ وَأَنتَ خَیۡرُ ٱلۡغَـٰفِرِینَ ﴿155﴾
আর মূসা তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সত্তর জন লোককে বাছাই করলেন আমাদের নির্ধারিত স্থলের জন্য, কাজেই যখন ভূমিকম্প তাদের পাকড়ালো, তিনি বললেন -- ''আমার প্রভু! তুমি যদি ইচ্ছা করতে তবে এর আগেই তো তুমি তাদের ধ্বংস করতে পারতে, আর আমাকেও। তুমি কি আমাদের ধ্বংস করবে আমাদের মধ্যের নির্বোধরা যা করেছে তার জন্যে? এ তোমার পরীক্ষা বৈ তো নয়। এর দ্বারা তুমি বিপথগামী করো যাদের তুমি ইচ্ছা করো, আর সৎপথে চালাও যাদের তুমি ইচ্ছা করো। তুমিই আমাদের অভিভাবক, অতএব আমাদের পরিত্রাণ করো ও আমাদের প্রতি করুণা করো, কারণ তুমিই পরিত্রাণকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম।
۞ وَٱكۡتُبۡ لَنَا فِی هَـٰذِهِ ٱلدُّنۡیَا حَسَنَةࣰ وَفِی ٱلۡـَٔاخِرَةِ إِنَّا هُدۡنَاۤ إِلَیۡكَۚ قَالَ عَذَابِیۤ أُصِیبُ بِهِۦ مَنۡ أَشَاۤءُۖ وَرَحۡمَتِی وَسِعَتۡ كُلَّ شَیۡءࣲۚ فَسَأَكۡتُبُهَا لِلَّذِینَ یَتَّقُونَ وَیُؤۡتُونَ ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلَّذِینَ هُم بِـَٔایَـٰتِنَا یُؤۡمِنُونَ ﴿156﴾
''আর আমাদের জন্য বিধান করো এই দুনিয়াতেই কল্যাণ এবং পরকালেও, আমরা নিঃসন্দেহ তোমার দিকেই ফিরছি।’’ তিনি বললেন -- ''আমার শাস্তি -- তা দিয়ে আমি আঘাত হানবো যাকে ইচ্ছা করবো, কিন্তু আমার করুণা -- তা সব-কিছুই পরিবেষ্ঠন করে। সুতরাং আমি তা বিধান করবো তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে, আর যাকাত আদায় করে, আর যারা আমাদের নির্দেশাবলীতে বিশ্বাস করে, --
ٱلَّذِینَ یَتَّبِعُونَ ٱلرَّسُولَ ٱلنَّبِیَّ ٱلۡأُمِّیَّ ٱلَّذِی یَجِدُونَهُۥ مَكۡتُوبًا عِندَهُمۡ فِی ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِیلِ یَأۡمُرُهُم بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَیَنۡهَىٰهُمۡ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَیُحِلُّ لَهُمُ ٱلطَّیِّبَـٰتِ وَیُحَرِّمُ عَلَیۡهِمُ ٱلۡخَبَـٰۤىِٕثَ وَیَضَعُ عَنۡهُمۡ إِصۡرَهُمۡ وَٱلۡأَغۡلَـٰلَ ٱلَّتِی كَانَتۡ عَلَیۡهِمۡۚ فَٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ بِهِۦ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَٱتَّبَعُوا۟ ٱلنُّورَ ٱلَّذِیۤ أُنزِلَ مَعَهُۥۤ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ﴿157﴾
''যারা অনুসরণ করে সেই রসূলকে -- নবী, উম্মী, যাঁকে তারা পায় উল্লিখিত রয়েছে তাদের কাছের তওরাতে ও ইঞ্জীলে, আর যিনি তাদের নির্দেশ দেন সৎকাজের ও তাদের নিষেধ করেন অসৎকাজ থেকে, আর তাদের জন্য বৈধ করেন ভালো বিষয়বস্তু ও তাদের জন্য নিষেধ করেন মন্দ জিনিসগুলো, আর যিনি তাদের থেকে দূর করে দেন তাদের বোঝা ও বন্ধন যা তাদের উপরে ছিল। অতএব যারা তাঁতে বিশ্বাস করে ও তাঁকে মান্য করে ও তাঁকে সাহায্য করে আর অনুসরণ করে সেই আলো যা তাঁর সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে, -- এরা নিজেরাই হচ্ছে সফলকাম।’’
قُلۡ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّی رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَیۡكُمۡ جَمِیعًا ٱلَّذِی لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَاۤ إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ یُحۡیِۦ وَیُمِیتُۖ فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِیِّ ٱلۡأُمِّیِّ ٱلَّذِی یُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَـٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ﴿158﴾
বলো -- ''ওহে জনগণ! আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রসূল তোমাদের সবার কাছে, -- মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব যাঁর সেইজনেরই, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই, তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সেজন্য আল্লাহ্তে বিশ্বাস করো ও তাঁর রসূলের প্রতি -- উম্মী নবী, যিনি ঈমান এনেছেন আল্লাহতে ও তাঁর বাণীসমূহে, আর তোমরাও তাঁর অনুসরণ করো যেন তোমরা সৎপথপ্রাপ্ত হতে পারো।’’
وَمِن قَوۡمِ مُوسَىٰۤ أُمَّةࣱ یَهۡدُونَ بِٱلۡحَقِّ وَبِهِۦ یَعۡدِلُونَ ﴿159﴾
আর মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যেও একটি দল রয়েছে যারা পথ দেখায় সত্যের দ্বারা ও তার দ্বারা ন্যায়বিচার করে।
وَقَطَّعۡنَـٰهُمُ ٱثۡنَتَیۡ عَشۡرَةَ أَسۡبَاطًا أُمَمࣰاۚ وَأَوۡحَیۡنَاۤ إِلَىٰ مُوسَىٰۤ إِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰهُ قَوۡمُهُۥۤ أَنِ ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنۢبَجَسَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَیۡنࣰاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسࣲ مَّشۡرَبَهُمۡۚ وَظَلَّلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلۡغَمَـٰمَ وَأَنزَلۡنَا عَلَیۡهِمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ كُلُوا۟ مِن طَیِّبَـٰتِ مَا رَزَقۡنَـٰكُمۡۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوۤا۟ أَنفُسَهُمۡ یَظۡلِمُونَ ﴿160﴾
আর আমরা তাদের বিভক্ত করেছিলাম বারোটি গোত্রে দলে। আর মূসার কাছে আমরা প্রেরণা দিলাম যখন তাঁর লোকেরা তাঁর কাছে পানি চাইল, এই বলে -- ''তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে আঘাত করো।’’ তখন তা থেকে বারোটি ঝরনা প্রবাহিত হলো। প্রত্যেক গোত্র আপন জলপান-স্থান চিনে নিলো। আর তাদের উপরে আমরা মেঘ দিয়ে আচ্ছাদান করেছিলাম, আর তাদের কাছে পাঠিয়েছিলাম 'মান্না’ ও 'সালওয়া’, -- ''তোমাদের যা জীবিকা দিয়েছি তার ভালো ভালো জিনিস থেকে আহার করো।’’ কিন্তু তারা আমাদের কোনো অনিষ্ট করে নি, বরং তারা তাদের নিজেদের প্রতি অনিষ্ট করছিল।
وَإِذۡ قِیلَ لَهُمُ ٱسۡكُنُوا۟ هَـٰذِهِ ٱلۡقَرۡیَةَ وَكُلُوا۟ مِنۡهَا حَیۡثُ شِئۡتُمۡ وَقُولُوا۟ حِطَّةࣱ وَٱدۡخُلُوا۟ ٱلۡبَابَ سُجَّدࣰا نَّغۡفِرۡ لَكُمۡ خَطِیۤـَٔـٰتِكُمۡۚ سَنَزِیدُ ٱلۡمُحۡسِنِینَ ﴿161﴾
আর স্মরণ করো! তাদের বলা হয়েছিল -- ''এ জনবসতিতে বসবাস করো, আর এ থেকে আহার করো যখন-যেখানে ইচ্ছা করো, আর বলো 'হিৎতাতুন’, আর সদর-দরজা দিয়ে প্রবেশ করো নতমস্তকে, তোমাদের সমস্ত ভুলভ্রান্তি আমরা তোমাদের থেকে ক্ষমা করে দেবো। উপরন্তু আমরা বাড়িয়ে দেবো শুভকর্মীদের জন্য।’’
فَبَدَّلَ ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ مِنۡهُمۡ قَوۡلًا غَیۡرَ ٱلَّذِی قِیلَ لَهُمۡ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَیۡهِمۡ رِجۡزࣰا مِّنَ ٱلسَّمَاۤءِ بِمَا كَانُوا۟ یَظۡلِمُونَ ﴿162﴾
কিন্তু তাদের মধ্যে যারা অন্যায় করেছিল তারা তাদের যা বলা হয়েছিল তার বিপরীত কথায় তা বদলে দিল, সেজন্য তাদের উপরে আমরা আকাশ থেকে পাঠালাম মহামারী, যেহেতু তারা অন্যায় ক’রে চলছিল।
وَسۡـَٔلۡهُمۡ عَنِ ٱلۡقَرۡیَةِ ٱلَّتِی كَانَتۡ حَاضِرَةَ ٱلۡبَحۡرِ إِذۡ یَعۡدُونَ فِی ٱلسَّبۡتِ إِذۡ تَأۡتِیهِمۡ حِیتَانُهُمۡ یَوۡمَ سَبۡتِهِمۡ شُرَّعࣰا وَیَوۡمَ لَا یَسۡبِتُونَ لَا تَأۡتِیهِمۡۚ كَذَ ٰلِكَ نَبۡلُوهُم بِمَا كَانُوا۟ یَفۡسُقُونَ ﴿163﴾
আর তাদের জিজ্ঞাসা করো সেই জনবসতি সন্বন্ধে যারা ছিল সমুদ্রের কিনারে। স্মরণ করো! তারা সব্বাতের উল্লঙ্ঘন করেছিল, কারণ তাদের মাছগুলো তাদের কাছে আসতো তাদের সাব্বাতের দিনে ঝাঁকে-ঝাঁকে, আর যেদিন তারা সব্বাত পালন করতো না তারা তাদের কাছে আসতো না। এইভাবে আমরা তাদের নিয়ন্ত্রিত করেছিলাম, কেননা তারা পাপাচার করে চলতো।
وَإِذۡ قَالَتۡ أُمَّةࣱ مِّنۡهُمۡ لِمَ تَعِظُونَ قَوۡمًا ٱللَّهُ مُهۡلِكُهُمۡ أَوۡ مُعَذِّبُهُمۡ عَذَابࣰا شَدِیدࣰاۖ قَالُوا۟ مَعۡذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمۡ وَلَعَلَّهُمۡ یَتَّقُونَ ﴿164﴾
আর যখন তাদের মধ্যের একটি দল বললে -- ''কেন তোমরা সেই লোকদের উপদেশ দিচ্ছ আল্লাহ্ যাদের ধ্বংস করতে যাচ্ছেন অথবা কঠোর শাস্তিতে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন’’? তাঁরা বললেন -- ''তোমাদের প্রভুর কাছে দোষমুক্ত হবার জন্য, আর যাতে তারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে।’’
فَلَمَّا نَسُوا۟ مَا ذُكِّرُوا۟ بِهِۦۤ أَنجَیۡنَا ٱلَّذِینَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوۤءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِینَ ظَلَمُوا۟ بِعَذَابِۭ بَـِٔیسِۭ بِمَا كَانُوا۟ یَفۡسُقُونَ ﴿165﴾
কিন্তু যখন তারা বিস্মৃত হলো যা তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল, আমরা উদ্ধার করেছিলাম তাদের যারা নিষেধ করতো অসৎকাজ থেকে, আর যারা অন্যায় করে তাদের আমরা পাকড়াও করলাম কঠিন শাস্তিতে, যেহেতু তারা পাপাচার করতো।
فَلَمَّا عَتَوۡا۟ عَن مَّا نُهُوا۟ عَنۡهُ قُلۡنَا لَهُمۡ كُونُوا۟ قِرَدَةً خَـٰسِـِٔینَ ﴿166﴾
তারপর যখন তারা তাচ্ছিল্য করলো তাতে যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল তখন আমরা তাদের বললাম -- ''তোমরা ঘৃণ্য বানর হয়ে যাও।’’
وَإِذۡ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَیَبۡعَثَنَّ عَلَیۡهِمۡ إِلَىٰ یَوۡمِ ٱلۡقِیَـٰمَةِ مَن یَسُومُهُمۡ سُوۤءَ ٱلۡعَذَابِۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِیعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورࣱ رَّحِیمࣱ ﴿167﴾
আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু ঘোষণা করলেন যে তিনি তাদের বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত নিযুক্ত করবেন যারা তাদের পীড়ন করবে কঠিন নিপীড়নে। নিশ্চয় তোমার প্রভু তো প্রতিফল-দানে তৎপর এবং তিনি তো নিশ্চয়ই পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।
وَقَطَّعۡنَـٰهُمۡ فِی ٱلۡأَرۡضِ أُمَمࣰاۖ مِّنۡهُمُ ٱلصَّـٰلِحُونَ وَمِنۡهُمۡ دُونَ ذَ ٰلِكَۖ وَبَلَوۡنَـٰهُم بِٱلۡحَسَنَـٰتِ وَٱلسَّیِّـَٔاتِ لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ ﴿168﴾
আর আমরা পৃথিবীতে তাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন দলে, তাদের মধ্যে কেউ-কেউ সৎপথাবলন্বী, আর তাদের কতক এর বিপরীত। আর আমরা তাদের নিয়ন্ত্রিত করেছি ভালো দিয়ে ও মন্দ দিয়ে, যেন তারা ফিরে আসে।
فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفࣱ وَرِثُوا۟ ٱلۡكِتَـٰبَ یَأۡخُذُونَ عَرَضَ هَـٰذَا ٱلۡأَدۡنَىٰ وَیَقُولُونَ سَیُغۡفَرُ لَنَا وَإِن یَأۡتِهِمۡ عَرَضࣱ مِّثۡلُهُۥ یَأۡخُذُوهُۚ أَلَمۡ یُؤۡخَذۡ عَلَیۡهِم مِّیثَـٰقُ ٱلۡكِتَـٰبِ أَن لَّا یَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّ وَدَرَسُوا۟ مَا فِیهِۗ وَٱلدَّارُ ٱلۡـَٔاخِرَةُ خَیۡرࣱ لِّلَّذِینَ یَتَّقُونَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ﴿169﴾
অতঃপর তাদের পরে স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল এক উত্তরপুরুষ যারা গ্রন্থ উত্তরাধিকার করেছিল, তারা আঁকড়ে ধরেছিল এই সাধারণ জীবনের তুচ্ছ-বস্তুসব আর বলতো -- ''আমাদের তো মাফ করে দেয়া হবে।’’ আর যদি তাদের কাছে তার মতো বস্তুগুলো আসে তবে তারা তা গ্রহণ করে। তাদের কাছ থেকে কি গ্রন্থের অঙ্গীকার নেওয়া হয় নি যে তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে সত্য ছাড়া আর কিছু বলবে না, আর তারা পাঠও করেছে যা তাতে রয়েছে? আর পরকালের বাসস্থানই শ্রেয় তাদের জন্য যারা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করে। তোমরা কি তবে বুঝো না?
وَٱلَّذِینَ یُمَسِّكُونَ بِٱلۡكِتَـٰبِ وَأَقَامُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ إِنَّا لَا نُضِیعُ أَجۡرَ ٱلۡمُصۡلِحِینَ ﴿170﴾
আর যারা কিতাব শক্তভাবে ধারণ করে ও নামায কায়েম করে -- আমরা নিশ্চয় সৎকর্মশীলদের কর্মফল বিনষ্ট করি না।
۞ وَإِذۡ نَتَقۡنَا ٱلۡجَبَلَ فَوۡقَهُمۡ كَأَنَّهُۥ ظُلَّةࣱ وَظَنُّوۤا۟ أَنَّهُۥ وَاقِعُۢ بِهِمۡ خُذُوا۟ مَاۤ ءَاتَیۡنَـٰكُم بِقُوَّةࣲ وَٱذۡكُرُوا۟ مَا فِیهِ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ﴿171﴾
আরোও স্মরণ করো! আমরা তাদের উপরে পর্বতকে কম্পিত করলাম তা যেন হয়েছিল একটি আচ্ছাদন, আর তারা ভেবেছিল যে এ নিশ্চয়ই তাদের উপরে ভেঙ্গে পড়েছে, ''আমরা তোমাদের যা দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে আকঁড়ে ধরো, আর তাতে যা রয়েছে তা স্মরণ রেখো, যাতে তোমরা ধর্মভীরুতা অবলন্বন করো’’।
وَإِذۡ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِیۤ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمۡ ذُرِّیَّتَهُمۡ وَأَشۡهَدَهُمۡ عَلَىٰۤ أَنفُسِهِمۡ أَلَسۡتُ بِرَبِّكُمۡۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ شَهِدۡنَاۤۚ أَن تَقُولُوا۟ یَوۡمَ ٱلۡقِیَـٰمَةِ إِنَّا كُنَّا عَنۡ هَـٰذَا غَـٰفِلِینَ ﴿172﴾
আর স্মরণ করো! তোমার প্রভু আদমের বংশধরদের থেকে -- তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে -- তাদের সন্তান-সন্ততি এনেছিলেন, আর তাদের নিজেদের সন্বন্ধে তাদের সাক্ষ্য দিইয়েছিলেন -- ''আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’’ তারা বলেছিল -- ''হাঁ, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি।’’ এজন্য যে পাছে তোমরা কিয়ামতের দিনে বলো -- ''আমরা তো এ বিষয়ে অজ্ঞাত ছিলাম,’’ --
أَوۡ تَقُولُوۤا۟ إِنَّمَاۤ أَشۡرَكَ ءَابَاۤؤُنَا مِن قَبۡلُ وَكُنَّا ذُرِّیَّةࣰ مِّنۢ بَعۡدِهِمۡۖ أَفَتُهۡلِكُنَا بِمَا فَعَلَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ﴿173﴾
অথবা তোমরা বলো -- ''আসল ব্যাপার হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষরা এর আগেই অংশীদার ঠাওরেছিল, আর আমরা তাদের পরবর্তীকালে বংশধরই ছিলাম। তুমি কি তবে আমাদের ধ্বংস করবে ভ্রষ্টাচারীরা যা করেছিল সেজন্য?
وَكَذَ ٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ وَلَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُونَ ﴿174﴾
আর এইভাবে আমাদের নির্দেশাবলী আমরা ব্যাখ্যা করি যেন তারা ফিরে আসে।
وَٱتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَأَ ٱلَّذِیۤ ءَاتَیۡنَـٰهُ ءَایَـٰتِنَا فَٱنسَلَخَ مِنۡهَا فَأَتۡبَعَهُ ٱلشَّیۡطَـٰنُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡغَاوِینَ ﴿175﴾
আর তাদের কাছে পাঠ করো ওর বৃত্তান্ত যাকে আমরা আমাদের নির্দেশাবলী প্রদান করেছিলাম, কিন্তু সে সে-সব থেকে গুটিয়ে নেয়, সেজন্য শয়তান তার পিছু নেয়, কাজেই সে বিপথ-গামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।
وَلَوۡ شِئۡنَا لَرَفَعۡنَـٰهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُۥۤ أَخۡلَدَ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُۚ فَمَثَلُهُۥ كَمَثَلِ ٱلۡكَلۡبِ إِن تَحۡمِلۡ عَلَیۡهِ یَلۡهَثۡ أَوۡ تَتۡرُكۡهُ یَلۡهَثۚ ذَّ ٰلِكَ مَثَلُ ٱلۡقَوۡمِ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَاۚ فَٱقۡصُصِ ٱلۡقَصَصَ لَعَلَّهُمۡ یَتَفَكَّرُونَ ﴿176﴾
আর যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তবে নিশ্চয়ই এর দ্বারা তাকে আমরা উন্নীত করতাম, কিন্তু সে মাটি আকঁড়ে ধরলো, আর সে তার হীন-কামনার অনুসরণ করে চললো। সুতরাং তার উপমা হচ্ছে কুকুরের দৃষ্টান্তের মতো -- ওকে যদি তুমি তাড়া করো, সে জিব বের ক’রে হাঁপাবে, আর যদি তুমি তাকে এড়িয়ে চলো সে জিব বার করে হাঁপাবে। এই হচ্ছে সে-সব লোকের দৃষ্টান্ত যারা আমাদের নির্দেশসমূহ প্রত্যাখ্যান করে। তুমি ইতিবৃত্ত বিবৃত করো যেন তারা চিন্তা করতে পারে।
سَاۤءَ مَثَلًا ٱلۡقَوۡمُ ٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا وَأَنفُسَهُمۡ كَانُوا۟ یَظۡلِمُونَ ﴿177﴾
মন্দের দৃষ্টান্ত সেই লোকেরা যারা আমাদের বাণীসমূহে মিথ্যারোপ করে, আর তাদের অন্তরাত্মার প্রতিই তারা অত্যাচার করে চলে!
مَن یَهۡدِ ٱللَّهُ فَهُوَ ٱلۡمُهۡتَدِیۖ وَمَن یُضۡلِلۡ فَأُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡخَـٰسِرُونَ ﴿178﴾
যাকে আল্লাহ্ পথ দেখান সে-ই তবে সৎপথে চালিত, আর যাকে তিনি বিপথে চলতে দেন, তাহলে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
وَلَقَدۡ ذَرَأۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِیرࣰا مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِۖ لَهُمۡ قُلُوبࣱ لَّا یَفۡقَهُونَ بِهَا وَلَهُمۡ أَعۡیُنࣱ لَّا یُبۡصِرُونَ بِهَا وَلَهُمۡ ءَاذَانࣱ لَّا یَسۡمَعُونَ بِهَاۤۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ كَٱلۡأَنۡعَـٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُو۟لَـٰۤىِٕكَ هُمُ ٱلۡغَـٰفِلُونَ ﴿179﴾
আর আমরা জাহান্নামের জন্য নিশ্চয়ই ছড়িয়ে দিয়েছি জিন ও মানুষের মধ্যের অনেককে, -- তাদের হৃদয় আছে তা দিয়ে তারা বুঝে না, আর তাদের চোখ আছে তা দিয়ে তারা দেখে না, আর তাদের কান আছে তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা গবাদি-পশুর ন্যায়, বরং তারা আরো পথভ্রষ্ট। তারা নিজেরাই হচ্ছে উদাসীন।
وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَاۤءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُوا۟ ٱلَّذِینَ یُلۡحِدُونَ فِیۤ أَسۡمَـٰۤىِٕهِۦۚ سَیُجۡزَوۡنَ مَا كَانُوا۟ یَعۡمَلُونَ ﴿180﴾
আর আল্লাহ্রই হচ্ছে সবচাইতে ভালো নামাবলী, কাজেই তাঁকে ডাকো সেই সবের দ্বারা, আর তাদের ছেড়ে দাও যারা তাঁর নামাবলী নিয়ে বিকৃতি করে। অচিরেই তাদের প্রতিফল দেয়া হবে তারা যা করে যাচ্ছে তার জন্য।
وَمِمَّنۡ خَلَقۡنَاۤ أُمَّةࣱ یَهۡدُونَ بِٱلۡحَقِّ وَبِهِۦ یَعۡدِلُونَ ﴿181﴾
আর যাদের আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে আছে একটি দল যারা পথ দেখায় সত্যের দ্বারা, আর তার দ্বারা তারা ন্যায়পরায়ণতা করে।
وَٱلَّذِینَ كَذَّبُوا۟ بِـَٔایَـٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَیۡثُ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿182﴾
আর যারা আমাদের বাণীসমূহে মিথ্যারোপ করে তাদের আমরা ক্রমাগত টেনে নিয়ে যাই, -- কোথা থেকে তা তারা জানে না।
وَأُمۡلِی لَهُمۡۚ إِنَّ كَیۡدِی مَتِینٌ ﴿183﴾
আর আমি তাদের অবসর দিই, নিঃসন্দেহ আমার ব্যবস্থা অত্যন্ত বলিষ্ঠ।
أَوَلَمۡ یَتَفَكَّرُوا۟ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍۚ إِنۡ هُوَ إِلَّا نَذِیرࣱ مُّبِینٌ ﴿184﴾
তারা কি চিন্তা করে না? তাদের সহচরের মধ্যে কোনো পাগলামি নেই। বাস্তবে তিনি তো এক সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
أَوَلَمۡ یَنظُرُوا۟ فِی مَلَكُوتِ ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَمَا خَلَقَ ٱللَّهُ مِن شَیۡءࣲ وَأَنۡ عَسَىٰۤ أَن یَكُونَ قَدِ ٱقۡتَرَبَ أَجَلُهُمۡۖ فَبِأَیِّ حَدِیثِۭ بَعۡدَهُۥ یُؤۡمِنُونَ ﴿185﴾
তারা কি তাকায় না মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সাম্রাজ্যের প্রতি আর যা-কিছু আল্লাহ্ সৃষ্টি করেছেন, আর হতে পারে তাদের নির্ধারিত কাল ঘনিয়ে এসেছে? এর পরে আর কোন পর্যালোচনার দ্বারা তারা তবে বিশ্বাস করবে?
مَن یُضۡلِلِ ٱللَّهُ فَلَا هَادِیَ لَهُۥۚ وَیَذَرُهُمۡ فِی طُغۡیَـٰنِهِمۡ یَعۡمَهُونَ ﴿186﴾
যাকে আল্লাহ্ বিপথে যেতে দেন তার জন্যে তবে কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আর তাদের তিনি ছেড়ে দেন তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তভাবে ঘুরপাক খেতে।
یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَیَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّیۖ لَا یُجَلِّیهَا لِوَقۡتِهَاۤ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِی ٱلسَّمَـٰوَ ٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِیكُمۡ إِلَّا بَغۡتَةࣰۗ یَسۡـَٔلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِیٌّ عَنۡهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ ٱللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا یَعۡلَمُونَ ﴿187﴾
তারা তোমাকে ঘড়িঘন্টা সন্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে -- কখন তা ঘটবে। বলো -- ''এর জ্ঞান অবশ্যই রয়েছে আমার প্রভুর কাছে, এর সময় সন্বন্ধে তা প্রকাশ করতে পারে না তিনি ছাড়া কেউ। এ অতি গুরুতর ব্যাপার মহাকাশমন্ডলে ও পৃথিবীতে, এ এসে পড়বে না তোমাদের উপরে অতর্কিতে ছাড়া।’’ তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করছে যেন তুমিই এ বিষয়ে আগ্রহী। বলো -- ''এর জ্ঞান আলবৎ আল্লাহ্র কাছে, কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না।’’
قُل لَّاۤ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِی نَفۡعࣰا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاۤءَ ٱللَّهُۚ وَلَوۡ كُنتُ أَعۡلَمُ ٱلۡغَیۡبَ لَٱسۡتَكۡثَرۡتُ مِنَ ٱلۡخَیۡرِ وَمَا مَسَّنِیَ ٱلسُّوۤءُۚ إِنۡ أَنَا۠ إِلَّا نَذِیرࣱ وَبَشِیرࣱ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿188﴾
বলো -- ''আমার কোনো অধিকার নেই আমার নিজেরই কোনো লাভ বা ক্ষতি করবার -- আল্লাহ্ যা চান তা-ব্যতীত। আর যদি আমি অদৃশ্যের সম্যক্ জ্ঞান রাখতাম তবে কল্যাণের প্রাচুর্য বানিয়ে নিতাম, আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না। আমি তো একজন সতর্ককারী বই নই, আর একজন সুসংবাদদাতা সেই লোকদের জন্য যারা ঈমান এনেছে।
۞ هُوَ ٱلَّذِی خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسࣲ وَ ٰحِدَةࣲ وَجَعَلَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا لِیَسۡكُنَ إِلَیۡهَاۖ فَلَمَّا تَغَشَّىٰهَا حَمَلَتۡ حَمۡلًا خَفِیفࣰا فَمَرَّتۡ بِهِۦۖ فَلَمَّاۤ أَثۡقَلَت دَّعَوَا ٱللَّهَ رَبَّهُمَا لَىِٕنۡ ءَاتَیۡتَنَا صَـٰلِحࣰا لَّنَكُونَنَّ مِنَ ٱلشَّـٰكِرِینَ ﴿189﴾
তিনিই সেইজন যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন একই নফস থেকে, আর তা থেকে তিনি তৈরি করেছেন তার সঙ্গিনী যেন সে তার মধ্যে শান্তি পেতে পারে। অতএব যখন সে তাতে উপগত হয় সে তখন একটি হাল্কা বোঝা ধারণ করে আর তা নিয়ে চলাফেরা করে, তারপর যখন তা ভারী হয়ে উঠে তখন উভয়ে আহ্বান করে তাদের প্রভু আল্লাহ্কে -- ''যদি তুমি আমাদের সুষ্ঠু একটি দাও আমরা তবে নিশ্চয়ই হবো কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত।’’
فَلَمَّاۤ ءَاتَىٰهُمَا صَـٰلِحࣰا جَعَلَا لَهُۥ شُرَكَاۤءَ فِیمَاۤ ءَاتَىٰهُمَاۚ فَتَعَـٰلَى ٱللَّهُ عَمَّا یُشۡرِكُونَ ﴿190﴾
কিন্তু তিনি যখন তাদের সুষ্ঠু একটি দান করলেন তারা তাঁর সঙ্গে দাঁড় করালো অংশীদার তিনি তাদের যা দিয়েছেন তার সন্বন্ধে। কিন্তু বহু উচ্চে অবস্থিত আল্লাহ্ তারা যা অংশী বানায় সে-সব থেকে।
أَیُشۡرِكُونَ مَا لَا یَخۡلُقُ شَیۡـࣰٔا وَهُمۡ یُخۡلَقُونَ ﴿191﴾
তারা কি অংশীদার বসায় তাকে যে কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে?
وَلَا یَسۡتَطِیعُونَ لَهُمۡ نَصۡرࣰا وَلَاۤ أَنفُسَهُمۡ یَنصُرُونَ ﴿192﴾
আর ওরা কোনো ক্ষমতা রাখে না তাদের সাহায্য করার, আর তারা তাদের নিজেদেরও সাহায্য করতে পারে না।
وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا یَتَّبِعُوكُمۡۚ سَوَاۤءٌ عَلَیۡكُمۡ أَدَعَوۡتُمُوهُمۡ أَمۡ أَنتُمۡ صَـٰمِتُونَ ﴿193﴾
আর যদি তোমরা তাদের আহ্বান করো সৎপথের প্রতি, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমরা তাদের আহ্বান করো অথবা তোমরা চুপচাপ থাকো, তোমাদের জন্যে সমান।
إِنَّ ٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ عِبَادٌ أَمۡثَالُكُمۡۖ فَٱدۡعُوهُمۡ فَلۡیَسۡتَجِیبُوا۟ لَكُمۡ إِن كُنتُمۡ صَـٰدِقِینَ ﴿194﴾
নিঃসন্দেহ তোমরা আল্লাহ্কে ছেড়ে দিয়ে যাদের আহ্বান কর তারা তোমাদেরই ন্যায় দাস, সুতরাং তাদের ডাকো, তোমাদের প্রতি তারা তবে সাড়া দিক, -- যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
أَلَهُمۡ أَرۡجُلࣱ یَمۡشُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ أَیۡدࣲ یَبۡطِشُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ أَعۡیُنࣱ یُبۡصِرُونَ بِهَاۤۖ أَمۡ لَهُمۡ ءَاذَانࣱ یَسۡمَعُونَ بِهَاۗ قُلِ ٱدۡعُوا۟ شُرَكَاۤءَكُمۡ ثُمَّ كِیدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ ﴿195﴾
তাদের কি পা আছে যা দিয়ে তারা চলতে পারে, অথবা তাদের কি হাত আছে যা দিয়ে ধরতে পারে, অথবা তাদের কি চোখ আছে যা দিয়ে দেখতে পারে, অথবা তাদের কি কান আছে যা দিয়ে তারা শুনতে পারে? বলো -- ''ডাকো তোমাদের অংশীদারদের, তারপর আমার বিরুদ্ধে ফন্দি আটোঁ, আর আমাকে অবকাশ দিও না!
إِنَّ وَلِـِّۧیَ ٱللَّهُ ٱلَّذِی نَزَّلَ ٱلۡكِتَـٰبَۖ وَهُوَ یَتَوَلَّى ٱلصَّـٰلِحِینَ ﴿196﴾
''নিঃসন্দেহ আমার অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্ যিনি কিতাব অবতারণ করেছেন, আর তিনিই অভিভাবকত্ব করেন সৎপথা- বলন্বীদের।
وَٱلَّذِینَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا یَسۡتَطِیعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَاۤ أَنفُسَهُمۡ یَنصُرُونَ ﴿197﴾
''আর যাদের তোমরা আহ্বান কর তাঁকে ছেড়ে দিয়ে, তারা কোনো ক্ষমতা রাখে না তোমাদের সাহায্য করার, আর তাদের নিজেদেরও তারা সাহায্য করতে পারে না।’’
وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا یَسۡمَعُوا۟ۖ وَتَرَىٰهُمۡ یَنظُرُونَ إِلَیۡكَ وَهُمۡ لَا یُبۡصِرُونَ ﴿198﴾
আর যদি তোমরা তাদের আহ্বান কর সৎপথের প্রতি, তারা শোনে না। আর তুমি তাদের দেখতে পাও তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু তারা দেখতে পাবে না।
خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَـٰهِلِینَ ﴿199﴾
ক্ষমা অবলন্বন করো আর সদয়তার নির্দেশ দাও, আর অজ্ঞদের পরিহার করে চলো।
وَإِمَّا یَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّیۡطَـٰنِ نَزۡغࣱ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِیعٌ عَلِیمٌ ﴿200﴾
আর যদি শয়তানের থেকে খোঁচাখুচি তোমাকে আহত করে তবে আল্লাহ্র কাছে আশ্রয় চাও। নিঃসন্দেহ তিনি সর্ব শ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা।
إِنَّ ٱلَّذِینَ ٱتَّقَوۡا۟ إِذَا مَسَّهُمۡ طَـٰۤىِٕفࣱ مِّنَ ٱلشَّیۡطَـٰنِ تَذَكَّرُوا۟ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ ﴿201﴾
নিঃসন্দেহ যারা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করে, যখন শয়তানের আক্রমণ তাদের স্পর্শ করে তারা স্মরণ করে, -- তাহলে দেখো! তারাই হয় দৃষ্টিশক্তিমান!
وَإِخۡوَ ٰنُهُمۡ یَمُدُّونَهُمۡ فِی ٱلۡغَیِّ ثُمَّ لَا یُقۡصِرُونَ ﴿202﴾
আর তাদের ভাইয়েরা, -- তারা এদের টেনে নেয় ভ্রান্তির মধ্যে, আর তারা থামে না।
وَإِذَا لَمۡ تَأۡتِهِم بِـَٔایَةࣲ قَالُوا۟ لَوۡلَا ٱجۡتَبَیۡتَهَاۚ قُلۡ إِنَّمَاۤ أَتَّبِعُ مَا یُوحَىٰۤ إِلَیَّ مِن رَّبِّیۚ هَـٰذَا بَصَاۤىِٕرُ مِن رَّبِّكُمۡ وَهُدࣰى وَرَحۡمَةࣱ لِّقَوۡمࣲ یُؤۡمِنُونَ ﴿203﴾
আর যখন তুমি তাদের কাছে কোনো আয়াত আনো না, তারা বলে -- ''কেন তুমি তা বেছে নাও না?’’ তুমি বলো -- ''আমি শুধু তারই অনুসরণ করি যা আমার কাছে প্রত্যাদিষ্ট হয়েছে আমার প্রভুর কাছ থেকে, এটি হচ্ছে তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে দৃষ্টিদায়ক, আর পথনির্দেশক, আর হচ্ছে করুণা সেই লোকদের জন্য যারা বিশ্বাস করে।’’
وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُوا۟ لَهُۥ وَأَنصِتُوا۟ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ﴿204﴾
আর যখন কুরআন পঠিত হয় তখন তা শোনো, আর চুপ করে থেকো, যেন তোমাদের প্রতি করুণা বর্ষিত হয়।
وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِی نَفۡسِكَ تَضَرُّعࣰا وَخِیفَةࣰ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡـَٔاصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَـٰفِلِینَ ﴿205﴾
আর স্মরণ করো তোমার প্রভুকে নিজের অন্তরে সবিনয়ে ও সভয়ে ও অনুচ্চস্বরে, প্রাতে ও অপরাহ্নে, আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
إِنَّ ٱلَّذِینَ عِندَ رَبِّكَ لَا یَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَیُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ یَسۡجُدُونَ ۩ ﴿206﴾
নিঃসন্দেহ যারা তোমার প্রভুর সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর উপাসনায় অহংকার দেখায় না, আর তারা তাঁরই মহিমা কীর্তন করে, আর তাঁরই প্রতি সিজদা প্রদান করে।